ব্রাজিল ও ফুটবল যেন অবিচ্ছেদ্য এক সত্তা। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি বড্ড ম্লান ও প্রাণহীন। ফুটবল ব্রাজিলকে যতটুকু দিয়েছে, ব্রাজিলও ফুটবলকে দিয়েছে ততটুকু। এখন পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে সবার ওপরে ‘সেলেসাও’খ্যাত দলটি। কিন্তু শিরোপার চেয়েও ব্রাজিল আলাদা অন্য জায়গায়। নান্দনিক ফুটবলের ঝলকানির অনন্য রূপ; জিঙ্গা ও জগো বনিতো ব্রাজিলেরই দান। যুগ যুগ ধরে ফুটবলের সৌন্দর্যকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন পেলে-গারিঞ্চা-রোনালদো-রোনালদিনহো কিংবা হালের নেইমাররা। সেই ব্রাজিল অবশ্য মাঝে অনেক দিন বাজে সময় পার করেছে। এবার তিতের অধীনে একঝাঁক তারকা নিয়ে আবারো বিশ্বকাপ মঞ্চ আলোকিত করতে প্রস্তুত লাতিন জায়ান্টরা। কিন্তু গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি হয়ে আছে আরো তিন দল। সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা কিংবা সার্বিয়া শক্তি-সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপ মঞ্চে নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়ে খেলবে তারা। আর মুখিয়ে থাকবে প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ নিতে। তাই গ্রুপে ব্রাজিল ফেভারিট হলেও সতর্ক থাকতে হবে প্রতিমুহূর্তে।
১৬ বছরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আরো তিনটি বিশ্বকাপ। যার কোনোটিতেই ফাইনালের মুখ দেখেনি ব্রাজিল। ২০১৪ সালে নিজের দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে লজ্জাজনক এক হারে বিদায় নেয় ব্রাজিল। যেখানে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সেই দুঃস্মৃতি ভোলার মিশন নিয়ে এবার রাশিয়ায় যাবে ব্রাজিল। লক্ষ্য একটাই— নীল-হলুদ জার্সির দেশটির হাতে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা তুলে দেয়া। ফর্ম ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় ব্রাজিলকে ফেভারিট না বলে উপায় নেই। দলের প্রায় প্রত্যেক পজিশনে একাধিক তারকার উপস্থিতি। নেইমার দলের সেরা তারকা নিঃসন্দেহে, কিন্তু দলটি নেইমারের ওপর এককভাবে নির্ভরশীল নয়। বাছাই পর্বের শুরুতে হুমকিতে পড়া দলটিই সবার আগে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে। দলটিকে বদলে দেয়ার মূল কারিগর তিতে। দুঙ্গার অধীনে ধুঁকতে থাকা দলটিকে তিতে গড়ে তুলেছেন বিশ্বজয়ের ফর্মুলায়। যেখানে আক্রমণ ভাগে নেইমার ছাড়াও আছেন ফিলিপে কুতিনহো, রবার্তো ফিরমিনো, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, উইলিয়ান কিংবা ডগলাস কস্তার মতো তারকা। নিচের দিকে মার্সেলো, কাসেমিরো এবং থিয়াগো সিলাভারাও পরীক্ষিত। গোলবারের নিচে অ্যালিসন হোক অথবা এডারসন সবাই সময়ের অন্যতম সেরা। এ ব্রাজিলকে নিয়ে তাই স্বপ্ন দেখতেই পারে সমর্থকরা। তবে কেবল ফল নিয়েই ভাবেননি তিতে। দলের মাঝে আবারো সেই পুরনো সৌন্দর্যময় ফুটবল ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। এখন কেবল এগিয়ে যাওয়ার পালা। নিজেদের সাম্প্রতিক ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ঘরে নেয়াটা হতে পারে কেবল সময়ের অপেক্ষা।
গ্রুপ ‘ই’তে সুইজারল্যান্ডকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জারদান শাকিরি। দলকে এগিয়ে নিতে হলে জ্বলে উঠতে হবে তাকে। গত বিশ্বকাপে হন্ডুরাসের বিপক্ষে দ্বিতীয় সুইস খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে সাবেক সুইস কোচ ওটমার হিটজফেল্ড বলেন, ‘শাকিরি এমন খেলোয়াড়, যিনি একাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন।’ সুইসদের জার্সিতে এখন পর্যন্ত ৬৮ ম্যাচ খেলে ২০ গোল করেছেন শাকিরি। এটি সুইসদের নবম বিশ্বকাপ অভিযান। এর আগে দুবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল ইউরোপের দেশটি।
কোস্টারিকার এটি পঞ্চম বিশ্বকাপ অভিযান। গত বিশ্বকাপে সবাইকে চমকে দিয়ে কোয়ার্টারে খেলে তারা। এবারো গ্রুপ ‘ই’তে ভালো সম্ভাবনা আছে দেশটির। দলসেরা তারকা রিয়াল মাদ্রিদের গোলরক্ষক কেইলর নাভাস ২০১৪ বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরম্যান্সে সবার নজর কেড়েছিলেন। এবারো দলের মূল ভরসা নাভাস। তাকে ঘিরেই দল সাজাচ্ছেন অস্কার রামিরেজ। তবে পরের পর্বে যেতে নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়েই খেলতে হবে কোস্টারিকাকে।
র্যাংকিংয়ে ৩৫ নম্বরে থাকা সার্বিয়া গ্রুপ ‘ই’র চতুর্থ দল। ইউরোপের শীর্ষ লিগে খেলা একাধিক তারকা সার্বিয়ার বড় শক্তি। যেখানে রোমায় খেলা আলেকজান্ডার কোলারভ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নেমানিয়া মাতিচের মতো তারকাও আছেন। তবে গ্রুপের অন্য দলগুলো টেক্কা দিয়ে পরের পর্বে যেতে হলে কঠিন পরিশ্রমই করতে হবে সার্বিয়াকে।
আজ লিভারপুলের মাঠ অ্যানফিল্ডে প্রীতি ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে তিতের ব্রাজিল। এ ম্যাচে খেলতে পারেন নেইমার। এএফপি
No comments:
Post a Comment