Social Icons

Saturday, August 4, 2018

নারীর আদর্শ ফাতেমা জোহরা (রা.)


উম্মতকে আবেদন-সম্পন্ন পুণ্যবান আদর্শের অনুসরণ এবং বক্তব্য, পদ্ধতি ও প্রয়োগে তাকে উপমা হিসেবে গ্রহণের মাধ্যমে মার্জিত আচরণ ও উন্নত মূল্যবোধে দীক্ষিত করা মুসলিম ব্যক্তিত্ব গঠনের অন্যতম সেরা নেয়ামক ও মৌলিক ভিত্তি। নিজ ধর্ম পরিচয় নিয়ে গর্বিত যে ব্যক্তিত্বের ব্যাপক প্রয়োজন আমরা অনুভব করি এ যুগে।
পুণ্যময় আদর্শের নেয়ামকের গুরুত্ব এবং গঠন, শিখন ও নির্মাণে এর কার্যকর প্রভাবের কারণেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী (সা.) কে আদেশ দিয়েছেন ধৈর্য ধরতে, যেমন ধৈর্য ধরেছেন উচ্চ সাহসী পয়গম্বররা। তিনি বলেন, ‘অতএব আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন।’ (সূরা আনআম : ৯০)। আল্লাহ আমাদের জন্যও তুলে ধরেছেন আদর্শের অনুপম সব উপমা, যারা ছিলেন কালের-কপালে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যেমন নবীরা (আলাইহিমুস সালাম), ফেরাউন পরিবারের ঈমানদার ব্যক্তি, আল্লাহর প্রজ্ঞাময় পুণ্যবান বান্দা লোকমান, মরিয়ম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রীসহ অন্য আরও অনেকে।
তবে আল্লাহর প্রশংসা করা উজ্জ্বল আদর্শগুলোর মধ্যে মহত্তম হলেন আমাদের নেতা, আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)। যাঁর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনÑ ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহজাব : ২১)। সেহেতু নবী (সা.) হলেন স্থান ও কালের ঊর্ধ্বে নিজ কথা ও কাজে, আচার-আচরণে ও ছোট-বড় বিষয় প্রবর্তন ও অনুমোদনে আদর্শ উপমা। আর নবী (সা.) এর পবিত্র নবুয়তি আদশ সঞ্চারিত হয়েছে তাঁর সন্তান ও স্ত্রীদের মাঝে। তাই তো সহিহ বর্ণনা মতে, আদেশ করা হয়েছে তাঁর সন্তান ও স্ত্রীদের ওপরও দরুদ পড়তে। ফলে তাঁরাও পরিণত হয়েছেন বিশ্ববাসীর জন্য আদর্শ। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী পতœীরা! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও।’ (সূরা আহজাব : ৩২)। তিনি আরও এরশাদ করেন, ‘হে নবী-পরিবার, আল্লাহ শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের পূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র রাখতে।’ (সূরা আহজাব : ৩৩)।
পবিত্র নবী-পরিবারের উজ্জ্বলতম আদর্শ হলেন তাঁর কন্যা পবিত্র ও পুণ্যবতী মহান তনয়া ফাতেমাতুজ জোহরা (রা.)। আল্লাহ এই পুণ্যবতী নারীনেত্রীকে মনোনীত করেছেন। তার ব্যক্তিত্বে সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন বিবিধ শ্রেষ্ঠত্ব ও পূর্ণতম গুণাবলি, যা তাকে উন্নীত করেছে মর্যাদা ও সম্মানের উঁচু আসনে।
তিনি লালিত-পালিত হয়েছেন নবীগৃহে। শিক্ষাগ্রহণ করেছেন নিজ পিতা নবীসম্রাটের আলয়ে। শিক্ষা নিয়েছেন সরাসরি রিসালাতের চেরাগদান থেকে। সুধা পান করেছেন আপন পতি ইমাম আলী (রা.) এর ইলম ও ফিকহ এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকে। অর্জন করেছেন উচ্চতর স্তর ও মহানতর প্রশংসা। ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছে তার অনুপম অবস্থা। ধারণ করেছে তার নিজ প্রভু ও পিতা এবং স্বামী সমাজের সঙ্গে মহত্তর চিত্র। কে আছে তার মর্যাদা স্পর্শ করবে? দুনিয়ার কোনো নারী আছে যে তার সমকক্ষ হবে?
মক্কায় তার জন্ম পিতার নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে, যখন কোরাইশরা কাবা নির্মাণ করছিল। তার গর্ভধারিণী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ (রা.) নবীজির হৃদয়ে ভালোবাসার প্রিয়পতœী। যিনি বিখ্যাত সব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
ফাতেমা (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.) এর সর্বকনিষ্ঠ কন্যা। ছিলেন পিতার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান। কারণ তিনিই শুধু জন্মলগ্ন থেকে নবীজির শেষদিন অবধি পিতার সঙ্গে ছিলেন। নবীজীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো সরাসরি দেখেছেন। প্রত্যক্ষ করেছেন পিতার নানা অবস্থা ও বিস্ময়কর ঘটনা। শরিক হয়েছেন নবীজির দ্বীন প্রচারের নানা কষ্ট, দুর্যোগ ও দুর্ভাবনায়।
একদিন নবী (সা.) কাবার সামনে সিজদাবনত। মোশরেকরা এসে তাঁর মাথায় তুলে দিল উটের নাড়িভুঁড়ি। ছোট্ট বালিকা ফতেমা ছুটে এলেন। রাসুলুল্লাহর মাথা থেকে অপসারণ করলেন এই বোঝা। উহুদ যুদ্ধে গ- মোবারক বিক্ষত হলো। গলগল করে গড়িয়ে পড়তে লাগল রক্ত। ফাতেমা (রা.) এসে গাল ধুয়ে দিতে লাগলেন যতক্ষণ না রক্ত বন্ধ হয়।
একবার মোশরেকরা নবীজির মাথায় মাটি নিক্ষেপ করল। ফাতেমা (রা.) ছিলেন সেখানে দাঁড়ানো। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বাবার মাথা পরিষ্কার করতে লাগলেন। নবী (সা.) তাঁকে সান্ত¡না দিয়ে বলতে লাগলেনÑ ‘আমার প্রিয় আত্মজা, কেঁদো না। নিশ্চিত থেকো আল্লাহই তোমার পিতার সাহায্যকারী।’
তিনি ইলম শিখেছেন সরাসরি আল্লাহর রাসুলের মুখ থেকে। পরিণত হয়েছেন হাদিস বর্ণনাকারী। হাদিসগ্রন্থগুলোয় তাঁর বর্ণিত হাদিস প্রচুর। নবীজির আখলাকই ছিল তার আখলাক। পিতার শেখানো আদবই ছিল তার শিষ্টাচার। মানুষ তাকে দেখলে নবীজির কথা মনে পড়ত। এমনকি তার চালচলন ছিল হুবহু নবীজির চালচলনের মতো। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি ওঠাবসার ধরন-ধারণ ও আচরণে ফাতেমার চেয়ে আর কাউকে নবীজির সঙ্গে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ দেখিনি।’
তিনি ছিলেন পিতার আদরের দুলালী। যখনই তিনি মেয়েকে নিজের দিকে আসতে দেখেন, তার দিকে এগিয়ে যেতেন। তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের পাশে নিয়ে বসাতেন। বলতেন, ‘স্বাগতম হে আমার মেয়ে।’ নবীজি সফর থেকে এসে আত্মজা ফাতেমার ঘরে গিয়ে সালাম আর দোয়া করার আগ পযন্ত স্ত্রীদের ঘরে যেতন না।
ফাতেমা (রা.) এর একটি অনন্য মর্যাদা হলো এই যে, নবীজি (সা.) তাকে, আলী ও হাসান-হুসাইন (রা.) কে জড়িয়ে ধরেছেন। তারপর তাদের চাদর মেলে দিয়ে দোয়া করেছেনÑ ‘হে আল্লাহ, এরা আমার আহলে-বাইত (পরিবার-পরিজন)। এদের কষ্ট দূর করুন এবং এদের পুরোপুরি পবিত্র করুন।’ (তিরমিজি)। তার মর্যাদা এমন উঁচুতে উপনীত যে, নবী (সা.) তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘ফাতেমা আমার অংশ। তার যা অপছন্দ, আমারও তাই অপছন্দ। তাকে যা কষ্ট দেয়, আমাকেও তাই কষ্ট দেয়।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
নবী (সা.) এর বংশধারা আল্লাহ একমাত্র তাঁর ও তাঁর দুই পুত্র হাসান-হুসাইনের (রা.) মাধ্যমেই টিকিয়ে রেখেছেন। যেমনটি বর্ণনা করেছেন হাকেম ও বায়হাকি : ‘কেয়ামত পর্যন্ত সব বংশধারাই বন্ধ হয়ে যাবে, শুধু আমার আর আমার নাতিদের বংশ টিকে থাকবে।’
১৪ জিলকদ ১৪৩৯ হিজরি মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবা মক্কা থেকে অনুবাদ করে পাঠিয়েছেন আলী হাসান তৈয়ব

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates