হাজারো দ্বীপের দেশ মালদ্বীপে ভালো নেই বাংলাদেশিরা। বেসরকারি হিসাবে, এ দেশে ৬০ থেকে৭০ হাজার বাংলাদেশি আছেন এবং তাঁদের বেশির ভাগেরই কাজের জন্য বৈধ নিবন্ধন নেই। ফলে হাড়ভাঙা খাটুনির পরও তাঁরা প্রাপ্য বেতন ও বিশ্রামের অধিকার থেকে হতে হয় বঞ্চিত। মূলত মালদ্বীপে আছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ জনসংখ্যা। এর বাইরে অনেক বিদেশি এখানে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তবে বিদেশি হিসেবে শুধু বাংলাদেশেরই সবচেয়ে বেশি।
ভয়েস বাংলার সঙ্গে কথা হয় মালদ্বীপ প্রবাসী কুমিল্লার নাজির আহমদের। তিনি জানান, বাংলাদেশিদের অনেকেই মালদ্বীপে নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে আছে। তিনি আরো বলেন, মালের কবুতর পার্কে প্রতি শুক্রবার অনেক বাংলাদেশি আসে। তাঁদের দুঃখের শেষ নেই। মাসের পর মাস কাজ করেও বেতন মেলে না। অথচ এ দেশে অন্য কোনো দেশের নাগরিকদের এমন অবস্থা নেই। এখানে বাংলাদেশিদের কেউ কেউ দেশে ফিরতে চাইলেও পারছেন না। ফেরার বিমান টিকিট জোগাড়ের সামর্থ্যও অনেকের নেই। নাজির বলেন, মালদ্বীপে বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই আতিথেয়তা ও পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের বেতনও খুব বেশি নয়। তবু একদিন সুদিন ফেরার প্রত্যাশায় তাঁরা প্রতিকূলতার মধ্যেও মালদ্বীপে আছেন।
কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয়, তাঁদের বেশির ভাগই কয়েক লাখ টাকা খরচ করে মালদ্বীপে এসে বৈধতা পাচ্ছেন না। ফলে তিন মাস চাকরি করলে তাঁদের এক মাসের বেতন জোটে। এর কোনো প্রতিকারও পাওয়া যায় না। মালদ্বীপ ও অন্য দেশের নাগরিকদের কাজের সময় এখানে দৈনিক আট ঘণ্টা। ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশিরাই। তাঁদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। একজন বাংলাদেশি কর্মী জানান, সারা দিন কাজ করার পরও রাত ৩টায় তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে হোটেলে রুমগুলোর দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশি বলেই তাঁরা এত অবহেলিত, তাঁদের এত কষ্ট।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্ষোভ মালেতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিরুদ্ধেও। তাঁদের অভিযোগ, হাইকমিশন থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। ট্রাভেল পাসের জন্য দূতাবাসের কাছে ২০-২৫ দিন ধরনা দিতে হয়। তারা কোনো কথা শুনতে চায় না। বাংলাদেশি তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আবুল বাসার ভয়েস বাংলাকে বলেন, কিছু দিন আগে আমি মালদ্বীপে গিয়েছিলাম। বিমানবন্দরে নামার পর থেকেই অনেক বাংলাদেশি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তারা অনেক সমস্যার কথা বলে। বিশেষ করে তাদের দেশে টাকা পাঠাতে খুব সমস্যা হয়। ব্যাংকগুলো অনিবন্ধিত বাংলাদেশিদের কাছে ডলার বিক্রি করতে চায় না, স্থানীয় মুদ্রা রুপিয়াও দেশে পাঠানো যায় না। ফলে বাইরে থেকে কম দামে ডলার কিনে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
বেশ কয়েকজন মালদ্বীপ প্রবাসী বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেন এত সহজে সবাই এখানে আসতে না পারে। বাংলাদেশিদের আসার হার কমলে তাদের কর্মী সংকট হবে এবং এর ফলে বাংলাদেশিদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে দরকষাকষির সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন অ্যারাইভাল ভিসার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই পর্যটক হিসেবে মালদ্বীপে এসে থেকে গেছে বলে তারা উল্লেখ করেন। দেশে ফিরতে আগ্রহীদের আউট পাস ইস্যু করতে দেরি হওয়ার কারণের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা গেছে, বাংলাদেশিদের আউট পাস দেওয়ার পর তাঁর নিয়োগকারী হাইকমিশনে এসে পাওনা টাকা দাবি করেছেন।
এ কারণে আউট পাস ইস্যু করার আগে খোঁজ নেওয়া হয় এবং জনবল সংকটের কারণে এতে কিছুটা সময় লাগে। মালদ্বীপে বাংলাদেশিদের কেউ কেউ লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পান এটা যেমন সত্য। তেমনি বেশির ভাগই কাজ করেন নিম্নপদে ও নিম্ন বেতনে। আর তাঁদের নিয়োগকারীরাও শিক্ষিত নন। ফলে তাঁদের কাছে প্রত্যাশিত আচরণ অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না। এর পরও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে মালদ্বীপ সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
No comments:
Post a Comment