Social Icons

Wednesday, January 2, 2019

অবিলম্বে প্রহসনের নির্বাচন বাতিল নিরদলীয় সরকারের অধীনে পুনঃ ড. কামাল হোসেন

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য- ‘অবিলম্বে প্রহসনের নির্বাচন বাতিল নিরদলীয় সরকারের অধীনে পুনঃ নির্বাচন দাবি’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের দেওয়া আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির উপর বিশ্বাস করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অতীতের শত তিক্ত ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও অনেক আশা নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়।আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল, তফসিল ঘোষণার পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী, নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হবে না। মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের কিংবা গ্রেফতার করা হবে না।আপনারা অবগত আছেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর দেশব্যাপী ব্যাপক হামলায় ১৭ প্রার্থী আহত এবং প্রায় ১৪ হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক আহত হন। পাইকারি হারে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে প্রায় ১১ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৮ জন প্রার্থী কারাগারে থেকে নির্বাচন অংশগ্রহণ করেছেন।
আজ ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য সমগ্র দেশবাসী যখন প্রস্তুত, তখনই আমরা দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে একের পর এক খবর পাই যে, গতকাল রাতেই আওয়ামী দুর্বৃত্তরা এবং নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সহায়তায় নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্সে ভরে রাখে। ঠাকুরগাঁসহ দেশের বেশকিছু কেন্দ্র থেকে খবর এসেছে যে, বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের বুথ তালা মেরে রাখা হয়েছে।আজ সকাল থেকেই খবর আসছিল, দেশের প্রায় সব কেন্দ্র থেকেই ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও তাদের মারধর করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও তার নিজ কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে ধানের শীষের কোনো এজেন্ট পাননি। তাই তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমার একার পক্ষে করার কিছু নেই।’ যদিও অত্যন্ত নির্লজ্জের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে!’ অথচ সারাদেশে ব্যাপক নির্বাচনী সহিংসতায় অসংখ্য হাতাহতের ঘটনা ঘটে এবং ইতিমধ্যেই ২১ জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো : রাজশাহীতে মেরাজউদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইসরাইল মিয়া, কক্সবাজারে মো. আবদুল্লাহ, চট্টগ্রামে আবু সাদেক,
আহমেদ কবির ও দিন মোহাম্মদ, কুমিল্লায় মজিবুর রহমান ও বাচ্চু মিয়া, রাঙামাটিতে বাসের উদ্দিন, নরসিংদীতে মিলন মিয়া, বগুড়ায় আজিজুল, নাটোরে হোসেন আলী, লক্ষ্মীপুরে অজ্ঞাত এক যুবক, গাজীপুরে লিয়াকত হোসেন, লালমনিরহাটে তোফাজ্জল হোসেন ও নোয়াখালীতে নূর নবী নামে এক আনসার সদস্য, টাঙ্গাইলে হাজী আব্দুল আজিজ নামে এক বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীসহ শত শত নেতা-কর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছে এবং বেশ কজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। দৈনিক মানবজমিনের প্রধান প্রতিবেদক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য কাফি কামাল আজ সকাল ৯টায় রাজধানীর মগবাজারে বিটিসিএল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এজেন্টদের মারতে মারতে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার ছবি তুলতে গিয়ে তিনি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা মারাত্মক জখম হন। তার কপাল ফেটে যায়। তাকে দ্রুত মগবাজারের কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।এদিকে গতকাল রাত থেকে যমুনা টেলিভিশন দেখতে পারছে না দেশবাসী।কোথাও কোনো সাংবাদিককে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।কারণ সিলমারার চিত্র তারা যেন ধারণ ও সম্প্রচার করতে না পারে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গণমাধ্যমকে গলাটিপে ধরতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ব্যাপারে বার বার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল আগে থেকেই।
নরসিংদী-২ আসনের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খানের সব এজেন্টকে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বের করে দিয়েছে।ড. মঈন খান তার বাড়িতে নেতা-কর্মী ও এজেন্টদের নিয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
চাঁদপুর-১ কচুয়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট দিতে দেওয়া হয়নি।যেসব কেন্দ্রে এজেন্ট গেছে, সেসব কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়।আবার কাউকে কাউকে আঙুলে কালি লাগিয়েই ভোট না নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা, রাতেই ৮০ ভাগ ভোট কেটে রাখা হয়েছে। যে কারণে ভোটারদের কেবল কালি লাগিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লা-১০ আসনের নাঙ্গলকোটে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মুরাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যেতে চাইলে তাকে বাধা দেয়; তার পরও ভোট দিতে যেতে চাইলে বাচ্চু মিয়া (৫০) নামের এক ভোটারকে পিটিয়ে হত্যা করে।
হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী সকাল ১১টায় টেলিফোনে জানান, তার নির্বাচনী এলাকার নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলার সব কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারদের নির্দেশ দেন, ধানের শীষ প্রতীকের পুলিং এজেন্টদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে দ্রুত বের করে দিতে। নির্দেশমতো প্রিজাইডিং ও পুলিং অফিসার ও পুলিশের সহায়তায় এই নির্বাচনী এলাকায় স্বাক্ষর নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের ইতিমধ্যে বের করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা-১৯ আসনের প্রার্থী ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিন তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া এবং ভোট ডাকাতির প্রতিবাদ করায় তার উপর হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।ঢাকা-৪ ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্মক আহত হয়েছে।তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালে তার জরুরি অস্ত্রপ্রচার চলছে।
ঢাকা-৬, ৭, ৮, ৯, ৩, ১৩, ১৮, ১৯সহ ঢাকার প্রতিটি আসনেই ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।কিছু কিছু কেন্দ্র ঢুকলেও সেখান থেকে জোর করে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে।প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই আওয়ামী সমর্থকদের লাইনে মূর্তির মতো দাঁড় করে রাখা হয়েছে।ইভিএম-যুক্ত নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা জালিয়াতি ও প্রত্যারণার আশ্রয় নিয়ে অবাধে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে!দেশের ৬টি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেওয়ার কথা। কিন্তু ওই সব নির্বাচনী এলাকার অনেক কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন অকেজো থাকায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। অন্য মার্কায় কেউ ভোট দিতে চাইলে তাদেরও বের করে দেওয়া হয়।এভাবে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
দেশের প্রায় সব আসন থেকেই একই রকম ভোট ডাকাতির খবর এসেছে।ফলে এ এ পর্যন্ত বিভিন্ন দলের শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন।অবস্থায় আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে এ প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করা হোক। এ নির্বাচনের কথিত ফলাফল আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং সেই সঙ্গে নিরদলীয় সরকারের অধীনে পুনঃ নির্বাচন দাবি করছি।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates