বাংলাদেশের শহর-গ্রাম-মফস্বলে ছোট্ট ছেলে মেয়েদের হাতে যেসব স্বল্পমূল্যের প্লাস্টিক খেলনা বিক্রি হয় এক সময় সেগুলো ছিল সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর। তবে পাল্টে গেছে চিত্র। বাজারে এখন হরহামেশা যে খেলনাগুলো দেখা যাচ্ছে তার অধিকাংশই বাংলাদেশে তৈরি।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেশে এসেছিলেন জাপান প্রবাসী নূর হোসেন। সঙ্গে ছিল তার পরিবার এবং ছোট্ট দুই সন্তান- সামির ও টুম্পা। এক সপ্তাহ পর তারা যখন জাপান ফেরত যাচ্ছিলেন তখন এয়ারপোর্টে তাদের সাথে দেখা হয়। বেশ ক’টি বড় লাগেজ নিয়েছেন সাথে। নূর হোসেন আগ্রহ নিয়ে জানালেন এর মধ্যে একটি লাগেজ ভর্তি শুধু প্লাস্টিকের বিভিন্ন সাইজ ও রঙ্গের খেলনা। দেশে তৈরি এসব খেলনা ছেলেমেয়েদের পছন্দ। বাধ্য হয়ে সেগুলো কিনতে হয়েছে।
নূর হোসেনের স্ত্রী জানান, এসব প্লাস্টিকের খেলনা এখানে দামে খুব সস্তা। তাছাড়া মানের দিক থেকেও একেবারে খারাপ নয়। বিদেশেতো এগুলো পাওয়া যাবেনা। তাই নিয়ে নিলাম। এই প্রবাসী দম্পতি জানালেন, এগুলোর রপ্তানি হলে মন্দ হয় না।
পরিকল্পিত শিল্প কারখানা স্থাপন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি সব উদ্যোক্তরা একত্রে কাজ করলে এবং পণ্যের মানোন্নয়ন করলে বিদেশেও একদিন বাংলাদেশের খেলনা বিক্রি হবে। চায়নার সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের খেলনাও বিশ্ব বাজারে জায়গা করে নিতে পারে।
বিক্রেতারা জানান, একসময় এসব প্লাস্টিক খেলনা আমদানি করা হতো চীন থেকে। তবে এসব খেলনার একটা বড় অংশ এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন কারখানাতে তৈরি হচ্ছে। পুরাণ ঢাকা ও তার তার আশেপাশের বেশ কিছু এলাকায় ছোট বড় এসব খেলনা কারখানা গড়ে উঠেছে।
বিক্রেতারা আরো জানান, রাজধানীর ব্যস্ততম পাইকারি বাজার চকবাজারে পাওয়া যায় এসব খেলনা। দেশের নানা জায়গা থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ী, ফেরিওয়ালাসহ সবাই চকবাজারে ভীড় করেন খেলনা কিনতে।
ছোট বড় সব মিলিয়ে চকবাজারে প্রায় কয়েক’শ পাইকারি খেলনার দোকান আছে। উদ্যোক্তরা জানান, শুরুতে খুব ছোট কিছু খেলনা দিয়ে শুরু হলেও এখন বড় আকারের প্লাস্টিকের খেলনাও তৈরি হচ্ছে। এসব খেলনা বিক্রির সবচেয়ে বড় মৌসুম বৈশাখ মাসে। দেশজুড়ে বিভিন্ন মেলায় বিক্রি হয় এসব খেলনা। এরপরই রয়েছে দুই ঈদ। তাছাড়া দেশী খেলনার দাম কম হওয়ায় মেলায় বিক্রিও হয় ভালো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব খেলনার উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজার ধরা সম্ভব। খেলনা প্রস্তুতকারকেরা বলছেন, দেশীয় খেলনার মান আগের চেয়ে বেড়েছে এবং অনেকে এখন বড় পুঁজি নিয়েও এই ব্যবসায় আসছেন। খেলনার যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর কমানো হয়েছে, কিন্তু সেই মানের খেলনা উৎপাদনের শিল্প-কারখানা গড়ে না ওঠায় সে সুবিধা নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
মালিকপক্ষ রপ্তানি করার স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবে সেটা সম্ভব হচ্ছেনা। কারণ কারখানাগুলো নগরীর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় নেই কোন নির্ধারিত শিল্প এলাকা ।
উল্লেখ্য, খেলনা প্রস্তুতকারী সমিতির হিসেবে এখন পুরনো ঢাকা এবং তার আশেপাশে প্রায় তিন’শ কারখানায় খেলনা বানানো হয়। এসব কারখানাগুলোর অধিকাংশই অবস্থিত ইসলামবাগ, লালবাগ এবং কামরাঙ্গীর চরে।
No comments:
Post a Comment