ইরানের পরমাণু সমঝোতা ত্যাগ করতে নিজের ইউরোপীয় মিত্রদের রাজি করাতে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন সুর পাল্টে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থাপিত ‘ইরান অ্যাকশন গ্রুপের’ প্রধান ব্রায়ান হুক দাবি করেছেন, ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে ওয়াশিংটন একাই বেরিয়ে গেছে এবং ওয়াশিংটন ইউরোপকে একই কাজ করতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেনি।
হুক আরো দাবি করেছেন, ইউরোপীয় কম্পানিগুলো ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে না।
ব্রায়ান হুক এমন সময় এ দাবি করলেন যখন গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিজের ইউরোপীয় মিত্রদেরও এই সমঝোতা থেকে বের করে নিতে বহু পন্থা অবলম্বন করেছে। মার্কিন শীর্ষ কর্মর্তারা বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বহুবার কথা বলেছেন এবং ইউরোপীয় কম্পানিগুলোকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করলে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে ওয়াশিংটন।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন গত সপ্তাহে এ সম্পর্কে বলেছেন, ইউরোপ বা অন্য কাউকে ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অনুমতি দেবে না ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া বাকী পাঁচ জাতিগোষ্ঠী সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে লেনদেনের জন্য আলাদা বিশেষ চ্যানেল খোলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, পাঁচ জাতিগোষ্ঠীর এ পদক্ষেপ ‘হতাশাজনক।’
ইউরোপীয় দেশগুলো গত মে মাস থেকেই মার্কিন কর্মকর্তাদের ব্যাপক চাপ উপেক্ষা করে ইরানের পরমাণু সমঝোতায় টিকে থাকা এবং ইরানকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে এসেছে। ইউরোপীয় পরিষদের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক এ সম্পর্কে বলেছেন, ওয়াশিংটন নিজের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও স্বাধীন দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। তিনি আরো বলেন, ইউরোপ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে ইরানের পরমাণু সমঝোতা রক্ষা করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানকে এ সমঝোতায় টিকে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলে এসেছে, ওই সমঝোতায় ইরানের যে অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষিত হওয়ার কথা ছিল তা রক্ষা করার চেষ্টা করবে ইউরোপ। এ লক্ষ্যেই গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে পাঁচ জাতিগোষ্ঠী ইরানের সঙ্গে লেনদেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে পাশ কাটিয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক চ্যানেল তৈরির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটাতে শুধু ইউরোপ নয় আরো অনেক দেশ ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে। ওয়াশিংটন ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আহ্বান জানালেও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, আগামী মাসে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রর দ্বিতীয় দফা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই এ নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। আর এ কারণেই এই ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দিতে যুক্তরাষ্ট্রর ইরান অ্যাকশন গ্রুপের প্রধান ব্রায়ান হুক এখন সুর নরম করে দিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment