সম্প্রতি সৌদি আরব গমনেচ্ছু অভিবাসী কর্মীদের ভিসা সত্যায়ন বাধ্যতামূলক সম্পর্কিত সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এতে বিদেশ গমনেচ্ছু একক ভিসার কর্মীদেরও ছাড়পত্র ইস্যুও বন্ধ করা হয়েছে। এ ধরণের সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে জনশক্তি রপ্তানিতে বিরুপ প্রভাব পড়ার আশংকা তৈরি হবে বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে মিশনগুলোর সত্যায়ন বিহীন একক ভিসার ক্ষেত্রে বিএমইটি’র সার্ভার বন্ধ করে দেয়ায় শতাধিক বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি’র কর্মীদের ছাড়পত্রের অনুমতি মিলছে না। বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হওয়ায় আটকেপড়া এসব কর্মীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। বহু কষ্টে যোগাড় করা এসব একক ভিসার অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে জনশক্তি রফতানি ধীর গতিতে নেমে যাচ্ছে।
নির্ধারিত কোন সময় বেঁধে না দিয়ে হঠাৎ বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যুর উপর সার্কুলার জারি হওয়ায় বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বায়রার একাধিক সূত্র জানিয়েছে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু নিয়ে নতুন নতুন সার্কুলার জারি করায় জনশক্তি রপ্তানিতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
বায়রার নেতৃবৃন্দ বলেন, বিদেশ গমনেচ্ছু একক ভিসার কর্মীদের কোনো সত্যায়ন ছাড়াই বর্হিগমন ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে শ্রমিকরা। সত্যায়ন ব্যতীত একক ভিসার বিদেশে গিয়ে এখনও কোন কর্মী বড় ধরণের কোন অসুবিধায় পড়ে নি। বরং তারা একক ভিসা নিয়ে বিদেশ গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছে। এসব রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে। বায়রা নেতৃবৃন্দ বলেন, সত্যায়নের দোহাই দিয়ে কর্মী প্রেরণে পদে পদে বাধার সৃষ্টি করলে অভিবাসন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। তারা শ্রমবাজার সম্প্রসারণের স্বার্থে অনতিবিলম্বে একক ভিসার সত্যায়ন ছাড়াই পূর্বের ন্যায় বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যুর জোর দাবী জানান।
আগে থেকে কোম্পানী ভিসা ও গ্রুপ ভিসায় মিশনগুলোর শ্রম সচিবদের সত্যায়নের মাধ্যমেই বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু করেছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বরের সার্কুলারের সৌদি আরবে বিদেশি নাগরিকদের সত্যায়ন বিহীন একক ভিসার বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যূ বন্ধ হয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দেশের একক ভিসার কোনো সত্যায়নের প্রয়োজন হতো না। বিএমইটি’র সূত্র জানায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে গত ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ২৭ হাজার ৫শ’ ৭৫জন কর্মী চাকুরি নিয়ে গেছে। গত জুলাই মাসে বিভিন্ন দেশে ৭৬ হাজার ২শ’১৫জন এবং আগষ্ট মাসে ৯৩ হাজার ৩শ’ ৪১জন কর্মী বিদেশে গেছে। এসময়ে কোনো একক ভিসায় সত্যায়ন প্রয়োজন হতো না। গত জানুয়ারী থেকে গত ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছে ৭ লাখ ১৭ হাজার ৬শ’২১জন। দেশের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালে বিভিন্ন দেশে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭শ’ ৩১জন কর্মী চাকুরি নিয়ে গেছে।
এদিকে, বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদও বর্হিগমন ছাড়পত্রের উপর জারিকৃত নিষেধাজ্ঞায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে আমরা অনুরোধ করেছি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য। তিনি বলেন, আশা করছি বর্হিগমন ছাড়পত্র নিয়ে সৃষ্ট সংকট দুই এক দিনের মধ্যেই নিরসন হবে। জনশক্তি রপ্তানিকারক ও বায়রার সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল হাই এ ধরণের সার্কুলার নিয়ে ভয়েস বাংলাকে বলেন ,‘ জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির স্বার্থে বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যুতে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুতই কেটে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কথা হচ্ছে এ সমস্যা থাকবে না। দু- একদিনের মধ্যে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
No comments:
Post a Comment