Social Icons

Thursday, April 11, 2019

ব্রাজিলের পূর্বভাগ আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত।

দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় অর্ধেক ভূখ- নিয়ে ব্রাজিল। দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় মাঝখানে অবস্থিত। জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। ৮,৫১৪,৮৭৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২১ কোটি। এটি আমেরিকার একমাত্র পর্তুগীজভাষী দেশ এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্তুগীজভাষী রাষ্ট্র। ব্রাজিলের পূর্বভাগ আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। যার উপকূলীয় ভাগের দৈর্ঘ প্রায় ৭,৪৯১ কিমি। ব্রাজিলের উত্তরে ভেনিজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম ও ফ্রান্সের সামুদ্রিক দেপার্ত্যমঁ ফরাসী গায়ানা। এছাড়াও এর উত্তর-পশ্চিমভাগে কলম্বিয়া; পশ্চিমে বলিভিয়া ও পেরু; দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে এবং সর্ব দক্ষিণে দক্ষিণে উরুগুয়ে অবস্থিত। 
ব্রাজিলীয় সীমানায় আটলান্টিক মহাসাগরের কিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ। ব্রাজিলের সঙ্গে চিলি ও ইকুয়েডর ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশেরই সীমান্তসংযোগ রয়েছে। ১৫০০ সালে পর্তুগীজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউয়ের ব্রাজিলে এসে পৌঁছার পর থেকে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রাজিল ছিল একটি পর্তুগীজ উপনিবেশ। ১৮১৫ সালে এটি যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল ও আলগ্রেভিজের সঙ্গে একত্রিত হয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা গঠন করে। মূলত ১৮০৮ সালেই ব্রাজিলের ‘পর্তুগীজ উপনিবেশ’ পরিচয়ের ফাটল ধরে। কারণ নেপোলিয়নের পর্তুগাল আক্রমণের রেশ ধরে পর্তুগীজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র লিসবন থেকে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৮২২ সালে ব্রাজিল পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। প্রাথমিক ভাগে এটি ব্রাজিলীয় সাম্রাজ্য হিসেবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করলেও ১৮৮৯ সাল থেকে এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে শাসিত হয়ে আসছে। ১৮২৪ সালে ব্রাজিলের প্রথম সংবিধান পাস হওয়ার পর থেকে দেশটিতে দুই কক্ষবিশিষ্ট সরকার ব্যবস্থা চলে আসছে, যা বর্তমানে কংগ্রেস নামে পরিচিত। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ব্রাজিল একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র। একটি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট, ২৬টি প্রদেশ ও ৫,৫৬৪টি মিউনিসিপ্যালিটি নিয়ে এর যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছে।
জাতিগোষ্ঠী ॥ ব্রাজিলে বিভিন্ন জাতের লোকের বাস। আদিবাসী আমেরিকান, পর্তুগীজ বসতিস্থাপক এবং আফ্রিকান দাসদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ব্রাজিলের জাতিসত্তাকে দিয়েছে বহুমুখী রূপ। ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র পর্তুগীজ উপনিবেশ। ১৬শ’ শতকে পর্তুগীজদের আগমনের আগে বহু আদিবাসী আমেরিকান দেশটির সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। ১৬শ’ শতকের মধ্যভাগে পর্তুগীজরা কৃষিকাজের জন্য আফ্রিকা থেকে দাস নিয়ে আসা শুরু করে। এই তিন জাতির লোকের মিশ্রণ ব্রাজিলের সংস্কৃতি, বিশেষ করে এর স্থাপত্য ও সঙ্গীতে এমন এক ধরনের স্বাতন্ত্র্য এনেছে যে কেবল ব্রজিলেই যার দেখা মেলে। ১৯শ’ শতকের শেষদিকে ও ২০শ’ শতকের গোড়ার দিকে ব্রাজিলে আগমনকারী অন্যান্য ইতালীয়, জার্মান, স্পেনীয়, আরব ও জাপানী অভিবাসীরাও ব্রাজিলের সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে। 
ব্রাজিলের ভৌগোলিক অবস্থা ॥ ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলভাগের সবচেয়ে বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে, সেই সঙ্গে মহাদেশটির সবচেয়ে বেশি অংশটিও এই দেশটির আওতাধীন। ব্রাজিলের দক্ষিণে উরুগুয়ে; দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে; পশ্চিমে বলিভিয়া ও পেরু; উত্তর-পশ্চিমে কলম্বিয়া এবং উত্তরে ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, গায়ানা এবং ফরাসী দেপার্ত্যমঁ ফরাসী গায়ানা অবস্থিত। ব্রাজিলের সঙ্গে ইকুয়েডর ও চিলি ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশের সঙ্গেই সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। ব্রাজিলীয় সীমানায় কিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ। এর সুবিশাল আকৃতি, জলবায়ু, এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য ব্রাজিলকে ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি বৈচিত্র্যময় দেশে পরিণত করেছে।
জনপরিসংখ্যান ॥ ব্রাজিলের জনপরিসংখ্যান এবং ব্রাজিলীয় ২০০৮ সালের গণনা অনুযায়ী ব্রাজিলের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ২২.৩১ জন, এবং পুরুষ ও নারীর অনুপাত ০.৯৫:১। মোট জনসংখ্যার ৮৩.৭৫% ভাগ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। ব্রাজিলে বেশিরভাগ মানুষ বাস দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব (৭ কোটি ৯৮ লাখ) ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। যদিও ভৌগোলিকভাবে দেশটির সবচেয়ে বড় অংশ হচ্ছে এর মধ্য-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চল, যা ব্রাজিলের মোট ভূখ-ের ৬৪.১২% ভাগ দখল করে আছে, কিন্তু সে অঞ্চলগুলোতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা মাত্র ২ কোটি ৯১ লাখ। মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় ১৯৪০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বেড়ে যায়। যদিও এ সময় জন্মহারও সামান্য পরিমাণে হ্রাস পায়। ১৯৪০-এর দশকে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ২.৪%। ১৯৫০-এর দশকে এসে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩.০%; ও ১৯৬০-এর দশকে এই হার ছিল ২.৯%। এ বছরগুলোতে মানুষের গড় আয়ুু ৪৪ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ বছরে উন্নীত হয়। ব্রাজিলের ইন্সটিটিউট অব জিওগ্রাফি এ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্সের ২০০৮ সালের গণনা অনুসারে মোট জনসংখ্যার ৪৮.৪৩% ভাগ নিজেদের শেতাঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করেছে; এবং ৪৩.৮০% ভাগ বাদামি, ৬.৮৪% কৃষ্ণাঙ্গ, ০.৫৮% এশী এবং ০.২৮% নিজেদের আমেরিন্ডিয়ান হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।
ব্রাজিলের অর্থনীতি ॥ ক্রয়ক্ষমতা সমতা ও মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ভিত্তিতে ব্রাজিলের অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। এর অর্থনৈতিক সংস্কার আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশটিকে একটি নতুন পরিচিতি দিয়েছে। ব্রাজিল জাতিসংঘ, জি-২০, সিপিএলপি, লাতিন ইউনিয়ন, অর্গানাইজেশন অব ইবেরো-আমেরিকান স্টেটস, মার্কুসাউ ও ইউনিয়ন অব সাউথ আমেরিকান নেশন্স এবং ব্রিক দেশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ব্রাজিল জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের দিকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত। ব্রাজিলে বিভিন্ন প্রকারের প্রকৃতি সংরক্ষণকেন্দ্র ও অভয়ারণ্য বিদ্যমান। এছাড়াও দেশটি সমৃদ্ধ খনিজসম্পদের অধিকারী, যা বিভিন্ন সময়ে এর অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ব্রাজিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিমান উৎপাদনকারী দেশ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ব্রাজিলের অর্থনীতি দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ, বাজার বিনিময়ের ভিত্তিতে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি। দেশটির যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যা এর অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, সামনের কয়েক দশকে ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের পাঁচটি বৃহত্তম অর্থনীতির একটি হিসেবে পরিণত হবে।[৮৯] এর বর্তমান গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হচ্ছে ১০,২০০ মার্কিন ডলার, যা বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ৬৪তম। ব্রাজিলের বৃহৎ ও উন্নত কৃষি, খনিশিল্প, উৎপাদন ব্যবস্থা এবং সেবাখাত রয়েছে।
সংস্কৃতি ॥ ব্রাজিলের সংস্কৃতি কার্নিভালে সাম্বা স্কুল প্যারেডের সাম্বা নৃত্য উপস্থাপন। কার্নিভাল ও সাম্বা নৃত্য বহির্বিশ্বের কাছে বব্রজিলের সংস্কৃতির সবচেয়ে পরিচিত অংশের একটি। তিন শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্তুগীজ ঔপনিবেশকদের শাসনের ফলে, ব্রাজিলের সংস্কৃতির মূল অংশটি এসেছে পর্তুগালের সংস্কৃতি থেকে। পর্তুগীজরা ব্রাজিলের সংস্কৃতির যেসকল স্থানে প্রভাব ফেলেছে তার মধ্যে আছে পর্তুগীজ ভাষা, ক্যাথলিক ধর্ম এবং ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশিল্প। এছাড়াও ব্রাজিলের সংস্কৃতি আফ্রিকান, ও আদিবাসী ইন্ডিয়ানের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য দ্বারাও বেশ প্রভাবান্বিত হয়েছে। 
খেলাধুলা ॥ ফুটবল খেলাই ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত। ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল ফিফা বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয় দল হিসেবে চিহ্নিত। দলটি এ পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপ লাভ করেছে যা একটি রেকর্ড। ভলিবল, বাস্কেটবল, অটো রেসিং এবং মার্শাল আর্ট ক্রীড়াও ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়। ব্রাজিলের পুরুষ জাতীয় ভলিবল দলটি ওয়ার্ল্ড লীগ, বিশ্ব ভলিবল গ্রাঁ চ্যাম্পিয়ন্স কাপ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্বকাপেও অন্যতম ফেবারিট দল। ব্রাজিলের অন্যান্য খেলার মধ্যে রয়েছে- টেনিস, হ্যান্ডবল, সুইমিং এবং জিমন্যাসটিক্স যা গত কয়েক দশক ধরে চর্চা হচ্ছে। 

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates