কাতার দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রম বাজার হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে বিভিন্ন ব্যবসা ও নির্মাণ শিল্পে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশি প্রবাসীরা। রেস্টুরেন্ট, পারফিউম, সবজি আমদানিসহ অন্যান্য গতানুগতিক ব্যবসার পাশাপাশি বর্তমানে একটু বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবসার দিকেও নজর দিচ্ছেন এই প্রবাসীরা। কাতারের বিভিন্ন বাজারে পোষা পাখি বিক্রি করা তেমনই একটি ভিন্ন ধরনের ব্যবসা। বর্তমানে কাতারের রাজধানী দোহার ওল্ড সুক বাজারে এভাবেই বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পোষা পাখি বিক্রি করছেন অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী।
কাতারের ভাষায় সুক মানে হচ্ছে বাজার। ওল্ড সুক মানে পুরোনো বাজার। এর আরেকটা নাম হচ্ছে সুক ওয়াকিফ। সুক ওয়াকিফ এর বৈশিষ্ট হচ্ছে কয়েক’শ বছরের পুরোনো আদলে তৈরি করা হয়েছে বাজারটি। এর ভেতর দিয়ে হাঁটলে সেই রকম অনুভতি-ই হয়। দোহার অন্যতম দর্শনীয় ও পর্যটন স্থান এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বাজার সুক ওয়াকিফে প্রতিদিন ঘুরতে আসেন নানা দেশ থেকে আসা পর্যটকরা। এর অন্যতম একটি কোলাহল মুখর অংশ পোষা পাখির বাজার। পাখির কিচিরমিচির শব্দে সবসময় মুখর এই হাটে মিলবে পছন্দের নানা প্রজাতি ও রং বেরঙের পাখি। বছরজুড়ে প্রতিদিনই নানা বয়সের দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর থাকে এই পাখির বাজার। আরবিতে এর নাম ‘সুক আল হামাম’। এখানে বিক্রি হয় বাজপাখি, মেকাউ, টিয়া, লাভ বার্ড ও কবুতরসহ দেশ-বিদেশের নানা প্রজাতির পোষাপাখি।
আর এই পাখির হাটেই দোকান খুলে বসেছেন বাংলাদেশি পাখি ব্যবসায়ীরা। সুক আল হামামে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কয়েকটি দোকানের নাম হলো- টিআর পিজিওন লফট, রনি মৃধা পিজিওন হাউজ, মুন্তজা বার্ড শপ ও এসএস পিজিওন ফার্ম ইত্যাদি। দীর্ঘদিন ধরেই এই বাজারে ব্যবসা করছেন বাংলাদেশিরা। আরব ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে তারা পাখি কিনে এনে এই বাজারে বিক্রি করেন। এই পাখিগুলো তারা সর্বনিম্ন ১০০ রিয়াল থেকে কয়েক হাজার রিয়াল মূল্যে পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করেন।
‘মুন্তজা বার্ড শপ’ এর মালিক মৌলভীবাজারের মুন্তজা বলেন, “সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের ক্রেতারা আসেন এ বাজারে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না এখানে। শীত মৌসুমে কেনাবেচা বেশি হয় বলে গরমকালে ক্রেতার সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে কমে যায়।”
টিয়া পাখির কদর এখানে সবচেয়ে বেশি হলেও ছোট বড় নানা আকারের বিভিন্ন রঙের বিদেশি পাখিগুলোও রয়েছে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে। এছাড়া এখানে আরও পাওয়া যায় বিদেশি কুকুর, বেড়াল, ইঁদুর ও খরগোশসহ অন্য অনেক প্রজাতির প্রাণী। কাতার প্রবাসী কুমিল্লার মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “কাতারের জাতীয় পাখি হলো ফেলকন বা বাজপাখি। এ পাখি মনিবের প্রতি বিশ্বস্ত বলে কাতারের আমির ও ব্যবসায়ীরা বাজপাখি পুষতে পছন্দ করেন। তাই স্থানীয় বাজারে এ পাখির কদর বেশি।”
কেবল পশু-পাখি নয়, এখানে পাওয়া যায় রঙিন মাছ, একুরিয়াম, পশু-পাখির খাঁচা, খাবার-দাবার, ওষুধ পত্রসহ নানা সামগ্রী। তাই অনেকে নতুন পোষা প্রাণী কিনতে যেমন এখানে আসেন, তেমনিভাবে ঘরে থাকা পশু-পাখির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কিনতে আসেন স্থানীয় নাগরিক, অভিবাসী ও পর্যটকরা।
সুক ওয়াকিফের সুক আল হামাম কাতারসহ অন্যান্য দেশের জীব প্রেমীদের কাছে স্বর্গতুল্য। আর তাদের কাছে এই সুবিধা পৌঁছে দিতে কাজ করছেন প্রবাসী বাংলাদেশি পাখি ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি পোষা পাখির কদর অনেক বেশি থাকায় ব্যবসায়িকভাবেও লাভবান হচ্ছেন তারা। সারা দুনিয়ার শৌখিন মানুষদের কাছে অনেক বিরল পোষা পাখি পৌঁছে দেয়ার এই কর্মযজ্ঞে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা রাখছেন মূখ্য ভূমিকা।
No comments:
Post a Comment