ফ্রি ভিসা বলে কোন ভিসা আছে কিনা এ নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যেই রয়েছে নানা ধরণের মত। তবে প্রায় সব প্রবাসীই একবাক্যে বলে থাকেন ফ্রি ভিসা বলতে মূলত কোন ভিসা নেই।যা দিয়ে চাকরির কোন নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। তেল নির্ভর অর্থনীতির দেশ সৌদি আরব অর্থনৈতিক ভাবে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে যুগ যুগ ধরে। মূলত বিশ্ববাজারে তেলের দামের উঠানামার সঙ্গে অলিখিতভাবে সৌদি অর্থনীতির সুসময় আর দুঃসময় প্রকাশ পায়।বর্তমান সময়ে নানা কারণে সৌদিতে প্রবাসীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন হর হামেশাই। মূলত ইদানিং সৌদি আরবে ফ্রি ভিসার কবলে পড়ে হাজার হাজার বেকার বাংলাদেশী অমানবিক জীবন যাপন করছেন।
সৌদি প্রবাসী সাংবাদিক মাসুদ সেলিমের সঙ্গে ভয়েস বাংলার কথা হয়। তিনি প্রায় ১২ বছর ধরে বসবাস করছেন সৌদিতে। ফ্রি ভিসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মূলত সৌদি আরবের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে অনেক সৌদি নাগরিক ফ্রি ভিসা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। তারা নির্দিষ্ট অংকের টাকার বিনিময়ে লোক প্রয়োজন না হলেও লোক লাগবে বলে ভিসা ইস্যু করছে। পরবর্তীতে প্রতিবছর আকামা বাবদও বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই প্রতারণার কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য বাংলাদেশি। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আগের মতো সৌদিতে কাজ না থাকায় বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
মাসুদ সেলিম জানান,‘আমেলে মনজিল’ নামে ভিসা নিয়ে অনেকেই সৌদিতে আসেন। এ ভিসার পরিধি হচ্ছে, নির্দিষ্ট মালিকের অধীনে বাসাবাড়ির কাজ করা। কিন্তু এখানে এসে বেশিরভাগ মালিকেরই দেখা পাননা তারা। যারা তাদের নিয়ে আসে তারাও মালিকের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয় না। তবে এটা ঠিক সৌদি মালিক জানেন তার বাসায় কাজ করতে একজন বাংলাদেশি এসেছেন। কিন্তু ওই জানা পর্যন্তই শেষ। তিনি তাকে কাজে নিতে চান না। অজুহাত দেখান, তার কাজের লোকের দরকার নেই। তাই বেতনও দিতে পারবেন না। উল্টো আকামা করে দেয়া বাবদ প্রতিবছর তাকে একটি নির্দিষ্ট হারে টাকা দিতে হবে। এই টাকার পরিমাণ ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তাকে অন্য কোথাও কাজ ম্যানেজ করতে হচ্ছে। যদিও বাসাবাড়ির বাইরে এ ভিসায় অন্য কোথাও কাজ করার সুযোগ নেই। ফলে এক দুর্বিষহ সময় পার করতে হচ্ছে এই সব বাংলাদেশিদের।’ এ ভিসায় গিয়ে কাজ না পাওয়া নাটোরের শামীম জানান, এই ভিসার কারণে বাসাবাড়ির বাইরে কাজ করার কোন সুযোগ নেই। ফলে অন্য কোথাও কাজ করতে দেখলে পুলিশ ধরে দেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু অনেকে ভিটেমাটি বিক্রি করে আসায় কষ্ট হলেও পালিয়ে বেড়ায়। পুলিশের কাছে ধরা দিতে চায় না।
তিনি আরো জানান, এই ভিসায় তাদের যে এলাকায় পাঠানো হয়, সে এলাকার বাইরে গিয়ে নিজ ইচ্ছায় কাজ করারও সুযোগ নেই। কেবল সংশ্লিষ্ট মালিক অনুমতি দিলেই যেতে পারেন। তবে মালিকরা এমন অনুমতি দেন না। এছাড়া ফ্রি ভিসার নামে গিয়েও হাজার হাজার কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এর বাইরে ‘আমেলে মনজিল’ ভিসায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট মালিকের বাসায় কাজ তো পাওয়াই যায় না, উল্টো প্রতিবছর তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, এই ভিসায় আসা ৩-৪ লাখ বাংলাদেশি কাজ না পেয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সত্যি হলো ‘আমেলে মনজিল’ ভিসায় এসে শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ কাজ পায় না। শামীম বলেন, তিনি যে এলাকায় আছেন, সে এলাকায় ৩০০-৪০০ লোক বেকার। কাজ না থাকায় কয়েকবার বাড়ি থেকে টাকা এনেও বাসাভাড়া এবং খাওয়া খরচ চালিয়েছেন। তার মতো শত শত বাংলাদেশির একই অবস্থা বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সৌদি প্রবাসী সাংবাদিক মাসুদ সেলিম আরা জানান, দেশটিতে ফ্রি ভিসার নামে যারা গেছেন, তাদের প্রায় সবাই বেকার অবস্থায় দিন পার করছেন।
এছাড়া আর্থিক মন্দার কারণে বিভিন্ন কোম্পানি থেকেও তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। অনেকে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফ্রি ভিসার কারণে সেখানে বেকার বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ফ্রি ভিসা নামে কোনো ভিসা নেই। ফ্রি ভিসার নামে যে ভিসা দেয়া হয় তাতে নির্দিষ্ট কোনো ক্ষেত্র বা কোম্পানিতে কাজের উল্লেখ থাকে না। ফলে অনেকে এ বিষয়টি না বুঝে সেদেশে গিয়ে বিপাকে পড়েন। যাচাই না করে তাই ফ্রি ভিসার নামে কারো দেশ ছেড়ে আসা উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন।
No comments:
Post a Comment