বিভিন্ন দেশ থেকে পালিয়ে এসে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএসে যোগ দেওয়া অনেকে এখন নিজ দেশে ফিরতে চান। কিন্তু আইএসে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিল এবং দেশে ফিরতে বাধা দিচ্ছে সেসব দেশের সরকার। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকার সে দেশ থেকে পালিয়ে সিরিয়া গিয়ে আইএসে যোগ দেওয়া নাগরিকদের শর্তসাপেক্ষে দেশে ফেরার অনুমতি দিতে চায়। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক অনলাইন প্রতিবেদনে এই খবর জানানো হয়েছে।
মার্কিন সমর্থনপুষ্ট পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দিস এবং আরব মিলিশিয়াদের সম্মিলিত বাহিনী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (এসডিএফ) আইএস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তারা এখন পূর্ব সিরিয়ার বাগহোজ গ্রামে আটকে পড়া ১৩ মালয়েশিয়ান নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কাজ করছে।
মালয়েশিয়ার ১৩ নাগরিকের মধ্যে একজন হলেন ২৯ বছর বয়সী লিডিয়া। চার বছর আগে মালয়েশিয়া থেকে পালিয়ে গিয়ে আইএসে যোগ দেন এই নারী। এসডিএফের একটি আশ্রয় ক্যাম্পে আছেন ওই নারী।
দুই সপ্তাহ আগে লিডিয়া একটি বার্তা পাঠায় তারা বাবাকে। সেখানে তিনি জানান, তিনি আইএস অধ্যুষিত এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন এবং দেশে ফিরতে চান। দেশে ফেরার জন্য বাবার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন লিডিয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লিডিয়ার বাবা আল জাজিরাকে বলেন, আমি সব সময় আশায় থাকতাম যে একদিন লিডিয়া আমাকে বলবে যে সে বাড়ি ফিরতে চায়।
সিরিয়ায় আটকে পড়া ১৩ মালয়েশিয়ান নাগরিকদের ফেরত নিয়ে আসার বিষয়ে দেশটির পুলিশের বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান আইয়ুব খান বলেন, আমরা লিডিয়াসহ আটকে পড়া সকলকে ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু যেহেতু তাদের ফিরিয়ে আনার সাথে বিভিন্ন দেশের অনেক পক্ষ জড়িত সে কারণে এই বিষয়টি একটু কঠিন।
মালয়েশিয়া বলছে, আইএসে যোগ দেওয়া নাগরিকদের ফেরত নিয়ে আসলে তাদেরকে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে। তাদেরকে পুরোপুরি তল্লাশি করা হবে এবং এক মাস সরকার পরিচালিত পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকতে হবে।
কাউন্টার টেরোরিজমের প্রধান আইয়ুব খান বলেন, সেখানে কাউকে আটক করে রাখা হবে না। তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা তাদের প্রত্যেককে তল্লাশি ও তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করবো। এছাড়া ধর্মীয় নেতা ও মনোবিদ দিয়ে তাদের মানসিক অবস্থা এবং চিন্তাধারা যাচাই করা হবে।
তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিদেশী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করবো। যদি তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলে যে তারা আইএসে যোগ দিয়েছিল তাহলে তাদেরকে আদালতের মুখোমুখি করা হবে।
এখন পর্যন্ত ১১ মালয়েশিয়ার নাগরিক সিরিয়া থেকে দেশে ফিরেছে তাদের মধ্যে আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করে শাস্তি দেয়া হয়েছে। আর তিন জনের মধ্যে তিন ও পাঁচ বছর বয়সী দুজন শিশু এবং একজন নারী রয়েছে। ওই নারী এখন সরকারের পুনবার্সন কেন্দ্রে আছে এবং কিছুদিন পর সে তার পরিবারের কাছে ফেরত যাবে। তবে তিনি নজরদারিতে থাকবেন।
সিরিয়া এবং ইরাকে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এখন প্রায় নির্মুল হতে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে এখনো অনেক মালয়েশিয়ান নাগরিক আছে যারা আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে চায় বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার পুলিশ।
আইয়ুব খান বলেন, আমরা সকলের ওপর নজর রাখছি। অনেকে ফিলিপাইনে মিন্দানাওতে আছে যারা সিরিয়ায় যেতে পারেনি। কিন্তু সেখানকার জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সাথে আইএসের সংযোগ আছে। সে কারণে এটাও আমরা নজর রাখছি।
মালয়েশিয়ার কাউন্টার টেরোরিজমের এই কর্মকর্তার দেয়া তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৫১ জন মালয়েশিয়ার নাগরিক সিরিয়ায় রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৭ শিশুও রয়েছে।
No comments:
Post a Comment