বিশেষ এই ভিসা ব্যবস্থা মূলত হচ্ছে ক্যাশ ফর গ্রিন কার্ড, অর্থাৎ টাকা দিয়ে গ্রিন কার্ড-এই নামেই প্রচলিত ইবি-ফাইভ ভিসা। এক মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৮ কোটির চেয়ে কিছু বেশি টাকা বিনিয়োগের পাশাপাশি বছরে অন্তত দশ জন মার্কিন নাগরিকের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রæতি দেয়া হলে এই ভিসা পাওয়া যায়। আর রিয়েল এস্টেটের মতো কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এই জমা রাখা টাকার পরিমাণ আরা কমিয়ে চার কোটি টাকার মতো করেছে মার্কিন প্রশাসন। এ সুযোগটি নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ভারতীয়রা।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মোট ৫৮৫ জন ভারতীয় আবেদনকারী এ গ্রিন কার্ড পেয়েছেন। আগের সময়ের তুলনায় এ ক্ষেত্রে ভারতীয়দের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৯৮ শতাংশ। ২১ মাস ধরে গ্রিনকার্ড থাকলে এরপর কেউ পুরোপুরি মার্কিন নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এমনিতে কাজ করার জন্য প্রয়োজন এইচ-ওয়ান বি ভিসা। কিন্তু দিন দিন এক্ষেত্রে মার্কিন নীতি আরো কঠিন করা হচ্ছে। ফলে টাকা দিয়ে গ্রিনকার্ড নিতে ভিড় করছে ভারতীয়রা। এমনকি ভারতের ধনী ব্যক্তিরা ছেলেমেয়েদের সেখানে পড়াশুনা করতে পাঠানোর পরপরই এ বিশেষ গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করে দিচ্ছেন। এর ফলে পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর তারা সহজেই আমেরিকাতে থেকে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। অন্য কোনো ব্যবস্থার জন্য তাদের আর অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এ কারণেই জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই বিশেষ গ্রিনকার্ডের।
প্রতি বছর বিদেশিদের জন্য এ ধরনের মোট ১০ হাজার ইবি-ফাইভ ভিসা নির্দিষ্ট রাখা হয়েছে। আবার বলা হয়েছে, কোনো দেশই মোট ভিসার ৭ শতাংশের বেশি পাবে না। এ কারণেই ভিয়েতনাম ও চীনের বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশি সংখ্যায় আমেরিকায় থাকতে চাইলেও সেই নীতিতে আটকে যাচ্ছেন। আর এ সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছে ভারতীয়রা।
আরো পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রে কঠিন হয়ে পড়ছে বিদেশীদের জীবন
রয়টার্স, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৫৪
রয়টার্স, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৫৪
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নতুন একটি প্রস্তাবনার ঘোষণা দিয়েছে। যার ফলে দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা ইতোমধ্যে সরকারি সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন এমন বিদেশীদের জীবন কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, যেসব অভিবাসীরা খাদ্য, বাসস্থান বা স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন তারা বোঝা হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং তাদের গ্রিন কার্ড পাওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিদেশীদের জন্য নানা ধরণের সুবিধা বন্ধ কিংবা আরো কঠোর করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর ফলে দেশটিতে বৈধভাবেও যেসব বিদেশী যাবেন বা রয়েছেন তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা, গৃহায়ণ কিংবা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রস্তাবিত ওই নীতিমালায় অভিবাসন কর্মকর্তাদের ভিসা কিংবা বসবাসের অনুমতি প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। দেশটিতে বসবাসের অনুমতি পাওয়া ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবার মতো কিছু বিষয়ে সেবা পাওয়ার আইনগত অধিকার রয়েছে। নতুন নীতিমালা হলে বিদেশীদের জন্য এসব সুবিধা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
প্রায় দু'দশক ধরে চলমান নীতির আওতায় সেখানে অনুমতি নিয়ে বসবাসরত বিদেশীরা এসব সুবিধা পেয়ে আসছিলো। এখন নতুন নীতিমালা কার্যকর হবে যারা ভিসা চাইবেন বা স্থায়ী বসবাসের আইনগত অনুমতি চাইবেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।তবে যারা নাগরিকত্বের আবেদন করবেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
সেক্রেটারি অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কার্স্টজেন নিয়েলসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যারা অভিবাসনের আবেদন করবেন; তাদের আর্থিকভাবে নিজেদের সাহায্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। অভিবাসীদের আত্মনির্ভরশীলতায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে; যাতে তারা মার্কিন করদাতাদের জন্য বোঝা না হয়। সেজন্য প্রস্তাবিত আইন কংগ্রেসে উত্থাপন করা হবে। দতবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন নীতিমালা কংগ্রেসে উত্থাপনের প্রয়োজন হবে না।
যদিও চূড়ান্ত হওয়ার আগে এর ওপর মতামত দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে এবং সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয়ে পাওয়া মতামতগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রায় তিন লাখ ৮২ হাজারের বেশি ব্যক্তি স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়ে থাকেন, আর নতুন এ নীতি তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এইচ-৪ ভিসাধারীদের ‘ওয়ার্ক পারমিট’ বাতিল করতে আগামী তিন মাসের মধ্যে আইন তৈরি হবে বলে জানিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এতে চাকরি হারাবে দেশটিতে কর্মরত অনেক ভারতীয়। কলম্বিয়ার ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ বলেছে, এইচ১বি অভিবাসীদের স্বামী বা স্ত্রী, যারা এইচ-৪ ভিসা নিয়ে আছেন, তাদের ‘ওয়ার্ক পারমিট’ বাতিল করতে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। এইচ-৪ ভিসাধারীদের ‘ওয়ার্ক পারমিট’ বাতিলের আইনটি হোয়াইট হাউসের অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অব বাজেটে (ওএমবি) উপস্থাপিত হবে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের এইচ১বি ভিসাধারীদের ৯০ শতাংশই ভারতীয় এবং তাদের বেশির ভাগই তথ্যপ্রযুক্তিকর্মী। তারা কর্মসূত্রে সপরিবারে সেখানে আছেন। এইচ১বি ভিসাধারীদের জীবনসঙ্গী এবং ২১ বছরের কমবয়সী ছেলেমেয়েদের এইচ-৪ ভিসা দেয় বারাক ওবামা প্রশাসন। এর ফলে স্বামী-স্ত্রীর দুজনের আয় তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের ব্যয় নির্বাহ করাটা বেশ সহজ হয়। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদেরকে চাকরিতে অগ্রাধিকার দেবেন তিনি। এই লক্ষ্যে এইচ১বি ও এইচ-৪ ভিসা নীতি পর্যালোচনা করবে তার সরকার।
No comments:
Post a Comment