Social Icons

Tuesday, October 3, 2017

ইউরোপের অভিবাসী বান্ধব দেশ পর্তুগাল


দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ পর্তুগাল। আটলান্টিক মহাসাগরের দীর্ঘ উপকূল জুড়ে পর্তুগালের অবস্থান। ইউরোপে পর্তুগাল বিখ্যাত তার চমৎকার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের জন্য, তাই এটিকে সাগর কন্যার দেশও বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও সহনিয়  আবহাওয়ার কারণে পর্তুগালে সারা বছরই পর্যটকদের ভীর লেগে থাকে।  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যরূপে যেমন সাবলীল পর্তুগাল তেমনি পর্তুগালকে ইউরোপে অভিবাসীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেখানে অভিবাসীদের বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণ করে, সেখানে পর্তুগাল অবৈধ অভিবাসীদের জন্য আছে সহজতম শর্তে বৈধ করণের প্রক্রিয়া। এখানেই পর্তুগালের বিশেষত্ব।

তবে ইউরোপ জুড়ে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে যাওয়ার জের ধরে ইইউ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় এখন সতর্ক অবস্থানে। আর ইইউ`র চাপে পর্তুগালের অভিবাসন প্রক্রিয়াও দিনকে দিন কঠিন হতে শুরু করে। তার পরেও ইউরোপের অভিবাসী বান্ধব দেশ হিসেবেই বিশ্বজুড়ে এখনও পরিচিত পর্তুগাল। পর্তুগালে বাংলাদেশিদের আগমন খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয়। ১৯৯০ সালের দিকে প্রথম বাঙালীদের আগমন ঘটে ।
তবে ৯০ সালের দিকে সর্বসাকুল্যে ৫ জনের মত বোংলাদেশির বসবাস ছিল পর্তুগালে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা কম। বর্তমানে পর্তুগালে কয়েক হাজার  বাংলাদেশির বসবাস। তবে এ ব্যবাপের সুনিদিষ্ট কোন তথ্য নাই। পর্তুগালে বেশ কয়েকটি বড় বড় শহরের মধ্যে রাজধানী শহর লিসবনে সর্বাধিক বাংলাদেশির বসবাস। এখানে মারতিম মনিজ নামক জায়গাকে বলা যায় একখন্ড ছোট্ট বাংলাদেশ। তাছাড়া দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হচ্ছে পর্তু সিটি যা একসময়ে পর্তুগালের রাজধানী ছিল। এখানে লিসবনের পরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস।

এছাড়া ভ্রমন পিয়াসীদের জন্য অন্যতম আকর্ষনিয় শহর আলগারবে সেখানেও অল্পসংখ্যক বাংলাদেশিদের বসবাস রয়েছে। একসময়ের পর্তুগিজ কলোনি ব্রাজিল,মুজাম্বিক,কাবু-ভেরদে,গিনে-ভিসাও,পুর্ব তিমুর,মেকাও,ইন্ডিয়ার গোয়া প্রমুখ জায়গার অনেক লোকই পর্তুগালে বসবাস করছে অনেক দিন ধরে. এমনকি কারো কারো দুই পুরুষ ধরে এখানে বসবাস করছে। তার বাইরে ও এখানে বাংলাদেশ,ভারত,পাকিস্তান,নেপাল সহ আরো অনেক দেশের লোক বাস কর। তবে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী হচ্ছে চীনের। বলতে গেলে এখানকার সব বড় বড় ব্যাবসা-বানিজ্যের নিয়ন্ত্রক তারাই।

যেহেতু পর্তুগাল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ, কাজেই এখানকার নাগরিকরা ইউরোপিয়ান আইন অনুযায়ী সহজেই ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে  চাকরি/ব্যবসা-বানিজ্য করতে পারে। পর্তুগালের অভিবাসন আইন অনুযায়ি যে কেউ যদি বৈধভাবে ইউরোপের যেকোন দেশে প্রবেশ করে এবং পর্তুগালে ছয়মাস অবস্থান করে সরকার নির্ধারিত ট্যাক্স পরিশোধ করে তাহলে সে এখানকার রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে পারে। কেউ যদি ছয় বছর এই রেসিডেন্সি নিয়ে বসবাস করে এবং তার বিরুদ্ধে কোন অপরাধে জড়িত থাকার প্রমান না থাকে তাহলে সে পর্তুগালের নাগরিকত্ব পেতে পারে।
এ বিষয়ে কথা হয় পর্তগাল অভিবাসী বাংলাদেশি সেলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রায় ৭ বছর ধরে বসবাস করছেন পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে জড়িত তিনি। সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন ইতালি,গ্রিস,ফ্রান্স,স্পেনে নাগরিকত্ব পাওয়াটা অনেক জটিল এবং অনেক দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া। কাজেই যারা ইউরোপে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চায় তারা সাধারনত পর্তুগালকেই বেছে নেয়। পর্তুগিজ পার্সপোর্টধারী বাঙ্গালিদের অনেকেই এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে ইউকে, সুইজারল্যন্ড,নরওয়ে,সুইডেন সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। তাছাড়া ব্যবসা-বানিজ্য করাটাও এখানে অনেক সহজ। তাই বাংলাদেশিরা এখানে সহজেই নাগরিকত্ব পাওয়ার আগ পর্যন্ত থাকতে পারে, আর এই কারনেই মূলত এখানে বাংলাদেশিরা অভিবাসি হয়।’ রাজধানি লিসবনে প্রায় দেড় হাজারের মত বাংলাদেশির বসবাস আছে।

সেন্ট্রাল লিসবনের মারতিম মনিজ নামক স্থানেই মূলত বাঙ্গালিদের মূল আবাস। তাছাড়া আরিয়স নামক স্থানে ও অনেকের বসবাস রয়েছে। কাজের জায়গার সংকট,স্বল্প বেতন,ভাষাগত জটিলতা ইত্যাদি কারনে মূলত এখানকার বেশিরভাগ বাংলাদেশি ব্যবসা-বানিজ্যের সাথে জড়িত। তাছাড়া ব্যবসা করাটা এখানে অনেক সহজ। অনেক বড় বড় বাংলাদেশি হোল-সেলার রয়েছেন এখানে যারা বিশাল বিশাল বড় বড় শো-রুমের মালিক। এখানকার বাংলাদেশিরা মূলত কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা,কসমেটিক্স,গ্রোসারি শপ,কাবাব শপ এবং ট্যুরিস্ট দোকানের ব্যবসার সাথে জড়িত। এর বাহিরে রেষ্টুরেন্ট,ইন্টারনেটের দোকান এবং বিভিন্ন মেলায় খেলনা,প্রয়োজনিয় দ্রব্যাদির স্টলের ব্যবসাও করে থাকেন অনেকে।

তাছাড়া বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় বেশ কয়েকটি মাছ-মাংসের ও অন্যান্য দেশি দ্রব্যাদির দোকানও রয়েছে। ব্যবসা-বানিজ্য ও কাজের ফাকে এখানে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন জাতীয় দিবস,ধর্মীয় দিবস সমুহ পালন করে থাকে। প্রায় সব অনুষ্ঠানের শেষেই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন থাকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জেলা ভিত্তিক সংগঠন সমুহ এসব অনুষ্ঠানের আয়োজনের সাথে জড়িত থাকে। লিসবন শহরে বাংলাদেশিদের দুইটি মসজিদ রয়েছে। একটার নাম বায়তুল মোকাররাম জামে মসজিদ অন্যটা মারতিম মনিজ জামে মসজিদ হিসেবে পরিচিত। এছাড়া পর্তু শহরেও বাংলাদেশিদের একটি জামে মসজিদ রয়েছে। এভাবেই নানা ক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশিরা সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates