সমুদ্রের নীল জলরাশিতে বিচ্ছিন্ন অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। দেশটির ভেলেনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে অন এরাইভাল ট্যুরিস্ট ভিসার লাইনে দাঁড়ালে দেখা মেলে ইউরোপিয়ান, এশিয়ানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ট্যুরিস্টদের। কিন্তু তার ঠিক অপর পাশেই ওয়ার্কিং ভিসার লাইনে ট্যুরিস্টদের চেয়েও বেশি সংখ্যক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এদের ৯০ শতাংশই বাংলাদেশের নাগরিক।
মালদ্বীপের সাড়ে তিন লাখ নাগরিকের মধ্যে এখন লাখ খানেকই বাংলাদেশি। তারা কেউ ব্যবসা করছেন, কেউ হোটেল-রেস্টুরেন্টে রান্নার কাজ করছেন। আবার কেউবা হোটেলে ম্যানেজার, কেউ ওয়েটার বা হোটেল বয়। এ ছাড়া মালদ্বীপের সড়কগুলোতে বিভিন্ন সুভিনিরের দোকান এবং খাবার দোকান এমনকি সাগরে ভেসে থাকা বিলাসবহুল ইয়োটেও বাংলাদেশিদেরকে কাজ করতে দেখা গেছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশিদের অবস্থা খুব একটা ভালো না বলে জানান মালদ্বীপ প্রবাসী হৃদয় চন্দ্র সূত্রধর।
মালদ্বীপে বর্তমান বাংলাদেশিদের অবস্থা সর্ম্পকে বলতে গিয়ে তিনি ভয়েস বাংলাকে জানান, অন্যান্য অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশিদের মালদ্বীপে অনেক খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশিরা যারা সমুদ্রে বিভিন্ন ইয়োটে বা সামুদ্রিক মাছ সংগ্রের কাজ করছেন তাদের সারাদিনে কোনে প্রকার বিশ্রামের ব্যবস্থা দেয় না। প্রচুর পরিশ্রম করলেও পর্যাপ্ত খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা দেয় না মালিক পক্ষ। হৃদয় আরও বলেন, পযর্টকদের জন্য মালদ্বীপ একটি সুন্দর দেশ, কিন্তু শ্রমিকদের জন্য নয়। কারণ হিসেবে তিনি জানান, সামুদ্রিক ইয়োটে বা কোনো হোটেলে বাংলাদেশিরা প্রতিদিন প্রায় ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা কাজ করতে হয়। এতো পরিশ্রম তার ওপর সাপ্তাহিক কোনো ছুটি দেয় না বাংলাদেশিদের। এভাবে প্রচুর পরিশ্রম করলেও তেমন বেতন পাচ্ছে না বাংলাদেশিরা। মাসিক বাংলাদেশি টাকায় ৮/৯ হাজার টাকা পাচ্ছে তারা।
হৃদয় বলেন, যে পরিমাণ পরিশ্রম হচ্ছে সেই পরিমাণে পারশ্রিমিক পাচ্ছে না বাংলাদেশিরা। তার উপর প্রত্যেক বাংলাদেশিদের মধ্যস্বত্বভোগিদের মাধ্যমে দেশটিতে যেতে হচ্ছে। প্রতি বাংলাদেশিদের মালদ্বীপে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগিরা। এ কারণে বেশিরভাগ বাংলাদেশি মালদ্বীপে কাজ করেও যাওয়ার টাকা তুলতে পাচ্ছে না। এতে ঋণের চাপে পড়ছে বাংলাদেশিরা।
নতুন প্রবাসী বাংলাদেশিদের মালদ্বীপে যাওয়ার বিষয়ে হৃদয় জানান, নতুন ভাবে আর কোন বাংলাদেশি যেনো বর্তমানে দেশটিতে না যায়। কারণ মালদ্বীপের বর্তমান অবস্থা খুব খারাপ। মালদ্বীপ নাগরিকের কাজের অভাব দেশটিতে। যার কারণে বাংলাদেশিরা সেইদেশে কাজের জন্য গিয়ে কোনো সুবিধা করতে পারছে না। যে টাকা নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে বাংলাদেশিরা সেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশে কোনো কর্ম করলে অনেক উন্নতি করতে পারবে বলে মনে করেন হৃদয় চন্দ্র সূত্রধর।
No comments:
Post a Comment