ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তে আহত বিক্ষোভকারীদের সহায়তা করতে যাওয়া এক ফিলিস্তিনি চিকিৎসাকর্মীকে বুকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। শুক্রবার শতাধিক বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৪০ জনের শরীরে তাজা গুলি লেগেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদরা বলেছেন, রাজান আল নাজ্জার নামে ২১ বছর বয়সী ওই নার্স খান ইউনিসে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তার এই হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৩ জনে। নাজ্জার ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাসেবী। তার বুকে গুলি লাগার সময় তিনি চিকিৎসাকর্মীদের সাদা ইউনিফর্ম পরা ছিলেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, একজন আহত ব্যক্তিকে সহায়তা করতে গেল তাকে গুলি করে হত্যা করে স্নাইপাররা। সাদা ইউনিফর্ম পরা নাজ্জার তার দুই হাত উপরে উঠিয়ে আহতদের সাহায্যে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ইসরাইলি সেনারা তার বুকে গুলি করলে তিনি মাটিতে লুকিয়ে পড়েন।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেন, চিকিৎসাকর্মী নাজ্জারকে হত্যা যুদ্ধাপরাধ ছাড়া আর কিছু না। ইসরাইলকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। নাজ্জারকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক সকল চুক্তি ও কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ এসব আইনে চিকিৎসাকর্মীদের বিশেষ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাওয়াদ আওয়াদ বলেন, নারী চিকিৎসাকর্মী আল নাজ্জারকে ইসরাইলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। এটা স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ।
শুক্রবার গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বসতবাড়িতে ফেরার দশম সাপ্তাহিক বিক্ষোভে আল নাজ্জারকে গুলি করলেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই ইসরাইলি সেনাবাহিনীর। ইসরায়েল এবং গাজা সীমান্তের বেড়া কাছাকাছি ৫ টি ক্যাম্পে জড়ো হয় ফিলিস্তিনি যুবকরা। তারা টায়ার জ্বালিয়ে এবং বেড়া অপরপাশে থাকা ইসরায়েলি সৈন্যদের উপর পাথর ছুঁড়েছে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
তাকে যখন গুলি করে হত্যা করা হয়, তখন তার পরনে সাদা ইউনিফর্ম ছিল। এতে অন্য বিক্ষোভকারীদের থেকে তাকে আলাদাভাবে শনাক্ত করা সম্ভব ছিল। এছাড়া তিনি যখন এক আহতকে চিকিৎসা দিতে যাচ্ছিলেন, তখন হাত উপড়ে উঠিয়ে রেখেছিলেন। যাতে চিকিৎসাকর্মী হিসেবে তাকে সবার থেকে আলাদা করা সম্ভব হয়। কিন্তু ইসরাইলি স্নাইপাররা তার বুকে গুলি করলে তিনি নিহত হন।
ফিলিস্তিনি বিচারমন্ত্রী আলী আবু দিয়াক বলেন, দখলদার বাহিনী এক মেডিকেলকর্মীকে হত্যা করে ঘৃণ্য অপরাধ করেছে। ইসরাইল রাষ্ট্রটির নেতা, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচাররের আওতায় আনতে হবে।
আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যারা মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করেন, তাদের বিশেষ সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। ১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের ২৪ অনুচ্ছেদে আহত কিংবা অসুস্থদের উদ্ধার করে তাদের নিয়ে গিয়ে চিকিৎসায় কাজ করা মেডিকেলকর্মীদের বিশেষ সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। অধিকৃত গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী আল ফাতাহ পার্টির মুখপাত্র ওসামা আল কাসেমি বলেন, এটা ভয়ঙ্কর অপরাধ। ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের এই হত্যা ফ্যাসিস্ট মানসিকতারই প্রতিফলন।
No comments:
Post a Comment