বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে এ সম্পর্ক সম্প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে । এর মধ্যে যে সকল পণ্যে বাণিজ্য বাঁধা আছে সেগুলো দূর হলে শ্রীলংকার বাজার বাংলাদেশের জন্য সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্কহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁধা হয়ে দাড়িয়ে আছে। এই বাঁধা দূর করতে পারলে শিল্প, কৃষি, নৌ-যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, পর্যটন ও পানিসম্পদ খাতে দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এম. এ বাসার জানান, শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের অনেক বড় সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ওই দেশে বাণিজ্য বাড়াতে কীভাবে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি করা যায়, সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। জানা গেছে, শ্রীলংকার সঙ্গে শুল্ক-বিষয়ক কিছু জটিলতা রয়েছে। উভয় দেশে পণ্য রপ্তানির ওপর শুল্কহার বর্তমানে অনেক বেশি। তাই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য শুল্কহার কমিয়ে আনতে পারলে বাংলাদেশ অনেক বেশি লাভবান হবে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য শ্রীলংকায় রপ্তানি করে, তার চেয়েও বেশি আমদানি করে। ফলে শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ঘাটতি রয়েছে।
শ্রীলঙ্কার উৎপাদনশীল খাত যেমন ফার্মাসিউটিক্যাল, জাহাজ-নির্মাণ, পর্যটন, মৎস আহরণ এবং অন্যান্য খাতে বিনিয়োগে লাভবান হবে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত এবং শ্রীলংকায় বাংলাদেশের ওষুধের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধ ব্যবসায়ীদের জন্য শ্রীলংকা নিঃসন্ধেহে একটি সম্ভাবনাময় বাজার। তবে উচ্চ শুল্কহারের কারণে এ পণ্য সমূহ বাংলাদেশ রপ্তানি করতে পাচ্ছে না।
বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও মংলার বন্দরের সাথে কলম্বো এবং হামবানটোটা সমুদ্রবন্দরের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে সহজেই দুই দেশই লাভবান হতে পারে। কেননা শ্রীলঙ্কার কলম্বো এবং হামবানটোটা সমুদ্রবন্দর ভৌগোলিকভাবেই অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে এবং বন্দরসমূহে আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান করা থাকে। বন্দর ব্যবহার করলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ব্যয় অনেক কমে যাবে। এম. এ বাসার আরো জানান, ‘বর্তমানে বাংলাদেশর সঙ্গে শ্রীলংকার যে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক রয়েছে তাতেও বেশ কিছু পণ্য শ্রীলংকায় রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশ থেকে। সেগুলো হচ্ছে নিট পোশাক, চামড়া, ফার্নেস তেল, হোম টেক্সটাইল, মুদ্রণসামগ্রী, পাটজাত পণ্য, ওভেন গার্মেন্টস, হালকা প্রকৌশল পণ্য, ওষুধ প্রভৃতি।
আবার শ্রীলংকা থেকে বাংলাদেশ কিছু পণ্য আমদানি করে যার মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ, বস্ত্র, খনিজ পদার্থসহ আরো বেশ কিছু পণ্য রয়েছে।’ শ্রীলংকার সঙ্গে চীন ও ভারতসহ বেশকিছু দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) রয়েছে এবং বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার বাণিজ্য কার্যক্রম সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
No comments:
Post a Comment