জনবল সংকটে ভুগছে ব্রিটেনের কারি শিল্প। এ শিল্পে বর্তমানে জনবল প্রয়োজন প্রায় ২০ হাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভালো শেফ বা বাবুর্চির অভাবে তিন ভাগের একভাগ কারি হাউজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় অভিবাসন নীতি পূনর্বিবেচনার দাবিও উঠছে। কারি হাউজগুলোর মালিকরা এই শিল্পটিকে বাঁচাতে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ম্যানচেস্টারের বিখ্যাত কারি মহল্লা উইমস্লো রোডের রেস্তোঁরাগুলোর খাবার অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এগুলো আর কদিন টিকে থাকবে সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই অন্তত দুটো করে রেস্তোরা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন রেস্তোঁরা মালিকেরা।
দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসননীতিতে কড়াকড়ির ফলে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে লোকবল নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বললেই চলে। এর ওপর শেফের কাজ করতে বৃটিশ নাগরিকদের প্রচণ্ড অনীহা । সরকার তাদের উৎসাহিত করলেও বৃটিশরা এতে তেমন একটা সাড়া দেয়নি। ফলে এ সংকট দেখা দিয়েছে।
কারি পেশার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্রিটিশ বাংলাদেশি হোসেন বখতিয়ার বলেন,‘বেশ কয়েক বছর আগেও এখানে প্রায় ২৫ টি রেঁস্তোরা ছিল আর এখন আছে মাত্র নয়টি । এর মধ্যে মাত্র তিনটি ভালো করছে। বাবুর্চি সঙ্কটের কারণে টিকে থাকার জন্যে লড়াই করছে বাকীগুলো।’ এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, বৃটিশ সরকার দক্ষ জনবলের আয়ের ওপরে একটি মাপকাঠি বেঁধে দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইউরোপের বাইরে থেকে আনা কোন দক্ষ শেফকে বছরে অবশ্যই ২৯ হাজার ৫৭০ পাউন্ড আয় করতে হবে। ভালো শেফের অভাবের জন্যে অনেকেই দায়ী করছেন ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন রুলস এবং দেশটির মধ্যেই দক্ষ শেফ তৈরি না হওয়াকে।
ব্রিটেনের জনপ্রিয় এ শিল্পটিতে এখন জনবলের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। সে কারণেই দাবি উঠেছে অভিবাসন নীতির নতুন করে পর্যালোচনার। প্রায় ১২শ রেস্তোরাঁর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘দি বাংলাদেশি ক্যাটারার্স গিল্ড’ সম্মিলিতভাবে কারি শিল্প রক্ষায় কাজ করছে। তারাও মূলত এখন শঙ্কিত যে দিনকে দিন যেভাবে যুক্তরাজ্যে এশিয় রেস্তোরাঁর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাতে এই শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী ২৯ হাজার পাউন্ডের বেশি আয় এবং ভালো ইংরেজি বলতে পারা সহ আরও কিছু শর্ত পূরণ করলেই কেবল যুক্তরাজ্যে কাজের অনুমতি পাচ্ছে একজন শেফ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্যাটারারর্স এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল শেফ অলি খান বলেন, ‘বর্তমানে এই সেক্টরে শেফ, ওয়াইটারসহ অন্যান্য স্টাফের সংকট রয়েছে। এই সেক্টরে নন-ইউরোপিয়ান মাইগ্রেন্টরা কাজ করলেও তাদের দিয়ে সব কাজ করানো সম্ভব নয়। এই সেক্টরকে টিকিয়ে রাখতে হলে বাইরে থেকে শেফ নিয়ে আসা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’
অলি খান আরো বলেন, ‘আজ থেকে দুইশ বছর আগে ব্রিটেনে প্রথম কারি হাউজের যাত্রা শুরু হয়। দিন দিন এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চিকেন টিক্কা মসল্লা এখন ব্রিটিশ কালচারের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারিশিল্পের বিকাশ ঘটানোর লক্ষে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ক্যাটারারর্স এসোসিয়েশন (বিসিএ। বর্তমানে বিসিএ ব্রিটেনে ১২ হাজার রেস্টুরেন্ট এবং টেকওয়ের প্রতিনিধিত্ব করছে। এই সেক্টরে কর্মরত রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।’
No comments:
Post a Comment