বামপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভাকে দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া বিচারক সার্জিও মোরোকে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য করছেন ব্রাজিলের নবনির্বাচিত কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনরো।
বৃহস্পতিবার বোলসোনরো ও মোরোর বৈঠকের পর এ ঘোষণা আসে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
গত সপ্তাহে দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থি বোলসোনরো তার বামপন্থি প্রতিদ্বন্দ্বী হাদাজকে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিজয়ী হন।
দুর্নীতির দায়ে ১২ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত লুলাই তার বদলে হাদাজকে প্রার্থী করেছিলেন।
৪৬ বছর বয়সী মোরোকে নতুন বিচারমন্ত্রী বানানোর ঘোষণা দিয়ে টুইটারে বোলসোনরো বলেন, “তার দুর্নীতিবিরোধী ও সংগঠিত অপরাধবিরোধী অবস্থান এবং আইন ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আমাদের পথ দেখাবে।”
তবে লুলাকে সাজা দেওয়া বিচারককে মন্ত্রী বানানোর এ সিদ্ধান্ত ক্রদ্ধ করেছে বামপন্থি ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিটি)। লুলার সাজা ও বোলসোনরোর জয়ের পর মোরোর মন্ত্রীত্বকে ‘শতাব্দীর সেরা জালিয়াতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন পিটির প্রেসিডেন্ট গ্লেইসি হফম্যান।
“লুলাকে প্রার্থীতার ক্ষেত্রে বাধা দিয়ে নির্বাচনে ধ্বংসাত্মক অবস্থান নেওয়ার পর মোরো বোলসোনরোর মন্ত্রী হচ্ছেন; শতাব্দীর সেরা জালিয়াতি,” টুইটারে বলেন তিনি।
কয়েক বছর আগেও মোরো বলেছিলেন, রাজনীতিতে প্রবেশের ইচ্ছা নেই তার। যদিও বোলসোনরোর জয়ের পরই সিদ্ধান্ত বদলালেন। বহুল আলোচিত ‘কার ওয়াশ’ মামলা ও এর তদন্তের ভার অন্য বিচারকদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এ মামলাতেই ব্রাজিলের অসংখ্য রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী দুর্নীতির দায়ে ফেঁসেছেন।
বিচারমন্ত্রী হিসেবে মোরোর হাতে থাকবে কেন্দ্রীয় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় জননিরাপত্তার ভার। এসব বিভাগে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে পদায়ন করতে পারেন বলেও জানিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট বোলসোনরো।
লুলাকে দণ্ডিত করার পর অনেক ডানপন্থিই মোরোকে চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন; মোরো সেটি প্রত্যাখ্যান করলেও ২০২২ এর নির্বাচনে তাকে প্রার্থী করার বিষয়টি নিয়ে এখনই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলেও ভাষ্য পর্যবেক্ষকদের।
মোরোকে বিচারমন্ত্রী বানানো ছাড়াও বোলসোনরোর অনেক পরিকল্পনাই গত কয়েকদিন ধরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজর কেড়েছে। এর মধ্যে আছে ইসরায়েলের ব্রাজিল দূতাবাসকে জেরুজালেমে সরিয়ে আনা, পেট্রোবাসের জন্য অংশীদার খোঁজা, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অস্ত্রের অনুমোদন সহজ করা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া।
বিবিসি বলছে, ডানপন্থি বোলসোনরো ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক রদবদল আনতে চাইলেও দেশটির কংগ্রেস এসব পরিকল্পনায় অনুমোদন দেবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
কট্টর ডানপন্থি এ প্রেসিডেন্ট কৃষি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় একীভূত করার কথাও বলেছিলেন; এর ফলে আমাজনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ঝুঁকি আরও বেড়ে যেতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করেছিলেন।
তীব্র চাপের মুখে বোলসোনরো পরে তার ওই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে মন্ত্রণালয় দুটি আগের মতোই পৃথক রাখা হবে বলে আশ্বাস দেন।
ব্রাজিলের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বোলসোনরোর ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনও ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বোলসোনরোর সঙ্গে ট্রাম্পের অনেক বিষয়ে ‘মিল’ আছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
No comments:
Post a Comment