Social Icons

Saturday, August 5, 2017

বেড়েছে প্রবাসী মৃত্যুর হার; মরদেহ ফেরত আনতেও চরম ভোগান্তি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাড়ছে প্রবাসী মৃত্যুহার। চলতি বছরের শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১ হাজার ৭শ’ ৫৭জন প্রবাসী বাংলাদেশির মরদেহ দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এরমধ্যে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে ১৫৫৩ , চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে ১৭৬ ও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২৮ প্রবাসীর মরহেদ এসেছে। এর মধ্যে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, খুন, সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা ক্যানসারে মৃত্যুজনিত মরদেহ দেশে এসেছে। যদিও এর আগে ২০১৬ সালে সারা বছরে প্রবাসী মরদেহ এসেছিল ৩ হাজার ৪শ ৮১ জনের। যার তুলনায় এই ছয় মাসের চিত্র অনেক ভয়ানক।
সম্প্রতি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সবশেষ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য প্রকাশ করা হযেছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য ও জনসংযোগ সহকারি পরিচালক মো. জাহিদ আনোয়ার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব মৃত্যুর জন্য অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় দায়ী। তাদের মতে বিদেশ যাওয়ার খরচের টাকা উপার্জন করার জন্য শ্রমিকেরা অতিরিক্ত পরিশ্রম ও মানসিক চাপে থাকেন। যা প্রবাসী মৃত্যুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কারন। দেশের ৩টি বিমানবন্দর দিয়ে আসা মরদেহের হিসেব থেকে জানা যায়, ২০০৫-২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশে ৩১ হাজার ৭শ’ ১৫ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে এসেছে। এর মধ্যে হযরত শাহ জালাল বিমানবন্দরে ২৮ হাজার ৪শ’ ৩৭ জনের, চট্টগ্রাম শাহ্ আমানতে ২ হাজার ৮শ’ ৫৮ জনের, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪শ’ ৩০ জনের মরদেহ এসেছে।
পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, ২০০৫ সালে আসে ১ হাজার ২শ’ ৪৮ জনের মরদেহ, ২০০৬ সালে ১ হাজার ৪শ’ ২ জন, ২০০৭ সালে ১ হাজার ৬শ’ ৭৩ জন, ২০০৮ সালে ২ হাজার ৯৮ জন, ২০০৯ সালে ২ হাজার ৩শ’ ১৫ জন, ২০১০ সালে ২ হাজার ৫শ’ ৬০ জন, ২০১১ সালে ২ হাজার ৫শ’ ৮৫ জন, ২০১২ সালে ২ হাজার ৮শ’ ৭৮ জন, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৭৬ জন, ২০১৪ সালে ৩ হাজার ৩শ’ ৩৫ জন, ২০১৫ সালে ৩ হাজার ৩শ’ ৭ জন। বিশ্লেষকগণ বলছেন, একটু বেশি আয় আর আরাম আয়েশের স্বপ্নে বিভোর আমাদের কর্মীরা বিদেশে গিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করছে। পরিবেশ মানিয়ে নিতে না পেরে প্রায়ই বাংলাদেশিরা প্রাণ হারাচ্ছেন। অল্প বয়সে মারা যাচ্ছেন কর্মঠ কর্মীরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বিদেশে গিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন তারা। এ কারণে অনেকে প্রবাসে আত্মহত্যাও করে থাকেন।
ইরান প্রবাসী ফজলুল করিম বলেন, অভিবাসন সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালায় শ্রমিকের পেশাগত সুরক্ষার বিষয় উল্লেখ থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিবাসী শ্রমিকরা এসব বিধি বিধানের কোন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে না। ফলে অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হয়। এ কারণে পেশাগত রোগ ও কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রবাসী মৃত্যুর হার কমছে না। আর এসব ভয়ানক অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বারবার। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৬ সালে বৈধভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান শুরু হয়। শুরুতে সৌদি আরবে ২১৭ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ হাজার ৯শ’ ৮৯ জন, ওমানে ১শ’ ১৩ জন, কাতারে ১ হাজার ২শ’ ২১ জন, বাহরাইনে ৩শ’ ৩৫ জন, লিবিয়ায় ১শ’ ৭৩ জন ও বিভিন্ন দেশে ১ হাজার ৩শ’ ৯৬ জন পাড়ি দেন। মোট ৬ হাজার ৮৭ জন শ্রমিক দিয়ে বহির্বিশ্বে কর্মসংস্থান শুরু হলেও ৪০ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৫৬ জন কাজ করছেন। এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছেন ৫০ লাখের বেশি।
ফজলুল করিম আরো বলেন, প্রবাসীরা মরলেও বিপদত। কারন তখন মৃতদেহ সৎকার কিংবা দেশে ফিরিয়ে আনার কোন ব্যবস্থার প্রয়োগ নেই। আমাদের দেশে আইনে অনেক কিছুই থাকতে পারে তবে বিদেশে এসে অসহায় প্রবাসীরা তার ফল খুব কমই পায়। একজন প্রবাসীর মরদেহ দেশে আনতে গেলে এ টেবিল থেকে ও টেবিলে ছুটে বেড়াতে হয়। অথচ শেষ পর্যন্ত নিজ খরচে মরদেহ আনতে হয়। এক্ষত্রে দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা দেখলে নিজ দেশের নাম বলতে লজ্জা লাগে। বিদেশ থেকে লাশ পাঠাতে ভোগান্তির চিত্র মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে ইউরোপে আরো বেশি করুণ। সম্প্রতি প্রবাসীদের মরদেহ সরকারি উদ্যোগে দেশে আনার দাবি জানিয়েছে ইউরোপ প্রবাসী বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন।
এদিকে, পরিস্থিতি বিশ্লেষণে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশি কর্মীর মরদেহ তার পরিবারের মতামত সাপেক্ষে দেশে আনা হয়। যদি কোনো মৃতের পরিবার সংশ্লিষ্ট দেশে লাশ দাফনের ইচ্ছা জানান তাহলে সে দেশ ব্যবস্থা নেয়। মৃতের লাশ দেশে পাঠাতে নিয়োগকর্তা খরচ বহন করতে অপারগতা জানালে ও মৃতের পরিবার দেশে আনয়নের খরচ বহনে অক্ষম হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলের অর্থায়নে আনা হয়।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates