সুইজারল্যান্ডের হয়ে রিও-তে প্রতিনিধিত্ব করতে না পারায় গভীরভাবে হতাশ আমি।’ ‘টু বি অর নট টু বি?’
জীবনের প্রচণ্ড দুঃখ নিয়ে ব্যথিত, অথচ মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা— উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের অমর ট্র্যাজিডি ‘হ্যামলেট’-এ এমন বেদনাময় মুহূর্তে স্বগতোক্তিটি করেছিলেন রাজপুত্র হ্যামলেট।
অলিম্পিক গেমসে টেনিস নিয়ে আজও প্রশ্নটা এমন। এথেন্সে ১৮৯৬ সালে আধুনিক অলিম্পিকের প্রথম আসরে যে নয়টি খেলায় প্রতিযোগিতা হয়, তার মধ্যে ছিল টেনিসও। কিন্তু ১৯২৮ সালে বাদ পড়ার প্রায় ৬০ বছর পর দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল আসরে আবার যখন পরিপূর্ণরূপে টেনিস ফিরে আসলো, তখন টেনিস বিশ্ব দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিল হ্যামলেটের মতো। সেবার অলিম্পিকে অংশ নেননি আন্দ্রে আগাসি, জিমি কনোর্স কিংবা মার্টিনা নাভরাতিলোভার মতো তারকারা। টেনিসকে যে তখন অলিম্পিক স্পোর্টস হিসেবেই মনে করতেন না তারা! ২০০৪ সালে একবার টেনিস ম্যাগাজিনের সাক্ষাত্কারে কিংবদন্তি রড লেভার ‘টেনিসকে আমি অলিম্পিক স্পোর্ট মনে করি না। আমার কাছে অলিম্পিক মানেই ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ড।’
রড লেভাররা মনে করতেই পারেন টেনিসে কিংবদন্তি হতে অলিম্পিক স্বর্ণ জেতা লাগে না। টেনিস মানেই গ্র্যান্ড স্ল্যামের শ্রেষ্ঠত্ব। হয়তো কথাটা ঠিকও। তারপরও গত বছরের জুলাইতে মনের কোণ থেকে ছোট্ট একটু দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এসেছিল রজার ফেদেরারের। ১৭ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী। অলিম্পিক স্বর্ণ জিতেছেন দ্বৈতে। কিন্তু এককে যে বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসরে অলিম্পিকের গোল্ড মেডেলটা গলায় পরা হয়নি। রিওতে সেই আক্ষেপ পূরণের স্বপ্ন নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি এথেন্সে ২০০৪ সালে পতাকা বহন করেছি, বেইজিংয়ে চার বছর পর আমার জন্মদিনে পতাকা বাহক ছিলাম। ২০১২ সালে লন্ডনে ফাইনালে গেলেও স্বর্ণটা জেতা হয়নি। রিও অলিম্পিকে হয়তো অসাধারণ কিছু ঘটবে।’
স্বপ্নটা পূরণ হলো না ফেদারারের। হাঁটুর ইনজুরির কারণে রিও অলিম্পিক তো বটে, পুরো মৌসুম থেকেই ছিটকে পড়েছেন সুইস কিংবদন্তি। হাতাশা নিয়ে ফেসবুকে ঘোষণাটা দিতে হয় ফেদারারকে, ‘সুইজারল্যান্ডের হয়ে রিও-তে প্রতিনিধিত্ব করতে না পারায় গভীরভাবে হতাশ আমি।’
হতাশাটা হয়তো আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে তাকে। আসন্ন আগস্টে ৩৫ বছর বয়সে পা রাখবেন ফেদেরার। আগামী অলিম্পিকে তাকে দেখার আশা ক্ষীণ। চার বছর আগের রৌপ্য পদকটাই তাই হয়তো হয়ে থাকবে সুইস কিংবদন্তির সর্বোচ্চ অলিম্পক অর্জন। এক সময় অলিম্পিককে অবহেলা করলেও পরে ১৯৯৬ সালে স্বর্ণজয়ী আগাসির কথাটা স্মরণ করে হয়তো কিছুটা আক্ষেপ করবেন ফেদেরার। আমেরিকান কিংবদন্তি বলেছিলেন, ‘গ্র্যান্ড স্ল্যামজয় টেনিসে সবচেয়ে মহত্ জিনিস। কিন্তু গোটা ক্রীড়াক্ষেত্রে অলিম্পিক স্বর্ণজয়ের মতো বড় আর কিছু নেই।’-বিবিসি
No comments:
Post a Comment