আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে এ ধরনের প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির করবে। এবার সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দল দুটি প্রায় ১০০ নারীকে মনোনয়ন দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এ খবরে মনোনয়ন দৌড়ে শামিল হয়েছেন অনেক নতুন মুখ। তারা প্রার্থিতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
উভয় দল আগ্রহীদের ভেতর থেকে বাছাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি সরাসরি নির্বাচনের জন্য যোগ্য প্রার্থীর সন্ধান চলছে।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকলেও উপযুক্ত প্রার্থীর সন্ধান চলছে বিএনপিতেও। এ দলটিও সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি সরাসরি নির্বাচনে এবার আগের চেয়ে অধিক সংখ্যক প্রার্থী দেবে।
ইতিমধ্যে উভয় সংগঠনই মূল দলসহ নিজ নিজ অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মধ্যে এলাকায় জনপ্রিয়, যোগ্য ও ত্যাগী নেত্রীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
উভয় দলের নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান সংসদে সরাসরি নির্বাচনে জিতে আসা নারী সংসদ সদস্য আছেন ২২ জন। এর মধ্যে ১৯ জনই আওয়ামী লীগের। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে ১১ জনকে সরাসরি নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল।
আসন্ন নির্বাচনে উভয় দলই প্রায় ৫০ জন করে নারী প্রার্থী দেয়ার কথা ভাবছে। সে লক্ষ্যে যোগ্য প্রার্থীর সন্ধান করছেন দল দুটির শীর্ষ নেতারা। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন শতাধিক প্রার্থী।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মতে, আগের তুলনায় আসন্ন নির্বাচনে মহিলা প্রার্থী বেশি দেয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ভোটার আকৃষ্ট করা। মোট ভোটারের অর্ধেকই তারা। দেশের উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি তাদের অংশগ্রহণও প্রায় সমান। ভোটানুষ্ঠানেও দিন দিন তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। তাছাড়া তুলনামূলকভাবে ভোটাররা এ ধরনের প্রার্থীদের ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।
বিশেষ করে জনসেবা, ভোটারের কথা শোনা, সংসদে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকায় জনসাধারণের সন্তুষ্টি বাড়ছে। তাই জেতার কৌশল হিসেবেই উভয় দল নারী প্রার্থী বাড়াতে চাচ্ছেন।
নেতারা আরও জানান, নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূর্ণ করার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আছে। আরপিওর ৯০-এর খ-এর খ(২) অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পর্যায়ক্রমে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া আছে।
এ কোটা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে একাধিকবার রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়ে তাগিদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সে কারণে উভয় দলই চাচ্ছে আগের নির্বাচনের তুলনায় এবার প্রার্থীর হার বাড়িয়ে রাখতে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুত নারী নেতৃত্ব কোটা পূরণে কাজ করছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বেশ কিছু সংগঠন। ইতিমধ্যে এসব সংগঠন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়ে তাদের দাবির কথা জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোরে প্রতিশ্রুত কোটা পূরণ, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের সরাসরি মনোনয়নসহ বেশ কিছু দাবি নির্বাচন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছে মহিলা পরিষদ।
এ বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি আয়েশা খানম যুগান্তরকে বলেন, ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন পদ্ধতি চালুর পর ২০২০ সালের মধ্যে সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব পূরণের প্রতিশ্রুতি ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর। কিন্তু ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এসব প্রতিশ্রুতির অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল।
তিনি বলেন, আমরা চাই আগামী নির্বাচনেই আরপিওর শর্ত পূরণ করুক রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু তারা নানা কারণে সেগুলো করছে না। আমরা সরকারের কাছেও এ বিষয়ে জানিয়েছি।
বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রে বর্তমানে অবস্থান করছেন নারীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তাদের মধ্যে দু’জন বর্তমানে সংসদ সদস্য। অপরজন একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সরাসরি নির্বাচিত এমপি।
জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় সংসদে মোট আসন আছে ৩৫০টি। এর মধ্যে ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমান সংসদে সরাসরি নির্বাচনে জিতে আসা মোট নারী সংসদ সদস্য আছেন ২২ জন। এর মধ্যে ১৯ জনই আওয়ামী লীগের। সংরক্ষিত ৫০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সদস্য ৪২ জন।
অপরদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। তবে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে ১১ জন সরাসরি নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পান। উভয় দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ আগেরবারের চেয়ে আরও বেশি সংখ্যায় নারী প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সংখ্যা পঞ্চাশের কোটা স্পর্শ করতে পারে।
অপরদিকে নির্বাচনে অংশ নিলে কমপক্ষে ৪০ জনকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়ার চিন্তাভাবনা আছে বলে জানা গেছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরাও এমনই আশা করছেন। তবে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেত্রী মনোনয়ন দৌড়ে আছেন।
উভয় দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরাসরি নির্বাচনে প্রার্থিতায় মাঠের রাজনীতিতে অংশ নেয়া নেতাদেরই প্রাধান্য দেয়া হবে। এ ছাড়া আদর্শের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পেশাজীবী বিশেষ করে সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গন, ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে তারকা, ভালো ইমেজসম্পন্ন ও জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দেয়ার চিন্তাভাবনাও আছে।
এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কমিটির শীর্ষপদে আছেন এমন অনেক নেত্রী এবার দলীয় মনোনয়নে গুরুত্ব পাবেন। এ ছাড়া চলতি সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য, সাবেক এমপি, তারকা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য পেশাজীবীর মধ্য থেকে প্রার্থী খুঁজছেন ক্ষমতাসীনরা।
অপরদিকে বিএনপি, মহিলা দল, ছাত্রদল, পেশাজীবী সংগঠনের জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেত্রীরা দলীয় মনোনয়নে গুরুত্ব পাবেন। এ ছাড়া বিগত বিভিন্ন সংসদের সাবেক এমপি, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক জগতের তারকা এবং অন্যান্য পেশাজীবীর মধ্য থেকে প্রার্থী দেয়া হতে পারে।
আওয়ামী লীগ : আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে দশম সংসদে সরাসরি এবং সংরক্ষিত আসনের নারী এমপিদের অনেকেই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের আরপিও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক আসনে পুরুষ প্রার্থীরস্থলে নারী প্রার্থী আসতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, নারীর যেটুকু ক্ষমতায়ন হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হয়েছে। আমরা নারীদের নেতৃত্বে আনতে আরও বেশি উৎসাহিত করছি। বর্তমান সংসদে অনেক নারী জনপ্রতিনিধি আছেন। আগামী নির্বাচনে আরও অধিকসংখ্যক নারী প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। অনেকের নামই প্রস্তাব আকারে এসেছে। এখান থেকে জনপ্রিয় নারীদের মনোনয়ন দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী ১৪ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আটজন (একজন সংরক্ষিত) নারী এমপি রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সরাসরি নির্বাচিত এমপিরা হলেন- গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রংপুর-৬-এ ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, গাইবান্ধা-২ আসনে মাহাবুব আরা বেগম গিনি, যশোর-৬ আসনে ইসমত আরা সাদেক, বাগেরহাট-৩ আসনে হাবিবুন নাহার, বরিশাল-৫-এ বেগম জেবুন্নেছা আফরোজ, শেরপুর-২ আসনে মতিয়া চৌধুরী, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মমতাজ বেগম, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে সাগুফতা ইয়াসমিন, গাজীপুর-৪ আসনে সিমিন হোসেন রিমি, গাজীপুর-৫ আসনে মেহের আফরোজ, চাঁদপুর-৩ আসনে ডা. দীপু মনি, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়া সেনগুপ্তা এবং মৌলভীবাজার-৩ আসনে সৈয়দা সায়রা মহসীন, ফরিদপুর- আসনে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ঢাকা-১৮ আসনে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, খুলনা-৩ আসনে মন্নুজান সুফিয়ান, নেত্রকোনা-৪ আসনে রেবেকা মোমিন, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, নোয়াখালী-৬ আসনে আয়েশা ফেরদাউস। সরাসরি নির্বাচিত এসব এমপির অধিকাংশই ফের মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে সংরক্ষিত নারী এমপিদের মধ্যে অনেকেই এবার সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেক স্থানে গণসংযোগসহ বিভিন্ন দলীয় কর্মকাণ্ড পালন করতে গিয়ে বর্তমান এমপিদের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। দলীয় মনোনয়নের জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে লবিং করছেন।
সরাসরি নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন এমন সংরক্ষিত নারী এমপিরা হলেন- তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম টাঙ্গাইল-৬, আওয়ামী লীগের নারীবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা মুন্সীগঞ্জ-৩, মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শিরীন নাঈম পুনম চুয়াডাঙ্গা-১, সহসভাপতি নাসিমা ফেরদৌসী বরগুনা-২, অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা চাঁদপুর-৫, যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন ঢাকা-১৪, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি নড়াইল-১, সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার শরীয়তপুর-৩, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিনা জাহান লিটা ঠাকুরগাঁও-৩, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী হবিগঞ্জ-১, মাহজাবিন খালেদ বেবী জামালপুর-২ এবং ওয়াসিকা আয়েশা খান চট্টগ্রাম-১৩ আসনে।
এদিকে বসে নেই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন এবং তারকা প্রার্থীরা। তারাও নিজ নিজ আসনে নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিজের জন্য দোয়া চাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফরিদুন্নাহার লাইলী লক্ষ্মীপুর-৪, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য মারুফা আক্তার পপি জামালপুর-৫, মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাফিয়া খাতুন কক্সবাজার-১, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রীক ঢাকা-১৫, সহসভাপতি আজিজা খানম কেয়া পাবনা-১, দফতর সম্পাদক রোজিনা নাসরীন বরগুনা-১, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ফেনী-৩, সাবেক সংরক্ষিত নারী এমপি শাহিদা তারেখ দীপ্তি ঢাকা-১৬, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী সিরাজগঞ্জ-২, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমত আরা হ্যাপী মাগুরা-১, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব চট্টগ্রাম-১২, সাবেক এমপি সুলতানা তরুণ কুষ্টিয়া-৪, নীলফামারী-৩ আসনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, নায়িকা অরুণা বিশ্বাস চাইছেন মানিকগঞ্জ-১, বিশিষ্ট নাট্যাভিনেত্রী শমী কায়সার নোয়াখালী-১, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল নেত্রকোনা-৩, সহসভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি নাটোর-৪, সাবেক এমপি ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী ঢাকা-১৭, উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতি শিউলী কুড়িগ্রাম-৩ অন্যতম।
বিএনপি : আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চান বিএনপির অর্ধশতাধিক নারীনেত্রী। তাদের বেশির ভাগ সাবেক সংসদ সদস্য। আছেন সাবেক ছাত্র নেত্রীও। তারা আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সংরক্ষিত কোটায় নয়, সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতে নিজেদের এলাকায় জনসংযোগ, কর্মিসভাসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, মনোনয়নের বিষয় নিয়ে বিএনপি এখন কিছুই ভাবছে না। আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি তারপর নির্বাচন। ইতিমধ্যে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাত দফা ঘোষণা করেছি। দাবি মেনে না নিলে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি সব সময়ই নারী নেতৃত্বকে উৎসাহিত করে। অতীতেও করেছে বর্তমানেও করছে। অনেকেই আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা পালন করছেন। বিএনপির দাবি মেনে নেয়ার পর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে এলাকার জনপ্রিয়তা যাচাই করে যোগ্য ও ত্যাগীদের মনোনয়ন দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে ১১ জন নারী ১৩টি আসনে নির্বাচন করেন। এর মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করেন ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে। এছাড়া সাবিনা ইয়াসমিন (নাটোর-২), রুমানা মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সেলিমা রহমান (বরিশাল-৩), ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো (ঝালকাঠি-২), শাহিদা আক্তার রিতা (জামালপুর-১), আফরোজা খান রিতা (মানিকগঞ্জ-২), শিরীন সুলতানা (ঢাকা-৯), শামা ওবায়েদ ইসলাম (ফরিদপুর-২), হেলেন জেরিন খান (মাদারীপুর-২) ও হাসিনা আহমেদ (কক্সবাজার-১)।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন ২০৩০-এও নারীদের বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া তরুণদের পাশাপাশি শিক্ষিত ও মার্জিত নারীনেত্রীদেরও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্তির সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর পরপরই দলের নির্বাহী কমিটিতে দুই নেত্রীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। নারীনেত্রীদের প্রত্যাশা, নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রেও তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে নারীনেত্রীরাও পিছিয়ে নেই। তারা নিজ এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নারীদের মধ্যে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী শিরীন সুলতানা (ঢাকা-৯), একই আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী ও মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা-৭ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা। নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর বোন সাবেক কমিশনার ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টিও ঢাকা-১৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। আরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান (বরিশাল-৩), সাবিনা ইয়াসমিন (নাটোর-২), বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন (বরিশাল-৫), সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আক্তার উদ্দিন আহমেদের মেয়ে জেবা আহমেদ খান (ঝালকাঠি-২), বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ (ফরিদপুর-২), জাসাস সহসভাপতি শাহরিয়া ইসলাম শায়লা (ফরিদপুর-৪), ইডেন কলেজের সাবেক ভিপি হেলেন জেরিন খান (মাদারীপুর-২), আফরোজা খান রিতা (মানিকগঞ্জ-২), তাহমিনা আওরঙ্গ (শরীয়তপুর-৩), অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম খান (সিরাজগঞ্জ-৪), সাবেক সংসদ সংসদ্য রেহানা আক্তার রানু (ফেনী-২), বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রোকেয়া হলের ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা মানী (বাগেরহাট-৩), ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা (চট্টগ্রাম-৪), সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদা বেগম হীরা (চাঁদপুর-৪), ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী তানজীন চৌধুরী লিলি (ময়মনসিংহ-৩), সাবেক এমপি হোসনে আরা গিয়াস (কিশোরগঞ্জ-১), শাহিদা আক্তার রিতা (জামালপুর-১), সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি (জামালপুর-৫), নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা (সিলেট-২), সাবেক এমপি ও ঢাবি রোকেয়া হল শাখার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শাম্মী আক্তার (হবিগঞ্জ-৪)। চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহধর্মিণী ফারহাত কাদের চৌধুরী। নবম জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি আসনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। স্বামীর পাশাপাশি তিনিও আগামী নির্বাচনে কক্সবাজারের যে কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। সাবেক এমপি ও ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী অ্যাডভোকেট সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া (নাটোর-৪), নীলফামারী-৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন। ১৯৮০ সালে বদরুন্নেসা কলেজে ছাত্রদলের প্যানেলে প্রথম নির্বাচিত ভিপি খায়রুন নাহার খানম পাবনা-১ থেকে নির্বাচন করতে চান। এছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন চান খালেদা রব্বানী, রাবেয়া সিরাজ, ফরিদা ইয়াসমিন, কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভিন, কনকচাঁপা প্রমুখ।
শিরীন সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়েই আমরা নির্বাচনে যাব। না হলে নির্বাচনে যাব না। তার মুক্তির পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে এলে তিনি ঢাকা-৯ আসন থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে আশাবাদী।
অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম খান বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে সবসময় রাজপথে আছি। এলাকার নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কাজ করছি। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
শাম্মী আক্তার বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া তিনি নির্বাচনের কথা চিন্তাও করেন না। তবে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে জনগণের সেবায় সরাসরি নির্বাচিত এমপি হতে চান।
যুগান্তর
No comments:
Post a Comment