সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান গত সপ্তাহে দেশটিতে মহিলাদের গাড়ি চালানোর অনুমতি সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাশ করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, এখন থেকে সৌদি নারীরা দেশটিতে গাড়ি চালাতে পারবে। আর এ ঘোষণা আসার পরপরই সৌদি আরবে ভাড়ায় চালিত গাড়ি কোম্পানিগুলো, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সৌদি পরিবারগুলো গাড়ি চালানোর জন্য বিদেশি মহিলা ড্রাইভার নিয়োগের চিন্তা ভাবনা করছে। তবে বিদেশ থেকে নারী ড্রাইভার দেশটিতে নেওয়া হবে কিনা সে সংক্রান্ত এখনও কোন ঘোষণা দেয়নি দেশটির সরকার।
সৌদি সরকার যদি এ ধরণের কোন অনুমতি দেয় তাহলে দেশটির এই বিশাল কর্মযজ্ঞে কর্মসংস্থান হতে পারে বাংলাদেশি নারীদেরও। কারণ বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নারী কর্মী দেশটিতে গৃহকাজে নিয়োজিত রয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই অন্য কোন কাজ করার সুযোগ না থাকায় পেশা পরিবর্তন করতে পারছে না। সৌদি সরকারের সম্ভাব্য এই উদ্যোগ যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে পেশা পরিবর্তন করে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক বাংলাদেশি নারী শ্রমিক এ পেশায় যেতে পারবে।
জেদ্দার আরাফাত রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির আলাম রাজাক বলেন, সরকার যদি প্রবাসী মহিলা ড্রাইভার নিয়োগের অনুমতি দেয় তাহলে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে একটা নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং মহিলা ও শিশুরা মহিলা ড্রাইভাদের সাথে সাচ্ছন্দবোধ করবে। রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নিয়মের জন্য অপেক্ষা করছে যা কয়েক মাসের মধ্যে কার্যকরী হবে। তিনি আরও বলেন যে, মহিলাদের ড্রাইভিং করার অনুমতি সৌদি আরবের বিদেশি ড্রাইভারদের উপর নির্ভরতা কমাবে।
বর্তমানে সেখানে ১৩ লাখেরও বেশি বিদেশি পুরুষ ড্রাইভার রয়েছে। কারীম নামের কার-বুকিং অ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আশা করেন যে, মহিলা ড্রাইভার নিয়োগের মাধ্যমে তাদের ব্যবসার উন্নতি হবে। তিনি বলেন , তারা নতুন মার্কেট ধরার জন্য এক লাখ মহিলা ড্রাইভার নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। বিশিষ্ট ইসলামিক পন্ডিত ও সমাজকর্মী হোসেন জুলকার নাইন বলেন যে, মহিলাদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার ফলে এখন বিদেশি মহিলা ড্রাইভার নিয়োগ করা যেতে পারে, যারা পরিবারের স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েদের নিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে আসার কাজ করবে। তিনি আরও বলেন যে, মহিলারা পুরুষদের তুলনায় অনেক ভালো। তারা বাড়ির ভিতরে বসবাস করতে পারে এবং গৃহস্হালী কাজেও সাহায্য করতে পারে।
উল্লেখ্য, বিদেশে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার, যার আওতায় কেবল হাউজ কিপিংয়ে (গৃহকর্মী) চলতি বছরের আট মাসে ৪৩ হাজার ৩৪৮ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গত চার বছরে ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৬ জনকে এ কাজে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ অনুবিভাগ এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে অবস্থিত ৩৪ টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে নারী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যেখানে গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশে যেতে আগ্রহীদের এক মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৩৪৮ জন নারীকে হাউজ কিপিং খাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ২০১৪ সালে ৫৩ হাজার ২১১ জন, ২০১৫ সালে ৬১ হাজার ৮৬৪ জন ও ২০১৬ সালে ৭৩ হাজার ৬২৩ জন নারীকে এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কারিগরী প্রশিক্ষণের আওতায় যদি নারী শ্রমিকদেরও ড্রাইভিং শেখানো যায়, তাহলে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের বড় একটি অংশের কর্মসংস্থান হবে।
যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যে পরিমাণ শ্রমিক বিদেশে গেছে তার প্রতি ৪ জনে একজন নারী শ্রমিক।
No comments:
Post a Comment