ফ্রি ভিসায় গিয়ে ভালো কাজ পাওয়া যাবে, কোম্পানি পরিবর্তনে কোন অসুবিধা নেই, ভালো উপার্জন করা যায়’। এমন অনেক স্বপ্ন আর প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে ওমানে নিয়ে যাওয়া হয় গাজীপুরের আওলাদ হোসাইনকে। পরিবারের দূরাবস্থা আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওমানে যান তিনি।দেশ থেকে ঋণ করে এবং পরিবারের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে এ পথে পা বাড়ান আওলাদ। উচ্চ শিক্ষিত ছিল বলে অন্য শ্রমিকদের মতো নিজের জায়গাটা অতোটা কঠিন হবে না আশা ছিল তার। কিন্তু ওমানে গিয়ে জানতে পারেন আসল ঘটনা। যেসব প্রতিশ্রুতি তাকে দেওয়া হয়েছিল। ওমানে গিয়ে বাস্তবে তার কোনটাই তিনি দেখতে পাননি।
আওলাদ হোসাইন জানান, ‘ওমানে আসতে ভিসা ও টিকেট বাবদ প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। এখানে এসে দেখি ফ্রি ভিসা কোন কোম্পানির ভিসা নয়। আর ওমানে ফ্রি ভিসায় অনেক সমস্যা। যারা আসে শুধু তারাই জানে। আসল কারণ এখানে ফ্রি ভিসায় আপনি বাইরে কাজ করতে পারবেন না। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে জেল, দেশে পাঠিয়ে দেবে। আসার তিন মাস পর কাজ দেবে বললেও আমি কাজ পাইনি’। দেশিয় এক পরিচিত এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করে ওমান যান তিনি।
তার ভাষায় ওই এজেন্টের কাজ হচ্ছে এটাই, দেশ থেকে নানা মিথ্যা কথা বলে মানুষ ওমানে নিয়ে যাওয়া। আর এখানে আসারপর সব উল্টা-পাল্টা কথা বলে অমানবিক পরিশ্রম করিয়ে নেওয়া।ওমানে আসার পর আমি তিনটা মাস কাজ ছাড়া বসেছিলাম, ঠিকমতো খাবার দিত না সে আমাদের। তারপর একদিন এক সাপ্লাই কোম্পানিতে নিয়ে কাজ দিলো। বলেছিলো দুই মাস পর বেতন দেবে। কাজ শুরু করার দু-মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন বেতন দেয় না তখন তার সাথে যোগাযোগ করি কিন্তু সে কিছুই বলে না।
কিন্তু কাজ চালিয়ে যেতে থাকি পরিবারের কথা চিন্তা করে।ভেবেছিলাম সব টাকা একসাথে পাবো তাই কিছু বলিনি। এভাবে দুই মাস চলে গেলো। বাংলাদেশ থেকে আসার সময় হাত খরচের জন্য পাঁচ রিয়াল দিয়েছিলো, তা কোনরকম এক মাস চলে গিয়েছিলো। দুই মাস পর ফোন দিলাম বেতনের জন্য।তখনও কোন সাড়া নেই। এভাবে ছয় মাস চলে গেলো, আমাকে একটা টাকাও দিলো না। তারপর যখন কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালাম তখন সে এক মাসের বেতন দিল।বাকী ছয় মাসের টাকার কোন খবরই নেই। তখন কোম্পানির কাজ ফেলে চলে আসি।
আওলাদ জানান, এখানে শুধু আমি একা নই, এখানে আমার সঙ্গে আরও অনেক বাংলাদেশি লোক আছে যাদের একই অবস্থা। আওলাদের মতো হাজার হাজার শ্রমিক রয়েছে যাদের অনেকের অবস্থা এরকম। দালাল মাধ্যমে ফ্রি ভিসায় গিয়ে নাম মাত্র কোম্পানিতে কাজ দিয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করিয়ে নিচ্ছে কতিপয় কিছু ব্যাক্তি। ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাজ করছে এসব শ্রমিকেরা। যাদের বেতনের সাথে সম্পর্কিত থাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া ওসব এজেন্ট বা দালালদের।দেশ থেকে ঋণ নিয়ে এবং দীর্ঘদিন পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে না পেরে অনেক অসহায় এবং কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছেন এসব শ্রমিকেরা।
তাদের দাবি, সরকার এবং দূতাবাস যদি এগিয়ে আসে তাহলে বৈধ কাগজপত্র করে অন্তত ওমানে কাজ করতে পারবে।কাজের চাপ এবং পরিশ্রম বেশি হলেও নিরাপদে এবং কোম্পানিগুলোকে এক ধরণের চাপের ভিতর রাখলে নিজেরা মানষিকভাবে এবং কর্মপরিবেশে নিরাপদ থাকবো’। ওমানে বাংলাদেশিদেরে এই অবস্থা নতুন কিছু নয়।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে প্রবাসীদের তালিকায় বাংলাদেশিরা সর্বোচ্চ। প্রায় ৭ লাখ বাংলাদেশি রয়েছে দেশটিতে।পুরুষের তুলনায় মহিলার সংখ্যা শতকরা ৯০ ভাগ। আর এসব নারী শ্রমিকেরা দেশটিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে।নির্মান এবং আবাসন খ্যাতে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশিদের বেশ সুনাম আছে। তাই বৈধ পথে এবং কোন ধরণের প্রতারণা ছাড়া্ই যদি শ্রমিকরা দেশটিতে যেতে পারে। তাহলে আগামীতেও ওমানে বাংলাদেশি শ্রমিক রপ্তানির প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে বলে আশা করেন ওমান প্রবাসীরা।
No comments:
Post a Comment