উন্নত বিশ্বের দেশ কানাডা। অর্থনৈতিক অবস্থা, জীবনমান সব দিক দিয়েই কানাডা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের কাছে পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করছে। সম্প্রতি জানা গেছে কানাডায় আসা শতকরা ৩৫ ভাগ অভিবাসী নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই এক বছরের মধ্যেই কানাডা ত্যাগ করেছেন। ইমিগ্রেশন রিফুজি অ্যান্ড সিটিজেনশীপ কানাডার এক অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় সম্প্রতি এই তথ্য উঠে এসেছে। কেন তারা কানাডা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তার কারণ হিসেবে রয়েছে- দ্রুত পরিবর্তনশীল শ্রমবাজারের মন্দা পরিস্থিতি, চাকরির অনিশ্চয়তা ইত্যাদি।
টরন্টোতে বসবাসরত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া মেজবাহ আরিফ বলেন, এখন শুধু অভিবাসীরাই নয় বিপুল সংখ্যক কানাডীয় অধিবাসীদের কথা আমরা জানি যারা বর্তমানে অন্য দেশে বাস করছে।’ কারণ হিসেবে কানাডায় কর্মসংস্থানের যথার্থ ব্যবস্থা নেই বলে তিনি মনে করেন। তাছাড়া প্রফেশনাল জব এখন সোনার হরিণ পরিণত হয়েছে।’ তবে যারা স্বর্গীয় স্বপ্ন নিয়ে কানাডায় আসেন, তাদের মূলত সঙ্গী হয় একরাশ দুঃস্বপ্ন। ফলে তাদের অচিরেই দুঃস্বপ্ন আর দুশ্চিন্তায় হাবুডুবু খেতে হয়। চাকরি পাওয়া তো দুষ্কর। অর্থনৈতিক মন্দা আর চাকরি পাওয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে ‘অড জব’ বলতে যা বুঝায় তাও সহজে কপালে জুটে না। অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইমিগ্রান্ট আছে যাদের ভাগ্যে অতি সাধারণ চাকরি পর্যন্ত জুটে না।
স্টেটস কানাডার অন্য এক জরিপে জানা গেছে, বিদেশি ডিগ্রিপ্রাপ্ত অভিবাসীর মধ্যে মাত্র ২৪% ভাগ্যবান আগের পেশার কাছাকাছি কাজ পেয়েছে। কানাডায় এসে পুনরায় পড়াশোনা করে চাকরি পেয়েছে ৫৩ শতাংশ। আর কানাডায় জন্মগ্রহণকারীরা লেখাপড়ার পর চাকরি পাবার সম্ভাবনা ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রজন্ম চাকরি-বাকরি, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ভাল করবে। কিন্তু নতুন ইমিগ্র্যান্টদের অবস্থা গল্পের মতো ভয়াবহ।
মেজবাহ আরিফ বলেন, ‘এখানে নানাভাবে নানা ধরনের বৈষম্য চলে । কালো ব্রাউন বৈষম্য, ধর্মীয় বৈষম্য, সুন্দরের বৈষম্য, বয়স বৈষম্য। অলিখিত নিয়ম হচ্ছে ৪৫ বছরের পর সাধারণত চাকরি-বাকরিতে নেয়া হয় না। অথচ কানাডায় ইমিগ্রেশনের জন্য নানা ধরনের শিক্ষা, সম্পদ, পেশাসহ নানা যোগ্যতার মতো বয়সও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা। যারা ইমিগ্রেশন নিয়ে আসেন, তাদের পরিবার প্রধানের বয়স সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর হয়ে থাকে। এই মধ্য বয়সে একজন মানুষ পড়াশোনা শেষ করে, চাকরি-বাকরি করে, সংসার এবং অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছলতা অর্জন করেন। সন্তানরা স্কুলে যায়। এমতাবস্থায় ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত চিন্তা করে বাড়ি বিক্রি করে, চাকরি ছেড়ে, ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে কানাডায় চলে আসেন। তারপর স্বর্গীয় জীবনের যে স্বপ্ন চোখে মুখে ছিল তা কষ্টের জীবনের ছন্দ পতনে নিমেষেই মিলিয়ে যায়। এই সময় অনেকেই হন্যে হয়ে চাকরি খোঁজে। ফ্যাক্টরি জব, ট্যাক্সি ড্রাইভ, কারখানার লেবার, সিকিউরিটি জব, হোটেলের বাবুর্চির চাকরিও এই ক্রান্তিকালে সোনার হরিণ হয়ে দেখা দেয়।
বিভিন্ন দেশের উচ্চ শিক্ষত ডাক্তার, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা স্বেচ্ছায় কারাবরণের মতো কানাডা বরণ করেন অর্থাৎ অভিবাসী হয়ে মানসিক যন্ত্রণায় তিলে তিলে নিঃশেষিত হন। এতে তাদের ফিরে যাবার পথও থাকে না। কারণ, ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আসার পথ আছে। কিন্তু কোনভাবেই দেশে আর ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। শুধু অভিবাসীই নয় ইমিগ্রেশন রিফুজি অ্যান্ড সিটিজেনশীপ কানাডার প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় ২৮ লাখ কানাডীয় অধিবাসী (কানাডার মোট জনসংখ্যার ৯%) বর্তমানে অন্য দেশে বাস করছেন। এদের মধ্যে দশ লাখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, তিন লাখ হংকং এবং ৭৫ হাজার যুক্তরাজ্যে আছেন। বাকিরা অন্যান্য দেশে। অর্থনৈতিক মন্দা আর চাকরির অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণে কানাডা ছাড়ছে অভিবাসীরা। আর এ হার দিনকে দিন বাড়ছে। এর ফলে অভিবাসী জীবনে অনিশ্চয়তা ভয়ঙ্কর জীবনের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে এক একজন অভিবাসী নাগরিককে।
No comments:
Post a Comment