Social Icons

Monday, March 18, 2019

মুসলিমরা প্রতিশোধ পরায়ন নয়, হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিলাম: স্ত্রী হারানো বাংলাদেশি

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলায় অল্পের জন্য প্রানে বেঁচে যান বাংলাদেশের নাগরিক ফরিদ উদ্দীন। নিজের জীবন তুচ্ছ করে অন্যদের এবং স্বামীর জীবন বাঁচাতে গিয়ে সেদিন হামলাকারীর হাতে খুন হন ফরিদ উদ্দীনের স্ত্রী হোসনে আরা।
ফরিদ উদ্দিন বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি তার স্ত্রীর হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছি, কিন্তু আমি হত্যাকারীকে ঘৃণা করি না। একজন মানুষ হিসেবে আমি তাকে ভালবাসি। কিন্তু আমি দুঃখিত, সে যা করেছে আমি তা সমর্থন করতে পারি না।’
‘আমার মনে হয় সে (হামলাকারী) তার জীবনে কখনো আঘাত পেয়েছে, সেই আঘাত পেয়ে সে ভাল কিছু না করে এমন জঘন্য কাজ করেছে।’
তিনি আরো বলেন, যারা সন্ত্রাসী হামলা করে তারা চায় জনগণকে ভয় পাক। তারা এক জাতি থেকে অন্য জাতির মধ্যে বিদ্বেষ লাগাতে চায়।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, তারা (সন্ত্রাসীরা) হয়ত আশা করে মুসলিমদের ওপর হামলা করলে, মুসলিমরা প্রতিশোধ নিবে, কিন্তু আমরা মুসলিম নেতারা বলছি তা কখনো হবে না। মুসলিমরা এমন না।
আমরা মুসলিমরা কাউকে ভয় পেতে দিব না এবং কাউকে ঘৃণা করতে হবে এটাও ছড়াতে দিব না।
তিনি আরো বলেন, আমার তার (হামলাকারীর) বিরুদ্ধে কোনো আক্রোশ নেই। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তার জন্য দোয়া করছি আল্লাহ যেন তাকে সঠিক পথ দেখায় এবং একদিন অন্যের জীবন রক্ষাকারী হয়ে ওঠে সে।
গত শুক্রবারে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে হামলায় ৫০ জন নিহত হয়। হামলায় গুরুতর আহত হয় ৪০ জনের বেশি। নিউজিল্যান্ডের পুলিশ জানায়, অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন টেরেন্ট একাই হামলা চালিয়েছে।
ইতিমধ্যে ওই হামলাকারীকে শনিবার দেশটির আদালতে হাজির করা হয়েছে। অভিযুক্ত করা হয়েছে হত্যা মামলায়। বর্তমানে ওই হামলাকারী রিমান্ডে আছে।
ফরিদ উদ্দীন বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কীভাবে তার এবং অন্যদের জীবন বাঁচাতে সেদিন হোসনে আরা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন।
প্রতি শুক্রবারের মতো সেদিনও জুমার নামাজ পড়তে স্ত্রী হোসনে আরাকে সাথে নিয়ে আল নুর মসজিদে গিয়েছিলেন ফরিদ উদ্দীন।
তাকে চলাচল করতে হয় হুইলচেয়ারে। কারণ বেশ কয়েক বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়েছেন।
মসজিদের বাইরে গাড়ি রেখে তারা স্বামী-স্ত্রী ভেতরে ঢুকেছিলেন। হুইলচেয়ার ঠেলে স্বামী ফরিদ উদ্দীনকে পুরুষদের মূল হলঘরের দিকে পৌঁছে দিয়ে হোসনে আরা চলে গেলেন মেয়েদের প্রার্থনা কক্ষে।
তারপরই ঘটলো সেই ভয়ংকর ঘটনা, মসজিদের ভেতরে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করলো হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্ট।
‘গুলি শুরু হয়েছে হলওয়ে থেকে। হলওয়ের এক সাইডে ছিল লেডিস রুম। আমার স্ত্রী ওখানে বেশ কিছু নারী ও শিশুদের বাঁচানোর জন্য ওদের গেট দিয়ে বের করে মসজিদের বাম সাইডে একটা নিরাপদ জায়গায় তাদেরকে রেখে ফিরে আসছিল আমাকে সাহায্য করার জন্য। ও যখন ফিরে আসতেছিল তখন গেটের কাছে ওকে গুলি করা হয়েছে।’
নিজের স্ত্রীকে হারানোর শোক এখনো সামলে উঠতে পারেননি মিস্টার ফরিদ উদ্দীন এবং তার পরিবার। কিন্তু তার মধ্যেও অন্যদের বাঁচাতে স্ত্রীর এই আত্মত্যাগ তাকে কিছুটা হলেও মানসিক প্রশান্তি দিয়েছে।
তিনি বলেছেন আমার স্ত্রী ‘অত্যন্ত জনদরদী মহিলা।’ মানুষকে বাঁচানোর জন্য তিনি যেভাবে প্রাণ দিয়েছেন এটা খুবই গর্বের বলে তিনি মনে করেন।
‘ও যেরকম ভাল মানুষ ছিল - ও কিছু ভাল কাজ করে চলে গেছে। এখন ও হাসতেছে। কিন্তু মানুষ ওর জন্য কাঁদবে।’

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates