স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বর্তমানে কানাডা অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে প্রথম পছন্দ। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে অভিবাসন ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় প্রায় একই রকম জীবনমান নিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে কানাডা। একই সাথে কানাডাও দেশটিতে প্রবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়ার পথ সহজ করেছে। সম্প্রতি কানাডায় নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন-সংক্রান্ত আইন ‘বিল সি-৬’ সিনেটে পাস হয়েছে। নতুন এই বিলে কানাডার অভিবাসীরা দেশটির নাগরিকত্বের জন্য দ্রুত ও আরো সহজে আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া নতুন নিয়মে ২২ বছরের নিচের সন্তানরাও মা-বাবার সঙ্গে অভিবাসন নিয়ে কানাডায় স্থায়ী হতে পারেন। সঠিক নিয়মে আবেদন করলে ১ বছরের মধ্যেই পরিবারসহ কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে।
পুরো ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে একজন ইমিগ্রেশন আইনজীবীর সার্বক্ষণিক পেশাদার সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ রাজু বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি একটি আইনি জটিল বিষয় এবং সবসময় তদারকির মধ্যে থাকতে হয়, সুতরাং একজন দক্ষ আইনজীবীর পেশাগত সহায়তা গ্রহণ করা যেতেই পারে। তবে বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়।’
‘বিল সি-৬’ অনুযায়ী নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের যোগ্য হতে কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছর বসবাস করতে হবে। এর আগে ছয় বছরের মধ্যে চার বছর থাকার শর্ত ছিল। এ ছাড়া কানাডায় যাঁরা অস্থায়ীভাবে ছিলেন, তাঁরাও কানাডায় বসবাসের সময়টুকু তিন বছরের মেয়াদের একটি অংশ হিসেবে গণনা করতে পারবেন। নতুন নিয়মে পিএনপি, এক্সপ্রেস এন্ট্রি, এফএসডব্লিউপি, এফএসটিপি, কিউএসডব্লিউপি, এআইপিএন, এসআইপিএন, এমপিএনপি, এনএসএনপি, বিসিপিএনপি, ওআইএনপি, আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম, কেয়ারগিভার, বিজনেস, ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ, এমপ্লয়মেন্টসহ নতুন নতুন বিভিন্ন প্রোগ্রামে সহজ নিয়মে পেশাজীবীদের ইমিগ্রেশন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
১. এক্সপ্রেস এন্ট্রি
আমেরিকার সরকার এইচ-ওয়ানবি ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করার পর বিপুলসংখ্যক দক্ষ ও যোগ্য পেশাজীবীদের মাইগ্রেশনের শেষ ভরসা এখন এক্সপ্রেস এন্ট্রি । প্রোগ্রামটি মূলত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। সেগুলো হলো—১. ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার, ২. ফেডারেল স্কিলড ট্রেডার ও ৩. কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস। এই তিন শ্রেণিতে পেশার কোনো বাঁধাধরা তালিকা নেই।
২. প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম (পিএনপি)
কানাডার ১১টি প্রদেশে ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদনকারীদের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। একেক প্রদেশ একেক সময়ে তাদের উন্মুক্ত করে দেয়। সাধারণত প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রামের শর্তগুলো আলাদা হয়। প্রার্থীদের তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করা উচিত। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হয় প্রোগ্রামের সময়কাল সম্পর্কে। অনেক শর্তই এ ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। তবে কিছু কিছু নতুন শর্তও আরোপ করতে দেখা যায়।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রভিন্সিয়াল প্রোগ্রাম, সাসকাচুয়ান ইমিগ্র্যান্ট নমিনি প্রোগ্রাম ও অন্টারিয়ো ইমিগ্রান্ট নমিনি প্রোগ্রাম এখন চালু আছে। এ ছাড়া রয়েছে আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম। এ ছাড়া ১৯ মে থেকে শুরু হয়েছে কুইবেক ইনভেস্টর প্রোগ্রাম।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রভিন্সিয়াল প্রোগ্রাম
আইইএলটিএসে ৫ দশমিক ৫ স্কোরসহ দুই বছর কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা স্নাতক ডিগ্রি থাকলেই কানাডার অন্যতম সুন্দর প্রদেশ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় আবেদন করা যাবে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রভিন্সিয়াল প্রোগ্রামটি চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। এক্সপ্রেস এন্ট্রি বিসি—স্কিলড ওয়ার্কার ও ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট এবং স্কিলস ইমিগ্রেশন : স্কিলড ওয়ার্কার ও এন্ট্রি লেভেল সেমি-স্কিলড। সর্বশেষ ড্রতে ৩৭৭ জন মনোনয়ন পেয়েছে শুধু ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে।
সাসকাচুয়ান ইমিগ্র্যান্ট নমিনি প্রোগ্রাম
কানাডার অন্যতম সেরা এবং উন্নত প্রদেশ সাসকাচুয়ানে কিছু বিশেষ পেশাজীবীরা খুব সহজ আবেদন করা ও দ্রুততম সময়ে সপরিবারে ইমিগ্রেশন ভিসা পেতে পারেন। পেশাগুলোর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার বা ইনফরমেশন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার বা অ্যানালিস্ট,সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, এনজিও কর্মকর্তা বা সোশ্যাল ওয়ার্কার বা প্রজেক্ট ম্যানেজার, এগ্রিকালচার ম্যানেজার, সাপ্লাইন চেইন বা পারচেজ ম্যানেজার,ম্যাথমেটিশিয়ান।
অন্টারিও ইমিগ্র্যান্ট নমিনি প্রোগ্রাম
কানাডায় যাঁরা পড়াশোনা করেছেন, কানাডায় চাকরি করার যোগ্যতা রয়েছে, কানাডায় চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন বা ব্যবসা করতে ইচ্ছুক তাঁরাই এই নির্দিষ্ট প্রদেশে আবেদন করে স্থায়ী হতে পারেন।
নোভা স্কটিয়া নোমিনি প্রোগ্রাম (এনএসএনপি)
২০১৭ সালে এই প্রোগ্রাম চালু চালু হয়েছে। । ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টস, অ্যাডমিন অফিসার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটারে দক্ষ, নার্স ও এনজিও কর্মীরা প্রোগ্রামটিতে আবেদন করতে পারবেন।
আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম
চলতি বছরের মার্চ থেকে তিনটি ক্যাটাগরিতে আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। এর আওতায় দীর্ঘদিন কানাডায় কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। যেহেতু প্রোগ্রামটিতে চাকরির অফার থাকে, তাই অনেকের পছন্দনীয় প্রোগ্রাম এটি। ২০১৭ সালে দুই হাজার পরিবার এ সুযোগ পাবে বলে আটলান্টিক সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ফেডারেল স্কিলড ট্রেডারস প্রোগ্রাম (এফএসটিপি)
কার্পেন্টার, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বারসহ কয়েকটি পেশাজীবীরা এই প্রোগ্রামের আওতায় আবেদন করে চাকরিসহ ইমিগ্রেশন করতে পারেন। তবে তাদের বিদেশি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ট্রেড স্কিল সার্টিফিকেট’ থাকতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে। এ ছাড়া চিফ কুক, ফিস প্রসেসিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ পরিচালনা, কৃষিকাজ ইত্যাদি কাজেরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে কানাডায়। পরিবারের যোগ্য সদস্যরা এই প্রোগ্রামের আওতায় কানাডায় যেতে পারবেন। বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছর হলেই আবেদন করা যাবে।
ফ্যামিলি ইমিগ্রেশন
ফ্যামিলি স্পন্সরশিপের আওতায় কানাডার ইমিগ্রেশন পাওয়া সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত হয়। তবে যাঁদের নিকটাত্মীয় নেই, তাঁরা এই সুযোগ পাবেন না।
No comments:
Post a Comment