একাদশ জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের শপথকক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাদের তিন দফায় শপথ পাঠ করান। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত ওই শপথ ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবনজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
জাতীয় সংসদের শপথকক্ষে চারটি ধাপে এ শপথ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবিধান ও কার্যপপ্রণালীবিধি অনুযায়ী প্রথমে নিজে শপথ গ্রহণ করেন এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। দ্বিতীয় ধাপে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের ২৫৫ জন সংসদ সদস্যকে শপথবাক্য পাঠ করান। তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির তিন জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের দু’জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের দু’জন, তরিকত ফেডারেশন একজন, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) একজন এবং তিন স্বতন্ত্র সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। চতুর্থ ধাপে জাতীয় পার্টির ২১ জন শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণ শেষে সবাই বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনে শপথ অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত থাকলেও সকাল থেকেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একে একে সংসদ ভবনে আসতে থাকেন। স্পিকার শপথ বাক্য পাঠ করার পর প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত অন্য সদস্যরাও তাকে অভিনন্দন জানান। সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
সংসদ সচিবালয় জানায়, অসুস্থতার কারণে আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নিতে পারেননি। তিনি বুধবার স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে শপথের জন্য সময় চেয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গতকাল বিকেলে শপথ গ্রহণের কথা থাকলেও তিনি পরে স্পিকারের কাছে সময় চেয়েছেন। দুই-এক দিনের মধ্যেই তিনি শপথ নেবেন বলে জানান। আর শপথ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত সদস্য। এ বিষয়ে স্পিকার সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথের জন্য ৯০ দিন সময় পাবেন। আর এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের তিনটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল হওয়ায় সেখানকার ফলাফল স্থগিত রয়েছে।
শপথ পাঠ করানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডান পাশে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর বাঁ পাশে ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম ও ড. আব্দুর রাজ্জাক। আর মধ্যখানে নাজমুল হাসান পাপনের পাশে ছিলেন নতুন দুই আলোচিত সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা ও শেখ তন্ময়। শপথ শেষে সংসদের ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়ায় নতুন এমপিদের জন্য ছিল চা-চক্রের আয়োজন। এরপর সংসদ সচিবের দফতরে রক্ষিত সংসদ সদস্যদের রেজিস্টার খাতায় তারা স্বাক্ষর করেন।
এ দিকে, শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ওই এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। সংসদ ভবনে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষেত্রেও কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। আর এই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও পুরো সংসদ ভবনজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। শপথ অনুষ্ঠানভাবে সামনে রেখে সংসদ ভবনের ভেতরসহ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বাহারি রঙের ফুলের টব সারি সারি বসিয়ে সংসদ ভবনকে নতুনরূপে সাজানো হয়। সকাল থেকে সংসদের মূল ভবনের প্রধান গেট থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সামনে এমপিদের স্বাগত জানাতে দেখা গেছে সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী এমপিরা ৯ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ২৯ জানুয়ারি বসে সংসদের প্রথম অধিবেশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের গেজেট পয়লা জানুয়ারি প্রকাশ হওয়ায় ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ অধিবেশন বসবে। আর যে দিন অধিবেশন বসবে সেই দিন থেকে একাদশ সংসদের মেয়াদ শুরু হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়ানোর পর সংসদ অধিবেশন আহ্বান করবেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment