বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। দেশে তাদের স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে এসব প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়াও অবৈধ বা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে থাকে। তুলনামূলক সহজ ও ঝামেলামুক্ত হওয়ায় এ পথ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে শ্রমিকরা। এছাড়া ব্যাংকিং লেনদেনে চার্জ বা মাশুল বেশি খোয়াতে হয় বলে এ চ্যানেলে লেনদেনে অনেকটাই অনাগ্রহী প্রবাসীরা। যার কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ কমছে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে এবং বৈধ চ্যানেলে ব্যাংকিং সেবা দিতে এখন থেকে আর কোনো চার্জ বা মাশুল গ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর খরচ সরকারের তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম দিনে আইএমএফের ডিএমডি মিতসুহিরো ফুরুসাওয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর এমন তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, “আমরা (সরকার) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের কাছ থেকে কোনো চার্জ নেবে না ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর চার্জ সরকার দিয়ে দেবে। “অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই তারা এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করবে।” অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে কিনা তা এখন দেখার বিষয়। তবে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা অন্য কোন ছক একে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর এই অবৈধ পথকে আরও প্রসারিত করবে কিনা সেটি এখন চ্যালেঞ্জ।
তবে যারা বেশি রেমিটেন্স পাবেন তার কাছ থেকেও কি কোনো মাশুল নেওয়া হবে না- এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, “না, সে ক্ষেত্রে হয়ত চার্জ নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ নিয়ে অনেক দিন কাজ করেছে। তারা সার্কুলার জারি করলেই পরিষ্কার হবে’।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে ভাটা পড়েছে; মাসের হিসেবে সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স এসেছে। সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৯২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্স সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসে। এরপর প্রতিবছরই রেমিটেন্স কমেছে।
রেমিটেন্সের উৎস দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য মাধ্যমে হুন্ডি প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রেমিটেন্স কম আসছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গত পাঁচ বছরে রেমিট্যান্স কম আসার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং এর সেবায় বিশ্বাসযোগ্যতা ও সহজলভ্যতা। কারণ অবৈধ অভিবাসীদের বিদেশের ব্যাংকগুলোতে এ্যাকাউন্ট খোলার কোন সুযোগ না থাকায় এপথ ব্যবহার করছে তারা। সরকারের রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ কার্যকর করতে হবে। এ সেবা প্রবাসীরা তখনই গ্রহণ করবে যখন হুন্ডির চেয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে সেবা ও সহজলভ্যতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
No comments:
Post a Comment