খুলনা থেকে বাগেরহাটের খানজাহান আলীর মাজারে এসেছেন রোকেয়া বেগম। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন মেয়ে ও ছেলেকে। ছেলের অসুখ হয়েছিল বলে মাজারে মুরগি দেয়ার মানত করেছিলেন কোনো একসময়। এখন এসেছেন সে মানত পূরণ করতে।
সন্ধ্যার খানিকটা পর। খানজাহান আলী মাজারে তখন চলছিল বার্ষিক ওরস ও মেলা। মাজারের চারপাশ জুড়ে ভক্ত আর মানুষের ভীড়। রোকেয়া বেগম সে ভীড় ঠেলে মাজারের দীঘিতে এগিয়ে গেলেন। সেখানে থাকা কুমিরের খাদ্য হিসেবে মানতের মুরগি ছেড়ে দিলেন।
সময় মাত্র এক মিনিট। এর মধ্যেই ধরা পড়লো চিত্রটি। মানতের সে মুরগি কুমিরের পেটে না গিয়ে আটকা পড়লো মানুষের হাতে। মুরগি ছাড়তে দেখে ছুটে এলো ১২/ ১৩ বছরের একটি ছেলে। হাঁটু পানিতে নেমে মুরগিটিকে ধরে নিয়ে খাঁচায় আটকে রাখলো।
এখানেই ঘটনার শেষ নয়। খাঁচার কাছে যেতে চোখে পড়লো খাঁচাতে বেশ কয়েকটি মুরগি আটকে আছে। মুরগিগুলোর শরীরের পানি ঝরতে দেখে বোঝা গেলো বাকি মুরগিগুলোও এমনই দীঘি থেকে ধরে আনা। খাঁচার পাশে বসে আছেন ষাটোর্ধ্ব একজন। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে মাজারের খাদেম বলে পরিচয় দেন। নাম ফকির মজনু।
আরও পড়ুন: জঙ্গি নিবরাসকে নিয়ে মুখ খুললেন ফেরদৌস !
ফকির মজনু খাঁচার মুরগি বিক্রি করছেন দেদারসে। একদাম ৩শ টাকায় সে মুরগি কিনে নিচ্ছে অনেকেই। সওয়াবের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিচ্ছে দীঘিতে। আবার দীঘি থেকে মুরগি এসে ঢুকছে ফকির মজনুর খাঁচাতেই। মজনু ফকিরের কাছে মানতের নানা জিনিসও জমা হচ্ছে। এরমধ্যে নারকেল, কলাও রয়েছে। তবে এসব কিছু মাজারের তহবিলে যাচ্ছে না বলে স্থানীয় অনেকেই অভিযোগ করেন।
প্রায় আড়াইঘণ্টা ধরে মুরগির খাঁচার পাশে দাঁড়িয়ে দেখা গেলো একটি মুরগিই বিক্রি হচ্ছে বারবার। প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকেই এ তামশা দেখছি। একটা মুরগি একশোবার বিক্রি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: স্বপ্নের বাড়ির হয়ত নাম শুনেছেন, দেখুন বাংলাদেশের একটি স্বপ্নের বাড়ী!!!
দীঘিতে মানতের মুরগি ফেলেছেন রফিক নামের একজন। তার মুরগিও চলে গেছে খাদেমের খাঁচায়। বিষয়টি সম্পর্কে খাদেমের কাছে জানতে চাইলে তাকে রীতিমতো অপমানিতও হতে হয়েছে।
রফিক অভিযোগ করে বলেন, ‘এমন জানলে এখানে মানতের মুরগি ফেলতাম না। তবে আমার কাজ আমি করেছি, যারা এ মুরগি খাবে তারা সেটার জবাব দেবে।’
এদিকে দীঘিতে মুরগি ধরার জন্য একটা নৌকাও দেখা গেছে। দু’জন সে নৌকা দিয়ে ঘুরে ঘুরে দীঘিতে ছাড়া মুরগি ধরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সুনিপুনভাবে। কোনো মুরগিই তাদের হাতছাড়া হচ্ছে না, ধরা পড়ে যাচ্ছে কৌশলে।
মানুষের মানত করা মুরগি ধরে এনে বারবার বিক্রি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদেম মজনু ফকির এটা তার দায়িত্ব বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে মুরগি ফেললে কুমির খায় না। মরে গিয়ে সে মুরগি দুর্গন্ধ ছড়ায়। সেজন্য আমরা মুরগি তুলে আনছি।’
আরও পড়ুন: বৃদ্ধাশ্রম থেকে ছেলের কাছে এক অসহায় বাবার চিঠি ! ফেইসবুকে তোলপাড়!
এক মুরগি বারবার বিক্রি করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনটি করা অন্যায় না। মুরগি বিক্রির এ টাকা মাজারের ফান্ডেই জমা হচ্ছে।’ তবে তিনি মুরগি বিক্রির কোনো রশিদ দেখাতে পারেননি।
এ পর্যায়ে খাদেম মজনু দম্ভ করেই বলেন, ‘এখানে চারশ খাদেম আছি। আমরা সবাই খানজাহান আলীর বংশধর। এখানে আসা মানত, সদকাসহ সব ধরনের টাকার ৬০ ভাগ আমরাই ভোগ করি। বাকিটা মাজারের উন্নয়নে ব্যয় হয়।’
পুরো বিষয়টি সম্পর্কে মাজারের প্রধান খাদেমদের একজন শের ফকিরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এ পুকুরসহ পুরো মাজারের দেখভালের দায়িত্ব আমাদের। গণহারে পুকুরে মুরগি ফেললে সেগুলো মরে যায়। পরে আর কুমির সে মুরগী খায় না। তাই সেগুলো ধরে রেখে পরে সময় মতো কুমিরের খাবার হিসেবে দেয়া হয়। তবে এক মুরগি বারবার বিক্রি করার কোনো খবর আমি জানি না।’
No comments:
Post a Comment