উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে এবার এইচআইভি পজেটিভ শিশুর সন্ধান মিলেছে। আর বেড়েছে রোগীর সংখ্যাও। বুধবার (১৮ অক্টোবর) পর্যন্ত এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। শনাক্তদের মাঝে ১৮ জন নারী, ১০ পুরুষ এবং ৫ জন শিশু। এ পর্যন্ত একজনের মৃত্যু হলেও বাকিরা চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আশা’র আলো সংস্থার দায়িত্বরত কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মো. শাহীন আবদুর রহমান।
বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত রোগীদের পুনরায় পরীক্ষা করে এইচআইভি পজেটিভ নিশ্চিত করে সরকারি ভাবে ফ্রিতে চিকিৎসা সেবা এবং কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। ৩৩ জনে ২২ জন মিয়ানমারে থাকাকালীন শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত করে আসেন। আর বাংলাদেশে এসে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২ জনের মাঝে এ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এদের মাঝে এক নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বুধবার বাকীদের শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। সবাইকে বিশেষ ভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, রোগীর আধিক্য বাড়তে থাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এইচআইভি শনাক্ত করার জন্য উখিয়া এবং টেকনাফে দুটি ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে।
শিশুদের এইচআইভি পজেটিভ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আরএমও বলেন, নানা কারণে এটি হয়ে থাকে। তবে এইডস আক্রান্ত বাবা মায়ের সন্তানেরাই স্বাভাবিকভাবে এইচআইভি পজেটিভ হয় বেশি। এসব শিশুদের পিতা-মাতার কেউ এইচআইভি পজেটিভ ছিল।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, এভাবে এইডস রোগী পাওয়া আমাদের জন্য অতি উদ্বেগের বিষয়। তবে একসাথে খাবার খাওয়া, ঘুমানো বা স্বাভাবিক মেলামেশায় এইডস ভাইরাস ছড়ায় না। শুধুমাত্র শারিরীক মিলন ও আক্রান্ত রোগীর রক্ত অন্যের শরীরে ব্যবহারের মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়। তাই রোহিঙ্গা নারীদের ব্যবহারে সতর্ক হতে অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো গেলে শঙ্কা অনেকাংশে কমে যায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার গর্ভবতী নারীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। জন্ম নিয়েছে ৬৫৩ জন শিশু। পাওয়া গেছে ৮ জন ম্যালেরিয়া রোগী। ৬ লাখ ৭৯ হাজার লোককে কলেরার ভেকসিন খাওয়ানো হয়েছে। ১৬ হাজার ৮৩৩ জন এতিম শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও রোগ প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমের সমন্বয়কারী ডা. মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এইডসসহ মারাত্মক সব সংক্রামক রোগ নিয়ে আসছে। যেসব রোগ আমাদের দেশ থেকে একপ্রকার বিদায় করা গেছে এখন সেসব রোগও আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে আবার দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
অপুষ্টিজনিত কারণে রোহিঙ্গারা সহজেই নানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এরমাঝে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপটা বেশি। হাম-রোবেলা, ভিটামিন-এ ক্যাপ্সুলসহ অনেক রোগের টিকা ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ চলেছে কলেরা টিকার প্রথম রাউন্ড।
Wednesday, October 18, 2017
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment