Social Icons

Monday, March 4, 2019

কাশ্মিরে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, পাইলটকে পিটিয়ে হত্যা

তাদের উদ্দেশ্য একই। দেশ, মাতৃভূমির জন্য লড়াই। দায়িত্ব-কর্তব্য, এমনকি, পদমর্যাদাও অভিন্ন। কিন্তু পরিণতি হল ভিন্ন। একজন বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন। অন্য জন দেশের জন্য প্রাণ দিলেও সেই বীরত্ব কার্যত দেখানোর উপায় নেই।
প্রথম জন ভারতীয় বিমান সেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। অন্য জন শাহজাজ উদ্দিনও উইং কমান্ডার, তবে পাক বিমান সেনার। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়া পর পাক সেনার হাতে ‘বন্দি’ হয়েও ঘরে ফিরেছেন অভিনন্দন। কিন্তু একই ভাবে নিজের দেশ পাকিস্তানে যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার পর নিরাপদে অবতরণ করেও প্রাণ বাঁচাতে পারলেন না শাহজাজ।
পাকিস্তান অংশের কাশ্মীরে গণপিটুনিতেই শাহজাজের মৃত্যু হয়েছে। অভিনন্দনের পরিবার যেখানে খুশির জোয়ারে ভাসছে, শাহজাজের পরিবারে তখন শুধুই অন্ধকার হাহাকার। ঘটনা কী ঘটেছিল? গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাক বিমান সেনার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায়। পাল্টা প্রতিরোধে নামে ভারতীয় মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। এই যুদ্ধবিমানেই ছিলেন অভিনন্দন।
পাকিস্তানের পক্ষে একটি এফ-১৬ বিমানে ছিলেন শাহজাজ। কার্যত ধাওয়া করে ওই পাক এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করেন অভিনন্দন। কিন্তু পাক সেনার গোলায় তার বিমানটিও ধ্বংস হয়। ফলে তিনি বিমান থেকে প্যারাশ্যুট নিয়ে নামতে বাধ্য হন এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মাটিতে নেমে পড়েন।
তার পর পাক সেনার হাতে ‘যুদ্ধবন্দি’ হওয়া, কূটনৈতিক চাপে পাকিস্তানের অভিনন্দনকে ফেরতের সিদ্ধান্ত এবং তার দেশে ফেরার বাকি গল্পটা সবার জানা। দেশে ফেরার পর তার দেশনায়কের সম্মান-মর্যাদা পাওয়া, দেশজুড়ে উন্মাদনার কথাও বহুল প্রচারিত।
অন্যদিকে শাহজাজের কি হলো? বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মতে, ওই দিন অভিনন্দন শাহজাজের বিমানকে ধ্বংস করার পর একই ভাবে বিমান থেকে বেরিয়ে প্যারাশ্যুট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। নির্বিঘ্নে নেমেও পড়েছিলেন মাটিতে। এবং সেই পাকিস্তান অংশের কাশ্মীরেই। কিন্তু অভিনন্দনের মতো সৌভাগ্য হয়নি শাহজাজের।
ওই দিন অভিনন্দনের মতোই শাহজাজকেও ভারতীয় বিমান সেনার পাইলট ভেবেছিল পাকিস্তান অংশের কাশ্মীরের জনতা। তাকেও বেধড়ক মারধর করে তারা। কিল, চড়, লাথির পাশাপাশি পাথর ছুড়ে শাহজাজকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। তারপর পাক-সেনা তাকে উদ্ধার করে সেনা হাসপাতালে ভর্তি করায়।
তবে শাহজাজের দুর্ভাগ্য এতটাই যে, পাক সেনাও তার পরিচয় জানার চেষ্টা করেনি। ওই গণপিটুনির জেরেই মৃত্যু হয় শাহজাজের। কিন্তু পরে যখন পাক সেনা জানতে পারে শাহজাজ তাদেরই পাইলট, তখন সব শেষ। সেনা হাসপাতালে মারা গিয়েছেন শাহজাজ। প্রাথমিক ভাবে সেই খবরের পিছনে ভিত্তি এবং যুক্তিও রয়েছে।
কারণ ২৭ ফেব্রুয়ারি পাক-ভারত আকাশ যুদ্ধের পর পাক সেনার মুখপাত্রা মেজর জেনারেল আসিফ গফুর দাবি করেন, ‘পাক সেনা ভারতের দুই পাইলটকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং তাকে পাকিস্তানের কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই অবস্থান পাল্টে ইমরান খানের সরকার জানান, একমাত্র অভিনন্দন বর্তমানকেই তারা বন্দি করেছে। ফলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং কূটনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, প্রথমে শাহজাজকেও ভারতীয় বিমান সেনার পাইলট ধরে নিয়েই পাকিস্তান প্রথমে ভারতীয় দুই পাইলটকে আটক করার কথা বলে।
আবার পাক-সেনা বা সরকারের পক্ষে এখনও দাবি করা সম্ভব নয় যে, পাক জনতার গণপিটুনিতেই শাহজাজের মৃত্যু হয়েছে। কারণ, তাতে নিজেদের বর্বরতাই সামনে চলে আসবে। আবার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকা বা হামলার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে ইসলামাবাদ (যদিও ভারতীয় ভূখণ্ডে মেলা যুদ্ধবিমানের ভগ্নাবশেষে এফ-১৬-এর প্রমাণ দিয়েছে ভারত)। ফলে সেই এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের উইং কমান্ডার যুদ্ধে গিয়ে মারা গিয়েছেন, এটা স্বীকার করলে দ্বিচারিতাও প্রকাশ্যে চলে আসবে।
কিন্তু পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত লন্ডনের আইনজীবী খালিদ উমর সংবাদ মাধ্যমে সেই খবর কার্যত নিশ্চিত করেছেন। তার দাবি, পাক সেনার এক পদস্থ কর্তা তাকে জানিয়েছেন, অভিনন্দনের মিগ-২১ বাইসন এবং পাকিস্তানের এফ-১৬ প্রায় একই সময়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভেঙে পড়ে। কিন্তু পাক সেনা বা সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম দিকে তাদের পরিচয় জানার চেষ্টাই হয়নি।
তবে পরে জানা গিয়েছে, ১৯ স্কোয়াড্রন (শার্দিল)-এর উইং কমান্ডার। এবং তিনি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের পাইলট। কাকতালীয় ভাবে অভিনন্দনের মতোই তিনিও বিমান সেনা পরিবারের সদস্য। তার বাবা এয়ার মার্শাল ওয়াসিমউদ্দিন পাক বিমান সেনার ডেপুটি চিফ অব এয়ার স্টাফ (অপারেশনস)। দেশের জন্য প্রাণ দিয়েও এমন এক বিমান সেনার পরিবার আপাতত কান্নায় ডুবেছে নীরবে-নিভৃতে।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates