তরুণ প্রজন্মকে দেশের সব থেকে বড় শক্তি আখ্যায়িত করে এবং তাদের কর্মসংস্থানে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী নির্বাচনে তরুণদের ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
গতকাল রবিবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা তরুণদের কাছে নৌকায় ভোট চান। একই দিন গণভবনে আরেক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, তাঁর বর্তমানকে তিনি উৎসর্গ করেছেন তরুণ প্রজন্মের জন্য, যাদের হাতে তৈরি হবে এ দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ।
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় ৬৬টি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) কমপ্লেক্সে একটি মাল্টিস্পোর্ট ইনডোর কমপ্লেক্স ও ছয় জেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভিডিও কনফারেন্সে স্থানীয় জনসাধারণ ও উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনে গত ১০ বছরে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। কাজেই আমাদের সব থেকে বড় শক্তি তরুণ প্রজন্মের কাছে আগামীর নির্বাচনের জন্য ভোট চাইব, যাতে করে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাটা বজায় থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীর নির্বাচনে যদি বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেয় এবং আমরা যদি আবারও সরকার গঠন করে দেশের সেবা করতে পারি, তাহলে আমি এটা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, ২০২০ সালের মধ্যে দেশে কোনো ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না। দেশকে আমরা আরো উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
প্রধানমন্ত্রী যুবসমাজের কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, ‘আমাদের যুবসমাজ দেশের উন্নয়নে তাদের মেধা এবং মননকে কাজে লাগাবে এবং নতুন নতুন চিন্তাভাবনা করবে যেন এই দেশকে আরো দ্রুত কিভাবে উন্নত করে গড়ে তোলা যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যোগাযোগব্যবস্থা থেকে শুরু করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা ক্রীড়া এবং যুব উন্নয়নকে সব সময় গুরুত্ব দেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের যত বেশি খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চায় সম্পৃক্ত করতে পারব, তত বেশি তাদের চরিত্র আরো অনেক দৃঢ় হবে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। মাদক অথবা জঙ্গি এ ধরনের কোনো বিপথে যাবে না। সে জন্য তাদের আমরা খেলাধুলার দিকে আরো সম্পৃক্ত করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লেখাপড়ার ওপর গুরুত্ব দেই। জাতিকে শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষার সঙ্গে খেলাধুলা একান্তভাবে অপরিহার্য। খেলাধুলার সঙ্গে শিশু-কিশোররা যত বেশি সম্পৃক্ত হবে, আমি মনে করি, তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে, মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা হবে, একটা মনোবল তারা ফিরে পাবে এবং দেশ ও জাতির জন্য গৌরব বয়ে আনবে।’
প্রতিটি উপজেলায় সারা বছর যেন ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে সে জন্য একটি করে ‘মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খেলাধুলার সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা সম্পৃক্ত থাকবে সেখানে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হবে। ছোট্ট একটা জায়গা থাকবে, বাকি জায়গাটা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত থাকবে, যেন রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও, কেউ দেখতে পারে সেখানে ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করছে।’
তৃণমূলের তরুণ ক্রীড়াবিদরা যেন জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিতে পারে সে জন্য এই মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ৪৯০টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন উপজেলায় জায়গার অভাবে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দয়া করে জায়গা নির্দিষ্ট করে দেন। এটা কিন্তু কোনো স্কুলের জায়গা, মাঠ, কলেজের মাঠে হবে না; এটা সম্পূর্ণ আলাদা জায়গায় হবে। এই কারণে ১২ মাস খেলাধুলা চলতে পারে, সব জায়গায় খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি হবে সেটা আমরা চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, যুবকরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। সবাই উচ্চশিক্ষা নেবে তা নয়। প্রত্যেকের একটা প্রশিক্ষণ দেওয়া শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তারা যেন নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। আমরা এখন প্রতিটি জেলায় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে দেব। যে প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের যুবকরা ট্রেনিং নেবে। ট্রেনিং নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের পরিবারকে সহযোগিতা করবে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’
ক্রিকেট, দাবা, হকি খেলাগুলোতে ধারাবাহিক সাফল্যের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্য ও স্পেশাল অলিম্পিকে প্রতিবন্ধীদের সাফল্যের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রতিবন্ধী নাগরিকদের খেলাধুলার জন্য একাডেমি প্রতিষ্ঠা করবে সরকার।
তরুণ উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র পরিসরে নিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেন শুরু করতে পারে, সে জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখানে তাদের কোনো জামানত দিতে হবে না। বেকার হয়ে যেন ঘুরে বেড়াতে না হয়, সে জন্য এই ব্যবস্থা। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে আমরা এই কর্মসংস্থান ব্যাংক তৈরি করে দিয়েছি।’
ভিডিও কনফারেন্সে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন সিকদার, ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিসুর রহমান বক্তব্য দেন।
এর আগে গণভবনে মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের সুবিধা ‘মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি’ (এমএনপি) সেবার উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের বর্তমানকে আমি উৎসর্গ করেছি তরুণ প্রজন্মের জন্য। তারাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়বে। আমরা তো চলেই যাচ্ছি। কিন্তু বর্তমানে যতটুকু কাজ আমরা এগোতে পারি, সেটা আমরা উৎসর্গ করেছি তরুণ প্রজন্মের জন্য।’
যারা এ দেশের ভবিষ্যেক গড়ে তুলবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে, তাদের চলার গতি যেন কোথাও থেমে না যায়, তা নিশ্চিত করার প্রত্যাশার কথা বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েদের এটাই বলব, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া শিখতে হবে। আর প্রযুক্তির ব্যবহারে আরো অভ্যস্ত হতে হবে। প্রযুক্তির ক্ষেত্র প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। যত দিন যায় প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তি বের হয়।’
আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা।
এমএনপি সেবার পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম গত ১ অক্টোবর শুরু হলেও গণভবনের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার আরেকটি পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। একটা সিম থেকে যেকোনো অপারেটরে আরেকটা সিমে নাম্বার পরিবর্তন করা বা একটা অপারেটর থেকে আরেকটা অপারেটরে যাওয়ার যে আধুনিক প্রযুক্তি, পৃথিবীর খুব সীমিত দেশ এটা ব্যবহার করে। আমরা সেই যুগে প্রবেশ করছি। যদিও এটি একটা জটিল বিষয়, সেটাকে আজ সহজভাবে করে দেওয়া হয়েছে। এই এমএনপি সেবা অনেকের জন্য সুবিধা হবে।’
বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment