কয়েকদিন আগে পত্রিকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল। সেখানে সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন অর্জনের জন্য দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং এজন্য নিয়মিত নামাজ-প্রার্থনা, মেডিটেশন, শিথিলায়ন ইত্যাদির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আমরা সবাই সুন্দর জীবনযাপনের প্রত্যাশী বিধায় বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা, আলোচনা করার যথেষ্ট অবকাশ আছে বলে মনে করছি।
কারণ সুস্থভাবে বাঁচার জন্য যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপনের বিকল্প নেই। এখন প্রশ্ন হল, তা কী করে সম্ভব? বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে জীবনধারায় হাজার পরিবর্তন এনেও যে তা সম্ভব নয় সে কথা বলাই বাহুল্য। আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনকেই বলতে শুনেছি, সুন্দর স্বাভাবিক জীবনযাপন বেছে নিতে শত চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ সেক্ষেত্রে ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো পথ নেই।
আমেরিকা ফেরত আমার এক বন্ধু যিনি একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, এদেশে জীবনযাপন করতে এসে তাকে একরকম গৃহবন্দি হয়ে থাকতেই দেখে আসছি। তার কথা, ‘বাইরে বের হলেই হাজার ঝামেলা।’ তাছাড়া আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব অনেকেরই ধারণা, সে ২২ বছর আমেরিকায় থেকে প্রচুর অর্থবিত্ত নিয়ে দেশে ফিরেছে এবং এসব অর্থবিত্ত সম্বন্ধে তাদের কেউ কেউ তাকে জিজ্ঞাসাও করে!
গুলশানে বসবাস করি বলে অনেকের সঙ্গেই যাপিতজীবন সম্পর্কে কথাবার্তা হয়। তাদের একজন জানালেন, তিনি অগ্রিম আয়কর জমা দিতে গেলে আয়কর অফিসের একজন মহিলা কর্মচারী পুলিশের চেয়ে বেশি করে তাকে জেরা করেছেন! আদালত থেকে সাক্ষ্য দিয়ে ফিরে আসা একজন বললেন, সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি দেখলেন বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এজলাসসংলগ্ন স্থানে বসা পেশকার সাহেব গোগ্রাসে ঘুষ গিলছেন।
এসব দেখেশুনে ভুক্তভোগী দু’জনই তাদের মানসিক বেদনার কথা জানালেন। আবার অশীতিপর বৃদ্ধ এক ফ্ল্যাটবাসী জানালেন, তাদের ভবনে ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ ফ্ল্যাটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ নয়ছয় করা মালিকেরও অবস্থান আছে। আর এসব জানাশোনা সত্ত্বেও অসুস্থ প্রবীণ ব্যক্তিটিকে বিনা বাক্য ব্যয়ে তাদের হাতে মাঝেমধ্যেই বড় অঙ্কের টাকা তুলে দিতে হচ্ছে।
কারণ পুত্র-কন্যা বিদেশ থাকায় এ বয়সে স্বামী-স্ত্রী অনেকটা অসহায় অবস্থায় সেখানে বসবাস করেন। দেখলাম এসব নিয়ে তার মনেও ভীষণ কষ্ট। তার কথা শুনে মনে হল, আমরা যারা গুলশানে আছি, বিশেষ করে অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করছি, তাদের মনের সুখই বা কতটুকু? তারাই বা কতটুকু দুশ্চিন্তাহীন?
গুলশানের আরও একজন বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, ব্যাংকের লোকজন তাকে অযথা হয়রানি করছেন। তিনি ভিন্নমতাবলম্বী বলে ব্যাংকগুলো তার পেছনে লেগে তার ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম করেছে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যবসাসংক্রান্ত হলেও তার মনেও যে সুখ নেই এবং তিনিও যে দুশ্চিন্তামুক্ত নন, সে কথাটিই সামনে এসে যায়।
এসব বিষয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, ফ্ল্যাট কালচারের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় এবং প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ওইসব ব্যক্তি দুশ্চিন্তাহীন বা সুন্দর জীবনযাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফ্ল্যাটবাড়িতে একজন খারাপ লোকের জন্য অন্য দশজন কষ্ট পাচ্ছেন। ব্যবসায়ী ভদ্রলোক, যাকে আমি অত্যন্ত কাছ থেকে জানি এবং ভালো মানুষ হিসেবে চিনি, তিনিও প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছেন!
তাই বাংলাদেশে দুশ্চিন্তাহীন জীবন বেছে নেয়া খুবই কঠিন এবং অসাধ্য একটি কাজই বটে! এমনকি কোনো ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য বাদ দিয়ে অফিস-আদালত, কোর্ট-কাচারি, হাট-বাজার, সওদাগরি অফিস বা ব্যাংক ইত্যাদিতে না গিয়ে তাকে শুধু হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডাক্তারের কাছে যেতে হলেও দুশ্চিন্তা ও মন খারাপ নিয়েই তাকে ঘরে ফিরতে হবে!
এই যখন দেশের অবস্থা, তখন দুশ্চিন্তাহীন জীবনের কথা কল্পনা করা এক অলীক ভাবনা ছাড়া আর কিছু নয়। তবে যতদূর সম্ভব দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপনের জন্য চিন্তাভাবনা করা যেতেই পারে। আমরা ভেবে দেখতে পারি, এ দেশেই দুশ্চিন্তাহীন সুন্দর জীবনযাপন করতে পারি কিনা। কারণ আমাদের তো এ দেশেই থাকতে হবে। তাই চেষ্টা করতে দোষ কী?
বহু বছর আগে ডেল কার্নেগি তার ‘দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন’ গ্রন্থে ভালো থাকার এমনকিছু ফর্মুলাই বাতলে দিয়েছেন। সে গ্রন্থটি আমি ৪০ বছর আগে পড়েছিলাম, তাই সেসবের কোনো কিছুই এখন আর মনে নেই। তাছাড়া ওসব ফর্মুলার সবকিছুই আমাদের দেশের উপযোগী নয় এবং গ্রন্থটিও এখন আমার কাছে নেই যে, তা দেখে দু-চারটি সূত্র উল্লেখ করব।
তবে এ বিষয়ে বর্তমানে আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই কিছু বলতে চাই। সংক্ষেপে তা হল : ১. রাজনীতি থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা, ২. মূর্খ, অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকা, ৩. সদাসর্বদা সৎপথে রুটি-রুজির চিন্তা করা, ৪. মনে যে কোনো ধরনের পরশ্রীকাতরতার লেশমাত্র প্রশ্রয় না দেয়া, ৫. সম্পদের প্রতি লোভ-লালসা না করা।
অর্থাৎ স্বাভাবিক সৎপথে যে সম্পদ আহরণ সম্ভব সে পথে পথচলা, ৬. জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেকহীন মানুষের সঙ্গ পরিত্যাগ করা, ৭. অসচ্ছলতা বা দারিদ্র্যকে সহজভাবে গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে মনে করা উচিত, অন্যের যেমন ধন-সম্পদ-প্রাচুর্যের প্রাপ্তি ঘটেছে, তেমনি নিজের ক্ষেত্রে প্রাপ্তি ঘটেছে অসচ্ছলতা ও দারিদ্র্যের, ৮. আয়-ব্যয়ের সঙ্গে খরচের ভারসাম্য রক্ষা করা এবং কোনোক্রমেই অপব্যয় না করা, ৯. নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে কিছু সঞ্চয় থাকলে তা থেকে অল্প পরিমাণে হলেও অসহায়কে সাহায্য করা,
১০. সৎ ও সঠিক মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং বন্ধুত্বের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা, ১১. কম কথা বলা এবং প্রয়োজনে চুপ থাকা, ১২. যে অবস্থানেই আছি সেখান থেকেই নিজেকে ত্যাগের মহিমায় অনুপ্রাণিত করা। সেটা অর্থকড়ি, কায়িক পরিশ্রম, মেধা-বুদ্ধি-পরামর্শ যে কোনো কিছু দিয়ে হতে পারে, ১৩. অহংকার বিসর্জন দিয়ে মানুষকে ভালোবাসার মানসিকতা অর্জন করা, ১৪. যার যার ধর্ম মতে প্রার্থনা করা, ১৫. শরীরচর্চা, হাঁটা-চলাফেরা, যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের দেহ-মন সুস্থ রাখা,
১৬. আহার তথা খাদ্য গ্রহণে পরিমিতিবোধ বজায় রাখা এবং সব সময় দেশজ উৎপন্ন সাধারণ খাদ্যের প্রতি আকৃষ্ট থাকা, ১৭. কোনো বৈরী পরিবেশ বা আচরণ উপেক্ষা করার মানসিক শক্তি অর্জন করা, ১৮. সদাসর্বদা সত্য ও সুন্দরের পূজারি হওয়া এবং নিজের চিন্তা-চেতনায় সরলতা আনয়ন করা, ১৯. ইতিবাচক চিন্তা-চেতনায় নিজেকে উজ্জীবিত করা।
সুধী পাঠক, আমি কোনো বিজ্ঞ বা পণ্ডিত ব্যক্তি নই। একটু ভালো থাকার পরামর্শ দিতে গিয়ে আপনাদের জানাশোনা কথা থেকেই কিছু কথা বলে ফেললাম। কারণ এসব কথা প্রায় সবারই জানাশোনা হলেও বাস্তবে অনেকেই আমরা তা প্রতিপালন করি না বা করতে পারি না। এ অবস্থায় অনেকেই বলে বসতে পারেন, এসব কথা বলা সহজ, কিন্তু করা কঠিন।
আমি নিজেও তা স্বীকার করি এবং উপরের সবকিছু অক্ষরে অক্ষরে আমিও পালন করতে পারি না। কিন্তু বাঁচতে হলে আমাদের এ কঠিন কাজগুলোই করতে হবে। আর এসব করে নবপ্রজন্মকে তা দেখাতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে আমরা কী রেখে যাচ্ছি, সে কথাও আমাদের ভেবে দেখতে হবে। এই যে অসম প্রতিযোগিতা, ইঁদুর দৌড়ের উদাহরণ তাদের সামনে রেখে যাচ্ছি, তার ফলে আমাদের আদরের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সে কথাও আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন।
রাজনীতি, শিক্ষা, অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে আমরা যা করে চলেছি তার প্রভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অবস্থা কী দাঁড়াবে সে কথা ভাবার শেষ মুহূর্তে আমরা পৌঁছে গেছি। কোচিংয়ে পাঠিয়ে, প্রেসে পাঠিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে, সেই প্রশ্নপত্র টাকা দিয়ে ক্রয় করে আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষিত বা ডিগ্রিধারী করাতে চাচ্ছি! অর্থাৎ তাদের জন্য নগদ অর্থে ডিগ্রি কিনে দিচ্ছি।
এর চেয়ে অসুন্দর ও খারাপ মানসিকতা আর কী হতে পারে! একশ্রেণীর মানুষ সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর নামে এসব করে চলেছেন। তিনি নিজে অথবা সন্তানের হাতে টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র ক্রয় করছেন, আর ভাবছেন তার সন্তান লেখাপড়া শিখে মানুষ হবে। তিনি বা তার সন্তান অর্থকড়ি না ছড়ালে, কোচিং সেন্টার, প্রেস ইত্যাদি স্থানে গিয়ে প্রশ্নপত্র ক্রয় না করলে প্রশ্নপত্র বিক্রেতারা তো এতবড় মার্কেট পেয়ে যেত না।
আর দেশের মানুষকেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অসুস্থ মানসিকতা প্রত্যক্ষ করতে হতো না। এ অবস্থায় প্রশ্নপত্র ক্রয়-বিক্রয়কারীরাও যে দেশের মানুষের মনে অস্বস্তির বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছেন সে কথাও সংশ্লিষ্ট সবার মনে রাখা উচিত। এ পাপাচারও বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ শিক্ষা ক্ষেত্রের এসব ঘটনা, অফিস-আদালতে ঘুষ-দুর্নীতির ঘটনা দেশের মানুষের মনকে বিষিয়ে তুলেছে।
আমাদের দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে আমরা বের হয়ে যাচ্ছি। এখন সরকারের একজন জুনিয়র অফিসারও চাকরি শেষে বিরাট অঙ্কের টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। আর এই টাকা এবং সারাজীবন ধরে তিনি যে বেতন পান তা এ দেশের জনগণের অর্থ থেকে তাকে প্রদান করা হয়।
তাই একজন মানুষ অফিস-আদালতে গেলে ভালো ব্যবহার পাবেন, ভালো সার্ভিস পাবেন সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি না হওয়ায় মানুষকে মন খারাপ করে ঘরে ফিরতে হয়। আর তাতে করে ভুক্তভোগী জনসাধারণের পক্ষে ভালো থাকা, দুশ্চিন্তাহীন থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আগে যেমন শোনা যেত, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে উনিশ ঘা, সে ক্ষেত্রে বর্তমানে পুলিশের ঘা কিছুটা কমলেও সরকারের অন্যান্য দফতরের ঘা বেড়েছে বই কমেনি।
থানা-পুলিশে গেলে মানুষ ভালো মনে ঘরে ফিরতে পারেন না বলে এ দেশের মানুষ পারতপক্ষে সে পথ মাড়ান না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শুধু থানা পুলিশ নয়, আয়কর, কাস্টমস থেকে শুরু করে বিচারাঙ্গন পর্যন্ত এ দোষে দুষ্ট। আদালতের পেশকার-কর্মচারীরা বিচারকের নাকের ডগায় বসে ঘুষ আদায় করছেন। আর এসব দেখেশুনে বিচারাঙ্গন থেকে ফিরে একজন মানুষের মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে কোনো প্রদেশ নেই।
একটি দেশের একটিই রাজধানী, যেখানে বসে বড় বড় হোমরাচোমরা, মন্ত্রী-মিনিস্টার-কর্তাব্যক্তিরা দেশ চালান। এ ক্ষেত্রে দেশের ৬৪টি জেলা চলে জেলা প্রশাসকদের মর্জিমাফিক। সেখানে কোনো ব্যক্তি একজন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রেই শোনা যায়, জেলা প্রশাসকরা এত ব্যস্ত যে তাদের সাক্ষাৎ পাওয়া আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো! কারণ তারা ব্যস্ত থাকেন মন্ত্রী-এমপি এবং ঢাকার বড় কর্তাদের নিয়ে।
জেলার মানুষের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় কেউ তাদের নাগাল পেতে চাইলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিড়ম্বনা পোহাতে হয় এবং স্বভাবতই তারা মন খারাপ করে চলে আসেন। এভাবে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে গেলেই যদি মানুষের মন খারাপ হয়ে যায়, তাহলে সে দেশের ভবিষ্যৎই বা কী? যদিও সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে- অফিস-আদালতে না গিয়ে ঘরে বসেই যাতে মানুষ সেবা পেতে পারেন।
কিন্তু তা কতদূর বা কতদিনে সম্ভব? অফিস-আদালত, থানা, কাচারি তো সব দেশেই ছিল এবং আছে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো এত খারাপ এসব অফিস কি পৃথিবীর আর কোথাও আছে? ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, থানা- এসব স্থানে হচ্ছেটা কী? সুস্থ মানসিকতার কোনো ব্যক্তি তো সেখানে যেতে ভয় পাবেন! আর এসব তো যারা দেশ চালান তাদের জানা আছে। জানা আছে মানে এসব ঘটনা তাদের নখদর্পণে। অথচ এসব জেনেশুনেও তারা দেশের মানুষকে ভালো থাকতে দিচ্ছেন না। এভাবে চললে কত প্রজন্মকে এর খেসারত দিতে হবে সে কথাও কেউ বলতে পারবেন না।
প্রশ্ন হল, দেশের সরকার, সংসদ যদি এসব দিকে নজর না দেয়, তাহলে কি মানুষ আদৌ কোনোদিন ভালো থাকতে পারবেন? সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিচরণকারী খারাপ মানুষগুলোকে শায়েস্তা করতে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে সংসদ আর কবে দৃঢ়তার পরিচয় দেবে সে কথাই বা কে বলতে পারেন? কতকিছুই তো আলাপ করে সংসদে সময়ের অপচয় করা হয়।
আমাদের দেশে সংসদে স্তুতি করে যে সময় ব্যয় করা হয়, তাতে প্রতি ঘণ্টায় দেশের মানুষের কত কোটি টাকা ব্যয় হয় এবং এভাবে বছরে কত শত কোটি টাকা নষ্ট হয় সে খবরও তো সব পার্লামেন্টারিয়ানেরই নখদর্পণে। বিপরীতে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের বিষয়, অফিস-আদালতে ঘুষ-দুর্নীতির বিষয় নিয়ে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয় নিয়ে কত ঘণ্টা, কত দিন সংসদে আলোচনা করা হয়?
কোণঠাসা হয়ে থাকা দু-একজন সদস্য এসব নিয়ে আলোচনা করতে চাইলেও মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব কথা কেউ স্বীকার করতে না চাইলেও এটাই বাস্তব সত্য। সুতরাং দেশ ও জাতিকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে হলে সংসদকেই তা করতে হবে। কারণ সংসদ হল এসব কাজের জন্য সঠিক স্থান। আর মহামান্য রাষ্ট্রপতিও ইচ্ছা করলে এ কাজটি করতে বা করাতে পারেন।
তিনি সংসদকে এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। বিভিন্ন সময়ে সংসদের ভেতরে-বাইরে বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমেও এ কাজটি করতে পারেন। অন্যথায় এসব কাজে যদি তিনি বা সংসদ কেউই কোনো ভূমিকায় অবতীর্ণ না হন, তাহলে আমার মতো কলাম লেখকের কলমে দেশের মানুষের সুন্দর ও দুশ্চিন্তাহীন জীবনদর্শন প্রদান অরণ্যে রোদন মাত্র।
সে অবস্থায় দেশের মানুষের জন্য সুন্দর জীবনের অধিকারী হওয়া বা দুশ্চিন্তাহীন জীবন লাভ করা অধরাই থেকে যাবে। কারণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে সহায়ক না হলে কিছুতেই কিছু হবে না। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে কিছুতেই কিছু হবে না। দেশের মাথা বলে যারা পরিচিত, দেশের মাথা বলে যে প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে কিছুতেই কিছু হবে না। সুতরাং এ বিষয়ে ভুল করে যদি কিছু বলে থাকি, তাহলে ক্ষমাপ্রার্থী!
No comments:
Post a Comment