গৃহকর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত আরোপ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। এখন থেকে বিবাহিত সৌদি নাগরিকরা গৃহকর্মী বা গাড়ি চালক নিয়োগ দিতে চাইলে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নূন্যতম ৩৫ হাজার সৌদি রিয়াল থাকতে হবে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে বসবাস করা অন্য কোনো দেশের নাগরিক, গৃহকর্মী বা গাড়ি চালক নিয়োগ দিলে তার মাসিক বেতন হতে হবে অন্তত ১০ হাজার রিয়াল। বিবাহিত সৌদি নাগরিক একজন পুরুষ গৃহকর্মীসহ মোট তিনজন বিদেশি কর্মীর জন্য ভিসার আবেদন করতে পারবেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত সৌদি আরবের গৃহকর্মী নিয়োগ নীতিমালায় এমন কড়াকড়ি আরোপের পর বেশ হতাশ বাংলাদেশসহ নিম্ন আয়ের ও উন্নয়নশীল অনেক দেশ।
সম্প্রতি দেশটিতে গৃহকর্মী নির্যাতনে অভিযোগ আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর অনেক দেশ সৌদিতে গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতইে সৌদি সরকার এমন শর্ত আরোপ করেছে বলে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
তবে, গৃহকর্মী ছাড়াও আরও বেশ কিছু শ্রমভিত্তিক কাজের জন্য ভিসা আবেদন এখনও উন্মুক্ত। যেমন গাড়িচালক, শিশু তত্ত্ববধায়ক,পাচক এবং নার্স। এক জরিপে দেখা গেছে বর্তমানে সৌদিতে ১৩ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে। এদের অধিকাংশই বাসা বাড়িতে কাজ করেন। সম্প্রতি নারী শ্রমিক আমদানির ওপর জোর দেয়ায় সে সংখ্যা আরও বেড়েছে।
তবে, সৌদি আরব এবং উপসাগরীয় আরব দেশগুলোকে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে নারী গৃহকর্মী কেনা-বেচার বেশকিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। সরকারি নিয়ম-কানুন বিধি-নিষেধ এড়িয়ে অন-লাইনে বিদেশী নারী গৃহকর্মী বেচা-কেনার কালো বাজার তৈরি হয়েছে। সরকারকে ফাঁকি দিয়ে সে দেশে ভ্রমণরত অনেকেই আবার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ নিচ্ছেন। বৈধতা শেষ হলেও কাজ করে যাচ্ছেন তাদের কেউ কেউ। তাছাড়া, বাড়তি মজুরি আদায়ের একটা সুযোগও থাকে তাদের।
এই প্রবণতা এতটাই বাড়ছে যে সৌদি আরব এরই মধ্যে এ ব্যাপারে তদন্ত করেছে।মামলাও হয়েছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালেদ আবা আলখাইল বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে এধরণের অবৈধ রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি খোলা বেআইনি এবং এমন কাজে জড়িতদের বিচার হবে। তিনি জানান, গত কয়েক মাসে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা এরকম ৯০টি বিজ্ঞাপন তদন্ত করা হয়েছে।
সৌদি আরব এবং উপসাগরীয় দেশগুলোতে লোকজন রিক্রুটিং এজেন্টদের মাধ্যমেই সাধারণত বিদেশ থেকে নারী গৃহকর্মীদের আনে। অধিকাংশই আসে এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু গরীব দেশ থেকে। তবে পাশাপাশি তৈরি হয়েছে অনলাইনে কালো বাজার।
বিদেশী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে কাতার-ভিত্তিক এমন একটি সংস্থা মাইগ্র্যান্ট রাইটসের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মী নিয়োগ অনেক খরচের ব্যাপার, অনেক মানুষ তাই অনলাইনে গৃহকর্মীদের কালোবাজারের আশ্রয় নিচ্ছেন। একজন গৃহকর্মী নিয়োগের জন্য ২৫০০ থেকে ৫০০০ ডলার পর্যন্ত ফি দিতে হয়। অনলাইনে লোক পাওয়া গেলে, এই টাকাটা বাঁচে।
তবে, এসবের বাইরেও থেকে যায় অনেক কিছু। যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি কালবাজারিদের হাতে পড়ে নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন অনেকে। সময়মত বেতন না দেওয়া, শারীরিক-মানসিক নির্যাতনসহ পাশবিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে অনেক। এমন বেশকিছু ঘটনায় সে দেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরত এসছেন অনেক নারী। তার ওপর সম্প্রতি দেশটিতে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার পর সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি গাড়ি চালকরা শঙ্কায় রয়েছেন চাকরি নিয়ে।
তবে, সৌদি সকারের নতুন এই আইনে দেশের শ্রমবাজার বৈধভাবে আরও বাড়বে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নারীরা নিরাপদে সে দেশে কাজ করতে পারবেন, এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
No comments:
Post a Comment