গত শুক্রবার বিশ্ববাসী দেখলো বর্বরোচিত ভয়ঙ্কর এক ঘটনা। সেই ঘটনায় স্তব্ধ পুরো বিশ্ব। নানা দেশ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। এরই মাঝে যুক্তরাজ্যের এক খৃষ্টান নাগরিক ব্রিটিশ মুসলিমদের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম মেট্রোর একটি প্রতিবেদন এ তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, লোকটির নাম অ্যান্ড্রু গ্রেস্টোন। তিনি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের লেভেনশুলমের স্থানীয় একটি গির্জার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর তিনি ব্রিটিশ মুসলিমদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা দেন।
অ্যান্ড্রু গ্রেস্টোন বলেন, ‘আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে ভয়ংকর খবর শুনি। নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা হয়েছে। তখন আমি চিন্তা করতে থাকি, যদি ব্রিটিশ মুসলমানদের জুমার নামাজে এমনটা হতো, তবে কী ভয়ংকর হতো। এটা ভেবে আমি শিউরে উঠি।
তিনি আরো বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা কীভাবে সাড়া দিতে পারি, তা নিয়ে ভাবতে থাকি। হয় ভয়, না হয় বন্ধুত্ব দিয়ে এমন পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়া যায়। এই ভেবে আমি আমাদের এলাকার স্থানীয় মসজিদে যাই। সেখানে মুসলিমদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাইলাম, তারা আমার বন্ধু।’
অ্যান্ড্রু জানান, তিনি লেভেনশুলমের স্থানীয় একটি গির্জার সঙ্গে যুক্ত আছেন। লেভেনশুলম মিশ্র ও বহু সংস্কৃতির এলাকা। এখানকার মানুষ বন্ধুত্বের পথই বেছে নেবে।
৫৭ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু তার এলাকায় অবস্থিত মদিনা মসজিদের বাইরে একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে যান। ওই প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘তোমরা আমার বন্ধু। তোমাদের নামাজের সময় আমি পাহারা দেব।’
এমন উদ্যোগে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন অ্যান্ড্রু। তিনি বলেন, ‘প্রথমে কেউ কেউ ভেবেছিলেন, আমি মনে হয় কোনো প্রতিবাদকারী। পরে তারা প্ল্যাকার্ডের লেখা পড়ে বুঝেছেন যে আমি তাদের বন্ধু হিসেবে এখানে দাঁড়িয়েছি। তখন অনেকেই আমার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এমনকি কেউ কেউ আমার জন্য চিকেন বিরিয়ানি পাঠিয়েছেন।’
মদিনা মসজিদের ইমাম জাফর ইকবাল বলেন, শুক্রবার নামাজের সময় অ্যান্ড্রুর এই আবেগময় কাজ তিনি দেখেছেন।
ইমাম আরো বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যুক্তরাজ্যের বেশির ভাগ মানুষ অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, তারা সমাজের খুবই ক্ষুদ্র অংশ।’
হামলার পর এক নারীর মরদেহ পড়ে রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এতে ৪৯ জন নিহত এবং আরও ৪৮ জন গুলিবিদ্ধ হন।
দ্যা টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়, হামলাকারী নিজেকে ব্রেনটন ট্যারেন্ট বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। ২৮ বছর বয়সী একজন শ্বেতাঙ্গ। তাকে গ্রেফতার করে শনিবার আদালতে তোলা হয়।
এক্সপ্রেস নামে নিউজিল্যান্ডের একটি গণমাধ্যমে বলা হয়, ওই হামলাকারী অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন। দুই বছর ধরে তিনি এ হামলার পরিকল্পনা করছেন। হামলাকারী জানিয়েছেন, ইউরোপের দেশগুলোতে বিদেশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এ হামলার পরিকল্পনা করেন তিনি।
হামলার আগে ৭৩ পাতার টুইটারে একটি ইশতেহার আপলোড করেন ওই হামলাকারী। সেখানে তিনি এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে দাবি করেন। এ ছাড়া অভিবাসনের বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা জানান। তাই নিজেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বলে উল্লেখ করেন।
No comments:
Post a Comment