ভেনিজুয়েলায় নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ আর অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। এর আগে বিক্ষোভের সুযোগে গত ২৩ জানুয়ারি নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুয়াইদো।
মূলত এর পর থেকেই দেশটি দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। একপক্ষ বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোপন্থী। মাদুরোর পক্ষে রাশিয়া, চীন, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ রয়েছে। মাদুরোর পাশে আছে দেশের সেনাবাহিনীও। অন্য দিকে হুয়ান গুয়াইদোও পিছিয়ে নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোসহ ৫০টিরও বেশি দেশ সমর্থন দিয়েছে তার প্রতি।
আর তাই গুয়াইদোর নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন এখন তুঙ্গে। অব্যাহত আন্দোলনের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান নেই, ব্যাপক মূল্যস্ফীতির ফলে অর্থনৈতিকভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার দেশটির জনগণ।
এরই মধ্যে গত কয়েক দিন ধরে অন্ধকারে ভেনিজুয়েলা। দেশের মোট ২৩টি প্রদেশের ১৫টিই বিদ্যুৎবিহীন। দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্র দখলে নিয়ে বিকল করে দিয়েছে বিরোধীরা। ভেনিজুয়েলার বিদ্যুৎমন্ত্রী লুই মোত্তা দোমিনগুয়েজ বলেছেন, ‘সরকারকে চাপে ফেলতেই বিদ্যুৎকেন্দ্র বিকল করে দিয়েছে বিরোধীরা। এটা বৈদ্যুতিক যুদ্ধ।’
আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বিরোধী নেতা ও স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদো। তিনি বলছেন, বছরের পর বছর বিনিয়োগের অভাব ও দুর্নীতিই ভয়াবহ এ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ। এই বিদ্যুৎহীনতার জন্য হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে না পারায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে কোনো সেবা নেই। দেশের সেরা হাসপাতালগুলোর এই অবস্থা হলে, তাহলে প্রত্যন্ত এলাকায় কী অবস্থা।
লাতিন আমেরিকার অন্যতম প্রধান পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভেনিজুয়েলার বলিভিয়া রাজ্যের গুরি পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমস্যার কারণেই দেশটির ২৩টি প্রদেশের ১৫টিই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। আর কয়েক দশকের মধ্যে লাতিন আমেরিকার দেশটিতে দেখা দেয়া সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বিরোধীদের দায়ী করছেন। তাদের ‘সৃষ্ট নাশকতাতেই’ গুরি পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সরবরাহে বিঘœ ঘটেছে বলেও অভিযোগ তার। এর পেছনে ‘সাম্রাজ্যবাদের হাত আছে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আর সাইবার হামলার কারণে গুরি পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কারাকাসে তাদের দূতাবাস থেকে অবশিষ্ট সব কূটনৈতিক স্টাফকে প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। গত সোমবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও এ কথা জানান। ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার প্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এক টুইট বার্তায় পম্পেও বলেন, ‘ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দূতাবাসের কূটনৈতিক স্টাফদের উপস্থিতি মার্কিন নীতির সাথে সাংঘর্ষিক।’
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ধসে পড়া অর্থনীতির ভেনিজুয়েলায় বিদ্যুতের আসা-যাওয়া এখন খুবই স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি দেশটির ৩০ লাখেরও বেশি নাগরিককে দেশ ছেড়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
এর আগের যুুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণবাহী সামগ্রী ভেনিজুয়েলায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তা নিয়ে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দেশটির জনসাধারণ।
চলমান এসব সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে দেশটির জনগণ এখন সত্যিই অসহায় হয়ে পড়েছেন। সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ মাদুরো সরকার। আর গুয়াইদোর কাছেও জনগণ আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে দেশটির জনগণের ভাগ্যে কি আছে তা একমাত্র সময়ই বলে দেবে।
No comments:
Post a Comment