Social Icons

Saturday, October 27, 2018

অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে ৮শ’ সেনা মোতায়েন করবে ট্রাম্প প্রশাসন


অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে ৮ শ’ সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা স্বাক্ষর করবেন বলে জানা গেছে।
 
সমপ্রতি মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অনুপ্রবেশের ঘটনা বেড়ে গেছে। অনেকের মতে, সীমান্তে অভিবাসীদের ঢল নেমেছে। এটা ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন। -টাইম 

গোপন সফরে ওমান গেলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী

গেল দুই দশকে প্রথম কোন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওমান সফর করলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এ সফর মধ্যপ্রাচ্যের আরব মুসলিম দেশ ওমানের সাথে ইসরায়েলের সুসম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষণ হিসেবে দেখছেন কূটনীতিকরা।
 
তবে ওমান সফর শেষ করে ইসরায়েলে ফেরার আগ পর্যন্ত এ সফরের সবকিছু গোপন রাখা হয়। নিজ দেশে ফিরে টুইটারে সফর নিয়ে ছবি দিয়ে সবাইকে অবাক করেন নেতানিয়াহু।
 
সফরের একটি ভিডিও দিয়ে নেতানিয়াহু টুইটারে লেখেন, ‘ওমানে বিশেষ সফর, আমরা ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছি।’
 
নেতানিয়াহু জানান সফরে ওমানের সুলতান কাবুসের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার। যদিও উভয় দেশের মধ্যে কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
 
বেশ কিছুদিন ধরে ইরানের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এমন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করছিল ইসরায়েল। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওমান সফর করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকতে চাননি খাশোগি

ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে যেতে চাননি সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তবে খাশোগির সূত্র তাকে বলেছিল, তুরস্কের মাটিতে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবে না সৌদি কর্তৃপক্ষ। অন্য দেশের দূতাবাসে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
 
শুক্রবার তুর্কি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব জানান খাশোগির বাগদত্তা হেতিস চেঙ্গিস। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক থেকে খাশোগি জেনেছিলেন, যদি ইস্তাম্বুল কনস্যুলেটে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে সহজে বিষয়টির মীমাংসা করা যাবে। এমন নিশ্চয়তা পেয়ে সংশয় থাকলেও কনস্যুলেটে যান খাশোগি।
 
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে হেতিস চেঙ্গিসকে বাইরে রেখে কনস্যুলেটে ঢোকার দুই ঘণ্টার মধ্যেই সৌদি যুবরাজের পাঠানো রাজকীয় বাহিনী তাকে খুন করে।
 
তুর্কি বাগদত্তা হেতিস চেঙ্গিসের সাথে বিয়ের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র আনতে গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করার পর খুন হন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক ও স্বেচ্ছা-নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। শুরুতে অস্বীকার করলেও ১৯ অক্টোবর  সৌদি জানায়, তুরস্কের ইস্তাম্বুল কসন্যুলেটে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে খাশোগির মৃত্যু হয়। এর দুদিন পরই খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
 
সৌদি আরবের দাবি,  এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থার উপ-প্রধান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেহরক্ষিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট ১৮ জনকে। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বলছে, খাশোগির খুনের পেছনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই কলকাঠি নেড়েছেন।

‘সৌদির মাটিতেই খাশোগি হত্যার বিচার হবে’

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সৌদি আরবের মাটিতেই খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার করা হবে। সন্দেহভাজন আঠারোজনকে তুরস্কের কাছে হস্তান্তর করতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের আহ্বানের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
 
আদেল আল-জুবায়ের বলেন, ‘তারা সৌদি নাগরিক। সৌদিতে তাদেরকে আটক করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। এখানেই তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’
 
গেল মঙ্গলবার তুর্কি সংসদে দেয়া ভাষণে খাশোগি হত্যার বিচার ইস্তাম্বুলে করার প্রস্তাব দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। এর সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার ১৮জনকে তুরস্কের কাছে হস্তান্তর করতে শুক্রবার আহ্বান জানান এরদোগান।
 
তুর্কি বাগদত্তা হেতিস চেঙ্গিসের সাথে বিয়ের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র আনতে গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করার পর খুন হন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক ও স্বেচ্ছা-নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। শুরুতে অস্বীকার করলেও ১৯ অক্টোবর  সৌদি জানায়, তুরস্কের ইস্তাম্বুল কসন্যুলেটে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে খাশোগির মৃত্যু হয়। এর দুদিন পরই খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
 
সৌদি আরবের দাবি,  এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থার উপ-প্রধান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেহরক্ষিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট ১৮ জনকে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বলছে, খাশোগির খুনের পেছনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই কলকাঠি নেড়েছেন।

চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগ অবরোধ

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের ব্যানারে চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর ১২টার পর তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন।
 
জাতীয় গণগ্রন্থাগারের ভেতরে সংগঠিত হয়ে মিছিল নিয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তারা শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন। চাকরিতে ঢোকার বয়স বাড়ানোর দাবিতে 'পঁয়ত্রিশ পঁয়ত্রিশ' বলে স্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা শাহবাগ মোড়ে এই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
 
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে পূর্বঘোষিত সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল সাধারণ ছাত্র পরিষদের। কিন্তু জাতীয় জাদুঘরে চীনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসায় দুপুরে তাদের কর্মসূচি শুরু হয়। 
 
এদিকে এই অবরোধের কারণে ওই পথ দিয়ে চলাচল করা যানবাহন আটকা পড়েছে। ফলে শাহবাগ, ফার্মগেট, পল্টন, সায়েন্সল্যাব, টিএসসি এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে জাতীয় জাদুঘরের সামনের বাইপাস, শাহবাগ পুলিশ বক্সসংলগ্ন বাইপাস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বাইপাস রাস্তা দিয়ে ধীর গতিতে কিছু কিছু গাড়ি চলছে। অবরোধ ঘিরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
 
ছাত্র পরিষদের নেতা ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, আমাদের দাবি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা হোক। ৪০তম বিসিএসের সার্কুলার হয়েছে। এই বিসিএসে যাতে শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে, সেই দাবি আদায়ে আমরা শাহবাগ অবরোধ করেছি।

প্রথমবারের মতো ব্রাজিল দলে ডাক পেলেন অ্যালান

ব্রাজিল জাতীয় দলে প্রথমারের মত ডাক পেয়েছেন নাপোলি মিডফিল্ডার অ্যালান। এদিকে বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো দলে ফিরেছেন পলিনহো। নভেম্বরে উরুগুয়ে ও ক্যামেরুনের বিপক্ষে খেলতে যাওয়া দুটি প্রীতি ম্যাচের জন্য শুক্রবার ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা করেন তিতে।
২০১১ সালে ব্রাজিলের অনুর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জয়ী সদস্য ছিলেন অ্যালান। পরের বছরই সিরি-আ ক্লাব উদিনেসে যোগ দিতে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ভাস্কো দা গামা ছেড়ে দেন। এই ক্লাবেই নিজেকে প্রমাণের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত নাপোলিতে যোগ দেন। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে পারফরমেন্সের কারনেই নভেম্বরে উরুগুয়ে ও ক্যামেরুনের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচগুলোতে ২৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারকে বিবেচনা করতে বাধ্য হন তিতে।
তবে তাকে দলে নিয়ে সহকারী কোচ সিলভিনহোর আগ্রহই বেশি ছিল বলে তিতে জানিয়েছেন। মরিজিও সারির অধীনে অ্যালানের ফর্ম দেখে দারুন সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সিলভিনহো। বিশেষ করে গত প্রায় ৭ বছর ধরে ইউরোপে খেলার অভিজ্ঞতাই অ্যালানকে জাতীয় দলে সুযোগ করে দিয়েছে।
এদিকে বার্সেলোনা থেকে চাইনিজ সুপার লিগে গুয়াংজু এভানগ্রান্ডেতে যাবার পর ১৫ ম্যাচে ১১ গোল করে আবারো জাতীয় দলে ফিরে এসেছেন পাওলিনহো। অক্টোবরে সৌদি আরব ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়ের পর দলে ফিরেছেন মার্সেলো, উইলিয়ান ও ডগলাস। তবে দল থেকে ছিটকে গেছেন লুকাস মোওরা ও ম্যালকম।
ব্রাজিল স্কোয়াড :
গোলকিপার : অ্যালিসন, গ্যাব্রিয়েল বারাজো, এডারসন।
ডিফেন্ডার : ডানিলো, ডেডে, ফাবিনহো, ফিলিপ লুইস, মার্সেলো, মারকুইনহোস, পাবলো, মিরান্ডা।
মিডফিল্ডার : অ্যালান, আর্থার, কাসেমিরো, পাওলিনহো, ফিলিপ কুটিনহো, ওয়ালেস।
ফরোয়ার্ড : ডগলাস কস্তা, রবার্তো ফিরমিনো, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, নেইমার, রিচারলিসন, উইলিয়ান।

নতুন-পুরনোর মিশেলে ব্রাজিল

২০১৯ সালে নিজেদের মাটিতে কোপা আমেরিকা খেলবে ব্রাজিল। এর আগেই দলকে সুগঠিত করতে চাইছেন কোচ তিতে। নতুন-পুরনোর মিশেলে লম্বা লাইন আপ তৈরি করছেন তিনি।
 
ব্রাজিল দলে ফিরেছেন সাবেক বার্সা তারকা পাউলিনহো, চেলসির উইলিয়ামস, ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে পড়া মার্সেলো। এছাড়া দলে আছেন ডিফেন্ডার ডেডে, মিডফিল্ডার অ্যালান ও ওয়ালেস।
 
এর মধ্যে ২০ নভেম্বর ইংল্যান্ডে হতে যাওয়া ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন ব্রাজিল দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এডু। তিনি বলেন, ক্যামেরুন আফ্রিকার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন, তারা কনফেডারেশনস কাপেও খেলেছে। শক্তিশালী দলের বিপক্ষে নিজেদের পরখ করে দেখতে পারলে দারুণ হবে।
 
ব্রাজিলের কোচ তিতের ঘোষিত দল: 
 
গোলরক্ষক: এদেরসন (ম্যানসিটি),অ্যালিমস (লিভারপুল)।
 
ডিফেন্ডার: দানিলো (ম্যানসিটি),ফ্যাবিনহো (লিভারপুল), ফিলিপে লুইস (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), মার্সেলো (রিয়াল মাদ্রিদ), ডেডে (ক্রুজেইরো), মারকুইনোস (পিএসজি), পাবলো (বর্দো), মিরান্ডা (ইন্টার মিলান)।
 
মিডফিল্ডার: অ্যালান (নাপোলি), কাসেমিরো (রিয়াল), পাউলিনহো (গুয়াংজু), কুতিনহো (বার্সা), আর্থার (বার্সা), ওয়ালেস (হ্যাংওভার)। 
 
ফরোয়ার্ড: নেইমার (পিএসজি), ডগলাস কস্তা (জুভেন্টাস), রর্বাতো ফিরমিনো (লিভারপুল), গ্যাব্রিয়েল জেসুস (ম্যানসিটি), রির্কালিসন (ইভারটন), উইলিয়ান (চেলসি)।

Sunday, October 21, 2018

ইসলামে নারীর বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার

নারী-পুরুষের মানবিক প্রয়োজন পূরণে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সুখময় ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ইসলাম বিবাহবন্ধনের নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামের বিধান মতে, বিবাহ সম্পাদনে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই সম্মতি আবশ্যক। কোনো সাবালক পুরুষ কিংবা নারীকে কোনো ব্যক্তি জোরপূর্বক বিবাহ দিতে পারবে না, এমনকি তার জন্মদাতা মা-বাবাও না। জোরপূর্বক বিবাহ দিলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। কোনো নাবালেগ ছেলে-মেয়েকে তার অভিভাবক জোরপূর্বক বিবাহ দিলেও বালেগ হওয়ার পর তাদের অপছন্দ হলে তারা ওই বিবাহ ভেঙে দিতে পারবে। অতএব, কোনো পুরুষ কোনো নারীকে এবং কোনো নারী কোনো পুরুষকে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন। ইসলামী শরিয়ত তাদের ওপর কারো জবরদস্তি চাপিয়ে দেয় না। ইসলামে নারীকে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। যেন কোনো নারীকে কোনো অসৎ পুরুষের খপ্পরে পড়ে অসহায় ও দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করতে না হয়।
যেহেতু পৃথিবী আবাদ ও সুখময় সমাজ বিনির্মাণেই বিবাহের বিধান, তাই অপ্রয়োজনে এ বন্ধন ছিন্ন করাকে ইসলাম খুবই অপছন্দ করেছে। বিনা প্রয়োজনে তালাক দেওয়া বা তালাক চাওয়া গুনাহর কাজ। তবে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে যদি বনিবনা না হয় এবং কোনোভাবেই তাদের মিল হওয়া সম্ভব না হয় অথবা জুলুম-নির্যাতন বা কোনো অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তাহলে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি রয়েছে। প্রয়োজনে ও যৌক্তিক কারণে স্বামী তালাক দিতে পারে, তদ্রূপ স্ত্রীও তালাক চাইতে পারে। তবে ইসলামী শরিয়ত মতে, তালাকের ক্ষমতা স্বামীর হাতে ন্যস্ত।
তালাকের ক্ষমতা স্বামীর হাতে ন্যস্ত হওয়ার কারণ
এখানে প্রশ্ন জাগে যে ইসলাম ধর্ম মতে, স্বামী নিজ ইচ্ছায় তালাক দিতে পারে; কিন্তু স্ত্রী তার ইচ্ছায় তালাক দিতে পারে না। তাই নারীদের ব্যাপারে বিষয়টিতে সংকীর্ণতা এসেছে। আসলে বিষয়টি সাধারণ ও স্থূল দৃষ্টিতে এমন মনে হলেও প্রকৃত অবস্থা ভিন্ন। আমরা শুরুতেই বলে এসেছি যে কোনো অসহনীয় ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি যেন না হয়, তাই শুরু থেকেই নারী-পুরুষ উভয়কেই জীবনসঙ্গী নির্বাচনে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তবে বিবাহ হয়ে যাওয়ার পর দুটি জীবন পরস্পর একাকার হয়ে যাওয়ার কারণে একটি নিয়ম ও শৃঙ্খলার খাতিরে তালাকের অধিকার শুধু স্বামীকেই দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর হাতে এ ক্ষমতা অর্পণ না করার যৌক্তিক ও বাস্তবিক অনেক কারণ রয়েছে, যা সামান্য চিন্তা করলে এর যৌক্তিকতা বুঝে আসে। পৃথিবীর সব ক্ষেত্রেই নিয়মের খাতিরে কোনো বিষয়ের দায়িত্ব একজনের ওপর থাকে, আর অন্যরা তার সহযোগী হয়। এতে কাউকে বঞ্চিত করা উদ্দেশ্য নয় কিংবা তার অবস্থানকে খাটো করে দেখাও উদ্দেশ্য নয়; বরং শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন বিনির্মাণই মূল উদ্দেশ্য। একটি অভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুজন দায়িত্বশীল সমহারে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় না, নচেৎ তাতে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। তদ্রূপ স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের শৃঙ্খলা রক্ষায় একজন প্রধান দায়িত্বশীল হবেন এবং অপরজন তার সহযোগী হবেন। এখন আমাদের দেখতে হবে, কাকে প্রধান দায়িত্বশীল বানাব আর কাকে সহযোগী বানাব? এ ক্ষেত্রে ইসলাম নারীর স্বভাবগত চঞ্চলতা ও অধৈর্যের প্রতি খেয়াল করে এবং পুরুষের দৈহিক সক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বিবেচনা করে পুরুষের ওপর তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করেছে। তবে ইসলামে দাম্পত্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদিতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে পরামর্শ করে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
স্ত্রীর জন্য বিবাহের আগে তালাকের অধিকার সংরক্ষণ
তথাপি ইসলামে স্ত্রীকে আরেকটি অধিকার ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো, বিবাহের সময় যেকোনো নারীই ইচ্ছা হলে স্বামীকে এ শর্ত দিতে পারে যে আমি যদিও এখন স্বেচ্ছায় আপনার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করছি, কিন্তু পরে যেকোনো সময় কারণে-অকারণে এ সম্পর্ক ছিন্ন করার অধিকার আমাকে দিতে হবে। ওই শর্তে বিবাহ সম্পাদিত হলে পৃথিবীর সব নারীই এ অধিকার প্রয়োগ করে স্বামীর ইচ্ছাবহির্ভূত হলেও তালাক গ্রহণ করে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে। (দেখুন : সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২৬২, ফাতহুল কাদির : ৩/৪২৭)
প্রশ্ন হলো, এর পরও কি স্ত্রীর জন্য ইসলামে কোনো সংকীর্ণতা রাখা হয়েছে?
বিনিময় দিয়ে তালাক গ্রহণের অধিকার
হ্যাঁ, কেউ বলতে পারেন যে ইসলামের বিধানে অজ্ঞতা বা যেকোনো কারণে যদি স্ত্রী বিবাহের আগে স্বামীর সঙ্গে ওই শর্তচুক্তি না করে থাকে, তাহলে কি তার জন্য স্বামীর ইচ্ছার বাইরে বিবাহবিচ্ছেদের আর কোনো সুযোগ নেই? তার জন্য কি সব পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে? এর জবাব হলো, ‘না।’ স্ত্রীর জন্য তার পরও বিবাহবিচ্ছেদের পথ এভাবে খোলা আছে যে সে স্বামীকে বুঝিয়ে তালাকের ওপর রাজি করাবে অথবা কোনো বিনিময়ের মাধ্যমে তালাকের সম্মতি নেবে। অর্থাৎ সে বলবে যে হয়তো তুমি আমাকে বিবাহ করতে গিয়ে মহর, অনুষ্ঠান ও অন্য খাতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই তুমি এ বিবাহ ভাঙতে চাচ্ছ না, আমি প্রয়োজনে তোমাকে তোমার কিছু খরচ পুষিয়ে দেব, তবু তুমি আমাকে তালাক দিয়ে দাও। এটিকে ইসলামী পরিভাষায় ‘খোলা তালাক’ বলা হয়। (দেখুন : সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২৭৩) ‘খোলা তালাকের’ বৈধতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে আমাদের কিছু ভাই সন্দেহ পোষণ করে থাকেন, সে বিষয়েও আমরা কিঞ্চিৎ আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।
আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার
এখন যদি ‘খোলা তালাকের’ ওপরও স্বামী রাজি না হয়, তাহলে কি অন্য পথ খোলা নেই? এ প্রশ্নের জবাব হলো, বরং এ ক্ষেত্রেও স্ত্রী আদালতে মামলা করে যৌক্তিক কারণ দর্শিয়ে স্বামীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিচারকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ করাতে পারে। (শরহুস সগির, দরদির : ২/৭৪৫, কিফায়াতুল মুফতি : ৬/২৫২)
এর পরও যারা এ বিষয়ে নারীর অধিকার হরণের আপত্তি তোলেন, তারা মূলত তাদের প্রতিপালক আল্লাহর বিধান মানতেই রাজি নয়। তাই অযৌক্তিক আপত্তি তুলে হলেও তাতে সন্দেহ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করে থাকে।
কিছু সংশয় ও তা নিরসন
কিছু অবুঝ ভাই কোরআন-হাদিস থেকে প্রমাণ করতে চান যে কোরআন-হাদিসে নারীদেরও হুবহু পুরুষের মতো তালাকের অধিকার দেওয়া হয়েছে। আসলে এটি তাদের কোরআন-হাদিসের জ্ঞানশূন্যতারই প্রমাণ বহন করে। কোরআন-হাদিসের শিক্ষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন না করে ইংরেজি-বাংলা অনুবাদ পড়ে এবং মস্তিষ্কে পশ্চিমা চিন্তাধারা লালন করে যারা ইসলাম চর্চা করেন, ইসলামের বিধি-বিধান অনুধাবন তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।
সংশয় ১ : মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদের বলে দাও, ‘যদি তোমরা দুনিয়ার জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করো, তাহলে এসো, আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসের ব্যবস্থা করে দিই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় করে দিই।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২৮) 
এ আয়াত দ্বারা সংশয়কারী ভাইয়েরা বলে থাকেন যে এখানে স্ত্রীদের স্বামীর অনিচ্ছায়ও তালাকের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, স্ত্রী ইচ্ছা করলে বিদায় গ্রহণ করে চলে যাওয়ার অধিকার তার রয়েছে।
নিরসন : এর জবাব হলো, এ আয়াত দ্বারা স্বামীর অনিচ্ছায়ও স্ত্রী তালাক দেওয়ার অধিকারী হওয়ার কোনো প্রমাণ দুরবিন দিয়ে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। বরং আয়াতটি দ্বারা বিপরীতটিই বোঝা যায় যে স্বামী ইচ্ছা করলে স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের অধিকার দিতে পারবে এবং স্ত্রী স্বামীর দেওয়া ওই অধিকার প্রয়োগ করে তালাক গ্রহণ করতে পারবে। এতে স্বামীর অনিচ্ছায়ও স্ত্রীর তালাক দেওয়ার অধিকারী হওয়ার কথা কোথা থেকে পেলেন তাঁরা? নিশ্চয়ই এটা তাঁদের পূর্বকল্পিত দর্শন, যা তাঁরা আয়াত দ্বারা প্রমাণ করার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছেন। কেননা কোরআনের কোনো ব্যাখ্যাকারই তাঁদের উদ্দিষ্ট ব্যাখ্যা গ্রহণ করেননি। (দেখুন : তাফসিরে ইবনে কাসির-৬/৪০৪)
সংশয় ২ : প্রসিদ্ধ নারী সাহাবি বারিরাহ ও মুগিস (রা.)-এর ঘটনা বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে এসেছে। বারিরাহ ছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর দাসী এবং মুগিস নামক জনৈক সাহাবি ছিলেন তাঁর স্বামী। বারিরাহকে আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) মুক্ত করে দেওয়ার পর বারিরাহ তাঁর স্বামীকে ত্যাগ করেন। এতে তাঁর স্বামী তাঁর ভালোবাসায় অস্থির হয়ে অনেক কান্নাকাটি করেন। তা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বারিরাহকে বলেন, তুমি মুগিসকে গ্রহণ করে নাও। তখন বারিরাহ বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এটি কি আপনার আদেশ না পরামর্শ? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পরামর্শ। তখন বারিরাহ বলল, তাহলে তো এ ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ না মানার অধিকার আমার রয়েছে, আমি মুগিসকে গ্রহণ করব না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২৮৩)
ওই হাদিসে স্বামীর প্রচণ্ড ভালোবাসা সত্ত্বেও স্ত্রী স্বেচ্ছায় তাকে ত্যাগ করার পরও রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীকে স্বামীর কাছে যেতে বাধ্য করেননি; বরং তাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন।
নিরসন : আসলে এ হাদিসে স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকারী হওয়ার কথা তো প্রমাণিত হয় না। বরং তাতে একটি বিধান বর্ণিত হয়েছে, তা হলো কোনো দাসীকে তার মনিব কারো সঙ্গে বিয়ে দিলে সে তার সঙ্গে থাকতে বাধ্য, তবে যখনই ওই দাসীকে আজাদ করে দেওয়া হবে, তখন সে যেহেতু একজন স্বাধীন নারী, তাই তার অধিকার রয়েছে যে সে তার মনিবের দেওয়া বিবাহকে অটুটও রাখতে পারে, আবার চাইলে ভেঙেও দিতে পারবে। (উমদাতুল কারি : ২০/২৬৬)
তাই এটি মূলত বিবাহের আগে নারীর বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন ও প্রত্যাখ্যানের অধিকারের মতোই। কেননা বিবাহের আগে সব নারীরই সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে প্রস্তাব গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যানের। যেহেতু দাসী এত দিন তার মনিবের অধীনে থাকার কারণে তার অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায়নি, তাই আজাদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। এটিই হলো হাদিসের মর্ম। এর দ্বারা স্ত্রীর সর্বদা একচ্ছত্র অধিকার প্রমাণিত হয় না।  
সংশয় ৩ : হাদিস শরিফে এসেছে, জনৈক নারী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমার বাবা আমাকে তার ভাতিজার সঙ্গে বিবাহ দিয়েছেন, যাতে আমার অসন্তুষ্টি রয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দিয়েছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৭৩)
নিরসন : এই হাদিসে যে বিধান বর্ণনা করা হয়েছে, তা আমরা আগেই করেছি। তা হলো, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানবান নারীকে কোনো ব্যক্তি জোরপূর্বক বিবাহ দিতে পারবে না, এমনকি তার জন্মদাতা মা-বাবাও না। জোরপূর্বক বিবাহ দিলে বিবাহই শুদ্ধ হবে না। কোনো নাবালেগ ছেলে-মেয়েকে তার অভিভাবক বিবাহ দিলেও বালেগ হওয়ার পর তাদের অপছন্দ হলে তারা ওই বিবাহ ভেঙে দিতে পারবে। কিন্তু এ হাদিস দ্বারা নারীর তালাক দেওয়ার অধিকার প্রমাণিত হয় না। যদিও ইসলাম কয়েকটি উপায়ে নারীকে বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার দিয়েছে। (এ বিষয়ে আলোচনা ভিন্ন শিরোনামে চলমান থাকবে, ইনশাআল্লাহ।)
লেখক : মুহাদ্দিস ও ফতোয়া গবেষক

মাতা-পিতার বিবাদ শিশুর জীবনে প্রভাব ফেলে

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য শান্তভাবে আলোচনা করা উচিত। বিশেষভাবে সন্তানের সামনে তর্কে বা বিবাদে জড়ালে তা শিশুর মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঝগড়া পর্যায়ক্রমে খারাপ শব্দ ব্যবহার ও অপমান-অশ্রদ্ধা উসকে দেয়, যা শিশুর মনে ব্যাপক ক্ষত সৃষ্টি করে। শিশু চারপাশের মানুষের কাছ থেকে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা করতে শেখে, যা মাতা-পিতার বিবাদপূর্ণ পরিবার থেকে সম্ভব নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাতা-পিতার মধ্যে তর্কে ও বিবাদে লিপ্ত একটি পরিবারে যে শিশু বেড়ে ওঠে, তার মধ্যে এবং তার সহপাঠীদের মধ্যে বিবাদের প্রবণতা থাকে। ঝগড়াটে মনোভাব তার জীবনের একটি অংশে পরিগণিত হয়।
এসব বিবাদের মাধ্যমে শিশু তার ঝগড়াটে মাতা-পিতার ওপর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে। মাতা-পিতা শিশুর জন্য অনুকরণীয় মডেল। মাতা-পিতার এমন আচরণে তার অনুকরণীয় বলতে তেমন কোনো কিছু আর বাকি থাকে না। এসব বিবাদের ধারাবাহিকতা শিশুকে তার মাতা-পিতার বা কোনো একজনের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি পুরো পরিবারের প্রতি বিরক্ত করে তুলতে পারে। তাই মাতা-পিতা নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত, এ ধরনের পরিবেশ কি একজন সফল ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে উপযোগী সন্তান উৎপাদন করবে?
এ ব্যাপারে হেলওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ফিফান আহমেদ ফুয়াদ বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাজে সম্পর্কের দরুন শিশুদের চরিত্রের মধ্যে নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়ে। এটি তার মধ্যে সামাজিক ভীতি ও অনিরাপত্তামূলক মনোভাবের বৃদ্ধি ঘটায়। এটি বিদ্যালয়ে তার স্বকীয়তা দুর্বল করে দেয় এবং তার মনোযোগ ও শেখার সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। যে শিশু এমন পরিবারে বেড়ে ওঠে, যেখানে সাংসারিক বিবাদ নিত্যনৈমিত্তিক লেগে থাকে—তার রুমে বা ঘরের কোনো এক কোণে, ওই শিশুর মধ্যে সব সময় ভয়, আতঙ্ক ও প্রতিশোধমূলক চিন্তা কাজ করে। এতে শিশুর ভয় বেড়ে যায় ও সে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তার শরীরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বেড়ে যায়। পেটের ভ্যাগাস নার্ভক্রিয়া ব্রেনে রক্তের পরিমাণ পৌঁছানো কমিয়ে দেয়। এসব উপসর্গ তার সচেতনতা ও মনোযোগ কমিয়ে দেয়। ফলে শিশুর যথাযথ বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তোমাদের বের করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমন অবস্থায় যে তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তর। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৭৮)
শোনা, দেখা ও হৃদয়ঙ্গম করা—এই তিনটি বিষয় শেখার প্রধান অনুষঙ্গ। এগুলো আল্লাহর নিয়ামত। এগুলোর অপব্যবহারের জন্য কখনো কখনো ব্যক্তি যেমন দায়ী, সমাজ ও পরিবেশও দায়ী। তাই শিশুবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। শিশুর জীবনে পরিবেশের প্রভাব কত বেশি, এক হাদিস থেকে বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক নবজাতক ফিতরতের ওপর (ইসলাম বা সত্যগ্রহণের যোগ্যতা নিয়ে) জন্মগ্রহণ করে। এর পর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান অথবা অগ্নি-উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে। যেমন—চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছ?’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৬)
এ বিষয়ে করণীয় কী—
♦    শিশুদের সামনে স্বামী-স্ত্রী পারস্পরিক বিবাদে না জড়ানো।
♦    যদি স্বামী-স্ত্রী কেউ অনুধাবন করতে পারে যে আলোচনা ঝগড়ায় রূপ নিচ্ছে, তখন তাদের কেউ একজন নীরব স্থানে চলে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু সময় সতেজ বাতাস গ্রহণ বা ড্রিম লাইটসমৃদ্ধ রুমে আরামদায়ক চেয়ারে বসা। যতক্ষণ না তাদের একজন শান্ত ও স্বাভাবিক হয়ে যায়।
♦    আলোচনা ও ধৈর্যের সঙ্গে সাংসারিক বিবাদের একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানে পৌঁছার চেষ্টা করা। 
♦    মাতা-পিতাকে শিশুদের সামনে একটি আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করা ও তাদের শিক্ষা দেওয়া—কিভাবে চিন্তা ও মতামত শান্তভাবে উপস্থাপন করা যায়। তাকে বোঝাতে হবে যে অন্যের অধিকার কখনো লঙ্ঘন হতে দেওয়া যাবে না।
♦    সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য উপযুক্ত সময় ও পরিবেশ নির্বাচন করা। সমস্যা নিয়ে আলোচনা যেন খাবারের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় বা ঘুমের সময় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা।
♦    মাতা-পিতাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে হবে যে সব সময় সাংসারিক বিবাদ শিশুর শারীরিক সমস্যা ও মনস্তাত্ত্বিক অসংগতি বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো, বেড ওয়েটিং (বিছানায় প্রস্রাব) ও দুঃস্বপ্ন।
♦    শিশুদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কোনো ভ্রমণে গিয়ে বা শিশুরা ভালোবাসে—এমন কিছু দেখতে গিয়ে চাপ কমানো উচিত।
পরিশেষে মাতা-পিতা উভয়কেই মনে রাখতে হবে যে তাঁরাই হচ্ছেন শিশুর আদর্শ, যাঁদের শিশু অনুকরণ করবে। শিশুদের মনোভাব ও আচরণ রূপায়ণের ওপর তাঁদের গভীর প্রভাব রয়েছে।
লেখক : শিক্ষক, মাদরাসাতুল মদিনা, নবাবপুর, ঢাকা।

খাশোগি হত্যা : সৌদির কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে জার্মানি

খাশোগির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সৌদি আরব শুক্রবার যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাকে ‘অপর্যাপ্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছে জার্মানি। একইসাথে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে বার্লিন।
শনিবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। 
তারা বলেছেন, আমরা কঠোর ভাষায় এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি।
জার্মান চ্যান্সেলরের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা খাশোগির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য প্রকাশ করার জন্য সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। রিয়াদ এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য দিয়েছে যা পর্যাপ্ত নয়।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর গোপনাঙ্গে লোহার রড, যুক্ত ছিল ভাতিজাও

বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর যৌনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি এলাকায়।
এই ঘটনার জেরে শনিবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ধূপগুড়ির ঠাকুরপাঠ। ওই এলাকার এক বিবাহিত নারীর সঙ্গেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে অবিযোগ ওঠে।
শনিবার বিকেলের দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতিকারীরা ওই নারীকে তুলে নিয়ে যায়। রবিবার নদীর ধার থেকে উদ্ধার করা হয় ওই নারীকে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই ঘটনার পেছনে নিগৃহীতার ভাইপো রতনু মুণ্ডার হাত আছে। সেই পরিমল রায় এবং সন্তোষ রায় নামে আরো দু’জনকে নিয়ে ওই নারীর বাড়িতে হানা দেয়।
পুলিশ বলছে, তারাই এরপর যাবতীয় দুষ্কর্ম করে। পারিবারিক জমি নিয়ে বিবাদের জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে বলে নিগৃহীতার স্বামী আমরুশ মুন্ডা অভিযোগ করেছেন।
থানায় তিন জনের নামেই লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ওই নারী বর্তমানে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মালয়েশিয়ায় ভূমিধসে নিহত ৯, বাংলাদেশি তিনজন

মালয়েশিয়ায় ভূমিধসের ঘটনায় অন্তত নয়জন নিহত হয়েছে।  পেনাং রাজ্যের ওই ভূমি ধসে নিহতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশিও রয়েছে। জানা গেছে, মাটির নীচে চাপা পড়ে আছে আরো অন্তত ১০ জন।
গতকাল শুক্রবার দেশটির পেনাং রাজ্যের জালান বেরকামবার পায়া টেরাবোং রিলাউর কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। মালয়েশিয়ার উত্তর-পূর্ব জেলা পুলিশ সহকারী কমিশনার চে জামান জানান, প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে টুইন হিলস এক্সপ্রেসওয়ে নামে একটি প্রকল্পের সাইটে এই ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
নিহত তিন বাংলাদেশি হলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ ইউনিয়নের উজ্জ্বল হোসেন (৩০), একই উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের রাহাতজান আলী (২৫) এবং ঝিকরগাছা সদর ইউনিয়নের আখতারুজ্জামান (৩৫)। জানা গেছে, তারা পরস্পরের আত্মীয়।
নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।

সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলায় নিহত ৮৮ হাজার

সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। শনিবার সিঙ্গাপুরে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এ তথ্য জানিয়েছেন।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবি, নিহতদের সবাই জঙ্গি। সিরিয়া সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধে ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছে রাশিয়া।
তিনি আরো বলেন,  এখন পর্যন্ত ৮৭ হাজার পাঁচশ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এছাড়া, এক হাজার চারশ ১১টি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মুক্ত করা হয়েছে সিরিয়ার শতকরা ৯৫ ভাগ ভূখণ্ড।

দ্বিতীয় গণভোটের দাবিতে উত্তাল ব্রিটেনের রাজপথ

ব্রেক্সিট নিয়ে দ্বিতীয় গণভোটের দাবিতে ৭ লাখ মানুষ ব্রিটেনের রাজপথে বিক্ষোভ জানিয়েছেন। শনিবারের এই আন্দোলনটি ছিল ব্রেক্সিট নিয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সমাবেশ। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতার  বিক্ষোভের পর এটাই যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
যুক্তরাজ্য আগামী বছরের মার্চ মাসে ইইউ ত্যাগ করতে যাচ্ছে। কয়েক মাস আলোচনার পর দেশটির প্রধান দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক বিভেদ দেখা দিয়েছে। কনজারভেটিভরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন আর কীভাবে ইইউ ছাড়া হবে তা নিয়ে লেবার পার্টিও দ্বিধান্বিত হয়ে আছে। তবে দুই দলের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, দ্বিতীয়বার গণভোট করার সময় পর্যাপ্ত সময় কি আসলেই আছে?
শনিবার আন্দোলনকারীদের হাতে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীল ও সোনালি পতাকা। ব্যানারগুলোতে লেখা ছিল আরেকটি গণভোটের দাবির কথা। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই আন্দোলনে আবারো চাপের মুখে পড়বেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে ব্রেক্সিট আলোচনায় ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
মিছিলের একজন আয়োজক জেমস ম্যাকগ্ররি বলেন, ভোটারদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া উচিত। কারণ এই সিদ্ধান্তে পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, সবাই মনে করছে ব্রেক্সিট আলেচনায় জট পাকিয়ে গেছে। সরকারের ওপর কোনো আস্থা নেই তাদের।
গত জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের চেকার্সে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্রেক্সিটের জন্য থেরেসা মে যেসব শর্তের খসড়া লিপিব্ধ করেছিলেন সেগুলোর বিষয়ে ইইউ নেতারা অস্ট্রিয়ার সালজবার্গে বৈঠকে বসেছিলেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর সেখানে থেরাসে মের অনুপস্থিতিতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার পরিকল্পনা সফল হবে না। মূল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড অংশের মধ্যে বাণিজ্যের শর্ত নির্ধারণ নিয়ে।
আইরিশ সীমান্তের বিষয়ে ইইউয়ের পরামর্শ হচ্ছে-নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় বাজারের অংশ হিসেবে থাকবে। আর বাকি যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিকভাবে এবং সাংবিধানিকভাবে যুক্তরাজ্যকে বিভক্ত করে ফেলবে।
লন্ডনের পার্ক লেন থেকে শুরু করে পার্লামেন্ট স্কয়ারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কনজারভেটিভ দলের এম পি আন্না সাবরি, লেবার এম পি চোকা উম্মা, লিবালের ডেমোক্র্যাট নেতা স্যার ভিন্স ক্যাবল একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন, যোগ দেন লন্ডন মেয়র সাদিক খান।
সাউথ ডেবন থেকে আসা ৬৯ বয়সী এক বিক্ষোভকারী জানান, জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি রাজনৈতিক ভাবে জড়িত হলেন। তারা ডেবন থেকে ৪০০ মানুষ কোচ ভরে সকাল ৬ টায় এসে এই বিক্ষোভ যোগ দিয়েছেন।
মিস লংম্যান ও স্টিভেন নামে দুই তরুণী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। লংম্যান বলেন, আমি ভোটার হওয়ার, ৪ মাসের মাথায় এই ব্রেক্সিট ভোট দিয়েছিলাম, সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি ঠিক ভাবে।

উন্নয়ন অব্যাহত রাখতেই ভোট চাই তরুণদের

তরুণ প্রজন্মকে দেশের সব থেকে বড় শক্তি আখ্যায়িত করে এবং তাদের কর্মসংস্থানে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী নির্বাচনে তরুণদের ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
গতকাল রবিবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা তরুণদের কাছে নৌকায় ভোট চান। একই দিন গণভবনে আরেক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, তাঁর বর্তমানকে তিনি উৎসর্গ করেছেন তরুণ প্রজন্মের জন্য, যাদের হাতে তৈরি হবে এ দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ।  
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় ৬৬টি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) কমপ্লেক্সে একটি মাল্টিস্পোর্ট ইনডোর কমপ্লেক্স ও ছয় জেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভিডিও কনফারেন্সে স্থানীয় জনসাধারণ ও উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনে গত ১০ বছরে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। কাজেই আমাদের সব থেকে বড় শক্তি তরুণ প্রজন্মের কাছে আগামীর নির্বাচনের জন্য ভোট চাইব, যাতে করে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাটা বজায় থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীর নির্বাচনে যদি বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেয় এবং আমরা যদি আবারও সরকার গঠন করে দেশের সেবা করতে পারি, তাহলে আমি এটা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, ২০২০ সালের মধ্যে দেশে কোনো ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না। দেশকে আমরা আরো উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
প্রধানমন্ত্রী যুবসমাজের কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, ‘আমাদের যুবসমাজ দেশের উন্নয়নে তাদের মেধা এবং মননকে কাজে লাগাবে এবং নতুন নতুন চিন্তাভাবনা করবে যেন এই দেশকে আরো দ্রুত কিভাবে উন্নত করে গড়ে তোলা যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যোগাযোগব্যবস্থা থেকে শুরু করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা ক্রীড়া এবং যুব উন্নয়নকে সব সময় গুরুত্ব দেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের যত বেশি খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চায় সম্পৃক্ত করতে পারব, তত বেশি তাদের চরিত্র আরো অনেক দৃঢ় হবে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। মাদক অথবা জঙ্গি এ ধরনের কোনো বিপথে যাবে না। সে জন্য তাদের আমরা খেলাধুলার দিকে আরো সম্পৃক্ত করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লেখাপড়ার ওপর গুরুত্ব দেই। জাতিকে শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষার সঙ্গে খেলাধুলা একান্তভাবে অপরিহার্য। খেলাধুলার সঙ্গে শিশু-কিশোররা যত বেশি সম্পৃক্ত হবে, আমি মনে করি, তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে, মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা হবে, একটা মনোবল তারা ফিরে পাবে এবং দেশ ও জাতির জন্য গৌরব বয়ে আনবে।’
প্রতিটি উপজেলায় সারা বছর যেন ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে সে জন্য একটি করে ‘মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খেলাধুলার সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা সম্পৃক্ত থাকবে সেখানে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হবে। ছোট্ট একটা জায়গা থাকবে, বাকি জায়গাটা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত থাকবে, যেন রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও, কেউ দেখতে পারে সেখানে ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করছে।’
তৃণমূলের তরুণ ক্রীড়াবিদরা যেন জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিতে পারে সে জন্য এই মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ৪৯০টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন উপজেলায় জায়গার অভাবে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দয়া করে জায়গা নির্দিষ্ট করে দেন। এটা কিন্তু কোনো স্কুলের জায়গা, মাঠ, কলেজের মাঠে হবে না; এটা সম্পূর্ণ আলাদা জায়গায় হবে। এই কারণে ১২ মাস খেলাধুলা চলতে পারে, সব জায়গায় খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি হবে সেটা আমরা চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, যুবকরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। সবাই উচ্চশিক্ষা নেবে তা নয়। প্রত্যেকের একটা প্রশিক্ষণ দেওয়া শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তারা যেন নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। আমরা এখন প্রতিটি জেলায় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে দেব। যে প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের যুবকরা ট্রেনিং নেবে। ট্রেনিং নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের পরিবারকে সহযোগিতা করবে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’
ক্রিকেট, দাবা, হকি খেলাগুলোতে ধারাবাহিক সাফল্যের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্য ও স্পেশাল অলিম্পিকে প্রতিবন্ধীদের সাফল্যের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রতিবন্ধী নাগরিকদের খেলাধুলার জন্য একাডেমি প্রতিষ্ঠা করবে সরকার।
তরুণ উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র পরিসরে নিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেন শুরু করতে পারে, সে জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখানে তাদের কোনো জামানত দিতে হবে না। বেকার হয়ে যেন ঘুরে বেড়াতে না হয়, সে জন্য এই ব্যবস্থা। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে আমরা এই কর্মসংস্থান ব্যাংক তৈরি করে দিয়েছি।’
ভিডিও কনফারেন্সে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন সিকদার, ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিসুর রহমান বক্তব্য দেন।
এর আগে গণভবনে মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের সুবিধা ‘মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি’ (এমএনপি) সেবার উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের বর্তমানকে আমি উৎসর্গ করেছি তরুণ প্রজন্মের জন্য। তারাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়বে। আমরা তো চলেই যাচ্ছি। কিন্তু বর্তমানে যতটুকু কাজ আমরা এগোতে পারি, সেটা আমরা উৎসর্গ করেছি তরুণ প্রজন্মের জন্য।’
যারা এ দেশের ভবিষ্যেক গড়ে তুলবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে, তাদের চলার গতি যেন কোথাও থেমে না যায়, তা নিশ্চিত করার প্রত্যাশার কথা বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েদের এটাই বলব, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া শিখতে হবে। আর প্রযুক্তির ব্যবহারে আরো অভ্যস্ত হতে হবে। প্রযুক্তির ক্ষেত্র প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। যত দিন যায় প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তি বের হয়।’
আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা।
এমএনপি সেবার পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম গত ১ অক্টোবর শুরু হলেও গণভবনের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার আরেকটি পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। একটা সিম থেকে যেকোনো অপারেটরে আরেকটা সিমে নাম্বার পরিবর্তন করা বা একটা অপারেটর থেকে আরেকটা অপারেটরে যাওয়ার যে আধুনিক প্রযুক্তি, পৃথিবীর খুব সীমিত দেশ এটা ব্যবহার করে। আমরা সেই যুগে প্রবেশ করছি। যদিও এটি একটা জটিল বিষয়, সেটাকে আজ সহজভাবে করে দেওয়া হয়েছে। এই এমএনপি সেবা অনেকের জন্য সুবিধা হবে।’
বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন।

ব্রাজিল হাইকমিশনে ভুয়া স্ত্রী ও সন্তান বানিয়ে পার্মানেন্ট ভিসা আবেদনের অভিযোগ


ব্রাজিলে গোয়েন্দা নজরদারিতে প্রবাসীরা , যে সকল প্রবাসী বাংলাদেশী ব্রাজিলে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট পেয়েছেন তাদের মধ্যে কিছু অসাধু ব্যক্তি সম্প্রতি অন্যের সন্তান কে নিজের সন্তান , অন্যের স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী বলে বাংলাদেশে ব্রাজিল হাই কমিশনে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট ভিসার আবেদন করেন । এই রকম কিছু অভিযোগ পেয়েছেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় । মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই ধরনের অপরাধ করছে বলে অভিযোগ কারি জানিয়েছেন ।

ব্যাপারটি আমলে নিয়ে সম্প্রতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয় । ইতিমধ্যে অনেকে ভিসা পেয়ে ব্রাজিলে চলেও এসেছেন বলে দাবি করছেন অভিযোগকারী । পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন - যদি তদন্তে এরকম কোন তথ্য মিলে তবে অভিযুক্ত ব্যক্তির এদেশের পার্মানেন্ট ডকুমেন্টস রেখে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ব্রাজিল হাইকমিশনে ভিসা আবেদন কারীদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে । ভুয়া কোন তথ্য প্রমাণ হলে সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা । এদিকে ব্রাজিলে অবস্থানরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে । তাদের সকল সোশ্যাল যোগাযোগ মাধ্যম নজরদারি করা হচ্ছে । 

অভিজ্ঞ মহল বলছে যদি বাংলাদেশিরা এই ধরনের কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে থাকে আর এর প্রমাণ মিলে তবে ভবিষ্যতে পারিবারিক ভিসা প্রাপ্তিতে বাংলাদেশীদের বিশেষ ভোগান্তির শিকার হতে হবে । 

বর্তমানে ব্রাজিলের পার্মানেন্ট ভিসা নিতে আবেদনকারীকে কোন প্রকার ডাক্তারি পরীক্ষার পেপারস জমা দিতে হয় না । কিন্তু  অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের জালিয়াতি ধরা পড়লে হয়তোবা সন্তান ও স্ত্রী কে বিশেষ কিছু ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে হতে পারে । 

Sunday, October 14, 2018

‘নভেম্বরেই খুন করা হবে মোদীকে’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার হুমকি দিয়ে দিল্লি পুলিশের কাছে ই-মেইলে বার্তা পাঠানো হয়েছে। আগামী নভেম্বরেই মোদীকে খুন করা হবে বলে ওই বার্তায় বলা হয়েছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার। এক লাইনের এ হুমকি বার্তা ই-মেইল করা হয়েছে দিল্লি পুলিশের কমিশনার অমূল্য পট্টনায়েককে। তার সরকারি ই-মেইল আইডিতেই এ হুমকির চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। হুমকি চিঠি পাওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। চলতি বছরের শেষেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তাই নভেম্বরে দেশজুড়ে একাধিক জনসভা ও মিছিল করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর। সেই কারণেই নভেম্বর মাসকে টার্গেট করছে জঙ্গিরা, এমনটাই ধারণা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
 
খবরে বলা হয়, ই-মেইল পাওয়ার পরই দেশজুড়ে গোয়েন্দাদের নেটওয়ার্ককে সক্রিয় করা হয়েছে। কারা মোদীকে খুন করার ষড়যন্ত্র করছে, সেটা এখনও জানা যায়নি। যদিও হুমকি দিয়ে পাঠানো ই-মেইলটি যে সার্ভার থেকে পাঠানো হয়েছে, সেই সার্ভারটি উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামে অবস্থিত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
 
প্রধানমন্ত্রী মোদীকে খুনের হুমকি অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এ বছরের জুনেই একটি গোপন চিঠি উদ্ধার করার কথা জানায় পুনে পুলিশ। সেই চিঠিতে মোদীকে খুন করার ছক লেখা ছিল, এমনটাই জানানো হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। সেক্ষেত্রে অবশ্য সন্দেহের তীর ছিল মাওবাদীদের দিকে। জানা গিয়েছিল রাজীব গান্ধীর আদলেই মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে ভিমা কোরেগাঁও দাঙ্গার তদন্ত করতে গিয়েই এ চিঠিটি হাতে এসেছিল গোয়েন্দাদের। ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল লেখা এ চিঠিটি পাওয়া গিয়েছিল রোনা উইলসন নামের এক সমাজকর্মীর দিল্লির বাড়ি থেকে। ভিমা কোরেগাঁও দাঙ্গায় রোনা উইলসনসহ আরও পাঁচ সমাজকর্মীকে জুনেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখনই মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রথম সামনে আসে।

সৌদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে পরিণতি হবে ভয়াবহ: রিয়াদ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৌদি কর্মকর্তা: ‘সৌদি আরবের জনগণ সব কিছু রুখে দিয়ে আগের মতোই অবিচল থাকবে।’ ছবি: আল-আরাবিয়া।
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি ইস্যুতে মুখ খুললো সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনাকে কোন ধরনের হুমকি মনে করছে না জানিয়ে রবিবার দেশটির এক কর্মকর্তা বলেন, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যেকোন ব্যবস্থার জবাব হবে আরও ভয়াবহ।  খবর সৌদি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ নিউজ ও আল-আরাবিয়া।
 
নাম প্রকাশ না করা ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ এনে দুর্নাম রটানোর এমন দুর্বল চেষ্টা এর আগেও করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কিছুই হয়নি। এবারও হবে না। কিছুদিন পর এগুলো সবাই ভুলে যাবে। কিন্তু সৌদি আরবের জনগণ সব  কিছু রুখে দিয়ে আগের মতোই অবিচল থাকবে।’
 
গেল ২ অক্টোবর কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক ও স্বেচ্ছা-নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। এরপর থেকে নিখোঁজ হন তিনি। তুরস্ক বলছে একইদিন সৌদি আরব থেকে ইস্তাম্বুল আসা সৌদি গোয়েন্দাদের ১৫ সদস্যের একটি দল কনস্যুলেটের ভেতরে খাশোগিকে খুন করে থাকতে পারে।

তবে সৌদি আরব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, কাজ শেষে কনস্যুলেট ত্যাগ করেছেন খাশোগি। যদিও দাবির স্বপক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেনি দেশটি।

খাশোগি দীর্ঘদিন ধরে গ্রেপ্তার এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। সৌদি রাজতন্ত্রের কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি।

রিয়াদে শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করবে ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র

২ অক্টোবর তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। ফাইল ছবি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, সাংবাদিক খাশোগি নিঁখোজ হওয়ার জেরে চলতি মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন বয়কট করবে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সংস্কারে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানে গৃহীত কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়েছিল। বিবিসি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
 
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভ মুচিন এবং যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সচিব লিয়াম ফক্স সম্মেলনে যোগ দেবেন না। এরই মধ্যে বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষক ও গণমাধ্যম গ্রুপগুলো সম্মেলনটি বয়কট করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।
 
যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি মাসে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সম্মেলনের জন্য ডায়রি করার আদেশ পাননি তারা।
 
গেল ২ অক্টোবর কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক ও স্বেচ্ছা-নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। এরপর থেকে নিখোঁজ হন তিনি। তুরস্ক বলছে একইদিন সৌদি আরব থেকে ইস্তাম্বুল আসা সৌদি গোয়েন্দাদের ১৫ সদস্যের একটি দল কনস্যুলেটের ভেতরে খাশোগিকে খুন করে তার দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করেছে।

তবে সৌদি আরব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, কাজ শেষে কনস্যুলেট ত্যাগ করেছেন খাশোগি। যদিও দাবির স্বপক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেনি দেশটি।

খাশোগি দীর্ঘদিন ধরে গ্রেপ্তার এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। সৌদি রাজতন্ত্রের কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি।

যে কারণে ঐক্যফ্রন্টে থাকতে পারলেন না বি. চৌধুরী

বিকল্পধারা সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাটকীয়ভাবে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ ঘোষণা করার ঘটনা গতকাল রবিবার ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। রাজনৈতিক অঙ্গণ ও টেলিভিশনের টকশো থেকে শুরু করে সর্বত্র এনিয়ে চলছে বহুমুখী বিশ্লেষণ। সত্য, অসত্য কিংবা অর্ধসত্য নানা তথ্য ও মতের ছড়াছড়ি ছিল শনিবার বিকাল থেকে গতকাল দিনভর। সবকিছু ছাপিয়ে যে প্রশ্নটি সর্বাধিক আলোচনায় ছিল তা হলো- বি. চৌধুরী কেন থাকতে পারলেন না, থাকলেন না বা রাখা হলো না? ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে একসাথে দাঁড়িয়ে হাতে হাত ধরে ঐক্যের বার্তা ছড়ানো ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর মধ্যে এমন কী ঘটলো যে, ঠিক ২২ দিনের মাথায় ১৩ অক্টোবর এসে দু’জন ভিন্ন পথ ধরলেন?
 
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অধ্যাপক বি. চৌধুরী ও ড. কামালের ঘনিষ্ঠ একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে দু’জনের মধ্যে শুরু থেকেই টানাপোড়েন চলতে থাকে। নেতৃত্বের প্রশ্নে চলছিল স্নায়ুযুদ্ধ। বিশেষ করে, যখন খবর রটে বিএনপির বেশি আস্থা ড. কামালের ওপর, তখনই প্রথম ধাক্কা খান বি. চৌধুরী। ঐক্যে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বি. চৌধুরী নানা চেষ্টাও করেন। তার ঘনিষ্ঠদের তথ্যমতে, বি. চৌধুরী ভেতরে-ভেতরে ড. কামালকে মেনে নিতে পারছিলেন না। নানা ঘটনার পরম্পরায় এক পর্যায়ে ড. কামালও বি. চৌধুরীকে সহ্য করতে পারছিলেন না। বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যেই মাহী বি. চৌধুরী পৃথকভাবে বলয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ চালাতে থাকেন। উদ্যোগের অংশ হিসেবে খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেন, বি. চৌধুরী যান মুসলিম লীগের অনুষ্ঠানে। মাহী যোগাযোগ করছিলেন বিএনপি দলীয় সাবেক বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে, যোগযোগ করেন সুশীল সমাজের কারও কারও সঙ্গেও। বিএনপিতে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা কয়েকজন নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন মাহী। মাহীর পৃথক এই তত্পরতা প্রশ্ন ওঠে যুক্তফ্রণ্টের দুই নেতা আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার মধ্যে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যখন বিএনপির সমাবেশ চলছিল তখন বনানী চেয়ারম্যানবাড়িতে বালুর মাঠে মাহী তার ‘প্রজন্ম বাংলাদেশ’ এর অনুষ্ঠানে বিএনপির সংস্কারপন্থী দুই নেতাকে দাওয়াত করে নেন। এসব কারণে নিজ পরিবারেও মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন বি. চৌধুরী, প্রশ্নের মুখে পড়েন ঘরে-বাইরে। রব ও মান্না এসব নিয়ে প্রশ্ন তুললে বি. চৌধুরী তাদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঠিক না হওয়ায় এবং কার্যত মাহীর ভূমিকার কারণে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় বি. চৌধুরী এক পা এগোলে আবার এক পা পিছিয়ে যাচ্ছিলেন।
 
মাহীর এসব তত্পরতার খবর জেনে যান ড. কামালসহ অন্যরা। বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকে পৃথকভাবে এই তত্পরতার মধ্য দিয়ে কার্যত এক ধরনের চাপ সৃষ্টির কৌশল নেন মাহী বি. চৌধুরী। সর্বশেষ তাস খেলার মতো বি. চৌধুরী যখন ট্রাম্প করলেন, ড. কামাল ওভার ট্রাম্প করে তাকে দূরে রেখেই ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দিয়ে দেন।
 
সূত্রের দাবি, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে বি. চৌধুরী যখন যুক্তফ্রন্ট গঠনের উদ্যোগ নেন, সেই ফ্রন্টে ড. কামালেরও থাকার কথা ছিল। ড. কামাল তখন বিদেশে ছিলেন। ড. কামালের গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পক্ষ থেকে বিকল্পধারাকে অনুরোধ করে বলা হয়েছিল- ড. কামাল দেশে ফেরা পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করা হয়, এরপর যুক্তফ্রন্টের ঘোষণা দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তবে সেই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে এবং ড. কামালের জন্য অপেক্ষা না করেই রব ও মান্নাকে নিয়ে যুক্তফ্রন্টের ঘোষণা দেয় বিকল্পধারা। দেশে ফিরে ঘটনা জেনে সংক্ষুব্ধ হন ড. কামাল।
 
এরপর যখন বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন প্রথমদিন থেকেই রব ও মান্না চেষ্টা করেন বি. চৌধুরীকে নিয়েই বৃহত্তর ঐক্য গড়তে। কিন্তু প্রায়শই বেঁকে বসতেন বি. চৌধুরী ও বিকল্পধারার যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী। জামায়াতের সম্পৃক্ততা ও ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় বি. চৌধুরী ও মাহী যখন বিএনপিকে ১৫০ আসনের বেশি দিতে রাজি হচ্ছিলেন না তখন রব ও মান্না বারবার পিতা-পুত্রকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার গিয়ে বি. চৌধুরী ও মাহীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। যার কারণে কয়েকটি সভা বা বৈঠকে কখনও বি. চৌধুরী, কখনও মাহী আবার কখনও বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান যোগ দেন। এরপর বি. চৌধুরী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে যখন রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অপমানজনকভাবে অপসারণের প্রসঙ্গ তোলা হয় তখনও বিএনপির তিন নেতা- মির্জা ফখরুল, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বি. চৌধুরীর বারিধারার বাড়িতে গিয়ে অতীতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এতেও খুব একটা কাজ হচ্ছিল না।
 
সম্প্রতি বি. চৌধুরীর জন্মদিনে ফুল নিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে যান আ স ম রব। সূত্রমতে, সেইদিন মাহী বি. চৌধুরী রবকে বলেছিলেন, বৃহত্তর ঐক্যের নামে বিএনপি আমাদেরকে একটা বড় বিপদে ফেলতে পারে। স্পর্শকাতর কোনো ঘটনায় বি. চৌধুরীসহ আমাদের সবাইকে বিপদে ফেলে দিতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সবারই সতর্ক থাকা জরুরি। ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মন খারাপ করে রব সেদিন বেরিয়ে আসেন বি. চৌধুরীর বারিধারার বাড়ি ‘মায়াবী’ থেকে।
 
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা উপলক্ষে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য পাঠ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। এর পরপরই মান্নার সঙ্গে মাহীর টেলিফোনে কথা হয়। সেই কথোপকথন ফাঁস হয়ে এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই কথোপকথনেও মান্নার উদ্দেশে মাহীকে বলতে শোনা যায়, ‘একটা চক্রের মধ্যে তো আপনারা পড়ে গেলেন মান্না ভাই! রব চাচা, আপনারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গেলেন। আমরা আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম। ঐক্যের নাম দিয়ে এখানে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আপনাকে দিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠ করানো হচ্ছে, আমাকেও এখানে ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আজকের এই কথাটা শুধু মনে রাখবেন। আর কিছু বলব না। আমার মনে হয় একটা চক্রান্তের মধ্যে আপনারা ভিকটিম হয়ে যাচ্ছেন মান্না ভাই। আমার মনে বিশ্বাস থেকে বললাম, ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখানে আমাদের জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। আমি আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম। আপনাকে দিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠ করানো হলো।’
 
জানা গেছে, ঐক্যে থাকতে হলে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ এবং ভারসাম্যের রাজনীতির প্রতিষ্ঠায় বিকল্পধারা যখন বারবারই বিএনপিকে ১৫০ আসনে ছাড় দেয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছিল তখন একটা পর্যায়ে রব মাহীকে মোবাইল ফোনে একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠান। যাতে রব অনুরোধ করে লিখেছেন, ‘বাবাদের রাজনীতি করতে দাও’। বিএনপির পক্ষ থেকেও বি. চৌধুরী ও মাহীকে বহুবার বলা হয়, জামায়াত আছে ২০ দলে, বৃহত্তর ঐক্যের সঙ্গে জামায়াতকে রাখা হবে না। ড. কামালও বি. চৌধুরীর উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘জামায়াতের তো এখন নিবন্ধনই নেই, বিএনপির জোটে কারা থাকবে কী থাকবে না সেটা বিএনপির বিষয়; আমাদের ঐক্য হচ্ছে বিএনপিসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোর সঙ্গে।’ তবুও দুই শর্ত থেকে টলছিলেন না বিশেষত মাহী। নির্ভরযোগ্য সূত্র ইত্তেফাককে জানায়, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও একবার মাহীকে অনুরোধ করে বলেছেন, ‘বাবা, এবারের রাজনীতিটা ভিন্ন। আমাদের সবার এখন লক্ষ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় করা। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে বিএনপি আগের মতো এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু করতে পারবে না। তোমরা যেই ভারসাম্যের রাজনীতির কথা বলছো-সেটাই করা হবে।’
 
সর্বশেষ শুক্রবার রাতে রবের উত্তরার বাড়িতে বৈঠকে যান মাহী বি. চৌধুরী। সেখানে ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্যের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। শনিবার বিকল্পধারার সংবাদ সম্মেলনে মাহী নিজেই আগেরদিন রবের বাসায় বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ‘আমি তখন বললাম এই দাবি ও লক্ষ্যসমূহ আগে বি. চৌধুরী ও ড. কামাল বৈঠক করে চূড়ান্ত করবেন। তাছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার আগে জামায়াতের সম্পৃক্ততা ও আসন ভাগাভাগির বিষয়টির সুরাহা করতে হবে।’ গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ইত্তেফাককে জানান, শুক্রবার রবের বৈঠকে মাহী যখন এসব কথা বলেন তখন আমরা সবাই মিলে তাকে বলেছিলাম, ‘এসব পরে দেখা যাবে, আগে দেশের মানুষের ভোটাধিকার আদায় করা জরুরি।’
 
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান থাকাবস্থাতেই বি. চৌধুরী, মাহী ও মেজর (অব.) আবদুল মান্নান যখন খেলাফত আন্দোলন ও মুসলিম লীগ ছাড়াও বিএনপির সাবেক-বর্তমান অনেক নেতার সঙ্গে পৃথকভাবে যোগাযোগ করছিলেন তখন ড. কামালসহ অন্যদের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় দেখা দেখা দেয়। শুক্রবার রবের বাসায় বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের দাবি ও লক্ষ্যসমূহের খসড়া যখন চূড়ান্ত করা হয় তখনও বাধা আসে বিকল্পধারার পক্ষ থেকেই। ঐক্য প্রক্রিয়া যখনই একটু অগ্রসর হয় তখনই বাধ সাধে বিকল্পধারা। এতে ড. কামাল, বিএনপি ও অন্যদের মধ্যে ধারণা জন্মায় যে, ঐক্যফ্রন্টে থাকলেও বিকল্পধারা যে কোনসময় বের হয়ে যেতে পারে। আরও সংশয় জন্মে যে, শনিবার বি. চৌধুরী ও ড. কামালের পৃথক বৈঠক হলে ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা বিলম্বিত হতে পারে। সূত্র জানায়, এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েই কৌশলে বি. চৌধুরীকে এড়িয়ে যান ড. কামাল। একদিনও সময় না নিয়ে তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায়ই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রার ঘোষণা দিয়ে দেন ড. কামাল। কৌশল, পাল্টা কৌশল আর সন্দেহ-সংশয়ের শেষ পর্যন্ত ফলাফল দাঁড়ায়, বি. চৌধুরী ও তার দল বিকল্পধারাকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
 
এদিকে, শনিবার ড. কামালের বেইলি রোডের বাড়ি থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যাবার পর বারিধারায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে বি. চৌধুরী বলেছেন, ‘বিএনপিকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য বিকল্পধারা কোনো ঐক্যে যাবে না।’ তার এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির দু’জন সদস্য ইত্তেফাককে বলেন, বি. চৌধুরীর সঙ্গে যদি সমস্যা হয়ে থাকে সেটি হয়েছে ড. কামালের সঙ্গে, তিনি যদি অপমান বোধ করেন তাও ড. কামালের কারণে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তো বি. চৌধুরীর কিছু ঘটেনি। তাহলে বি. চৌধুরী কেন বিএনপিকে ক্ষমতায় নেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিলেন? বি. চৌধুরী দ্ল দিলে তা দিতে পারেন ড. কামালকে, কিন্তু বিএনপিকে কেন তিনি শাস্তি দিতে চান? বরং শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মির্জা ফখরুল, ড. মোশাররফ ও মওদুদ আহমদ তিনজনই অভিন্ন কণ্ঠে বলেছেন- স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষের যেসব দল, ব্যক্তি ও সংগঠন এখনও এই ঐক্যের বাইরে তাদের আহ্বান জানাবো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধাদের এই লড়াইয়ে আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। প্রসঙ্গত, ওই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে যেন বি. চৌধুরীর প্রসঙ্গ এনে বিব্রত করতে না পারেন এবং বি. চৌধুরী সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য না আসে; সেজন্য ফখরুল, মোশাররফ ও মওদুদের উদ্যোগেই সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রশ্ন নেয়া হয়নি। জানা গেছে, এতকিছুর মধ্যেও বিকল্পধারার এক নেতা গতকাল কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
 
বিএনপি ও গণফেরামের নেতারা গতকাল ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিকল্পধারা বারবার যে ভারসাম্যের রাজনীতির কথা বলছে সেটি তো ঐক্যফ্রন্টের ঘোষিত ১১টি লক্ষ্যের ১ নম্বরেই রয়েছে। যেখানে বলা আছে ‘মহান মুক্তিসংগ্রামের চেতনা ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, ন্যায় ভিত্তিক, শোষণমুক্ত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা। এক ব্যক্তি কেন্দ্রীক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানকল্পে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা।’ আর ৯ নম্বর লক্ষ্যে বলা হয়েছে, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কোন জঙ্গি গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূ-খ্ল ব্যবহার করতে না দেয়া।’ আর ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দিয়ে ড. কামাল বলেছেন, ‘এই ঐক্য কোনো দলীয় স্বার্থে নয়। জাতীয় স্বার্থে এই ঐক্য। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল দল, ব্যক্তি ও সংগঠনকে ঐক্যফ্রন্টে স্বাগতম।’ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তাফা আমীন ইত্তেফাককে বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের এই সংগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের দরজা কারও জন্য বন্ধ করা হয়নি।’
 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates