বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধজাহাজের টহল নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। বেইজিংয়ের অভিযোগ, গত রবিবার উসকানিমূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধজাহাজ অনুমতি ছাড়াই চীনের জলসীমা এলাকায় টহল দিয়েছে। অন্যদিকে ওয়াশিংটন দাবি করেছে, চীনের যুদ্ধজাহাজের আক্রমণাত্মক গতিবিধির কারণে তাদের যুদ্ধজাহাজ গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় ১৪ লাখ বর্গমাইল এলাকার মালিকানা নিয়ে চীনের সঙ্গে কয়েকটি দেশের বিরোধ আছে। মালিকানার দাবিদার দেশগুলোর মধ্যে আছে ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও তাইওয়ান। কিন্তু চীন এ বৃহৎ জলসীমার প্রায় পুরোটাই নিজেদের দাবি করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান চীনের বিপক্ষে। বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলো হলো স্পার্টলি, প্যারাসেল ও স্কেয়ারবোরো দ্বীপপুঞ্জ। এর মধ্যে স্পার্টলিতে বেশ কয়েকটি কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়েছে চীন। এ ছাড়া দখলকৃত দ্বীপে তারা সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে বলেও দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা অভিযোগ করে আসছে।
এ অবস্থায় বিতর্কিত অঞ্চলে নিয়মিত টহল কার্যক্রম চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী। গত রবিবারও তাদের একটি যুদ্ধজাহাজ (ইউএসএস ডিকেটার) স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জের গ্যাভেন রিফ এলাকায় টহল দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের মুখপাত্র কমান্ডার নেইট ক্রিস্টেনসেন অভিযোগ করেন, টহলের একপর্যায়ে চীনের যুদ্ধজাহাজ (লুইয়াং) মার্কিন যুদ্ধজাহাজের এত কাছে চলে আসে যে একটির সঙ্গে আরেকটির সংঘর্ষের উপক্রম তৈরি হয়। একসময় দুটি যুদ্ধজাহাজের দূরত্ব ছিল মাত্র ৪৫ মিটারের মতো। এ ছাড়া চীনের যুদ্ধহাজাহের গতিবিধি ছিল অপেশাদার ও আক্রমণাত্মক। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ‘ইউএসএস ডিকেটার’ শেষমেশ গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় বলে দাবি করেন ক্রিস্টেনসেন।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি দেশ তাদের উপকূল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে চলাচল করতে পারবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওই ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ঢুকে প্রায়ই টহল দেয় এটা জানান দিতে যে তারা দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা নিয়ে বেইজিংয়ের দাবি মানে না।
এদিকে গতকাল চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র বারবার দক্ষিণ চীন সাগরের এমন সব অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে, যেসব অঞ্চল আমাদের মালিকানায় রয়েছে। তাদের এ আচরণ চীনের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। এটি দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে।’
উল্লেখ্য, পাল্টাপাল্টি আমদানি শুল্ক আরোপের কারণে দুই দেশের বাণিজ্যবিরোধ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে তাদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হলো। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।
No comments:
Post a Comment