ওমানের মাসকাট থেকে সম্প্রতি একটি ফ্লাইট চট্টগ্রামে এলে অভ্যন্তরীণ যাত্রী হিসেবে সেটিতে ওঠেন মহিউদ্দিন নামে এক যাত্রী। পরবর্তী সময়ে ওই ফ্লাইট ঢাকায় এলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল পার হওয়ার সময় ৩০টি স্বর্ণের বারসহ আটক হন তিনি। শাহজালাল বিমানবন্দরে এ ধরনের আটকের ঘটনা ঘটছে নিয়মিতই।
শুল্ক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আসা ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকায় পৌঁছার পর আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীরা আলাদা গেট দিয়ে বের হন। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা তল্লাশির মুখে পড়লেও অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের তল্লাশি তেমন করা হয় না। এ সুযোগটিই নেয় চোরাচালান চক্র। দেশের বাইরে থেকে আসা চোরাচালান চক্রের সদস্যরা অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের কাছে চালান হস্তান্তর করে।
চোরাচালানের পাশাপাশি একই কারণে নিরাপত্তার হুমকিও থাকছে। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি খেলনা পিস্তল ও বোমাসদৃশ বস্তু দিয়ে ঢাকা থেকে দুবাইগামী একটি উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কমান্ডো অভিযানে নিহত হওয়া ছিনতাই চেষ্টাকারী মাহাদী ওরফে পলাশও ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটটিতে উঠেছিলেন অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী হয়ে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, আন্তর্জাতিক যাত্রীদের যেভাবে দেখা হয়, অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের ক্ষেত্রে তা হয়তো খুব শক্তভাবে দেখা হয় না। এ কারণে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ যাত্রী এক ফ্লাইটে মিলে যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। দুই ধরনের যাত্রী একই ফ্লাইটে এভাবে যাওয়া উচিত নয়। কারণ চোরাচালানসহ নানা অসাধু চক্র এর সুযোগ নিতে পারে। কেউ এক নামে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে আরেক নামে দুবাই চলে যাবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? যাত্রী, পাসপোর্ট অদল-বদলের ঝুঁকিও থাকে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী রুটগুলোয় চট্টগ্রামের যাত্রী বেশি হওয়ায় সেগুলোকে ট্রানজিট দেয়া হয় চট্টগ্রামে। এ কারণে আন্তর্জাতিক রুটের এসব ফ্লাইটের ফাঁকা থাকা আসনে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী বহন করে আসছে বিমান। বিমানের মধ্যপ্রাচ্যের এসব রুটে মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম-আবুধাবি-চট্টগ্রাম-ঢাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাই-চট্টগ্রাম-ঢাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাসকাট-চট্টগ্রাম-ঢাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম-দোহা-চট্টগ্রাম-ঢাকা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-জেদ্দা-চট্টগ্রাম-ঢাকা হয়ে চলাচল করছে। এছাড়া মাসকাট-সিলেট-ঢাকা এবং লন্ডন-সিলেট-ঢাকা রুটেও অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন করে বিমান।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব রুটের যাত্রীর ক্ষেত্রেই নিরাপত্তায় ছাড় দেয় না কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরীণ যাত্রীর ক্ষেত্রে ফটো আইডি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্যদিকে কোনো ফ্লাইট যখন বিদেশ থেকে আসে তখন সে যাত্রীকে ওই দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আসতে হয়। সারা বিশ্বে অনেক এয়ারলাইনসই একই ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী পরিবহন করছে। এয়ারলাইনসের ব্যবসায়িক দিক বিবেচনা করেই এটা করা হয়। নিরাপত্তার জন্য এটি কোনোভাবেই দায়ী নয়।
বিমানের মতো আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন করে আসছে আরেক বেসরকারি এয়ারলাইনস রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এয়ারলাইনসটির ঢাকা-চট্টগ্রাম-ব্যাংকক-চট্টগ্রাম-ঢাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম-দোহা-চট্টগ্রাম-ঢাকা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাসকাট-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন হচ্ছে।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) সোহেল মাজিদ এ বিষয়ে বলেন, ব্যবসায়িক দিক পর্যালোচনা করেই রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বিদ্যমান রুটগুলো পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মূল প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হওয়ায় চট্টগ্রামকে সব সময়ই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। চট্টগ্রাম থেকে ব্যাংকক রুটে রিজেন্টই প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। রুটটি লাভজনকও। একইভাবে কলকাতার ক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কলকাতা-চট্টগ্রাম-কলকাতা-ঢাকা রুটটিও বেশ জনপ্রিয়।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী একই ফ্লাইটে গেলেও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখভালের জন্য সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। যাত্রীদের চেকিংয়ের বিষয়গুলোও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায়।


No comments:
Post a Comment