Social Icons

Sunday, July 31, 2016

খুশকি কীভাবে দূর করবেন

কমবেশি সবাই খুশকির সমস্যায় পড়েন। খুশকির কারণে অনেক সময় চুলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া চুলের বৃদ্ধিও রোধ করে খুশকি। তবে ঘরোয়া কিছু টিপস জানা থাকলে খুব সহজেই খুশকি দূর করা সম্ভব। চলুন জেনে নেয়া যাক খুশকি দূর করার কয়েকটি প্রক্রিয়া।
 
১. এক কাপ গরম পানিতে হোয়াইট ভিনেগার নিয়ে ভালোভাবে মিশান। এবার এই মিশ্রণ নিয়ে আপনার চুলের গোঁড়ায় সুন্দর করে লাগিয়ে নিন। ১০ থেকে ২০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে আপনি সপ্তাহে একবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে খুশকি কমে আসবে।
 
২. এক কাপ গরম পানিতে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা নিয়ে ভালোভাবে মিশান (বোতলে নিয়ে ঝাকিয়ে মিশাতে পারেন।) শ্যাম্পু করার আগে বা শ্যাম্পুর সাথে মিশ্রণটি মিশিয়ে নিয়ে ভালোভাবে চুল শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে একবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
 
৩. পরিমাণ মতো নিমপাতা ও গরম পানি নিন। তারপর পানিতে নিমপাতা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে এই পানি দিয়ে আপনার মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে খুশকি কমে যাবে। 
 
৪. মাথার ত্বকে পরিমাণ মতো লেবুর রস নিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ৫ থেকে ৭ মিনিট রাখুন। এরপর ১ চা চামচ লেবুর রস ও ১ কাপ পানি মিশিয়ে সেটা দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। যতদিন খুশকি পুরোপুরি না যায় ততদিন এভাবে ব্যবহার করুন।
 
৫. পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর শুধু পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এরপর আরো ১৫ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন। মাসে দুইবার ব্যবহার করুন।

দাঁত সাদা করতে কলার খোসার অভিনব ব্যবহার

অতীতকালে আজকের মতো দাঁতের বড়বড় ডাক্তার ছিল না ঠিকই। আর ছিল না নামকরা ব্রান্ডের পেস্ট-ব্রাশ দাঁত মাজার জন্য। তাহলে কি তখন মানুষের দাঁত থাকতো হলদেটে আর দাগে ভরা? মোটেই না। মানুষের কাছে তখন ছিল হরেক রকম ঘরোয়া টিপস। আর তেমনই একটা হচ্ছে কলার খোসা দিয়ে দাঁত সাদা করা।
 
ভাবছেন এও কি সম্ভব? কিন্তু অসম্ভব নয়, আর মিথ্যাও নয়। কলার খোসা সত্যিকার অর্থেই বিজ্ঞান সম্মতভাবে আপনার দাঁত সাদা করতে সক্ষম। সুতরাং ভুলে যান দাঁতের ডাক্তারের কাছে টাকা খরচ করার ভাবনা, আর ঘরে বসেই নিজের দাঁত গুলোকে রাখুন ঝকঝকে। তবে হ্যাঁ, কাজটা করতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে। আর আজ জানানো হচ্ছে সেটাই।
 
কলার খোসায় আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান। বিশেষ করে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আর ম্যাঙ্গানিজ। আর এরাই হচ্ছে দাঁতকে সাদা করে তুলবার প্রধান হাতিয়ার। এছাড়াও কলার খোসায় আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি, যারা কিনা দাঁতকে মজবুত করে তোলার পাশাপাশি খনিজ উপাদান গুলো শোষণ করতেও সহায়তা করে। কলার খোসা নিঃসন্দেহে সাদা করে তুলবে আপনার দাঁত, তবে ব্যবহার করতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে। এবং অবশ্যই নিয়ম মেনে। জেনে নিন বিস্তারিত পদ্ধতি।
 
– প্রথমেই বেছে নিন সঠিক কলা। দাঁত সাদা করার জন্য ঠিক ভাবে পাকা কলা হওয়া জরুরি। খুব বেশি পাকাও নয়, খুব বেশি কাঁচাও নয়। এমন কলা বেছে নিন যারা কিনা এখন নিচের দিকে একটু একটু সবুজ। কেননা এই ধরনের কলায় পটাশিয়াম থাকে উচ্চ মাত্রায়। আর এই পটাশিয়ামই দাঁত সাদা করার দায়িত্ব নেবে।
 
– কলা উলটো করে ছিলে নিন। হ্যাঁ, যেভাবে আপনি ছিলে থাকেন কলা ঠিক তার উলটো দিক থেকে ছিলে নিন। দেখবেন যে কলার গায়ে লম্বা লম্বা সুতার মতন আঁশ থাকে। উলটো করে ছিলে নিয়ে এই আঁশ গুলো থাকবে খোসার সাথেই।
 
– খোসা থেকে চারকোনা করে দুটি টুকরো কেটে নিন। আপনার সুবিধা মতন আকারেই কেটে নিন। চাইলে এই কাটা খোসা ফ্রিজেও সংরক্ষণ করতে পারেন।
 
– এবার সকালে দাঁত ব্রাশ করবার পূর্বে এই কলার খোসার ভেতরের অংশটি দিয়ে আপনার দাঁত খুব ভাল করে ঘষুন। প্রথম টুকরোটি দিয়ে পুরো এক মিনিট ঘষুন। তারপর সেটা বদলে দ্বিতীয় টুকরোটি দিয়ে আরও এক মিনিট। অর্থাৎ পুরো দুই মিনিট দাঁতকে ঘষুন। দাঁতের প্রত্যেকটি অংশে যেন পৌঁছায় এমন ভাবে ঘষতে হবে।
 
– দাঁত ঘষা হলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট করতে পারলে ভালো। এই সময়ে পানি বা অন্য কিছু খাবেন না, কিংবা কুলি করবেন না। সময়টা পেরিয়ে গেলে আপনার নিয়মিত ব্যবহারের টুথ পেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে নিন।
 
এবার আয়নায় তাকিয়ে দেখুন তো, লাগছে না দাঁত একটু বেশি পরিষ্কার? ৪/৫ দিন এমন করার পরেই দেখবেন আগের চাইতে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে আপনার দাঁত। হলদে ভাব যেমন কমে গেছে, তেমনি কালো ছোপটাও অনেকটাই সরে গেছে। যারা ধূমপান বা মদ্যপান করেন, তাদের ক্ষেত্রেও কাজ করবে এই পদ্ধতি। তবে ব্যবহার করতে হবে বেশ দীর্ঘদিন। এবং সঠিক নিয়েম মেনে।
 
অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে-
– এটা কোনও ম্যাজিক নয়। তাই ভালো ফল পেতে নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হবে।
– অবশ্যই কমপক্ষে ২ মিনিট ঘষতে হবে। এই সময়টা জরুরি। বেশি ঘষলে আরও ভালো।
– ঘষার পর অবশ্যই খনিজগুলো দাঁতে শোষিত হবার সময় দিতে হবে।
– যাদের দাঁত মদ্যপান, ধূমপান বা অসুস্থতার কারণে হলুদ তাদের ক্ষেত্রে একটু সময় লাগবে।
– কলার খোসায় প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। তাই অবশ্যই দাঁত খুব ভালভাবে মেজে নিতে হবে। এবং এই কারণেই দিনে ১ বারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
– যাদের দাঁত খুব একটা বেশি হলুদ নয়, তারা সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।
 
অনেকেই বলবেন যে কাজ হয় না, ভুয়া ইত্যাদি। কিন্তু মোদ্দা কথাটা হলো হয় তারা চেষ্টা না করেই বলেছেন, কিংবা চেষ্টা করলেও সঠিক ভাবে করেননি। ফল পাবার জন্য অবশ্যই নিয়ম মেনে প্রয়োগ করতে হবে। আর তাই অন্য লোকের কথা শোনা বাদ দিয়ে নিজেই চেষ্টা করে দেখুন না!
চেষ্টা করতে তো কেবল একটা কলাই লাগছে, তাই না?

টোকিও স্ক্যান্ডেলের পর নতুন গভর্নর নির্বাচন

টোকিওতে অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন সেখানকার মেয়র। অবশেষে তার অবস্থানে নতুন ব্যক্তিকে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
 
এবারের নির্বাচনে সবচাইতে সম্ভাবনাময়ী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইউরিকো কইকে, রাজনীতিবিদ হিরৌইয়া মাসুদা এবং সাংবাদিক সুনতারো তরিগোই। এদের মধ্যে নির্বাচিত ব্যক্তি হবেন ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক।
 
গত মাসে ইয়োচি মাসুজোয়ে পদত্যাগ করার পর রবিবার গভর্নর পদের জন্য নতুন করে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়।
 
ব্যক্তিগত কাজে গভর্নরের অফিসিয়াল ফান্ডের টাকা ব্যবহারের অভিযোগ ছিল ইয়োচি মাসুজোয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু শুরু থেকেই নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের এই সাবেক গভর্নর জানিয়েছিলেন, অর্থ কেলেঙ্কারির মত কিছু তিনি করেননি। তবে কার কার্যাবলী নৈতিকতা পরিপন্থী ছিল বলে স্বীকার করেন তিনি। পরবর্তীতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে তার সমালোচনা করায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন এই গভর্নর। বিবিসি।

ভিয়েতনামে অগ্নিকাণ্ডে এক পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু

ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী কা মাউয়ের একটি বাড়িতে রবিবার ভোরে এক অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। 
 
ভিয়েতনামের অনলাইন পত্রিকা তিয়েন ফোংয়ে বলা হয়েছে, প্রদেশের কা মাউ নগরীতে এই অগ্নিকাণ্ডে ৫৮ বছর বয়সী এক শিক্ষক মারা গেছেন। তারা নাম ত্রাণ কুয়াং তিয়েন। এই ঘটনায় তার স্ত্রী ত্রাণ কিম আনহ্ (৫৯), তাদের ২৮ বছর বয়সী মেয়ে, ২৩ বছর বয়সী ছেলে, ৬ বছর বয়সী ভাইপো ও ৯ বছর বয়সী ভাইঝি মারা গেছে। বাড়িটিতে অনেক দাহ্য সামগ্রী ছিল এবং সেখানে বহির্গমনের কোন দরজা ছিল না। 
 
অগ্নিকাণ্ডের সময় থিয়েনের ৭০ বছর বয়সী বোন পাশের বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। প্রতিবেশীরা তাকে রক্ষা করেন। স্থানীয় পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। সিনহুয়া।

কল্যাণপুরে নিহত ৯ জঙ্গির ডিএনএ পরীক্ষায় আদালতের অনুমতি

কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে আদালত। রবিবার বিকেলে আদালত সূত্রে এই খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
 
অভিযানের পরে পুলিশ নিহত ৯ জঙ্গির রক্ত, চুল ও দাঁত সংগ্রহ করে। ডিএনএ আবেদনের অনুমতি চেয়ে পুলিশ আবেদন করে। মিরপুর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বিকেলে আদালত জঙ্গিদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে। 
 
উল্লেখ্য, ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় হামলার পরে নিহত ৫ জঙ্গি ও আরেকজন সন্দেহভাজনের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছিল আদালত। এদের ডিএনএন নমুনা অধিকতর পরীক্ষার জন্য এফবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সিটিসেল যে কোনো সময় বন্ধ হচ্ছে

সরকারের পাওনা শোধ না করায় বন্ধ হতে চলছে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল। এই কোম্পানিটির কার্যক্রম যে কোনো সময় বন্ধ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ। 
 
সেক্ষেত্রে আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে এই অপারেটরের গ্রাহকদের বিকল্প সেবা বা ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েও এটা জানিয়ে দেবে বিটিআরসি। ক্রমাগত গ্রাহক কমতে থাকায় বড় ধরনের সঙ্কটে পড়া বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সিডিএমএ মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের কাছে সরকারের পাওনা রয়েছে ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বিটিআরসির হিসেবে, গত জুন মাস শেষ নাগাদ এই অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা ৭ লাখ। যা বাংলাদেশের মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের এক শতাংশেরও কম।  
 
বিটিআরসি থেকে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিটিসেলের কাছে আমাদের পাওনা রয়েছে প্রায় ৪৭৭ কোটি টাকা। বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা এ পাওনা মেটানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আইন অনুযায়ী পাওনা না দেওয়ায় যে কোনো সময় সিটিসেল বন্ধ করে দিতে পারি। বিটিআরসি যে কোনো সময় এর তরঙ্গ বাতিল এবং অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
 
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, সিটিসেলের যে গ্রাহক রয়েছে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে আগামী ১৬ অগাস্টের মধ্যে বিকল্প সেবা বা ব্যবস্থা নিতে। খুব শিগগিরই এ অপারেটরটির কার্যক্রম বন্ধ করা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে বিটিআরসি প্রধান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী যে কোনো সময় আমরা এটি বন্ধ করতে পারি। 
 
এ বিষয়ে সিটিসেলের কোন কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানান, ২০১২ সালে ৮ দশমিক ৮২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নবায়ন করলেও লাইসেন্স শর্ত অনুযায়ী তরঙ্গ নবায়ন ফির দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কিস্তি এখনও পরিশোধ করেনি সিটিসেল। এ খাতে ২২৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বিটিআরসির, বার্ষিক লাইসেন্স ফি বাবদ পাওনা ১০ কোটি টাকা। 
 
এছাড়া  বার্ষিক তরঙ্গ ফি ( ২০১৩ থেকে ২০১৬) ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা, রেভিনিউ শেয়ারিং ( ২০১৪ থেকে ২০১৬) ২৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল ( ২০১১ থেকে ২০১৬) ৮ কোটি ৯২ কোটি টাকা এবং প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ ৩৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা ও বিলম্ব ফি ১৩৫ কোটি টাকা মিলে সর্বমোট ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা পাওনা বিটিআরসির।
 
বিটিআরসির হিসাবে জুন শেষ নাগাদ গ্রাহকের হাতে থাকা মোট মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৩ কোটি ১৩ হাজারের বেশি। ১৯৮৯ সালে বিটিআরসি থেকে টেলিযোগাযোগ সেবার লাইসেন্স পায় সিটিসেল বা প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড।

দশ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি গুরুতর

১২ নদীর ১৭ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আসামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি। আসামের বন্যার পানি নামার সময় আমাদের দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও মুন্সীগঞ্জে মারা গেছে ৫ জন


দেশের ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি গুরুতর। এগুলো হলো কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজাবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ, শরিয়তপুর। ১২ নদীর ১৭ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরকারি হিসাবে এই বন্যায় ১৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট। গতকাল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পানিতে ডুবে দুই শিশু ও সাপের কামড়ে এক কৃষক মারা গেছেন। জামালপুরে পানিতে ডুবে দু’জন মারা গেছেন। মুন্সিগঞ্জে মারা গেছে এক শিশু। দুর্গত এলাকার মানুষ নৌ ডাকাত আতঙ্কে ভুগছেন।
 
আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বাঁধ বা উঁচু স্থানে। পানিবন্দি এসব মানুষের দিন কাটছে অর্ধহারে অনাহারে। বন্যায় অধিকাংশ স্থানে নলকুপ ডুবে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে পানি বাহিত রোগ। খাবার না থাকায় অনেকে গবাদি পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। চলতি বন্যায় প্রথম আক্রান্ত হয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলো। সেসব জেলা থেকে এখন পানি নামছে, সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে ভাঙনের তীব্রতা। অন্যদিকে মধ্যাঞ্চলে বন্যার চাপ বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বন্যা পর্যবেক্ষন থেকে দেখা গেছে গতকাল রবিবার সবচেয়ে গুরুতর অবস্থা ছিল জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও রাজবাড়ী জেলায়।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের শনিবারে দেয়া পূর্বাভাষে বলা হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘন্টায় পদ্মার নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। যার ফলে, পদ্মা নদী সংলগ্ন রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও শরিয়তপুরে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে। ঢাকার আশেপাশের বুড়িগঙ্গা, বালু, শীতলক্ষ্যা প্রভৃতি নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
 
এদিকে ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার খবর দিয়েছে গত শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আসামের বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখেছেন। পরে তিনি জানিয়েছেন আসামের রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি সত্যিই আশঙ্কাজনক। ২৮টি জেলায় ৩৬ লক্ষ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত।
 
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলেছেন, আসামের বন্যার পানি আমাদের দেশ দিয়ে নামবে এটাই স্বাভাবিক। এর ফলে ব্রক্ষপুত্র বেসিনে চাপ বাড়বে। তিস্তা বেসিনে বৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া হিমালয় পাদদেশে বৃষ্টি হয়েছে। এই পানি আমাদের দেশ ছাড়া অন্য জায়গা দিয়ে যাওয়া যায়গা কম।
 
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চিলমারী উপজেলার উপজেলার বরুজের পাড় ও শাকখাওয়ার মোড়ে তিনটি পাকা রাস্তা নতুন করে ভেঙে যাওয়ায় পানি ঢুকে পড়েছে চিলমারীর বিভিন্ন গ্রামে। পানি ঢুকে পড়েছে উপজেলা সদরের থানা ক্যাম্পাস, উপজেলা পরিষদ, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, স্কুল-কলেজ, খাদ্য গুদামসহ অনেক স্থাপনায়। ৩০টিও বেশী গ্রাম প্লাবিত হবার পাশাপাশি উপজেলা সদরের অনেক এলাকায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় শত শত হেক্টর জমির বীজতলা ও আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ঝুঁকিতে পড়েছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়ক, রেলপথ ও কয়েকটি সেতু। ঘর বাড়িতে টিকতে না পেরে অনেকে রাস্তা, রেল লাইন ও বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন।
 
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধায় শুক্রবার রাতে ফুলছড়ির সিংড়িয়ায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ওই পানির তোড়ে রবিবার দুপুরে সদর উপজেলার আলাই নদীর চুনিয়াকান্দি এলাকায় সোনাইল বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ফলে সদর উপজেলার বোয়ালি, বাদিয়াখালি, সাঘাটার পদুমশহর, ফুলছড়ির কঞ্চিপাড়া ও উদাখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র চত্বর। ফুলছড়ির কালিরবাজার-গুণভরি সড়কের পূর্ব ছালুয়া এবং কালিরবাজার কাঠুর সড়কের দুটি ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে।
 
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রবিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যুমনার পানি বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নদীগুলোরও পানি বাড়ছে। করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর, ধলাই, চাকলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এসব এলাকার গ্রামগুলো বন্যায় ডুবে আছে। জেলার পাঁচ উপজেলার চরাঞ্চলের ৩৩টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ কয়েকদিন ধরে বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকার গরীব মানুষের জীব কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। এদিকে শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে যমুনার পানি প্রবেশ করায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহজাদপুর, বেলকুচি ও এনায়েতপুরের হাজার হাজার তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁতী ও শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
 
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, গত ২ দিনে এখানে পানিতে ডুবে দুই শিশু এবং সাপের কামুড়ে এক কৃষক মারা গেছেন। শিশু দুইজন হলো- উপজেলার মৈত্রবড়হর গ্রামের হুমায়ুন ইসলামের মেয়ে হাফজা (৩) এবং কালিপুর গ্রামের সেলিম হোসেনের মেয়ে তৃষা (২)। এছাড়া শনিবার বন্যার পানিতে পাট জাগ দেওয়ার সময় সাপের কামড়ে মারা গেছেন মাটিকোড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে কৃষক শহিদুল ইসলাম (৪০)।
 
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, গত কয়েকদিনে টাঙ্গাইলে বন্যারপানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তলিয়ে গেছে নদীপাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই সঙ্গে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। বাড়ি-ঘরে পানি উঠায় বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে আশপাশের উঁচু জায়গায়।  টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী, নাগরপুর, বাসাইল ও দেলদুয়ার উপজেলার নিন্মাঞ্চল বেশি বন্যাকবলিত হয়েছে। নাগরপুরে ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবল স্রোতে টাঙ্গাইল-নাগরপুর-আরিচা সড়কের চাষাভাদ্রা নামকস্থানের বেইলি ব্রিজ শনিবার সকালে ভেঙে গেছে।
 
ঝিনাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর, হাবলা ও কাশিল ইউনিয়নের কাশিল, দাপনাজোর, কামুটিয়া, নথখোলা, থোপিয়া, বালিনা ভৈরপাড়া, আদাজানের মানিকচর, কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া, সোনারচরসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে আছে কাশিল কেবিএন বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবন। বন্যাকবলিত মানুষগুলো ঘর-ভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে কালিহাতী ও ভুঞাপুরের অনেক মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশপাশে রাস্তায় অস্থায়ী ঘর বানিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে আত্মীয় বাড়ি চলে গেছেন।
 
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে-তারাকান্দি রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। গতকাল ইসলামপুর উপজেলার চরপুটিমারী ইউপিতে পানিতে ডুবে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
 
মেলান্দহ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের মেলান্দহের বানভাসিদের মাঝে ডাকাত আতংক বিরাজ করছে। ৩১ জুলাই মধ্য রাতে সগুনা-ঘোষেরপাড়া-ঝাউগড়া-হাজীপুর-কাহেতপাড়া-ছবিলাপুর-বেলতৈল-নাগেরপাড়ায় নৌডাকাত দল প্রবেশ করে। রাতভর ডাকাতদের তান্ডব চলে। বানভাসীদের চিত্কারে পার্শ্ববতী এলাকার মানুষ সজাগ হয়। এসময় বিভিন্ন মসজিদ থেকে মাইকিং করে সাবধান করা হয়। খবর পেয়ে মেলান্দহ থানা পুলিশ স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সহায়তায় রাত জেগে পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করে।
 
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।  লৌহজং উপজেলার পদ্মার চরের দোয়ালি গ্রামের মুন্না (৪) বাড়িরতে উঠা বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় গোলা ঘরের মেঝেতে শিশু মুন্না তার বাবা মার সাথে খেলা করছিলো এ সময় পা পিছলিয়ে ঘরের ভিতরে খাট থেকে পানিতে পড়ে যায় এবং স্রোতের তোড়ে এক পর্যায়ে বাড়ির উঠোনে চলে যায়। পরে অনেক খোজাঁখুজির পর তার লাশ উঠান হতে উদ্ধার করে তার স্বজনরা।
 
শেরপুর প্রতিনিধি জানান, অব্যাহতভাবে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশআনী নদীর পানিবৃদ্ধির ফলে শেরপুর সদর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শেরপুর জামালপুর সড়কে পোড়ার দোকানের নিকট কজওয়ের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে পানি বয়ে যাওয়ার কারণে ঐ রুটে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এ সতর্কতা পরেও ঝুকি নিয়ে ঐ রুটে যানবাহন চলাচল করছে।
 
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মার পানি বেড়েই চলছে, এর ফলে প্লাবিত হয়েছে ফরিদপুর জেলার তিন উপজেলার ১১ ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চল। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। 
 
ঘিওর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, পদ্মা-যমুনার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে জেলার ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার অন্তত দুই শতাধিক  গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
 
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উথলী সচিব মোড়, ফলসাটিয়া, বরংগাঈল, ধূলন্ডী, পুকুরিয়া, জোকা, বানিয়াজুড়ি মোড়ে বন্যার পানি উঠেছে। পানি অতিক্রম করে যানবাহন চলাচল করায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
 
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১০১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া রোববার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ১৮টির মধ্যে মাত্র ১১টি ফেরি চলছিল।  বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলাচলরত ১৮টি ফেরির মধ্যে রোববার ছোট-বড় ১১টি ফেরি চলছিল। এরমধ্যে রোরো ৬, কে-টাইপ ১ ও ইউটিলিটি ফেরি রয়েছে ৪টি। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় পাটুরিয়া থেকে গাড়ি বোঝাই করে কে-টাইপ ফেরি ‘কপোতি’ দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে গিয়ে স্রোতের তোড়ে টিকতে না পেরে ফিরে যায়। অতিমাত্রায় চালাতে গিয়ে ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়ায় সেটি বসে পড়ে।
 
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে যখন বন্যা তখন চাঁদপুরে চলছে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন। নদীতে প্রচন্ড স্রোত। উজান থেকে পানির ঢল চাঁদপুরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এখন মেঘনা নদীতে অস্বাভাবিক পানির টান দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌ-রূটে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। নদী ভাঙ্গনে ভিটে মাটিহারা হয়েছে শতশত পরিবার ।

ফোনে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ, ফেঁসে গেলেন নেতা

ধর্ষণকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লেন উত্তরখণ্ডের প্রাক্তনমন্ত্রী, বিজেপি নেতা হরক সিং রাওয়াত। ধর্ষিতার অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ রাওয়াতের বিরুদ্ধে এফআইআর নিয়েছে। ধর্ষিতার বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে।

দিল্লির সরফরাজ থানায় লিখিত অভিযোগের ৩২ বছর বয়সী ওই নারী জানান, চাকরির সন্ধানে আসাম থেকে দিল্লি যান তিনি। চাকরির টোপ দিয়ে শুক্রবার ফোনে তাকে গ্রিন পার্কেল বাড়িতে ডেকেছিলেন হরক সিং। সেখানেই তাকে রেপ করেন ওই নেতা।

রাওয়াতের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। ২০১৪'র ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লিরই এক তরুণী রাওয়াতের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিলেন। সেই মামলা এখনও আদালতে ঝুলে রয়েছে।

রাওয়াত এখন বিজেপি করলেও আগে ছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক। উত্তরখাণ্ডের হরিশ রাওয়াত সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করায়, অসংসদীয় আচরণের অভিযোগে তাকে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৬ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।

গাড়ি থেকে নামিয়ে মা-মেয়েকে গণধর্ষণ

পুলিশ চৌকির একশো মিটার দূরত্বে গাড়ি থেকে নামিয়ে মাঠে টেনে নিয়ে গিয়ে মা-মেয়েকে ধর্ষণ করল পাঁচ দুষ্কৃতী। গত শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা নিজেদের গাড়িতে করে পরিবারের সঙ্গে সাহারনপুরে যাচ্ছিলেন। বুলন্দশহরে ঢুকতেই তাদের গাড়িটি অন্ধকারের মধ্যে কোনও কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খায়। গাড়িটি থামতেই পাঁচ দুষ্কৃতী এসে ঘিরে ধরে। প্রথমে ওই পরিবারের টাকা, গয়না ছিনতাই করে তারা।

অভিযোগ, তার পর পরিবারের সবাইকে হাইওয়ের পাশেই একটি মাঠে টেনে নিয়ে যায়। পুরুষদের হাত-পা বাঁধে দুষ্কৃতীরা।  তার পর তাদের চোখের সামনেই ওই মহিলা ও তার ১৪ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণ করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক জন হাত-পায়ের বাঁধন কোনও রকমে খুলে পুলিশের কাছে যান অভিযোগ জানাতে। ঘটনার পরই অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশিতে নামে পুলিশ।

শনিবার সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুলিশ চৌকিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। সাসপেন্ড করা হয় ডিউটি অফিসার ললিত কুমারকে।

ডিআইজি লক্ষ্মী সিং জানান, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে রাজস্থানের আদিবাসীদের বিশেষ একটি দল এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে আলিগড়ের দুষ্কৃতী দলের জড়িয়ে থাকার বিষয়টিকেও উড়িয়ে দেননি ডিআইজি।

সৌদিতে না খেয়ে মরতে বসেছে ১০ হাজার ভারতীয়

চাকরি হারানোর পর খাদ্য সংকটে সৌদি আরবে প্রায় ১০ হাজার ভারতীয় শ্রমিক মানবিকতর জীবনযাপন করছেন। 
  
ভারত সরকার গালফ অঞ্চলে তাদের মিশনকে এসব অভুক্ত মানুষের পাশে খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। 
  
একইসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সৌদি আরবে অবস্থানরত ৩০ লাখ ভারতীয়কে তাদের সহকর্মী ভাই ও বোনকে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর টাইম অব ইন্ডিয়ার। 
  
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিক টুইটবার্তায় রিয়াদে ভারতীয় দূতাবাসকে চাকরি হারানো এসব শ্রমিকদের রেশন সরবরাহ করার নির্দেশ দেন। 
  
তিনি জানান, সৌদি আরব ও কুয়েতে তাদের শ্রমিকরা কাজ, মজুরিসহ নানা রকম সমস্যায় রয়েছেন।পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ 
  
সুষমা স্বরাজকে সৌদি আরবে অবস্থানরত এক ভারতীয় টুইট করে জানান, জেদ্দাতে গত তিন দিন ৮ শতাধিক ভারতীয় অভুক্ত। তিনি এসব মানুষের জীবন বাঁচাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 
  
এরপরই মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নড়েচড়ে বসে। মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানান, শুধুমাত্র ৮শ' নয়, দেশটিতে অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক খাদ্য সংকটে নিদারুণ দিনাতিপাত করছেন। 
  
এ সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ ইতিমধ্যে গালফ অঞ্চলের দেশগুলো সফরে রওনা হয়েছেন। আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এমজে আকবর কুয়েত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের একটি পর্যায়ে রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন সুষমা স্বরাজ। 
  
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, 'আমি সরাক্ষণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছি। কোনো ভারতীয় সৌদি আরবে বেকার থাকবে না। তারা না খেয়েও মরবে না।' 
  
সাধারণত সৌদি আরব ও কুয়েতে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের তারা কোনো পাওয়া পরিশোধ করে না।

জঙ্গি নির্মূলে অনেক দূর এগিয়ে গেছে সরকার

সরকার জঙ্গি নির্মূলে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।  
  
তিনি বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে সরকার জঙ্গি নির্মূলে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।  
  
সোমবার বিকালে সিরাজগঞ্জে সপ্তাহব্যাপী ফলদ বনজ বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এসব কথা বলেন। 
  
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের ঘাতকদের রক্ষা করতে যারা পরিকল্পিতভাবে জঙ্গি সৃষ্টি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সমগ্রজাতি আজ  এক হয়েছে।  
  
তিনি বলেন, দেশ জঙ্গীকে ব্র্যান্ডিং করার চক্রান্ত চালাচ্ছে। আমরা বলি জঙ্গিকে নয় স্বাস্থ্য সেবাকে ব্র্যান্ডিং করে দেশের মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন।  
  
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান নিজে বাঁচার জন্য একসময় ঢাকার গাছ কেটে শেষ করেছেন। আর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই বৃক্ষরোপণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।  
  
সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে মুক্তির সোপানে জেলা প্রশাসন এবং কৃষি ও বন বিভাগ আয়োজিত বৃক্ষ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেন।  
  
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা বেগম স্বপ্না, পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, পাবনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন, জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ওমর আলী। 
  
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মাঝে বৃক্ষ বিতরণ এবং চৌহালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহাদত হোসেন সিদ্দিকী জনপ্রশাসন পদক পাওয়ায় তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। 

স্কুলছাত্রীর ইজ্জতের মূল্য ৫০ হাজার টাকা!

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর ইজ্জতের মূল্য ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশপাশি সালিশে ধর্ষক নয়ন ঢালীকে (৪৫) প্রকাশ্যে জুতাপেটা করা হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার পাড়াগাও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ওই ছাত্রীর বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সালিশ অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয়রা জানায়, দুই স্ত্রী থাকার পরও পাড়াগাও গ্রামের নুরু ঢালীর ছেলে নয়ন ঢালী কয়েকদিন আগে প্রতিবেশী দরিদ্র এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে।

এ সময় ওই ছাত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ধর্ষক নয়ন ঢালী পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে ধর্ষকের বাড়িতে সালিশ বসে। এতে স্থানীয় ইউপি সদস্য লাভলু, মিজানুর রহমান রন্টু, জালাল মাতবর, মনির ঢালীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সালিশে ঘটনার সত্যতা পেয়ে সালিশকারীরা নয়ন ঢালীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া তাকে প্রকাশ্যে ১০ বার জুতাপেটা করার রায় দেয়া হয়। নয়ন ঢালীর বড় ভাই জুতাপেটার রায় বাস্তবায়ন করেন।

তবে ওই ছাত্রীর বাবা জানান, এ ঘটনায় তার পরিবারের লোকজন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। সামাজিক ও লোক-লজ্জার ভয়ে তার মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

এখনও জরিমানার টাকা বুঝে পাননি বলেও জানান তিনি।

রোববার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এ ঘটনায় সাধারণ লোকজনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে সমাজপতিদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

শ্রীনগর থানার ওসি সাহিদুর রহমান জানান, এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্বের অষ্টম সুখী দেশ বাংলাদেশ

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে দুঃসময়ের মধ্যে দারুণ এক খবর পেল বাংলাদেশ। চলতি বছর বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এই দেশটি অষ্টম সুখী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। 
  
ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশন শনিবার 'হ্যাপি প্ল্যানেট সূচক' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে এ তথ্য উঠে এসেছে। 
  
সূচকে বাংলাদেশ ৩৮ দশমিক ৪ স্কোর পেয়ে অষ্টম স্থান অর্জন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরে রয়েছে- শ্রীলংকা ৩৩ দশমিক ৮ স্কোর নিয়ে ২৮তম, পাকিস্তান ৩১ দশমিক ৫ স্কোর নিয়ে ৩৬তম এবং ভারত ২৯ দশমিক ২ স্কোর নিয়ে ৫০তম অবস্থানে। 
  
৪৪ দশমিক ৭ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা অঞ্চলের দেশ কোস্টারিকা। আর  ১২ দশমিক ৮ স্কোর নিয়ে আফ্রিকার দেশ সাদ রয়েছে সর্বশেষ অবস্থানে। 
  
গবেষণায় বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত ২৫ বছরে মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ জোরদার উন্নতি করেছে। ২০১৪ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে লোকবল নিয়োগ দিয়ে সারা বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির মুখে থাকা দেশটির জন্য এটা ছিল আবশ্যিক উদ্যোগ। 
  
জরিপে বলা হয়েছে, জিম্বাবুয়ের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু অন্তত ২০ বছর বেশি। যদিও মাথাপিছু আয় একই। সীমিত সম্পদের মধ্যেও দেশটির অর্জন অনেক। 
  
হ্যাপি প্ল্যানেট সূচক পরিমাপে সবার জন্য টেকসই জীবনযাপন বিবেচনায় নেয়া হয়। এতে বিশ্বকে বলা হয়, দেশগুলো কীভাবে দীর্ঘ, সুখী ও টেকসই জীবন নিশ্চিত করতে পারে। 
  
যেভাবে তৈরি সূচক 
জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন ও আয়ু বিবেচনায় নেয়া হয়, এগুলো সমানভাবে সবার জন্য প্রযোজ্য কি না দেখা হয়, এরপর এর ফল প্রতিটি দেশের পরিবেশগত উদ্যোগের সঙ্গে মেলানো হয়। 
  
তালিকার শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে- ১. কোস্টারিকা, ২. মেক্সিকো, ৩. কলম্বিয়া, ৪. ভানুয়াতু, ৫. ভিয়েতনাম, ৬. পানামা, ৭. নিকারাগুয়া, ৮. বাংলাদেশ, ৯. থাইল্যান্ড ও ১০. ইকুয়েডর। 
  
আর তালিকায় সবচেয়ে নিচে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে- ১৪০. সাদ, ১৩৯. লুক্সেমবার্গ, ১৩৮. টোগো, ১৩৭. বেনিন, ১৩৬. মঙ্গোলিয়া, ১৩৫. আইভরি কোস্ট, ১৩৪, তুর্কমেনিস্তান, ১৩৩. সিয়েরা লিওন, ১৩২. সোয়াজিল্যান্ড ও ১৩১. বুরুন্ডি।

Saturday, July 30, 2016

কানাডায় দাবানলের কারণে অর্থনীতি ক্ষতির মুখে

কানাডার অর্থনীতি গত সাত বছরেরও বেশী সময়ের মধ্যে চলতি বছর মে মাসে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়ে। প্রধানত: দেশটির ফোর্ট ম্যাকমুরে অঞ্চলে ব্যাপক দাবানল ছড়িয়ে পড়ার কারণে তারা এ ক্ষতির শিকার হয়। শুক্রবার সরকার একথা জানায়। কানাডার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে মে মাসে দেশের অভ্যন্তরীণ মোট উৎপাদন ০.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০০৯ সালের পর এটিই সবচেয়ে বেশি মাসিক হ্রাসের হার। এর প্রধান কারণ ফোর্ট ম্যাকমুরে অঞ্চলের বিশাল এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়া। কারণ, এ দাবানলের ফলে অনেক কোম্পানি বাধ্য হয়ে তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। দাবানলের কারণে ওই অঞ্চল থেকে প্রায় এক লাখ লোককে কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

দেড় হাজারের বেশি নারী জঙ্গি সক্রিয়!

টাঈাইলের কালিহাতীর রোজিনা বেগমকে ৪ জুলাই পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর তারই তথ্যের ভিত্তিতে ধরা হয় সাজিদা আক্তার ও জান্নাতি ওরফে জেমিকে। সাজিদার স্বামী নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক নজরুল ভয়ংকর এক জঙ্গি। এই নজরুল পঞ্চগড়ের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তিন নারীই স্বীকার করেছে, তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির মহিলা শাখার সক্রিয় সদস্য। তাদের স্বামীরাও একই সংগঠন করে। তারাই এদের এ পথে এনেছে। র‍্যাব ও পুলিশ বলছে, সারা দেশেই জেএমবিসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠনে এখন রিক্রুট করা হচ্ছে নারীদের। তাদের কাছে এর একটা তালিকাও আছে। তাতে দেড় সহস্রাধিক সক্রিয় সদস্য থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে হামলা চালানোর জন্য এদের ব্যবহারের পরিকল্পনা আছে উগ্রবাদীদের। নারী জঙ্গিরা জেলা পর্যায়ে পাড়া-মহল্লায় ধর্ম প্রচারের নামে ও ছোট ছোট সাপ্তাহিক ধর্মসভার আড়ালে কাজ করছে। পুরুষদের পাশাপাশি জঙ্গিবাদে মহিলাদের তত্পরতায় শঙ্কা বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জঙ্গিবাদী তত্পরতায় মহিলাদের ব্যবহারের কিছু সুবিধা আছে। পর্দা করার কারণে এদের শনাক্ত করা কঠিন এবং অস্ত্র-বিস্ফোরক বহনও এদের জন্য সহজ। বিশেষ করে আত্মঘাতী হামলায় এদের ব্যবহারে বাড়তি সুবিধা পেতে পারে জঙ্গিরা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নারী জঙ্গি বিষয়ে কথা বলেছেন। ২৫ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি সতর্ক করে বলেন, জামায়াত-শিবির আগে থেকেই মাঠে রয়েছে। এখন তারা লেডি সুইসাইডাল স্কোয়াড গঠন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগস্ট মাসে আত্মঘাতী হামলার সতর্কবার্তা আছে। জামায়াতে ইসলামীর সুইসাইডাল স্কোয়াড আগে থেকেই সক্রিয়। এবার সেই স্কোয়াডে নারীরাও যোগ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তত্পর হয়ে ওঠে। গোয়েন্দা সূত্রগুলোর মতে, নারী জঙ্গি সৃষ্টিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে হিযবুত তাহ্রীর। নিষিদ্ধ এ জঙ্গি সংগঠনের ছাত্রী মুক্তি সংস্থা নামে একটি শাখা আছে। এর বাইরে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আল্লাহর দলসহ প্রতিটি জঙ্গি সংগঠনের আলাদা নারী ইউনিট রয়েছে। পুলিশ ও র‍্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নারী জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে মনিটর করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য। জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুরুষদের পাশাপাশি বেশ কিছুসংখ্যক মহিলা জঙ্গিবাদী কাজে যুক্ত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আরো অনেককে আমরা নজারদারির আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছি।’ র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলোর মহিলা সদস্যদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের ধরতে সারা দেশে অভিযান শুরু হয়েছে। তাদের ব্যাপারে র‍্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে সতর্ক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনেক দিন ধরেই জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ-হুজি, এবিটি ও হিযবুত তাহ্রীরের নারী সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয়। তারা ইসলামের দাওয়াতের নামে দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত। তাদের অস্ত্র চালানোসহ জঙ্গিবাদী বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সংগঠনের গোপন খবরাখবর আদান-প্রদানের কাজে নারীদের বেশি ব্যবহার করা হয়। জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের মুখে উগ্রবাদী পুরুষ সদস্যরা এখন একটু আড়ালে থেকে নারীদের দিয়েই সাংগঠনিক কাজগুলো সক্রিয় রাখছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, জেএমবির সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমান, আব্দুল আউয়ালের স্ত্রীরাও জঙ্গি তত্পরতায় যুক্ত ছিল। তাদের ফাঁসি হওয়ার পর কিছুদিন সংগঠনটির নারী ইউনিট চুপচাপ ছিল। এখন আবার তত্পরতা শুরু হয়েছে। নূরজাহান, মারজিয়া, মিনা আক্তার, লতা, শারমিন, জ্যোত্স্না ও বিলকিসদের দিয়ে নতুন করে গঠন করা হয়েছে মহিলা ইউনিট। তাদের সঙ্গে জেএমবির পলাতক শীর্ষ নেতাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, টঙ্গি, গাজীপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ আরো কয়েকটি অঞ্চলে নারী জঙ্গি বেশি। তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে সংগঠনের সদস্য বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সূত্র জানায়, গত ২৪ জুলাই সিরাজগঞ্জের মাছুমপুর মহল্লার উত্তরপাড়ায় হুকুম আলীর ভাড়া বাড়ি থেকে আটক করা হয় নাদিরা তাবাসুম রানী, রুনা বেগম, হাবিবা আক্তার মিশু ও রুমানা আক্তার রুমাকে। তাদের কাছ থেকে ছয়টি হাতবোমা, গ্রেনেডের চারটি খোল, ৯টি জিহাদি বই, ডেটোনেটর, সুইচ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এর আগে গুলশান হামলায় সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে নরসিংদী থেকে রুমা আক্তার নামের এক নারীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। যদিও তার পরিবারের দাবি, রুমা মানসিক ভারসাম্যহীন। ২৩ জুলাই গোপন বৈঠককালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আটিয়াতলী এলাকার একটি বাসা থেকে জামায়াতের ১১ নারী সদস্যকে আটক করে পুলিশ। কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়ায় অভিযান চালিয়ে জলি খাতুন নামে জামায়াতের এক নারী কর্মীকে আটক করা হয়। মহিলা জঙ্গি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলোর আলাদা আলাদা মহিলা ইউনিট রয়েছে। তাদের মাধ্যমে যেকোনো সময় নাশকতা চালানো হতে পারে বলে তথ্য পেয়ে তাঁরা সতর্ক রয়েছেন। টাঈাইলের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া নারী জঙ্গিদের কাছ থেকে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের স্বামীরাও জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে, আমার জেলায় আরো নারী জঙ্গি আছে। তারা যাতে কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে। জঙ্গিবাদ রুখতে পুলিশের পাশাপাশি জনগণও ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে।’ পুলিশ-র‍্যাব সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর ইডেন কলেজ ক্যাম্পাস থেকে জঙ্গি সন্দেহে লিপি আক্তার, নাজমা সুলতানা, নাসরিন সুলতানা ও নুরুন্নাহার নামে হিযবুত তাহ্রীরের চার মহিলা সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, তারা সবাই হিযবুত তাহ্রীরের মহিলা ইউনিট ছাত্রী মুক্তি সংস্থার সদস্য। এর মধ্যে নুরুন্নাহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও ভূগোল বিভাগ থেকে পড়ালেখা শেষ করেছে। তার স্বামী মনিরুল ইসলাম একই বিভাগ থেকে শিক্ষা শেষ করে। মনিরুল ছাত্র মুক্তির নেতা ছিল। তাদের নেতৃত্বে রাজধানীতে নারী জঙ্গিদের আলাদা একটি ইউনিট রয়েছে। তারা সবাই বিভিন্ন বেসরকারি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বস্তির ছিন্নমূল নারীরাও আছে। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে তারা পুরুষ জঙ্গিদের সহযোগিতা করছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিওর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ইসলামী দল তাদের সহায়তা দিচ্ছে। গত বছরের ২৪ এপ্রিল বরিশালে জঙ্গি সন্দেহে ২১ মহিলাকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, এরা সবাই হিজবুত তাওহীদসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। এই গ্রুপের দলনেতার নাম হেনারা বেগম। সে জানায়, তারা মাঠপর্যায়ে দাওয়াতি কাজ করে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার বাহির চাপড়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আল্লাহর দলের মহিলা সংগঠক হাজেরা খাতুনকে। সে পুলিশকে জানায়, নেত্রকোনায় আল্লাহর দলের ৩৪ জন মহিলা সদস্য রয়েছে। ১৫ আগস্ট পটুয়াখালী শহরের ছোট চৌরাস্তা এলাকা থেকে রুমা খাতুন, সাবিয়া সুলতানা ও আমেনা বেগমকে জিহাদি বইসহ আটক করা হয়। পঞ্চগড়ে জেএমবির শীর্ষ নেতা নজরুলের স্ত্রী ইসমত আরাকে গ্রেপ্তারের পর সে জানায়, তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জেএমবিতে ভেড়ানো হয়েছে। বগুড়ায় ধরা পড়া মাসুমার স্বামী রাইসুল ইসলাম খান। স্বামী-স্ত্রী মিলে জঙ্গি তত্পরতা চালিয়ে আসছিল। রাইসুলের ডাক নাম ফারদিন। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মাসুমার বড় ভাই মুজাহিদও জেএমবির শুরা কমিটির সদস্য। ২৭ জুলাই জঙ্গি সন্দেহে ইডেন কলেজের রসায়ন বিভাগের সাবিহা আফরিন সীমা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মোসাম্মত উম্মে সালমা রুমা, সমাজকর্ম বিভাগের মাকসুদা খাতুন, ইংরেজি বিভাগের নাসরিন সুলতানা এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী ফৌজি আক্তারকে গ্রেপ্তার করা জয়। তাদের রিমান্ডে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। জেএমবির মহিলা শাখার প্রধানসহ চার আত্মঘাতী জঙ্গি :  ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার মূল সন্দেহভাজন জেএমবির রাজনৈতিক শাখার প্রধান কমান্ডার শেখ রহমাতুল্লাহ ওরফে সাজিদের স্ত্রী ফাতেমা আক্তারসহ চার মহিলা জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা স্বীকার করেছিল, জেএমবির আবদুল্লাহ কাজী, ইশরাত আলী শেখ ও শওকত সরদার তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু জিহাদি বই, বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। ফাতেমা বর্ধমান বিস্ফোরণের সময় স্বামীর সঙ্গে ঘটনাস্থলের পাশেই অবস্থান করছিল। শিমুলিয়ায় এক মাদ্রাসায় সে মহিলাদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিত। ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, সারা দেশের মহিলা জঙ্গিদের তালিকা করে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। এর আগে ফাতেমা বর্ধমান বিস্ফোরণের পর ভারতের ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে সে বাংলাদেশে এলে তাকে আটক করা হয়। ভারতের শিমুলিয়ায় এক মাদ্রাসায় ফাতেমা জেএমবি সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিত। সেখানে অন্তত ২৫ জন নারী জেএমবির সামরিক শাখার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন বাংলাদেশি, অন্যরা ভারতীয়। সবাই এখন পলাতক। ফাতেমার বাড়ি দিনাজপুর বলে জানা যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের এনআইএ কর্মকর্তারাও জেএমবির নারী ইউনিট বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন।

টেকনাফে সৌদি নাগরিকসহ আটক ৪

কক্সবাজারের টেকনাফ শামলাপুর থেকে এক সৌদি নাগরিক ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও ) নেতা ও কক্সবাজার লিংক রোডস্থ ইমাম মুসলিম (রাঃ) ইসলামী সেন্টারের পরিচালক হাফেজ ছালাহুল ইসলামসহ চার জনকে আটক করেছে বিজিবি। শনিবার দুপুরে শামলাপুর দারুল ইসলাম দাখিল মাদ্‌রাসার সভাপতি ও শামলাপুর নতুনপাড়া এলাকার মাওলানা ছৈয়দ করিমের নিজ বাড়িতে তাদের আটক করা হয়।
ধৃত অপর তিনজন হচ্ছে সৌদি নাগরিক আবু ছালেহ্‌ আল গাদ্দানি, শামলাপুর দারুল ইসলাম দাখিল মাদ্‌রাসার সভাপতি মকবুল আলীর পুত্র মাওলানা ছৈয়দ করিম ও টাঙ্গাইলের হাবলাবিল পাড়ার মৃত আবদুল হামিদের পুত্র মো. ইব্রাহিম।
বিজিবি-২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদের নেতৃত্বে বিজিবি ও পুলিশ গোপন সংবাদ পেয়ে এ অভিযান পরিচালনা করেন।
ছৈয়দ করিম টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আহমদের বেয়াই হন। ওই মাওলানা ছৈয়দ করিমের বাড়িতে দুই সৌদি নাগরিকসহ অন্যদের সঙ্গে গোপন বৈঠক হচ্ছিল। তাছাড়া দুই সৌদি নাগরিকের টেকনাফের শামলাপুর দারুল ইসলাম দাখিল মাদ্‌রাসা পরিদর্শনের কথা ছিল। ঘটনাস্থলে দুইজন সৌদি নাগরিক থাকলেও অপর এক সৌদি নাগরিকসহ কয়েকজন সহযোগী কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
আটককৃতদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টেকনাফ-২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সদরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহেদ ইকবাল। আটককৃত বিদেশী নাগরিক থেকে একটি সৌদি আরবের পার্সপোর্ট পাওয়া গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিজিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

জঙ্গি আতঙ্ক : জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তারা ঢাকায় ফিরছেন না

জার্মান দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা আর ঢাকায় ফিরছেন না বলে জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিঞ্জ। যমুনা টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ১লা জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি আগের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ ঘটনার পর অনেকেই বাংলাদেশ ছাড়ছেন। বিশেষ করে যাদের শিশু-সন্তান রয়েছে। তবে ঠিক কতজন একেবারে ছেড়ে গেছেন তা এখনই বলা যাবে না। কারণ, শ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। ছুটি শেষ হলেই পুরো চিত্র পাওয়া যাবে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমার অন্তত দুজন সহকর্মী গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে যাওয়ার পর আর ঢাকায় ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দূতাবাসের ইন্টার্নি প্রোগ্রাম, লিগ্যাল এইড ট্রেনিংয়ের মতো কর্মসূচিও আমাদের বাতিল করতে হয়েছে। নিরাপত্তায় সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত ড. প্রিঞ্জ বলেন, নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে নিরাপত্তা অনেক বেড়েছে। কিন্তু এটাও সত্য গুলশানে অনেক লোকের বাস। এখানে বাইরে থেকে অনেকে আসেন। এ রকম একটি এলাকাকে শতভাগ নিরাপদ করা হয়তো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন জার্মানির রাষ্ট্রদূত। শ্রীষ্মের ছুটিতে জার্মান দূতাবাসের কূটনীতিক, উন্নয়ন কর্মকর্তা এবং স্টাফদের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে কূটনৈতিক সূত্রে যে খবর বেরিয়েছে তা হলো- তাদের অনেকে ঢাকায় ফেরার বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন। এর মধ্যে এক কূটনীতিক এবং একজন ডেভেলপমেন্ট অফিসার আর ঢাকায় না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিতও করেছেন বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ফ্রান্স: ওদিকে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফিয়া অ্যাবোর্ট জানিয়েছেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং বাস্তবতা বিবেচনায় ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনায় আগ্রহী ফ্রান্স। ১লা জুলাইয়ের ঘটনার পর থেকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন দূতাবাসে নিযুক্ত কূটনীতিক, কর্মকর্তা ও স্টাফরা। তাদের এখানে থাকার বিষয়টি সময় এবং পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, আমরা কাবুল কিংবা বাগদাদে বাস করছি না। এখানে সুনির্দিষ্ট হামলার হুমকি নেই। বাংলাদেশে পুলিশ কিভাবে কাজ করছে, মানুষের মনে আস্থা ফিরছে কি-না? কোনো হামলার হুমকি এলে তা মোকাবিলার কৌশল কী হবে? এসবের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ফ্রান্সের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি গোয়েন্দা তথ্য সবচেয়ে জরুরি। কারা কখন এ ধরনের হামলা করতে পারে তাদের গতিবিধি জানাতে হবে সবার আগে। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে মিলে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।
নিরাপত্তা নিয়ে জার্মান রেডিও’র প্রতিবেদন: ঢাকায় থাকা বিদেশিদের বিষয়ে সম্প্রতি জার্মান রেডিও’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখানে থাকা বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক হয়ে চলাফেরা করছেন। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। একাধিক বিদেশি নাগরিককে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হলি আর্টিজান বেকারিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল নীপিন গঙ্গাধরের। বিদেশি এক বেসরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে আছেন ওই ভারতীয়। গুলশানে হামলার পর তার বন্ধুমহলের অনেকেই এখন ঢাকায় নেই। কয়েক দিন আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘হামলার কথা জেনে প্রথমে স্তম্ভিত হয়েছি, ওটা একটা নিরাপদ জায়গা ছিল, আমরা প্রায়ই সেখানে যেতাম, ওখানকার রুটি আমার বাসার নিয়মিত খাবার ছিল, ওই হামলা বিদেশিদের শঙ্কিত করে তুলেছে। কারণ অনেকে ওই হামলার গোলাগুলির শব্দ নিজ কানে শুনেছে, কোনো পত্রিকা পড়ে বা টিভিতে দেখে নয়।’ নীপিন গঙ্গাধর জানান, তারা সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, তবে তার বিদেশি বন্ধুরা আরও কিছুটা সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান। মূলত নিজেদের এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা কাজ করছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশে একটি ভারতীয় এয়ারলাইন্সের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন শ্রীলঙ্কান নাগরিক জে এফ মার্জিয়া। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, এটা একটা সুন্দর দেশ। ২৫ বছর আগে এই দেশে এসে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এখনো ভালো লাগে। তবে সাম্প্রতিককালের ঘটনা খানিকটা উদ্বিগ্ন করেছে, এখন সতর্কভাবে চলাফেরা করি।
আতঙ্ক কাটাতে বহুমুখী সরকারি উদ্যোগ: গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর কূটনৈতিক জোনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা বিদেশি নাগরিকদের বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে সরকার। বিদেশিদের আতঙ্ক কাটাতে ‘ক্লোজ প্রটেকশন’ দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দূতাবাস এবং জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের বাসভবন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিদেশি নাগরিকদের অবস্থানস্থল, যাতায়াত এবং অনুষ্ঠানস্থলে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।

বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ : প্লাবিত ১৬ জেলার ৫৯ উপজেলা

ভয়াল বন্যা। শিকার লাখ লাখ মানুষ। দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। সরকারি হিসাবেই এখন পর্যন্ত ১৬ জেলার ৫৯ উপজেলা বন্যাকবলিত। ত্রাণ আর বিশুদ্ধ পানির সংকটে বানভাসি মানুষ। আশ্রয়ের জন্যও রয়েছে হাহাকার। এখন পর্যন্ত খোলা হয়েছে ৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। 
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে যমুনা নদীর তীরবর্তী জনবসতিগুলোতে রেকর্ড পরিমাণ পানি প্রবেশ করেছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। শনিবার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে বন্যাকবলিত লাখো মানুষ জীবন বাঁচাতে উঁচু জায়গার দিকে ছুটছেন। দিনভর কালিতলা গ্রোয়েন বাঁধ, দিঘলকান্দি হার্ডপয়েন্ট, মথুরাপাড়া হার্ডপয়েন্ট, রৌহদহ, আওলাকান্দি, হাসনাপাড়া ও দড়িপাড়াঘাটে চরের পানিবন্দি বহু মানুষ ঘরের মালামাল ও গবাদিপশু দিয়ে পাড়ি দিচ্ছে বাঁধ এবং বাঁধের পশ্চিম পারের উঁচু জায়গাগুলোতে। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিনভর তাদের ওই সব মালামাল স্থানান্তরের দৃশ্য চোখে পড়ে। পাকুড়িয়াচরের দিলবর আলী, ভোলা, আহেনা, শাহজাহান আলী, লালমিয়া জানান, নৌকা জোগাড় করে মোটামুটি মালামাল নিতে সক্ষম হয়েছেন। অনেকেই নৌকার অভাবে মালামাল সময় মতো পরিবহন করতে না পারায় যমুনা নদীর প্রচণ্ড স্রোতের তোড়ে ঘরের মালামাল, গরু ছাগল, হাঁস-মুরগি, গাছপালা, ধান-চালসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভেসে গেলেও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া করার কিছুই নেই তাদের। এক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা তারা পাচ্ছে না। এদিকে তীব্র স্রোতে ইতিমধ্যেই নদীর বুকে বিলীন হয়েছে অসংখ্য স্থাপত্য। এসবের মধ্যে রয়েছে ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আশ্রয়কেন্দ্র। যমুনার গর্ভে বিলীন হচ্ছে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা। বন্যা এবং নদীভাঙনের ভয়াবহতায় চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১ লাখ ১২ হাজার ৭শ’ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বন্যায় সারিয়াকান্দি উপজেলায় বিভিন্ন চরের ৪টি মসজিদ, ২টি মাদরাসা, ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি হাইস্কুল, ৩টি ব্রিজ, একটি বক্সকালভার্ট, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, আবাসন প্রকল্পের ১শ’টি ঘর এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৮০টি ঘর ইতিমধ্যেই নদীর সঙ্গে মিশে গেছে। চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস সরকার জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নে। চরাঞ্চল হওয়ায় ইতিমধ্যেই মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ ভাগ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। কেউ কেউ উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিলেও অনেকেই এখনো পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। দুর্গত এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। খাবারের পাশাপাশি নিজেদের থাকার জায়গা এবং গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। আর কিছুটা পানি বাড়লে এই ইউনিয়নে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। কর্নিবাড়ি ইউনিয়নের নান্দিনা, দশপাড়া ও সীমান্তপাড়া চরের প্রায় দেড় হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবারের কাছে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা সারওয়ার আলম জানান, পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য ১ লাখ ২০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুন করে ৩০ টন চাল শুধু সারিয়াকান্দি উপজেলার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সারিয়াকান্দিতে ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
ফুলছড়িতে বাঁধে ধস: শতাধিক বাড়িঘর ভেসে গেছে
উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়ায় শুক্রবার রাতে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাঁধের দুই পয়েন্টে অন্তত সাড়ে ৩শ’ ফিট বাঁধ ধসে যায়। বাঁধে ধসের কারণে রাতেই মালামাল, ধান, চাল, নগদ টাকা, ঘরের আসবাবপত্রসহ শতাধিক ঘরবাড়ি মুহূর্তেই পানির তোড়ে ভেসে যায়। এসব পরিবার শিশু সন্তান নিয়ে গবাদিপশুর সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিকাশ কৃষ্ণ সরকার জানান, সব নদীতে পানি কমলেও বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া নামক স্থানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। চলতি বর্ষা মওসুম ও বন্যার শুরুতে সিংড়িয়া নামক স্থানে বাঁধরক্ষায় জরুরিভাবে মেরামত কাজ শুরু করা হয়। তারপরও বাঁধের বিভিন্ন অংশ দিয়ে পানি চুইয়ে পড়তে থাকে। কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও পানি বৃদ্ধির কারণে বাঁধ হুমকির মুখে পড়ে। কয়েক দিন থেকে সিংড়িয়ায় বাঁধ মেরামতে বালির বস্তাসহ নানা সামগ্রী দিয়ে নদী শাসনের কাজ চলছিলো। কাজ তদারকির জন্য বাঁধে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ। তার উপস্থিতিতে মেরামত কাজ চলছিলো। এ সময় হঠাৎ করে যমুনা নদীর পানির প্রবল চাপে বাঁধের অন্তত ২০ ফিট অংশ ধসে যায়। ধসে যাওয়া অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। গাইবান্ধা কৃষি বিভাগ জানায়, বাঁধ ধসে নতুন করে আবারও ১৫টি ইউনিয়নের ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে রোপা আমনসহ ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সিংড়িয়া এলাকার ঘরবাড়ি ধসের শিকার লিয়াকত আলী জানান, রাতে ভাঙনের শব্দ শুনে বাচ্চাদের নিয়ে ঘর ছেড়ে বের হয়ে যাই। হু হু করে পানি এসে ঘরে ঢুকে সবকিছু ভেঙে নিয়ে যায়। কোনো রকমে জীবন নিয়ে বের হয়ে যাই। ঘরের কিছুই রক্ষা করা যায়নি এই গ্রামের শতাধিক পরিবারের। ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, বর্ষা এলেই লোক দেখানো কাজ করা হয়। লুটপাট করা হয় টাকা পয়সা। সে কারণে আজ সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগ। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস জানায়, ৩৩টিসহ নতুন করে আবার ১৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক আবদুস সামাদ জানায়, বন্যার্ত ও ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
চিলমারীতে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে শুরু করলেও রক্ষা পেল না উপজেলা সদর। পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলা পরিষদ, থানা, কলেজ, স্কুলসহ সদরের রাস্তাঘাট। বিপাকে পড়েছে বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা, কর্মচারী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষজন। ব্রিজ ও পাকা রাস্তা ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়ছে হতাশা। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। স্থানীয়দের সূত্র অনুযায়ী, উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বুরুজের পাড়া এলাকার সড়ক ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রবল পানির চাপে সদর থানাহাট ইউনিয়নের ঠগেরহাট বাজার এলাকায় একটি ব্রিজসহ পাকা রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদর প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলা পরিষদ, চিলমারী মডেল থানা, চিলমারী ডিগ্রি কলেজ, সদর থানাহাট বাজার, রমনাঘাট রাস্তা, থানাহাট বাজার রাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব মানুষের বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। বরুজের পাড় ও ঠগেরহাট এলাকার লোকজন অভিযোগ করে বলেন- রাস্তা ও ব্রিজ ভেঙে গেলেও উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীসহ প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত এলাকা পরিদর্শনসহ সহযোগীর জন্য এগিয়ে আসেননি। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, সরজমিন পরিদর্শনপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরিষাবাড়ীতে সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তিনদিনের ব্যবধানে যমুনার পানি বিপদসীমার ১২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার দেড় শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে চরাঞ্চচলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সরিষাবাড়ীর পপুলার টু জামালপুর সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পিংনা নরপাড়া এলাকায় তারাকান্দি-ভূঞাপুর সড়ক হুমকির মুখে থাকায় যমুনা সারকারখানা থেকে সার পরিবহন ও ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সড়কটি রক্ষার জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে ভুগছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। গৃহহারা হয়ে বাঁধের উঁচু স্থান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও আশ্রয় কেন্দ্রে। ভেঙে তলিয়ে গেছে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কামরাবাদ ইউনিয়নের জাপান সরকারের জাইকা প্রকল্পের বেড়িবাঁধ। বাউসী-ধনবাড়ী উপ-মহাসড়কের দুটি স্থানে সড়ক ডুবে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার স্রোতে পৌরসভার রেলি লুইস ড্রেফার্স এলাকার কয়েকটি পরিবার সহ যমুনা তীরবর্তী শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। কৃষকের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির উফশী ফসল ও দেড় শতাধিক পুকুর তলিয়ে গেছে। পৌরসভার হাসপাতাল, শিমলা বাজার, আরামনগর বড় বাজার, বাউসী বাজার ও খাদ্যগুদাম সহ প্রায় পুরো এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আজ রোববার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বন্যাকবলিত মানুষকে শুকনো খাবার হিসেবে বিতরণের জন্য রুটি বানিয়ে বিতরণ করবে বলে জানা গেছে। সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও জামালপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুল হক ভূঁইয়া বন্যা ও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বন্যাকবলিত মানুষকে সরকারিভাবে সহায়তার জন্য ৭৫ টন চাল দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
তলিয়ে গেছে অর্ধেক এলাকা
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ১৯৮৮ আর ২০০৭ সালের বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল পুরো সিরাজগঞ্জ জেলা। এবারের বন্যার শুরুতেই সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার একাংশসহ জেলার ৭টি উপজেলার ৮৩টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক এলাকার নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে। পানি বাড়ার গতি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাদের আশঙ্কা এবারের বন্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যেই বানের পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে চলন বিলাঞ্চলসহ এসব এলাকার পুকুরের মাছ ও ক্ষেতের ফসল। পানি উঠেছে তাঁতঘর ও স্কুল-কলেজে। ডুবে গেছে হাজার হাজার বসতবাড়ি। লাখো মানুষ বাঁধ, উঁচু এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে বন্যাক্রান্ত শিশুরা। চরাঞ্চলের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কর্মহীন হয়ে পড়ায় লাখো মানুষ শুধু ত্রাণের অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে। সরকারিভাবে যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শহর রক্ষা বিকল্প বাঁধে দেখা দিয়েছে ফাটল। চৌহালীতে তীব্র নদীভাঙন দেখা দেয়ায় বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনা নদীর পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত ৮৭ কিমি বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বসানো হয়েছে সর্তক পাহারা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মৎস্যভাণ্ডার হিসাবে খ্যাত চলনবিলের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও তাড়াশে শ’ শ’ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে শাহজাদপুরের গো-চারণ ভূমি এবং এই ৩টি উপজেলার আবাদি ফসল। তাঁত শিল্প অধ্যুষিত শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলার শ’ শ’ তাঁত ফ্যাক্টরি বন্ধ রয়েছে। বন্যা আক্রান্ত এলাকার অধিকাংশ স্কুল-কলেজে পানি প্রবেশ করায় সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। চৌহালী উপজেলার খাসরাজবাড়ি ও এনায়েতপুর এলাকায় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও বসতবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বিকল্প বাঁধের রাণীগ্রাম এলাকায় কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দেয়ায় শহরবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এই বাঁধটি ভেঙে গেলে শহরে পানি প্রবেশ করবে। এ চিন্তা ভাবিয়ে তুলেছে শহরবাসীকে। চরাঞ্চলের চারিদিকে পানি থৈ থৈ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে কাজিপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লাখো মানুষ। ডুবে গেছে পাট ও সবজি ক্ষেত। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি ক্রমশ: বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে তা বিপদসীমার ৮৯ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে বইছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ওয়ালী উদ্দিন জানান, সরকারি হিসাবে সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় ৩৩টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের কমপক্ষে সাড়ে ১৫ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। এছাড়াও ১৫ শত বাড়িঘর আংশিক ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ১৩৯টি কেন্দ্রে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার ৫টি উপজেলার বন্যা কবলিতদের মাঝে ৩৭০ মেট্রিক টন চাল ও ১৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী জানান, নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মুন্সীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আকস্মিক পদ্মার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল পদ্মার ভাগ্যকুল পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পদ্মা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী জমির ফসল। নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে, জেলার মেঘনা, ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদীর পানিও বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে শুক্রবারের চেয়ে ১০ সেন্টিমিটার। এ অঞ্চলে টানা কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি এখনও আশঙ্কাজনক নয় বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রটি। তবে এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিবে। ভাগ্যকুল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সহকারী জয়নাল আবেদীন জানান, ভাগ্যকুল পয়েন্টে পদ্মার পানি ৪০ সে.মি উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর তীর ঘেঁষা ঘর-বাড়িতে পানি এসে গেছে। লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খালেককুজ্জামান জানান, এ উপজেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে বন্যার মতো পরিস্থিতি হয়নি। নদীর তীর সংলগ্ন বাড়ির উঠানে পানি এসেছে। তবে পানি আরো বৃদ্ধি পেলে বন্যায় রূপ নিবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছে ব্যবস্থা নেয়া হবে তিনি জানিয়েছেন। এদিকে, জেলার শ্রীনগর, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পদ্মার নদীর তীরবর্তী সঙ্গে অবস্থিত বাড়িঘরে পানি আসা শুরু করেছে। তবে নদীভাঙন দেখা যায়নি।
জামালপুরে দুর্ভোগ
জামালপুর প্রতিনিধি: জানান, যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ সেন্টিমিটার হ্রাস পেলেও জামালপুরের ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী, বকশীগঞ্জ এবং মাদারগঞ্জ উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নসহ ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ পৌরসভা এখনও বন্যা কবলিত হয়ে আছে। এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে গত তিনদিনে জেলায় ৭ জন ও সাপের কামড়ে আরো এক জনের মৃত্যু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে গতকাল বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসণ সূত্রে জানা যায়, বন্যায় এ পর্যন্ত জেলায় ৬ লাখ ৫৯ হাজার ২’শ ২০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। ভয়াবহ বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। চারিদিকে বন্যার পানিতে স্থবির হয়ে পরেছে মানুষের জীবনযাত্রা। বন্যার কারণে চারদিকে পানি থাকায় রান্না করার সুযোগ না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে বানভাসী মানুষ। র্দুগত এলাকায় কাউকে দেখামাত্রই ত্রাণের আশায় ছুটে আসে এসব বানভাসী মানুষেরা। এ পর্যন্ত জেলায় ৩১ লাখ টাকা শুকনো খাবার এবং ৮শ’ মেট্রিক টন চাউল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিতরণের কথা বলা হলেও চরম অব্যবস্থাপনা ও ত্রাণের অপ্রতুলতার কারণে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে বানভাসী মানুষেরা। চিনাডুলি ইউনিয়নের ষাটোর্ধ্ব কুসুম, আজিজুল, মরিয়ম, আবদুল লতিফ, মোবারক আলী, কুলকান্দি গ্রামের আশি বছর বয়সের বৃদ্ধা গোলেছা ও ময়না বেগম অভিযোগ করে বলেন, এখন পর্যন্ত আমারা কোনো ত্রাণ পাইনি। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটালেও কেউই আমাদের খোঁজ নেয় না। বন্যার্দুগত এলাকায় গৃহপালিত পশু নিয়ে বানভাসী মানুষেরা বেশ বেকায়দার মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক বানভাসী মানুষ গরু-বাছুর, হাঁসমুরগী নিয়ে উচু বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার উপর আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে বন্যার কারণে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। চারদিকে পানি থাকায় বিষধর সাপও মানুষের পাশাপাশি উঁচু স্থানে আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে। এরই মধ্যে সাপের কামড়ে মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের পোড়াবাড়ী এলাকায় মজনু (৩০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, বন্যার এ পর্যন্ত ৫শ’ ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১শ’ ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কৃষিবিভাগ জানায়, বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত ১২ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে।
মানিকগঞ্জে ১০০টি গ্রাম প্লাবিত
স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, পদ্মা-যমুনার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে পদ্মা বেষ্টিত হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ চত্বর এবং আন্ধারমানিক বাজারে। এছাড়া রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ইউনিয়ন বিভিন্ন ইউনিয়। উপজেলার ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। এছাড়া শিবালয় উপজেলার আরিচা-তেওতা সড়কে পানি উঠে পড়ায় মানুষজন যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। দৌলতপুরের সাথে বাচামারা ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটিও পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০ টি গ্রামের কয়েক শ’ বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলী জমি। এদিকে আরিচা পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
পদ্মা নদীর পানি বেড়েই চলেছে
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, গত কয়েদিন পদ্মার পানি বেড়ে এখন বিপদসীমার ৯৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ফরিদপুর জেলার তিনটি উপজেলা ১১টি ইউপি’র অধিকাংশ জায়গা তলিয়ে গেছে। ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। প্রায় ১৮ হাজার পরিবারের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে এসব এলাকায় ২৮টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণ করা হয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শুক্রবার বিকালে ফরিদপুর সদরের আলীয়াবাদ ইউপি’র ভাজনডাঙ্গা পদ্মা নদীর সংলগ্ন এলাকার কাঁচা (মাটির তৈরী) বেড়িবাঁধ ভাঙনের মুখে পরে। পরে প্রশাসন ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় বালির বস্তা ফেলে সেটাকে প্রাথমিকভাবে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা চলছে। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার ইদ্রিস আলী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি ২১ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে ফরিদপুর সদরের চারটি, চরভদ্রাসনের চারটি এবং সদরপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বন্দি রয়েছে ওই সব এলাকার ১৮ হাজারের বেশি পরিবার। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিবপদ দে জানান, এই পর্যন্ত জেলার ৩২টি স্কুলে পানি প্রবেশ করেছে, তার মধ্যে পাঠদানের অনুপযোগী ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) রুবায়েত হায়াত শিপলু জানান, ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৫ মে.টন চাল ও ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়েছে। তিনি জানান, বন্যার সকল ধরনের খবর রাখার জন্য কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। ফরিদপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর জানান, পানিবন্দি মানুষের খোঁজ-খবর রাখার জন্য আমরা দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি তাদের ত্রাণ সহায়তার জন্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামে দুর্ভোগ কমেনি
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, শনিবার নদনদীর পানি সামান্য কমলেও বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এখন ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৭২ সেমি. এবং ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৮ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ঘরছাড়া মানুষ এখনও বাড়িতে ফিরতে পারেননি। ১৩ দিন থেকে পানিবন্দি সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পড়েছে খাদ্য সংকটে। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল হওয়ায় বানভাসিরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। শিশু, গর্ভবতী মা ও বৃদ্ধরা পড়েছেন চরম বিপাকে। সরজমিন উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ। ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম গাবুরজান গ্রামের সরমত আলীর বাড়িতে একবুক পানি। স্ত্রী বিউটি বেগম ২০ দিনের শিশুকে নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। চারদিকে থৈ থৈ পানি। ভয়ে ভয়ে প্রতিটা মুহূর্ত কাটে, কখন শিশুটি পড়ে যায় পানিতে। রান্না করার মতো কোনো উপায় নেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় উলিপুর বাজার থেকে এক প্যাকেট শিশুখাদ্য এনেছিল বাবা সরমত আলী। কিন্তু রান্না করতে পারেননি বন্যার পানির কারণে। বাড়ির পাঁচ সদস্য তিনদিন থেকে শুকনো খাবার খেয়ে জীবনকে বাঁচিয়ে রেখেছে। টানা ১৩ দিন থেকে তাদের এ দুর্ভোগ। খাওয়া নেই তাই শিশুটি মায়ের বুকের দুধও ঠিকমতো পায় না। শুধু সরমত আলীর পরিবারের এ অবস্থা নয়, কম বেশি হাতিয়া ইউনিয়নের ৯টি মৌজার মানুষের একই অবস্থা। এ ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের বাবুরচর গ্রামের মালেকা বেগম (৫২), মেহেরজান (৫৫) ও আলেয়া বেগমসহ ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চরের বেশ কিছু বাড়ি ঘুরে একই চিত্র চোখে পড়ে। চর ও দ্বীপচরগুলোর যেদিকে তাকাই সেদিকেই পানি আর পানি। এসব এলাকার মানুষ ঘরের ছাদে মাচানে অথবা টিনের চালের মধ্যে চৌকির মাঝে রাত কাটাচ্ছেন। পানিতে থাকতে থাকতে হাত পায়ে তাদের ঘা দেখা দিয়েছে। কোনো নৌকার শব্দ শুনলে মানুষজন শুকনো খাবারের জন্য ছুটে আসে। এ মুহূর্তে তারা চাল ডাল চায় না। চায় শুধু শুকনো খাবার, চিড়া মুড়ি গুড়, বিশুদ্ধ পানি আর তৈরি খাবার। বন্যার্ত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে, ওয়াপদা বাঁধ, উঁচু রাস্তা এবং আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেই নিয়ে উঠেছে তাদের গরু ছাগল হাঁস মুরগি। চরগাবুরজান সোনারপার গ্রামের ফুলমতি (৩০)। ১৫ দিন আগে তাদের ভিটেমাটি ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র স্রোতে বিলীন হয়ে যায়। দুটি সন্তান নিয়ে মানুষের ঘরে উঠেছে সেখানেও পানি। তার স্বামী আমজাদ জানান, কৃষি কাজ করেই সংসার চলে। কিন্তু দুই সপ্তাহ থেকে হাতে কাজ নেই। ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র স্রোতে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ওয়াপদা বাঁধের প্রায় ৪০ ফুট, আব্বাস মেম্বারের বাড়ি থেকে দেলদারগঞ্জ রাস্তায় তিন জায়গায় ভেঙেছে। তীব্র স্রোতের কারণে প্রায় শতাধিক বাড়ি ভেসে গেছে। এসব মানুষ বিভিন্ন রাস্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
কাজিপুরে চার হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে
কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের চলতি বন্যায় যমুনার পানি স্থিতিশীল রয়েছে। কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তলিয়ে গেছে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমির ফসল। কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। চরের ৬ ইউনিয়নে পাটের চাষ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। পানি বেশি হওয়ায় পাট কাটতে কৃষকদের কষ্টের মাত্রা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে কর্তনকৃত পাটের অনেক জাগ পানিতে ভেসে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। বন্যায় শুধু পাটক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর।
স্যার, আমাকে কিছু সাহায্য দ্যান!
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, স্যার, আমাকে কিছু সাহায্য দ্যান! এভাবেই বন্যার্তরা বন্যার পানি সাঁতরিয়ে সাঁতরিয়ে ত্রাণ পাওয়ার জন্য এসে আকুতি-মিনতি করেন। শাহজাদপুর উপজেলার বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৈজুরী ইউনিয়নের জগতলা, গুদিবাড়ী, আররা, ধীতপুরসহ ২৬টি গ্রামের সিংহভাগ এলাকার ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সাথে আশ্রয়হীন মানুষের চরম খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার কৈজুরী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিরতণ করেন শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আহমেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরিফুজ্জামান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিন্দার আলী, ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। ত্রাণ বিরতণের খবর ছড়িয়ে মুহূর্তেই ওইসব এলাকার শ’ শ’ নারী-পুরুষ বন্যার পানিকে উপেক্ষা করে ত্রাণ বিরতণ স্থলে ভিড় জমান। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুল থাকায় অনেকেই ত্রাণ না পেয়ে বিষণ্ন বদনে ফিরে যান। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আহমেদ জানান, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে সকলের মধ্যেই ত্রাণ বিরতণ করবো।’ এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শাহজাদপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। ইতিমধ্যেই শাহজাদপুরে ৬৫ মেট্রিকটন চাউল ও নগদ ৮০ হাজার টাকা বন্যাদুর্গতদের মধ্যে বিরতণ করা হয়েছে।
 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates