হাতে বড় আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে গালাগাল করতে করতে মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়ে সামরিক কায়দার জ্যাকেট আর মাথায় হেলমেট পরিহিত অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্ট।
জুমার খুতবা শুনতে থাকা মুসল্লিদের লক্ষ্য করে চালাতে থাকে নির্বিচার গুলি। যারা পালানোর চেষ্টা করেন তাদের লক্ষ্য করেও গুলি চালাতে থাকে। রাইফেলের গুলি শেষ হয়ে গেলে বেরিয়ে আসে। আরেকটি অস্ত্র নিয়ে আবার ঢুকে পড়ে মসজিদে।
আহত হয়ে যারা কাতরাচ্ছিলেন গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তাদের। লুকিয়ে থাকা মুসল্লিদের খুঁজে খুঁজে গুলি করে। বাইরে বেরিয়ে সামনে যাকে পাওয়া যায় গুলি করে চেপে বসে গাড়িতে। গুলি চালাতে চালাতে চলে যায় গন্তব্যে। প্রায় ১৭ মিনিট ধরে চলে এ হত্যালীলা।
ক্রাইস্টচার্চের ডিন্স এভিনিউতে আল নূর মসজিদের দিকে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় ফেসবুকে ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ (সরাসরি সম্প্রচার) শুরু করে বন্দুকধারী।
এতে দেখা যায়, চালকের পাশের আসনে তিনটি রাইফেল। বেশ কিছু ম্যাগাজিন (গুলি) ও বিভিন্ন সরঞ্জাম। এগুলোর গায়ে মুসলিমবিদ্বেষী বিভিন্ন বাক্য লেখা। একটি পার্কিংয়ের কাছে গাড়ি পার্ক করে সে। গাড়ি থেকে নেমে ব্যাকডালা (পেছনে মালপত্র রাখার অংশ) খোলে। সেখানে ছিল ম্যাগাজিন ভর্তি দুটি আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, গুলি ও পেট্রলের ক্যান।
একটি রাইফেল হাতে নিয়ে সে বলে, ‘তা হলে শুরু হয়ে যাক আজকের পার্টি।’ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মসজিদের দিকে হাঁটতে শুরু করে। মসজিদে ঢোকার মুখে একজনকে পেয়েই গুলি করে। এরপর ভেতরে ঢুকে মুসল্লিদের লক্ষ্য করে নির্বিচার গুলি চালাতে থাকে।
পার্কিংয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে গুলি ভরে নেয়। এরপর ফের মসজিদে ঢোকে। যেসব মুসল্লি আহত হয়ে মেঝেতে পড়েছিলেন, তাদের ওপর ফের গুলি চালায়। কোথাও কেউ লুকিয়ে আছে কিনা দেখে নেয়।
হামলা চালানোর কিছুক্ষণ আগে টুইটারে সে ৭৪ পৃষ্ঠার একটি ইশতেহারও (তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য) প্রকাশ করে। আর নিজের ফেসবুক পেজেই সে সরাসরি সম্প্রচার করেছিল ওই হামলা। হামলার পর ফেসবুক ও টুইটার কর্তৃপক্ষ তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। ফেসবুক ও টুইটারের পাশাপাশি ইউটিউবসহ বিভিন্ন সাইট হামলার পুরো ভিডিও প্রদর্শন বন্ধ করে দেয়।
উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীর হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪৮ জন। নিহতদের মধ্যে তিন বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে ড. আব্দুস সামাদ নামে একজন অধ্যাপক রয়েছেন। হামলার শিকার 'মসজিদে নুর'-এর মোয়াজ্জিন হিসেবেও দায়িত্বপালন করতেন ড. সামাদ।
No comments:
Post a Comment