Social Icons

Saturday, March 16, 2019

১৪ বছরের আগে সন্তানের হাতে মোবাইল নয়

১৪ বছরের আগে শিশুর হাতে কোনোভাবেই মোবাইল ফোন নয়। বলছেন তথ্য-প্রযুক্তির সম্রাট বিল গেটস! তার মতে, ‘‘মা-বাবার দায়িত্ব পালন খুব সহজ কাজ নয়। অভিভাবকরাই ঠিক করবেন একজন শিশুর বেড়ে ওঠা কেমন হবে। তাই শিশুর হাতে কখন মোবাইল তুলে দেবেন, সে সিদ্ধান্তও অভিভাবকের।’’ 
নিজের সন্তানদের ক্ষেত্রেও এই বিষয়ে যথেষ্ট কঠোর ছিলেন বিল গেটস। তার তিন সন্তানের বয়স যথাক্রমে ২০, ১৭ ও ১৪। এদের কেউই হাইস্কুলে ওঠার আগে মোবাইল হাতে পাননি। এর আগেও সন্তানের হাতে মোবাইল তুলে দেয়া নিয়ে একই কথা জানিয়েছিলেন বিল।  
শিশু কাঁদছে। তাকে ভোলাতে মা হাতে তুলে দিলেন মোবাইল। মা-বাবা ব্যস্ত জরুরি কাজে, শিশুর দৌরাত্ম্য ঠেকাতে হাতে গুঁজে দিচ্ছেন মোবাইল গেম। আমাদের চারপাশে এ ছবি নতুন নয়। যদিও চিকিৎসকরা বরাবরই শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দেয়ার বিরোধিতাই করে এসেছেন।
২০১৬-য় ‘‘কিডস অ্যান্ড টেক: দ্য ইভলিউশন অব টুডে’জ ডিজিটাল নেটিভস’’ শীর্ষক একটি রিপোর্টে প্রকাশ, সারা পৃথিবীতে যে সব শিশু মোবাইল হাতে পায়, তাদের গড় বয়স ১০.৩ বছর। সোশ্যাল সাইট ব্যবহারকারী শিশুদের গড় বয়স ১১.৪ বছর। যে তথ্য যথেষ্ট চিন্তার বলেই জানাচ্ছেন এই শহরের মনোবিদরাও।
চিকিৎসকরা বরাবরই কমবয়সীদের হাতে মোবাইল তুলে দেয়ার বিরোধিতা করে এসেছেন। অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি শিশুদের মধ্যে নানা রকম অসুখের জন্ম দেয় বলেই দাবি তাদের।
সুতরাং সন্তানের হাতে মোবাইল দেয়ার আগে দুইবার ভাবুন।

শিশুর ওপর প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব
ডা: হালিমা আক্তার

নিঃসন্দেহে বলা যায়, বিশ্বের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শীর্ষ অবস্থায় এবং এ উন্নয়নের পরশে মানুষের জীবনযাত্রায় হয়েছে লক্ষণীয় পরিবর্তন; এনেছে গতি ও শৌখিনতা। কিন্তু এর অপব্যবহারে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদের ওপরও নানাভাবে এর কুপ্রভাব পড়ছে।
উন্নত বিশ্বের শিশুদের মতো বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যেও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি আসক্তি বাড়ছে। আল্ট্রাপ্রযুক্তির বিভিন্ন উপকরণে আসক্তির কারণে শিশু-কিশোরদের প্রযুক্তির প্রতি এ ক্রম-আসক্তি পরিপূর্ণ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। পরিবারে মা ও শিশুর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। মায়ের জন্য তারা আলাদা সময় বের করতে পারছে না। যার ফলে পারিবারিক প্রথাগত শিক্ষা, শিষ্টাচার, ভ্যালুজ এডুকেশন তথা ধর্মীয় ও সামাজিক আচরণ অর্জন থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
অন্য দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দিন দিন শিশু ও কিশোররা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অপরিণত বয়সেই বেশির ভাগের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। বর্তমানে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ভিডিও গেম, মোবাইল, ল্যাপটপ ও বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে শিশুসহ আবালবৃদ্ধবনিতা প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ বেড়েই চলছে। ফলস্বরূপ পরিবার-পরিজনদের মধ্যে আন্তরিকতা কমে যাচ্ছে। বাবা-মায়ের অজান্তেই সন্তান কাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখছে, তা জানারও সুযোগ থাকছে না।
শিশু-কিশোরদের মধ্যে অধিক মাত্রায় ভিডিও গেম বা ফেসবুকের মতো ভার্চুয়াল লাইফে সংশ্লিষ্টতার কারণে ধীরে ধীরে তা আসক্তিতে পরিণত হয়। বাড়ন্ত বয়সে এ অস্বাভাবিক আকর্ষণ ক্রমান্বয়ে নেশায় পরিণত হয়। রাতের পর রাত জেগে এসব কাজে মগ্ন থাকায় পরদিন সকালে ক্লাসে ভীষণ অমনোযোগী থাকে এবং মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। বাবা-মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করে না। সে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে নিজেকে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে।
বিরতিহীনভাবে এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিশুদের চোখ ও মস্তিষ্কের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ে। রেডিয়েশনের প্রভাবে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করে না। তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কোনো কিছুতেই আগ্রহ থাকে না। কোনো কায়িক পরিশ্রম কিংবা খেলাধুলা তারা করতে চায় না। সারাক্ষণ আঙুল, চোখ ও মস্তিষ্ক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তাদের মনের চাহিদা পূরণ করতে চায়।
অন্যদিকে বিরামহীনভাবে ভিডিও গেম খেলার কারণে কনভালশন তথা খিঁচুনি কিংবা মৃগীর মতো স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় শুয়ে অথবা বসে ভিডিও গেমস বা ফেসবুকিং করার ফলে হাঁটু ও কোমরে ব্যথা দেখা দেয়। কায়িক পরিশ্রমের খেলাধুলা না করায় অল্প বয়সে তাদের শরীরে চর্বি জমে যায়। এতে করে লিভার, কিডনিসহ হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশুরা এখন মা-বাবার মনোযোগ পেতে তাদের প্রিয় ডিভাইসগুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শন পার্কার স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছেন, এই প্ল্যাটফর্ম আসক্তিপূর্ণ করে বানানো হয়েছে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠার সময় তার কোনো ধারণা ছিল না যে তিনি কী করছেন। তিনি আরো বলেন, শুধু সৃষ্টিকর্তা জানেন, এটি আমাদের শিশুদের মস্তিষ্কের সাথে কী করছে?
ফেসবুক এমন প্রথম অ্যাপ্লিকেশন, যে অ্যাপ্লিকেশনগুলো বানানোর পেছনে পুরো চিন্তাধারা ছিল, আমরা কিভাবে আপনার যতটা বেশি সম্ভব সময় ব্যয় করব এবং সচেতন মনোযোগ আকর্ষণ করব। আর এ জন্যই তিনি নিজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছেন। মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এতটা প্রযুক্তিপণ্যের ওপর আসক্তি এক ধরনের মানসিক রোগ। বিকারগ্রস্ত মানসিকতা নিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে এই শিশু-কিশোররাই বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। তাদের কচি মস্তিষ্কে বিভিন্ন ইনোভেটিভ ক্রাইমপ্ল্যান করে নানা ঘটনার সাথে যুক্ত হচ্ছে। যার ফলে আশঙ্কাজনকভাবে সমাজে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে।
আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যৎ ও জাতির মেরুদণ্ড। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্বের প্রশ্নেই আমাদের বোধোদয় হওয়া উচিত। মূলত প্রযুক্তিপণ্য ও ফেসবুকই সব সমস্যা নয়, আমরা কিভাবে এগুলো ব্যবহার করছি, সেটাই অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি আসক্তি দূর করতে জনসচেতনতা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বাবা-মায়ের যেমন দায়দায়িত্ব সন্তানেরা কী করছে সেদিকে নজর রাখা; তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটানো, সাহচর্য প্রদান; তাদের ভার্চুয়াল প্লেগ্রাউন্ডের পরিবর্তে খেলার মাঠের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। যাতে তাদের মানসিক বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈহিক গঠন ও সামাজিক জ্ঞানে পরিপূর্ণতা আসে। তাদের বোঝানো যে আপনিই তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও হিতাকাক্সক্ষী। সব কিছু সব বয়সের জন্য নয়- এ বাস্তবতা তাদের নিকট খোলাসা করতে হবে। এ জন্য শিশু ও কিশোরদের সাথে নিয়মিত কাউন্সেলিং জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও মহান দায়িত্ব রয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল ও কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মৌলিক ধারণা দিয়ে সচেতন করে গড়ে তুলতে। সেই সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় দীক্ষিত করে সত্যিকারের মানুষ করে তুলতে হবে।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates