ভালো প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া। পড়াশোনার বাইরে অতিরিক্ত সময়ে ভালো চাকরি। সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করে ২০-২৫ হাজার টাকা আয়। ইউরোপের যেকোনো দেশে যাওয়ার সুযোগ। ছাত্র পরামর্শকসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমন সব প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্র পাঠাচ্ছে সাইপ্রাসে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ক্ষুদ্র ইউরোপীয় দেশটিতে এখন কাজের সুযোগ নেই। ইউরোপজুড়ে মন্দার প্রভাব সেখানেও পড়েছে। তাই সাইপ্রাসে থাকা বাংলাদেশি ছাত্ররা এখন চরম অর্থকষ্টে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে কাজের দাবিতে তাঁরা আন্দোলনও শুরু করেছেন।
সাইপ্রাসে থাকা বাংলাদেশি ছাত্ররা জানান, নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ছাত্ররা সে দেশে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। ওই নিয়মে কাজ করার জন্য প্রত্যেককে সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি কোনো বিদেশি ছাত্রকে কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে না। অনুমতি ছাড়া কেউ কোথাও কাজ করলে তাঁকে আটক করে জরিমানা করা হচ্ছে। এ জন্য বেশির ভাগ বাংলাদেশি ছাত্র চরম বিপাকে পড়েছেন। বাসা ভাড়া, খাওয়া দাওয়ার খরচ তো বটেই, তুলনামূলকভাবে অসচ্ছল এ বাংলাদেশিরা টিউশন ফিও এখানে কাজ করেই উপার্জন করে থাকেন। এ কারণে তাঁদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার জোগাড়।
উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে দ্বিধাবিভক্ত দ্বীপ সাইপ্রাসের আয়তন মাত্র নয় হাজার ২৫১ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা মাত্র আট লাখ ৭৯ হাজার। তবে লোকসংখ্যা কম থাকা ও উচ্চ আয়ের কারণে দেশটির মাথাপিছু আয় প্রায় ২৭ হাজার ডলার।
সাইপ্রাসের ফিলিপস কলেজের অোরেক ছাত্র নুরুল বলেন, সাইপ্রাসে অন্তত চার হাজার বাংলাদেশি ছাত্র আছেন। তাঁরা মূলত রাজধানী নিকোশিয়া, লিমাসল, পাপোস, লারানসা এলাকায় থাকেন। বাংলাদেশি ছাত্ররা বলেছেন, সাইপ্রাসে ছাত্ররা সাধারণত যেসব কাজ করেন, তাতে ঘণ্টাপ্রতি চার থেকে পাঁচ ইউরো পাওয়া যায়। মাসের সব সপ্তাহে কাজ করতে পারলে ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো পাওয়া যায়। কিন্তু এর অর্ধেকই চলে যায় বাসা ভাড়া ও খাওয়ায়। বাকি টাকা জমিয়ে ছাত্ররা টিউশন ফি দেন। কাজেই কাজ করতে না পারলে এখানে টিকে থাকাই কষ্টকর।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও তাদের নিযুক্ত দালালেরা এখনো মধুর মধুর কথা বলে ছাত্রদের এখানে পাঠাচ্ছে। এ জন্য নতুন ছাত্ররা এসে বিপদে পড়ছেন।বাংলাদেশ থেকে একজন ছাত্রের সাইপ্রাসে আসতে সর্বোচ্চ চার হাজার ইউরো (চার লাখ টাকা) লাগার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার ইউরো নেয়।
সাইপ্রাস থেকে দেশে ফিরে আসা ছাত্র নুরুল হক বলেন, মোটা টাকা আয় তো দূরের কথা, উল্টো দেশ থেকে টাকা নিয়ে তিন বছরের মাথায় দেশে ফিরে এসেছি। আমি মনে করি এখন আর কারও সাইপ্রাসে যাওয়া উচিত নয়।
No comments:
Post a Comment