বিকল্পধারা সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাটকীয়ভাবে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ ঘোষণা করার ঘটনা গতকাল রবিবার ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। রাজনৈতিক অঙ্গণ ও টেলিভিশনের টকশো থেকে শুরু করে সর্বত্র এনিয়ে চলছে বহুমুখী বিশ্লেষণ। সত্য, অসত্য কিংবা অর্ধসত্য নানা তথ্য ও মতের ছড়াছড়ি ছিল শনিবার বিকাল থেকে গতকাল দিনভর। সবকিছু ছাপিয়ে যে প্রশ্নটি সর্বাধিক আলোচনায় ছিল তা হলো- বি. চৌধুরী কেন থাকতে পারলেন না, থাকলেন না বা রাখা হলো না? ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে একসাথে দাঁড়িয়ে হাতে হাত ধরে ঐক্যের বার্তা ছড়ানো ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর মধ্যে এমন কী ঘটলো যে, ঠিক ২২ দিনের মাথায় ১৩ অক্টোবর এসে দু’জন ভিন্ন পথ ধরলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অধ্যাপক বি. চৌধুরী ও ড. কামালের ঘনিষ্ঠ একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে দু’জনের মধ্যে শুরু থেকেই টানাপোড়েন চলতে থাকে। নেতৃত্বের প্রশ্নে চলছিল স্নায়ুযুদ্ধ। বিশেষ করে, যখন খবর রটে বিএনপির বেশি আস্থা ড. কামালের ওপর, তখনই প্রথম ধাক্কা খান বি. চৌধুরী। ঐক্যে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বি. চৌধুরী নানা চেষ্টাও করেন। তার ঘনিষ্ঠদের তথ্যমতে, বি. চৌধুরী ভেতরে-ভেতরে ড. কামালকে মেনে নিতে পারছিলেন না। নানা ঘটনার পরম্পরায় এক পর্যায়ে ড. কামালও বি. চৌধুরীকে সহ্য করতে পারছিলেন না। বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যেই মাহী বি. চৌধুরী পৃথকভাবে বলয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ চালাতে থাকেন। উদ্যোগের অংশ হিসেবে খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেন, বি. চৌধুরী যান মুসলিম লীগের অনুষ্ঠানে। মাহী যোগাযোগ করছিলেন বিএনপি দলীয় সাবেক বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে, যোগযোগ করেন সুশীল সমাজের কারও কারও সঙ্গেও। বিএনপিতে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা কয়েকজন নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন মাহী। মাহীর পৃথক এই তত্পরতা প্রশ্ন ওঠে যুক্তফ্রণ্টের দুই নেতা আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার মধ্যে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যখন বিএনপির সমাবেশ চলছিল তখন বনানী চেয়ারম্যানবাড়িতে বালুর মাঠে মাহী তার ‘প্রজন্ম বাংলাদেশ’ এর অনুষ্ঠানে বিএনপির সংস্কারপন্থী দুই নেতাকে দাওয়াত করে নেন। এসব কারণে নিজ পরিবারেও মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন বি. চৌধুরী, প্রশ্নের মুখে পড়েন ঘরে-বাইরে। রব ও মান্না এসব নিয়ে প্রশ্ন তুললে বি. চৌধুরী তাদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঠিক না হওয়ায় এবং কার্যত মাহীর ভূমিকার কারণে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় বি. চৌধুরী এক পা এগোলে আবার এক পা পিছিয়ে যাচ্ছিলেন।
মাহীর এসব তত্পরতার খবর জেনে যান ড. কামালসহ অন্যরা। বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকে পৃথকভাবে এই তত্পরতার মধ্য দিয়ে কার্যত এক ধরনের চাপ সৃষ্টির কৌশল নেন মাহী বি. চৌধুরী। সর্বশেষ তাস খেলার মতো বি. চৌধুরী যখন ট্রাম্প করলেন, ড. কামাল ওভার ট্রাম্প করে তাকে দূরে রেখেই ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দিয়ে দেন।
সূত্রের দাবি, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে বি. চৌধুরী যখন যুক্তফ্রন্ট গঠনের উদ্যোগ নেন, সেই ফ্রন্টে ড. কামালেরও থাকার কথা ছিল। ড. কামাল তখন বিদেশে ছিলেন। ড. কামালের গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পক্ষ থেকে বিকল্পধারাকে অনুরোধ করে বলা হয়েছিল- ড. কামাল দেশে ফেরা পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করা হয়, এরপর যুক্তফ্রন্টের ঘোষণা দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তবে সেই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে এবং ড. কামালের জন্য অপেক্ষা না করেই রব ও মান্নাকে নিয়ে যুক্তফ্রন্টের ঘোষণা দেয় বিকল্পধারা। দেশে ফিরে ঘটনা জেনে সংক্ষুব্ধ হন ড. কামাল।
এরপর যখন বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন প্রথমদিন থেকেই রব ও মান্না চেষ্টা করেন বি. চৌধুরীকে নিয়েই বৃহত্তর ঐক্য গড়তে। কিন্তু প্রায়শই বেঁকে বসতেন বি. চৌধুরী ও বিকল্পধারার যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী। জামায়াতের সম্পৃক্ততা ও ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় বি. চৌধুরী ও মাহী যখন বিএনপিকে ১৫০ আসনের বেশি দিতে রাজি হচ্ছিলেন না তখন রব ও মান্না বারবার পিতা-পুত্রকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার গিয়ে বি. চৌধুরী ও মাহীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। যার কারণে কয়েকটি সভা বা বৈঠকে কখনও বি. চৌধুরী, কখনও মাহী আবার কখনও বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান যোগ দেন। এরপর বি. চৌধুরী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে যখন রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অপমানজনকভাবে অপসারণের প্রসঙ্গ তোলা হয় তখনও বিএনপির তিন নেতা- মির্জা ফখরুল, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বি. চৌধুরীর বারিধারার বাড়িতে গিয়ে অতীতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এতেও খুব একটা কাজ হচ্ছিল না।
সম্প্রতি বি. চৌধুরীর জন্মদিনে ফুল নিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে যান আ স ম রব। সূত্রমতে, সেইদিন মাহী বি. চৌধুরী রবকে বলেছিলেন, বৃহত্তর ঐক্যের নামে বিএনপি আমাদেরকে একটা বড় বিপদে ফেলতে পারে। স্পর্শকাতর কোনো ঘটনায় বি. চৌধুরীসহ আমাদের সবাইকে বিপদে ফেলে দিতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সবারই সতর্ক থাকা জরুরি। ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মন খারাপ করে রব সেদিন বেরিয়ে আসেন বি. চৌধুরীর বারিধারার বাড়ি ‘মায়াবী’ থেকে।
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা উপলক্ষে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য পাঠ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। এর পরপরই মান্নার সঙ্গে মাহীর টেলিফোনে কথা হয়। সেই কথোপকথন ফাঁস হয়ে এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই কথোপকথনেও মান্নার উদ্দেশে মাহীকে বলতে শোনা যায়, ‘একটা চক্রের মধ্যে তো আপনারা পড়ে গেলেন মান্না ভাই! রব চাচা, আপনারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গেলেন। আমরা আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম। ঐক্যের নাম দিয়ে এখানে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আপনাকে দিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠ করানো হচ্ছে, আমাকেও এখানে ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আজকের এই কথাটা শুধু মনে রাখবেন। আর কিছু বলব না। আমার মনে হয় একটা চক্রান্তের মধ্যে আপনারা ভিকটিম হয়ে যাচ্ছেন মান্না ভাই। আমার মনে বিশ্বাস থেকে বললাম, ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখানে আমাদের জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। আমি আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম। আপনাকে দিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠ করানো হলো।’
জানা গেছে, ঐক্যে থাকতে হলে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ এবং ভারসাম্যের রাজনীতির প্রতিষ্ঠায় বিকল্পধারা যখন বারবারই বিএনপিকে ১৫০ আসনে ছাড় দেয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছিল তখন একটা পর্যায়ে রব মাহীকে মোবাইল ফোনে একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠান। যাতে রব অনুরোধ করে লিখেছেন, ‘বাবাদের রাজনীতি করতে দাও’। বিএনপির পক্ষ থেকেও বি. চৌধুরী ও মাহীকে বহুবার বলা হয়, জামায়াত আছে ২০ দলে, বৃহত্তর ঐক্যের সঙ্গে জামায়াতকে রাখা হবে না। ড. কামালও বি. চৌধুরীর উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘জামায়াতের তো এখন নিবন্ধনই নেই, বিএনপির জোটে কারা থাকবে কী থাকবে না সেটা বিএনপির বিষয়; আমাদের ঐক্য হচ্ছে বিএনপিসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোর সঙ্গে।’ তবুও দুই শর্ত থেকে টলছিলেন না বিশেষত মাহী। নির্ভরযোগ্য সূত্র ইত্তেফাককে জানায়, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও একবার মাহীকে অনুরোধ করে বলেছেন, ‘বাবা, এবারের রাজনীতিটা ভিন্ন। আমাদের সবার এখন লক্ষ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় করা। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে বিএনপি আগের মতো এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু করতে পারবে না। তোমরা যেই ভারসাম্যের রাজনীতির কথা বলছো-সেটাই করা হবে।’
সর্বশেষ শুক্রবার রাতে রবের উত্তরার বাড়িতে বৈঠকে যান মাহী বি. চৌধুরী। সেখানে ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্যের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। শনিবার বিকল্পধারার সংবাদ সম্মেলনে মাহী নিজেই আগেরদিন রবের বাসায় বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ‘আমি তখন বললাম এই দাবি ও লক্ষ্যসমূহ আগে বি. চৌধুরী ও ড. কামাল বৈঠক করে চূড়ান্ত করবেন। তাছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার আগে জামায়াতের সম্পৃক্ততা ও আসন ভাগাভাগির বিষয়টির সুরাহা করতে হবে।’ গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ইত্তেফাককে জানান, শুক্রবার রবের বৈঠকে মাহী যখন এসব কথা বলেন তখন আমরা সবাই মিলে তাকে বলেছিলাম, ‘এসব পরে দেখা যাবে, আগে দেশের মানুষের ভোটাধিকার আদায় করা জরুরি।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান থাকাবস্থাতেই বি. চৌধুরী, মাহী ও মেজর (অব.) আবদুল মান্নান যখন খেলাফত আন্দোলন ও মুসলিম লীগ ছাড়াও বিএনপির সাবেক-বর্তমান অনেক নেতার সঙ্গে পৃথকভাবে যোগাযোগ করছিলেন তখন ড. কামালসহ অন্যদের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় দেখা দেখা দেয়। শুক্রবার রবের বাসায় বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের দাবি ও লক্ষ্যসমূহের খসড়া যখন চূড়ান্ত করা হয় তখনও বাধা আসে বিকল্পধারার পক্ষ থেকেই। ঐক্য প্রক্রিয়া যখনই একটু অগ্রসর হয় তখনই বাধ সাধে বিকল্পধারা। এতে ড. কামাল, বিএনপি ও অন্যদের মধ্যে ধারণা জন্মায় যে, ঐক্যফ্রন্টে থাকলেও বিকল্পধারা যে কোনসময় বের হয়ে যেতে পারে। আরও সংশয় জন্মে যে, শনিবার বি. চৌধুরী ও ড. কামালের পৃথক বৈঠক হলে ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা বিলম্বিত হতে পারে। সূত্র জানায়, এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েই কৌশলে বি. চৌধুরীকে এড়িয়ে যান ড. কামাল। একদিনও সময় না নিয়ে তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায়ই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রার ঘোষণা দিয়ে দেন ড. কামাল। কৌশল, পাল্টা কৌশল আর সন্দেহ-সংশয়ের শেষ পর্যন্ত ফলাফল দাঁড়ায়, বি. চৌধুরী ও তার দল বিকল্পধারাকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এদিকে, শনিবার ড. কামালের বেইলি রোডের বাড়ি থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যাবার পর বারিধারায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে বি. চৌধুরী বলেছেন, ‘বিএনপিকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য বিকল্পধারা কোনো ঐক্যে যাবে না।’ তার এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির দু’জন সদস্য ইত্তেফাককে বলেন, বি. চৌধুরীর সঙ্গে যদি সমস্যা হয়ে থাকে সেটি হয়েছে ড. কামালের সঙ্গে, তিনি যদি অপমান বোধ করেন তাও ড. কামালের কারণে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তো বি. চৌধুরীর কিছু ঘটেনি। তাহলে বি. চৌধুরী কেন বিএনপিকে ক্ষমতায় নেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিলেন? বি. চৌধুরী দ্ল দিলে তা দিতে পারেন ড. কামালকে, কিন্তু বিএনপিকে কেন তিনি শাস্তি দিতে চান? বরং শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মির্জা ফখরুল, ড. মোশাররফ ও মওদুদ আহমদ তিনজনই অভিন্ন কণ্ঠে বলেছেন- স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষের যেসব দল, ব্যক্তি ও সংগঠন এখনও এই ঐক্যের বাইরে তাদের আহ্বান জানাবো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধাদের এই লড়াইয়ে আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। প্রসঙ্গত, ওই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে যেন বি. চৌধুরীর প্রসঙ্গ এনে বিব্রত করতে না পারেন এবং বি. চৌধুরী সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য না আসে; সেজন্য ফখরুল, মোশাররফ ও মওদুদের উদ্যোগেই সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রশ্ন নেয়া হয়নি। জানা গেছে, এতকিছুর মধ্যেও বিকল্পধারার এক নেতা গতকাল কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
বিএনপি ও গণফেরামের নেতারা গতকাল ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিকল্পধারা বারবার যে ভারসাম্যের রাজনীতির কথা বলছে সেটি তো ঐক্যফ্রন্টের ঘোষিত ১১টি লক্ষ্যের ১ নম্বরেই রয়েছে। যেখানে বলা আছে ‘মহান মুক্তিসংগ্রামের চেতনা ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, ন্যায় ভিত্তিক, শোষণমুক্ত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা। এক ব্যক্তি কেন্দ্রীক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানকল্পে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা।’ আর ৯ নম্বর লক্ষ্যে বলা হয়েছে, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কোন জঙ্গি গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূ-খ্ল ব্যবহার করতে না দেয়া।’ আর ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দিয়ে ড. কামাল বলেছেন, ‘এই ঐক্য কোনো দলীয় স্বার্থে নয়। জাতীয় স্বার্থে এই ঐক্য। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল দল, ব্যক্তি ও সংগঠনকে ঐক্যফ্রন্টে স্বাগতম।’ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তাফা আমীন ইত্তেফাককে বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের এই সংগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের দরজা কারও জন্য বন্ধ করা হয়নি।’
No comments:
Post a Comment