প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে ২০১২ সালে সিঙ্গাপুরে কাজ করতে যান মুন্সিগঞ্জের ইলিয়াস আলী। চাকরির মেয়াদ ছিল এক বছর। যে কোম্পানিতে মামুন কাজ করতেন, মেয়াদ শেষে সেখানে আর কাজ না থাকায় তার চাকরি নবায়ন হয়নি। ফলে দেশে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু যে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে তিনি সিঙ্গাপুরে কাজ করতে গেলেন, চাকরি করে আর্থিক উন্নতি করা তো দূরের কথা, বিদেশ যাওয়া খরচের টাকাও পুরোপুরি উঠিয়ে আনতে পারেননি ।
এরপর আবারও কিছুদিন পর তিন লাখ টাকা খরচ করে সিঙ্গাপুরে কাজ করতে গেলেন ইলিয়াস। এবার অবশ্য এক বছর পরই বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে চাকরি নবায়নের সুযোগ পেলেন তিনি। শর্তটি হলো- চাকরি নবায়ন করার জন্য কোম্পানিকে এক হাজার ডলার দিতে হবে। কিন্তু দু:খের বিষয় হচ্ছে এই নবায়ন ফি ইলিয়াসের দুই মাসের বেতনের সমপরিমাণ। এই প্রবাসীর জানান, সিঙ্গাপুরে চাকরি নবায়নের জন্য কোম্পানিকে কোনো ফি দেওয়ার নিয়ম না থাকায় কোম্পানিগুলো কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা কাগজে-কলমে দেখায় সেই কর্মীটি কোম্পানির কাছ থেকে নবায়ন ফি’র সমপরিমাণ ঋণ নিয়েছে। চাকরি নবায়নের পরে ওই বেতন থেকে ওই পরিমাণ অর্থ কেটে রাখা হয়।
এভাবে বারবার কর্মীদের চাকরির মেয়াদ নবায়নের ফি নিয়ে থাকে কোম্পানি। কোম্পানির এই অসৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেও কর্মীরা সেখানে কাজ করতে বাধ্য থাকে। কারণ, এক কোম্পানি ছেড়ে অন্য আরেক কোম্পানিতে কাজ করতে গেলে সে ক্ষেত্রে নবায়ন ফি’র দুই-তিন গুণ বেশি টাকা খরচ হবে। আবার চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসলেও কোনো লাভ নেই। যে টাকা খরচ করে সে সিঙ্গাপুরে গিয়েছে, সেই টাকা উঠিয়ে আনতে পারবে না। অন্যদিকে, বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাতে চাকরির মেয়াদ নবায়ন ফি নেওয়ার কারণে কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে না পারে সেজন্য কোম্পানিগুলো আগেই ঋণ নামক ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়।
শ্রমিকরা জানান, কেউ যদি অভিযোগ করে যে কোম্পানি তার কাছ থেকে চাকরির মেয়াদ নবায়নের জন্য ফি নিয়েছে, সেক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো কাগজে-কলমে দেখায় যে ওই শ্রমিক কোম্পানির কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল।
No comments:
Post a Comment