দক্ষিণ ইউরোপ মহাদেশের দেশ ইতালি। আয়তনে ৩০১,২৭৮বর্গ কি,মি দেশটির রাজধানী রোম। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার কারনে ইতালির অবস্থা বেশ নড়বড়ে হয়ে পড়লেও দেশটির অবস্থা এখন পরিবর্তন হচ্ছে। বাড়ছে অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা, কমছে বেকারত্বের সংখ্যা। ইতালিতে বাংলাদেশিদের আগমন আশির দশকে, তবে তা ছিল হাতে গোনা। নব্বই দশকের পর ইতালিতে বাড়তে থাকে বাংলাদেশির সংখ্যা। তবে ইতালিতে সরাসরি ভিসা বন্ধ থাকায় অধিকাংশ সময় তারা বেছে নেন ঝুঁকিপূর্ণ গ্রিস ও লিবিয়ার সীমান্ত। শুরু থেকেই ইতালিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিদের বাস রোম, মিলান, ভেনিস, মেরানো, সিসিলিয়া, পাদোভা, আনকোনা, লাতিনা ও সালেরনো এসব শহরে। তবে এদের সবাইকে ছাড়িয়ে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছে বন্দরনগরী নাপোলিতে। আর এই নাপোলিতেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা গড়ে তুলেছেন বেশ কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি।
নাপোলির পালমা কোম্পানিয়া, সানজেননারো, সানজুসেফফেসহ অন্যান্য স্থানে বাংলাদেশি মালিকানায় প্রায় ৩৭০টিরও বেশি ছোট-বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। ফ্যাক্টরিগুলোতে বেশিরভাগ শ্রমিকই বাংলাদেশি। এতে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। নাপোলির ওইসব এলাকার বেশকিছু বাংলাদেশি মালিকানাধীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারী শ্রমিকও কাজ করছেন। ইতালির আইন মেনেই চালাতে হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তবে শ্রমিকদের সাথে পুরোপুরি নিয়ম মেনে কন্ট্রাক্ট বা চুক্তি করতে হলে মালিকপক্ষকে অনেক বেশি ট্যাক্স গুনতে হয়। তাও সবার সঙ্গে চুক্তি করা মালিকদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই শ্রমিকদের মধ্যে এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
তারা বলেন, এখানে আমরা যারা কাজ করছি আমাদের অনেকেরই ইতালির স্থায়ী বসবাসের পারমিট বা অনুমতি নেই, যার ফলে স্থানীয় আইন অনুসারে কন্ট্রাক্ট করা সম্ভব হয় না। এতে করে অন্য শ্রমিকদের তুলনায় আমরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছি। পরিশ্রমের যে ন্যায্য পাওনা তা থেকে আমাদের পুরোপুরি দেয়া হয় না। এত কষ্টের ভেতরেও জীবিকার জন্য এসব কাজ করে যাচ্ছি। কারণ ইতালির অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। মাস শেষে থাকা-খাওয়ার খরচ উপার্জনের কথা ভেবে এবং দেশের পরিবারের কথা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হয়।
নাপোলিতে এসব গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় ইতালিতে অনেক বাংলাদেশি দক্ষ শ্রমিক রয়েছে। তারা বলেন, এসব ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত বস্ত্র ইতালি ছাড়াও ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, পর্তুগালসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হয়। ইউরোপের গার্মেন্টস শিল্পের বাজারে বাংলাদেশিদের অনেক সুনাম হয়েছে। যার ফলে নাপোলির সব জায়গায় বাংলাদেশি মালিকানায় এরইমধ্যে ছোট-বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। একসময় এখানে চীনাদের বিশাল বাজার ছিল, তা এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। সেই বাজার এখন বাংলাদেশিদের কাছে আসছে।
এই মালিকরা আশা করেন বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা পেলে এখানে তারা আরও বেশি ভালো করতে পারবেন। যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা দু’দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়িয়ে সমাধান করা সম্ভব বলে তারা মনে করেন। তারা আরও জানান, দেশের কিংবা ইতালির বিত্তবানরা গার্মেন্টস শিল্পের জন্য এগিয়ে এলে নাপোলিতে গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশিদের একক আধিপত্য বিস্তার করা সম্ভব হবে। এই শিল্প থেকে বাংলাদেশিরা যেমন রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছেন, তেমনি ইতালির অর্থনীতিতেও তারা বিশেষ অবদান রাখছেন।
No comments:
Post a Comment