যুক্তরাজ্যের ইস্ট লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলের রাস্তা ধরে হাঁটলে ফুটপাতে অসংখ্য অস্থায়ী দোকান চোখে পড়বে। একটু ভালো করে নজর দিলে দেখতে পাবেন সেখানকার দোকানিরা ফুটপাতে হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন হিজাব, কেউ সালোয়ার কামিজ, জামা-কাপড়, শাড়ি, চুড়ি, কেউ ফলমূল কেউ বা মোবাইলের যন্ত্রাংশ। ইংল্যান্ডের অন্য কোথাও আর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না।
স্থানীয়রা জানান, হোয়াইট চ্যাপেলের ফুটপাতে গড়ে ওঠা এসব দোকানের অধিকাংশই বাংলাদেশি মালিকানাধীন। এর মধ্যে আবার বেশিরভাগই সিলেট জেলার। অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের তুলনায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের প্রাধান্যও বেশি। হোয়াইট চ্যাপেলের ফুটপাতের এক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই দোকানগুলো চালানো হয়। বেচা-কেনা চলে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী ৬ টার পর সেখানে আর কোন দোকান থাকতে পারবে না। এই ব্যবসায়ী বলেন, প্রশাসনের অনুমোদনে দোকান চলে। নিয়ম মেনে চালানো হয় বলে প্রশাসন কোন ঝামেলা করেনা। তাছাড়া, স্বল্প মূলধনে ফুটপাতের দোকানিরা যথেষ্ট লাভবান হন।
হোয়াইট চ্যাপেলের স্থানীয় বাংলাদেশিরা জানান, এটি অনেকটা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ফুটপাতের মতো। প্রায় সব ধরণের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র সেখানে পাওয়া যায়। তাছাড়া দামও তুলনামূলক কম। সবজি, মাছ, পোশাক, ফলমূল থেকে শুরু করে প্রায় সবই কিনতে পাওয়া যায় বাজারটিতে। স্থানীয় বাংলাদেশিরা আরো বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশি এখানে থাকি তারা এই মার্কেটটিকে লন্ডনের গুলিস্তান বলে ডাকি। এখানে কম দামে সব রকমের পণ্য পাওয়া যায়। দোকান ছোট হলেও প্রতিটিতেই নানা পণ্যের সমাহার। এসব ফুটপাতের দোকানে পণ্যের মান একবারে খারাপ নয়। ফলে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি এসব দোকানে পণ্য কিনতে ভীড় করেন ইংলিশরাও। ক্রেতাদের ভিড়ে দোকানগুলো সবসময় বেশ সরগরম থাকে। যার যা খুশি সাধ্যমত কিনে নেন।
ঢাকা থেকে সুদূর লন্ডনে এসেও বাংলাদেশিরা যেন থেমে নেই নিজস্ব বাজার সংস্কৃতি থেকে। তাই হয়তো লন্ডনের উন্নত শহর হোয়াইট চ্যাপলের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে এই ভাসমান বাজার। যার পেছনে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি। ভালো করে চোখ বুলালে হয়তো – লন্ডনেও নজর কাড়তে পারে হোয়াইট চ্যাপেলের ওই গুলিস্তান মার্কেট। ঠিক যেন স্বদেশের গৌরব আর ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশেরই একখন্ড প্রতিচিত্র।
No comments:
Post a Comment