শরতের মেঘলা আকাশ। থেমে থেমে বৃষ্টি। শো শো বাতাসের আওয়াজ। কাদাজলে লেপ্টে বসে আছে কয়েকজন অভুক্ত নারী ও শিশু। চোখেমুখে আতংক, ভয়। মুখে ভাষা নেই। চোখের ভাষায় বলছে বড় অসহায় তারা। দিনের সূর্য উঠছে আবার অস্ত যাচ্ছে, কিন্তু ওরা ঠায় বসেই আছে, পার হতে চায় ছোট্ট দ্বীপ। উঠতে চায় নৌকায়, কিন্তু পারে না।
এ দৃশ্য টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ওপারে।টাকা-পয়সার অভাবে তারা নদী পার হতে পারছে না। বেশ কয়েক দিন ধরে তারা দ্বীপের ওপাড়ে নদীর ধারে বসে কাঁদছে।
মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম নির্যাতনের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে ওরা আশ্রয় নিয়েছে শাহপরীর দ্বীপের ওপারে।তাদের অনেকের স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বসতবাড়ি।
নদীর পাড়ে বসা হাসিনা যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমারের সেনাদের হাতে নিহত হয়েছে হাসিনার স্বামী জাভেদ। তার বাসাবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছেন। নেহাত গরিব হওয়ায় পরনের কাপড় ছাড়া তাদের আর কিছুই নেই।
ওই নারী জানান, দুধের সন্তানসহ আরও দুই শিশু বাচ্চাকে নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে নদীর ধারে বসে আছেন।
একই নদীর ধারে বসা আমেনা, বিলকিল ও নূরীসহ অন্য নারীরা জানান, তাদের বিভিন্ন দুর্দশার কথা। হত্যা করা হয়েছে স্বজনদের, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বসতবাড়ি।জীবন নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে এসছেন তারা, সঙ্গে দুধের শিশু সন্তান।
শাহপরীর দ্বীপের মাঝি মনা যুগান্তরকে জানান, এই নারী-শিশুরা বেশ কয়েক দিন ধরেই এখানে বসে আছে। ভিনদেশি হওয়ায় রাস্তাঘাট চেনেন না। কারও সঙ্গে কথাও বলে না।
নৌকায় শাহপরীর দ্বীপ পার হচ্ছিলেন আব্দুল্লাহ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, শাহপরীর দ্বীপে বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছেন তিন দিন আগে। আর ফেরার দিনও তাদের নদীর পাড়েই দেখছেন।
গত ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরএসএ)। ওই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ সদস্যসহ ৮৯ জন মারা যান বলে মিয়ানমার সরকারের ভাষ্য।
এর পরই রাজ্যটিতে শুরু হয় সেনা অভিযান।অভিযানে হাজারো অধিক নিরীহ রোহিঙ্গা মারা গেছেন। আর প্রাণ বাঁচাতে সর্বস্ব হারিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
No comments:
Post a Comment