আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে মরুময় ও সুউচ্চ পর্বতমালায় ঘেরা দেশ ওমান। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ’র পরিসংখ্যান অনুসারে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম শ্রমবাজার এটি। ওমানের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে দেশটিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় সাত লাখ। কিন্তু বিরাট জনশক্তির এ দেশটিতে খুব ছোট একটি কারণে অনেক বাংলাদেশি আজ কারাগারে আটক। ওমানে নতুন আইনে বর্হিরগমন পাসর্পোটধারী কোনো ব্যক্তি সেদেশে প্রবেশের সময় কোনো প্রকার ওষুধ বহন করতে পারবে না। কিন্তু এ তথ্য না জেনে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি নিজেদের প্রয়োজনীয় ওষুধ বহন করায় ওমান বিমানবন্দরের আটক হয়েছেন তারা। দেশ থেকে ফেরার সময় ওষুধ বহন করায় এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচশত বাংলাদেশি জেলে আটক হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক রফিকুল ইসলাম জানান, ওমানে বাহিরের দেশে সকল প্রকার ওষুধ বহন করা নিশিদ্ধ। কিন্তু এ বিষয়ে দূতাবাস আমাদের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। যার কারণে ওমানের বিমানবন্দরে অবৈধ ওষুধ বহনকারীকে আটক করছে ওমান ইন্টেগেশন পুলিশ। রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি বাংলাদেশ থেকে ওমানে আসার সময় জ্বরের ওষুধ সাথে করে নিয়ে এসেছিলো। ওমানে পৌছানোর পর ওষুধ বহন করার জন্য তাকে আটক করা হয়। এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে জেলে পাঠানো হয়। তবে এ বিষয়ে দূতাবাস কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
একই অবস্থা প্রবাসী শ্রমিক রায়হান হকের। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ওষুধ নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে বিমানবন্দরে আটক করে পুলিশ। ওমানে বাহিরে থেকে ওষুধ নিয়ে আসার অবৈধ ঘোষণাটি তিনি জানতেন না। তবে বিক্রির জন্য নয়, নিজের প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে এসেছেন বললেও ছাড় পায়নি পুলিশের কাছে। তিনি বলেন, নিজের প্রয়োজনীয় ওষুধ বহন করার জন্য তাকে প্রায় ৬ মাস জেল খাটতে হয়েছে। এসময় বিভিন্ন ভাবে দূতাবাসের সাথে যোগযোগ করার চেষ্টা করেছে রায়হান। কিন্তু দূতাবাস কোনে ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। রায়হান আরও জানায়, কারাগারের থাকা অবস্থায় মাসে একবার ফোন করার সুযোগ দেয় সকল কারাবন্দিদের। তিনি প্রায় ছয়বার ফোন করেছে ওমনের বাংলাদেশ দূতাবাসে। তারপরও তারা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেননি। এভাবে দূতাবাস বাংলাদেশি প্রবাসীদের সহযোগিতা না করলে প্রবাসীরা অনেক বিপদে পড়তে বলেও মনে করেন এ প্রবাসী শ্রমিক।
এদিকে ওমানে বাংলাদেশি দূতাবাস জানিয়েছে, কোন প্রবাসী শ্রমিক অবৈধ কাজের সাথে জড়িত থাকলে তাদের কোনো প্রকার সাহায্য করা হবে না। এমনকি তারা জানিয়েছে ওমানের অবৈধ ওষুধ বহন করার তথ্য দূতাবাস থেকে বেশ কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রবাসীরা তারপরও বিভিন্নভাবে অবৈধ ওষুধ বহন করছে। এ ধরণের কাজ চলতে থাকলে ওমানে বাংলাদেশের ভাবপূর্তি অনেকখানি নষ্ট হবে। তাই দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, ওমানে অবস্থানরত প্রবাসীরা যেনো কোনো প্রকার অবৈধ কোনো কাজের সাথে জড়িত না থাকে।
কিন্তু দূতাবাসের এ ধরনের বক্তব্যে নারাজ প্রবাসী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, দূতাবাস আমাদের ওষুধ বহনের বিষয়টি ভালো ভাবে জানায়নি। যদি জানানো তাহলে এতো পরিমানের প্রবাসীরা কখনোই অন্যদেশ থেকে আসার সময় নিজেদের সাথে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে আসতো না। তিনি আরও বলেন, দূতাবাস এ বিষয়টি খুব একটি দায়িত্ববোধ ছিলো না। এছাড়াও আমারা ওমানে ব্যবসা করার জন্য ওষুধ নিয়ে আসছি না। নিজেদের প্রয়োজনে খুব অল্প সংখ্যক ওষুধ নিয়ে আসলেও আমাদের আটক করছে ওমান পুলিশ। এমনকি অনেকে তাদের ওষুধ বিমানবন্দরেই রেখে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের আটক করছে ওমান পুলিশ। এবিষয়ে অবশ্যই দূতাবাসের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না করলে অনেক ওমান প্রবাসী ভুল তথ্যতে ওমানের কারাগারে আটক হবে। যা কোনো ভাবেই একটি দেশের জন্য কাম্য নয়।
No comments:
Post a Comment