দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত ল্যাটিন আমেরিকার সম্পদশালী দেশ ব্রাজিল। দেশটিতে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি রয়েছে। কাজের সন্ধানে ছুটে যাওয়া দেশটিতে অন্যসব অবৈধ প্রবাসীর মতই বাংলাদেশির জীবন চিত্রটাও অনেক কষ্টের এবং সংগ্রামের। বেশিরভাগ সময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুঃখের খবর ভেসে আসলেও, সেই ঢেউয়ের বিপরীতে আসে সাফল্য ও সুবিধাপ্রাপ্তির খবর। আটলান্টিকের পাড়ে ব্রাজিলের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর সাও পাওলোতে রয়েছে সেই সুবিধা আর সাফল্য। এই শহরে রয়েছে কয়েক’শ বাংলাদেশি প্রবাসী। যারা সেখানকার বাঙালি কমিউনিটি এবং বাংলাদেশিদের স্বরূপে ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র তুলে ধরেছেন।
সাও পাওলোর এক প্রবাসী বাংলাদেশি জানান, ব্রাজিলে আসার পর ভাবতেও পারিনি যে দেশে ফিরে যেতে পারবো। দেশে থেকে যে সব গল্প শুনেছি বাস্তবে এখানে এসে মিলেছে তার ভিন্ন চিত্র। আর এই বাস্তবতা এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না। দালালের মাধ্যমে অনেক ভোগান্তি আর যন্ত্রণা নিয়ে ব্রাজিলে আসতে যে কষ্টটা পেয়েছি তার অনেকটাই লাঘব হয়েছে সাও পাওলোতে এসে। আশা খুঁজে পেয়েছি এ শহরে এসে। আশেপাশের শহরতলী নিয়ে গঠিত বৃহত্তর সাঁউ পাউলো নগরীতে প্রায় ২ কোটি লোকের বাস। যার মধ্যে স্বল্প কিছু বাঙালি এবং বাংলাদেশি রয়েছে। যাদের মধ্যে এখানে থাকতে থাকতে অনেকে এদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে গেছে।
সাও পাওলোর বাংলাদেশিরা ভালোভাবেই জীবন-যাপন করছে। এখানে বাংলাদেশি মালিকাধীন রেস্টুরেন্টসহ পাইকারি ও খুচরা দোকানপাট আছে। সাও পাওলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার লোক পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ ফেনী নোয়াখালীর। যাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে। প্রথম দিকে এ শহরে এসে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হলেও এখন মোটামুটি সবাই ভালো অবস্থানে আছেন। কেউ কেউ পুরাতন ফেরিয়া ব্যবসা আঁকড়ে ধরে আছে, আবার কেউ এখানেই দোকানপাটসহ খাওয়ার হোটেল খুলে বসেছে।
অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন ব্রাজিলে যাদের আয় মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার ডলার। অনেকের রয়েছে সুপার মার্কেট , শপিং ,রেস্টুরেন্ট আবার কেও কেও করছেন ব্রাজিলের বিভিন্ন সিটিতে মেলার আয়োজন । সব মিলিয়ে ভাল আছেন ব্রাজিল প্রবাসি বাংলাদেশীরা ।
ব্রাজিলের অভিবাসী আইন অনুযায়ী সেখানে অবস্থিত সকল অভিবাসীর পর্যায়ক্রমে ব্রাজিলের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ব্রাজিলে বর্তমানে পাঁচ হাজারের উপরে বাংলাদেশি আছে। সবাই অবৈধ পথে বিভিন্ন মাধ্যমে ব্রাজিল গিয়েছে। আবার এখান থেকে একটা বড় সংখ্যক বাংলাদেশি দালাল ধরে আমেরিকা চলে গেছে। ফুটবলের জগদ্বিখ্যাত এই দেশটি দ.এশিয়ার মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করেই। সাউথ আফ্রিকায় অর্থনৈতিক মন্দা আর মধ্যপ্রাচ্যে বাজার সংকটে জীবন ঝুঁকি নিয়ে এপথ পাড়ি দিচ্ছে প্রবাসীরা। অনেকেই ব্রাজিলে ঢোকার পর বিভিন্ন শহরে স্থায়ীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। ফলে অনেক বাংলাদেশি দালাল ধরে ব্রাজিল এসে খরচের টাকা উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান এক প্রবাসী বাংলাদেশি।
ব্রাজিলের অর্থনীতিতে সব রাজ্য সমান নয়, আটলান্টিক পাড়ের রাজ্যগুলো তুলনামূলক অন্য রাজ্য থেকে ধনী হওয়ায় বেশিরভাগ প্রবাসীরা এসব রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করে। অন্য রাজ্যগুলোর মাথাপিছু আয় আটলান্টিক পাড়ের সাও পাওলো, রিও ডি জেনিরিও ও পারানার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। তাই ব্রাজিল প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্রাজিলের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় ধনী রাজ্যগুলোতে বেশী (প্রায় ৯০ ভাগ) থাকে।
ব্রাজিলে বসবাসরত এক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী জানান, ব্রাজিলে বাংলাদেশিদের সুনাম আছে। তাই আমরা বাংলাদেশের মতো চলতে পারি। তবে কাজের সন্ধানে এখন যারা ব্রাজিলে আসছে তাদের অনেক চড়াই-উৎরায় পার করতে হয় বলেও জানান তিনি। সততা আর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে ব্রাজিল হতে পারে বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য অন্যতম কাঙ্ক্ষিত একটি দেশ।
No comments:
Post a Comment